ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম রোধে ব্যবস্থা নিন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল ২০১৮
  • / ৩৩৮ বার পড়া হয়েছে

পরিবেশ দূষণ, ভেজাল খাদ্য, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ মানুষের শরীরের জন্য দিন দিন কত ভয়ঙ্কর অভিশাপ বয়ে আনছে তা আমরা অনুমানও করতে পারছি না। এসবের উপস্থিতি বা চর্চা আমাদের শরীরে নানা ধরনের জটিল রোগ সৃষ্টি করে এটি অনেক পুরনো কথা। গতকাল ২ এপ্রিল প্রকাশিত একটি সংবাদে জš§গত ত্রুটি নিয়ে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পেছনে একই কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি শুধু উদ্বেগজনক নয়, আতঙ্কের বিষয়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ঘণ্টায় নানা ত্রুটি নিয়ে জš§ নিচ্ছে অন্তত ৩৬ শিশু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ব্রেন ও হার্টের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে প্রতিদিন জš§ নিচ্ছে শতাধিক শিশু। চিকিৎসকরা বলছেন জšে§র আগেই এ ধরনের সমস্যার ৯০ ভাগ প্রতিরোধ সম্ভব। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় শিশুমৃত্যুর সঙ্গে বাড়ছে প্রতিবন্ধিতার হারও। এই দুটি তথ্যই বলে দেয়, এখনই সতর্ক না হলে এর পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ। বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত কর্মব্যস্ত সময় কাটান। কিংবা বলা যেতে পারে কর্মব্যস্ত সময় কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে কারো একার আয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন, খাদ্য ও বস্ত্র চাহিদা পূরণ করে স্বাভাবিক জীপন যাপন করা কঠিন। যে কারণে স্বামী-স্ত্রীর সংসারে দুজনকেই কর্মমুখী হতে হয় বা হচ্ছে। এছাড়া এখন অধিকাংশ নারী অর্থনৈতিকভাবে নিজেকে স্বাবলম্বী না করে সংসার জীবনে প্রবেশ করতে চান না। বিয়ে পরবর্তী জীবনে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও আরো একটু বাড়তি সময় তারা নেন। এর পেছনে দুটি কারণ কাজ করে। এক. একটু গুছিয়ে ওঠা। দুই. বিয়ে পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা কতটা পারস্পরিক ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে এটিও নিশ্চিত হতে চান। ফলে সন্তান ধারণে বিলম্ব হওয়া প্রায় স্বাভাবিক বিষয় এখন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিলম্বে সন্তান ধারণও ত্রুটিপূর্ণ শিশু জšে§র আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ ক্ষেত্রে সন্তান ধারণের আগে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সন্তান নেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন তারা। তবে এ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা বা চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ তারা পাবেন কিনা সে সংশয়ও থেকে যায়। কারণ আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা এবং লাগামহীন ব্যয় কোনোটিই কম নয়। কেন পরিবেশ দূষিত হয় তা দায়িত্বশীলরা জানেন না এমন নয়। আবার খাদ্যে ভেজাল সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করেও কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর বিরুদ্ধে একাধিকবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরও তারা ভেজালমুক্ত পণ্যের নিশ্চয়তা রক্ষা করছেন না। এর পেছনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা না থাকা যেমন দায়ী তেমনি দায়ী জনগণের অসচেতনাও। এ ছাড়া সঠিক বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার সুযোগও নিচ্ছে এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী। পরিবেশ দূষণের পেছনে মেয়াদোত্তীর্ণ যান, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব, নদী-খাল-বিলের পানিতে ময়লা নিক্ষেপসহ শিল্প-কলকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য দায়ী। কিন্তু এসব অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিরুদ্ধ এমন পরিবেশে বসবাস করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে বাধ্য হলেও আগামীর জন্য তা কী পরিমাণ ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে তা অনুমান করা কঠিন নয়। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তারা আজকের বাংলাদেশকে শুধু নেতৃত্ব দেবে না, তারা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। তাদের জš§ ও বেড়ে ওঠার জন্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে এর দায়ভার কেউ এড়াতে পারবে না। পরিবেশ, খাদ্য এবং ভুল ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় বিকলাঙ্গ জাতি তৈরির যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তা রোধ করতে হলে এখন থেকেই কার্যকর সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর আর কোনো বিকল্প নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম রোধে ব্যবস্থা নিন

