ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিএনপিকে নিয়ে সন্দিহান ভারত!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৮
  • / ২৯৪ বার পড়া হয়েছে

ইন্ডিয়ান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণ
ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশে অতীতে বিএনপি সরকারের দুই মেয়াদে ইসলামী জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছিল এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদিরা পাকিস্তানের সমর্থন পেয়েছিল। অথচ বিএনপি বিষয়টি না দেখার ভান করেছে। এসব কারণে ভারত বিএনপির ব্যাপারে সন্দিহান। একইসঙ্গে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাকে ভারত কিছুটা উদ্বেগের চোখে দেখে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে নয়াদিল্লিভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) এক বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির সম্মানিত ফেলো মনোজ যোশীর মতে, আগামী নির্বাচন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিতে পারে। বিশ্লেষণে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের চিন্তা-ভাবনাও উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এই বিশ্লেষণটি প্রকাশ করে। বিশ্লেষণ নিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পোলস পোজ এ চ্যালেঞ্জ টু রিজিওনাল স্টেবিলিটি’ নামে এই লেখায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে। মনোজ যোশী লিখেছেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, তাতে মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়ে। সেই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে এবং সেসময় অনেক সহিংসতা হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেন আগের বারের চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য হয়।
মনোজ যোশী মনে করেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাকে ভারত কিছুটা উদ্বেগের চোখে দেখে। এছাড়া ভারত বিএনপির ব্যাপারে সন্দিহান। তার মতে, বিএনপি এর আগে যে দুই দফা ক্ষমতায় ছিল (১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬) সেসময় বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ শেকড় গেড়েছিল এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদিরা পাকিস্তানের সমর্থন পায়। আর তখনকার সরকার এই বিষয়টি না দেখার ভান করেছিল। এছাড়া বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগকেই বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করে ভারত।
মনোজ যোশী লিখেছেন, কিছু ভারতীয় কর্মকর্তা বলছেন, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং তৃতীয় দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাদের একযোগে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ ইতিবাচক। তারা বলছেন, জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনা খুবই সক্রিয়। অথচ বিএনপি জঙ্গিবাদে যদি উৎসাহ নাও দিয়ে থাকে, তারা এটিকে সহ্য করেছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা অবশ্য আবার একই সঙ্গে এমন দাবিও করছেন যে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রশ্নে তারা নিরপেক্ষ। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত বছরের অক্টোবরে যখন বাংলাদেশ সফরে যান, তখন যে তিনি বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া এবং তার দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, সেটি তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
মনোজ যোশী বলেন, আগামী নির্বাচন ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক; কিন্তু তারা চায় একটি ‘দল নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের’ অধীনে এই নির্বাচন হোক, যে কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে সম্প্রতি তারা ‘কেয়ারটেকার সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবিতেও আন্দোলন শুরু করেছে।
বিএনপি আশা করছে, ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ, সেটি তাদের পক্ষে যাবে। তবে বিএনপির নিজের সাংগঠনিক অবস্থা খুব ভালো নেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অনেক মামলা চলছে। লন্ডনে বসে এখন দলটি পরিচালনা করছেন তার ছেলে তারেক রহমান। বিএনপির সাবেক প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামী এখন আর নিবন্ধিত দলও নয়, কাজেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না; কিন্তু দলটি তাদের ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র শিবিরের’ মাধ্যমে এখনো রাস্তায় লোক জড়ো করার উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রাখে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে একতরফা নির্বাচন হয়, সেটি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর ভ্রু কুঁচকিয়ে ছিল; কিন্তু এটি চীনকে সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার। চীনের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব দুই দিক থেকে- প্রথমত ভারতকে মোকাবেলায় কাজে লাগানো, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মুখে এবং মিয়ামারের প্রতিবেশি হিসেবে বাংলাদেশের যে ভৌগোলিক অবস্থান সেটিকে কাজে লাগানো। কারণ মিয়ানমারের রাখাইনে তাদের বিরাট বিনিয়োগ আছে।
প্রসঙ্গত, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) ভারতের একটি সুপরিচিত থিংক ট্যাংক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর নয়াদিল্লিতে ‘রাইসিনা ডায়ালগ’ নামে যে বহুপাক্ষিক সম্মেলন হয়, ওআরএফ সেটির মূল আয়োজক, আর এতে সহায়তা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সম্মেলনে মূলত ভূ-রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা আলোচনায় অংশ নেন। ওআরএফ নিজেদেরকে ‘স্বাধীন’ দাবি করলেও ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী রিলায়েন্স গ্রুপ তাদের অন্যতম স্পন্সর। ওআরএফ-এর ফেলো মনোজ যোশী ভারতের খুবই সুপরিচিত একজন সাংবাদিক এবং তিনি ভারত সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের একজন সদস্য ছিলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিএনপিকে নিয়ে সন্দিহান ভারত!

আপলোড টাইম : ০৪:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

ইন্ডিয়ান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণ
ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশে অতীতে বিএনপি সরকারের দুই মেয়াদে ইসলামী জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছিল এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদিরা পাকিস্তানের সমর্থন পেয়েছিল। অথচ বিএনপি বিষয়টি না দেখার ভান করেছে। এসব কারণে ভারত বিএনপির ব্যাপারে সন্দিহান। একইসঙ্গে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাকে ভারত কিছুটা উদ্বেগের চোখে দেখে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে নয়াদিল্লিভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) এক বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির সম্মানিত ফেলো মনোজ যোশীর মতে, আগামী নির্বাচন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিতে পারে। বিশ্লেষণে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের চিন্তা-ভাবনাও উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এই বিশ্লেষণটি প্রকাশ করে। বিশ্লেষণ নিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পোলস পোজ এ চ্যালেঞ্জ টু রিজিওনাল স্টেবিলিটি’ নামে এই লেখায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে। মনোজ যোশী লিখেছেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, তাতে মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়ে। সেই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে এবং সেসময় অনেক সহিংসতা হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেন আগের বারের চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য হয়।
মনোজ যোশী মনে করেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাকে ভারত কিছুটা উদ্বেগের চোখে দেখে। এছাড়া ভারত বিএনপির ব্যাপারে সন্দিহান। তার মতে, বিএনপি এর আগে যে দুই দফা ক্ষমতায় ছিল (১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬) সেসময় বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ শেকড় গেড়েছিল এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদিরা পাকিস্তানের সমর্থন পায়। আর তখনকার সরকার এই বিষয়টি না দেখার ভান করেছিল। এছাড়া বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগকেই বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করে ভারত।
মনোজ যোশী লিখেছেন, কিছু ভারতীয় কর্মকর্তা বলছেন, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং তৃতীয় দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাদের একযোগে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ ইতিবাচক। তারা বলছেন, জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনা খুবই সক্রিয়। অথচ বিএনপি জঙ্গিবাদে যদি উৎসাহ নাও দিয়ে থাকে, তারা এটিকে সহ্য করেছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা অবশ্য আবার একই সঙ্গে এমন দাবিও করছেন যে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রশ্নে তারা নিরপেক্ষ। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত বছরের অক্টোবরে যখন বাংলাদেশ সফরে যান, তখন যে তিনি বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া এবং তার দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, সেটি তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
মনোজ যোশী বলেন, আগামী নির্বাচন ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক; কিন্তু তারা চায় একটি ‘দল নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের’ অধীনে এই নির্বাচন হোক, যে কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে সম্প্রতি তারা ‘কেয়ারটেকার সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবিতেও আন্দোলন শুরু করেছে।
বিএনপি আশা করছে, ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ, সেটি তাদের পক্ষে যাবে। তবে বিএনপির নিজের সাংগঠনিক অবস্থা খুব ভালো নেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অনেক মামলা চলছে। লন্ডনে বসে এখন দলটি পরিচালনা করছেন তার ছেলে তারেক রহমান। বিএনপির সাবেক প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামী এখন আর নিবন্ধিত দলও নয়, কাজেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না; কিন্তু দলটি তাদের ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র শিবিরের’ মাধ্যমে এখনো রাস্তায় লোক জড়ো করার উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রাখে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে একতরফা নির্বাচন হয়, সেটি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর ভ্রু কুঁচকিয়ে ছিল; কিন্তু এটি চীনকে সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার। চীনের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব দুই দিক থেকে- প্রথমত ভারতকে মোকাবেলায় কাজে লাগানো, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মুখে এবং মিয়ামারের প্রতিবেশি হিসেবে বাংলাদেশের যে ভৌগোলিক অবস্থান সেটিকে কাজে লাগানো। কারণ মিয়ানমারের রাখাইনে তাদের বিরাট বিনিয়োগ আছে।
প্রসঙ্গত, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) ভারতের একটি সুপরিচিত থিংক ট্যাংক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর নয়াদিল্লিতে ‘রাইসিনা ডায়ালগ’ নামে যে বহুপাক্ষিক সম্মেলন হয়, ওআরএফ সেটির মূল আয়োজক, আর এতে সহায়তা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সম্মেলনে মূলত ভূ-রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা আলোচনায় অংশ নেন। ওআরএফ নিজেদেরকে ‘স্বাধীন’ দাবি করলেও ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী রিলায়েন্স গ্রুপ তাদের অন্যতম স্পন্সর। ওআরএফ-এর ফেলো মনোজ যোশী ভারতের খুবই সুপরিচিত একজন সাংবাদিক এবং তিনি ভারত সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের একজন সদস্য ছিলেন।