আপলোড টাইম : ১০:৪৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল ২০১৮

পরিবেশ দূষণ, ভেজাল খাদ্য, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ মানুষের শরীরের জন্য দিন দিন কত ভয়ঙ্কর অভিশাপ বয়ে আনছে তা আমরা অনুমানও করতে পারছি না। এসবের উপস্থিতি বা চর্চা আমাদের শরীরে নানা ধরনের জটিল রোগ সৃষ্টি করে এটি অনেক পুরনো কথা। গতকাল ২ এপ্রিল প্রকাশিত একটি সংবাদে জš§গত ত্রুটি নিয়ে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পেছনে একই কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি শুধু উদ্বেগজনক নয়, আতঙ্কের বিষয়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ঘণ্টায় নানা ত্রুটি নিয়ে জš§ নিচ্ছে অন্তত ৩৬ শিশু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ব্রেন ও হার্টের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে প্রতিদিন জš§ নিচ্ছে শতাধিক শিশু। চিকিৎসকরা বলছেন জšে§র আগেই এ ধরনের সমস্যার ৯০ ভাগ প্রতিরোধ সম্ভব। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় শিশুমৃত্যুর সঙ্গে বাড়ছে প্রতিবন্ধিতার হারও। এই দুটি তথ্যই বলে দেয়, এখনই সতর্ক না হলে এর পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ। বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত কর্মব্যস্ত সময় কাটান। কিংবা বলা যেতে পারে কর্মব্যস্ত সময় কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে কারো একার আয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন, খাদ্য ও বস্ত্র চাহিদা পূরণ করে স্বাভাবিক জীপন যাপন করা কঠিন। যে কারণে স্বামী-স্ত্রীর সংসারে দুজনকেই কর্মমুখী হতে হয় বা হচ্ছে। এছাড়া এখন অধিকাংশ নারী অর্থনৈতিকভাবে নিজেকে স্বাবলম্বী না করে সংসার জীবনে প্রবেশ করতে চান না। বিয়ে পরবর্তী জীবনে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও আরো একটু বাড়তি সময় তারা নেন। এর পেছনে দুটি কারণ কাজ করে। এক. একটু গুছিয়ে ওঠা। দুই. বিয়ে পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা কতটা পারস্পরিক ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে এটিও নিশ্চিত হতে চান। ফলে সন্তান ধারণে বিলম্ব হওয়া প্রায় স্বাভাবিক বিষয় এখন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিলম্বে সন্তান ধারণও ত্রুটিপূর্ণ শিশু জšে§র আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ ক্ষেত্রে সন্তান ধারণের আগে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সন্তান নেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন তারা। তবে এ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা বা চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ তারা পাবেন কিনা সে সংশয়ও থেকে যায়। কারণ আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা এবং লাগামহীন ব্যয় কোনোটিই কম নয়। কেন পরিবেশ দূষিত হয় তা দায়িত্বশীলরা জানেন না এমন নয়। আবার খাদ্যে ভেজাল সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করেও কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর বিরুদ্ধে একাধিকবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরও তারা ভেজালমুক্ত পণ্যের নিশ্চয়তা রক্ষা করছেন না। এর পেছনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা না থাকা যেমন দায়ী তেমনি দায়ী জনগণের অসচেতনাও। এ ছাড়া সঠিক বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার সুযোগও নিচ্ছে এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী। পরিবেশ দূষণের পেছনে মেয়াদোত্তীর্ণ যান, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব, নদী-খাল-বিলের পানিতে ময়লা নিক্ষেপসহ শিল্প-কলকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য দায়ী। কিন্তু এসব অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিরুদ্ধ এমন পরিবেশে বসবাস করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে বাধ্য হলেও আগামীর জন্য তা কী পরিমাণ ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে তা অনুমান করা কঠিন নয়। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তারা আজকের বাংলাদেশকে শুধু নেতৃত্ব দেবে না, তারা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। তাদের জš§ ও বেড়ে ওঠার জন্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে এর দায়ভার কেউ এড়াতে পারবে না। পরিবেশ, খাদ্য এবং ভুল ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় বিকলাঙ্গ জাতি তৈরির যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তা রোধ করতে হলে এখন থেকেই কার্যকর সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর আর কোনো বিকল্প নেই।