ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাসায় ঢুকে গাইবান্ধার এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে

d

সমীকরণ ডেস্ক: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনকে বাসায় ঢুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বাসায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিমল চন্দ্র রায় এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে এমপি লিটনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাড়ে সাতটার দিকে তিনি মারা যান। ঘটনার বিষয়ে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সাংসদের স্ত্রী ফোন করে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের ভাষ্য, গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে অজ্ঞাতনামা তিন যুবক একটি মোটরসাইকেলে করে এমপির সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার বাড়িতে যান। একজন মোটরসাইকেলে বসে ছিলেন। বাকি দুজন তার বাড়ির বৈঠকখানায় যান। এমপি বৈঠকখানায় ছিলেন। এ সময় তিনটি গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এর পরপরই দুজন দ্রুত বৈঠকখানা থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এমপি লিটনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এমপির ডান হাতে দুটি ও বুকের ডান পাশে একটি গুলি লাগে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুন্দরগঞ্জের শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি ছিলেন মনজুরুল ইসলাম লিটন। তিনি জামিনে ছিলেন। এমপি লিটনের স্ত্রী খোরশেদ জাহান বলেন, মাগরিবের নামাজের পরপর মোটরসাইকেলে অজ্ঞাত পরিচয় তিন যুবক বাড়িতে ঢুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। সাংসদের কর্মচারী জুয়েল বলেন, ‘সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে পাঁচ যুবক স্যারের কাছে আসেন। এদের মধ্যে তিনজন ঘরে ঢুকে স্যারের সঙ্গে কথা বলতে না বলতেই এলোপাতাড়ি গুলি করে চলে যায়।’ এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। বিকালে তার নিজ ঘরে টেলিভিশন দেখছিলেন। হঠাৎ করে মোটরসাইকেলে করে তিন যুবক তার বাড়িতে আসে। এ সময় তিনি লিটনের ঘরের সামনে বারান্দায় বসে ছিলেন। ওই যুবকরা হেলমেট পরা ছিল। একজন মোটরসাইকেলে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুজন তার কাছে এসে এমপি লিটনের অবস্থান জানতে চান। পরে তিনি ঘরে আছেন বললে দুই যুবক ঘরে ঢুকেই এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এরপর তারা দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। এ সময় বাড়িতে কাজের দুই-তিন জন লোক ছাড়া কেউ ছিল না। স্থানীয়রা জানান, এমপি লিটনের বাড়ির পাশে স্থানীয়দের আয়োজনে একটি ইসলামী জলসার (তাফসিরুল) মাহফিল ছিল। বাদ আসর থেকে শুরু হওয়া তাফসিরুল মাহফিলে আশপাশের লোকজনসহ বহিরাগত লোকজনের সমাগম ছিল। ২০১৫ সালের দুই অক্টোবর সকালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোপালচরণ গ্রামের বাড়ির পাশের সড়কে চাচার সঙ্গে হাঁটতে বের হয় শিশু শাহাদাত। তখন সে এমপি লিটনের গুলিতে আহত হয়। এই ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক আন্দোলন হয়। তিন অক্টোবর রাতে শাহাদাতের বাবা সাজু মিয়া হত্যাচেষ্টা ও গুরুতর জখমের অভিযোগে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ওই দিনই সন্ধ্যায় এমপি তার আত্মীয়ের মাধ্যমে দুইটি অস্ত্র থানায় জমা দেন। ৬ অক্টোবর রাতে বসতবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে উপজেলার উত্তর শাহবাজ গ্রামের হাফিজার রহমান ম-ল বাদী হয়ে এমপিকে প্রধান আসামি করে মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে একই থানায় আরেকটি মামলা করেন। ১৪ অক্টোবর রাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে তিনি জামিন পান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাসায় ঢুকে গাইবান্ধার এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যা

আপলোড টাইম : ০২:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০১৭

d

সমীকরণ ডেস্ক: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনকে বাসায় ঢুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বাসায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিমল চন্দ্র রায় এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে এমপি লিটনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাড়ে সাতটার দিকে তিনি মারা যান। ঘটনার বিষয়ে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সাংসদের স্ত্রী ফোন করে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের ভাষ্য, গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে অজ্ঞাতনামা তিন যুবক একটি মোটরসাইকেলে করে এমপির সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার বাড়িতে যান। একজন মোটরসাইকেলে বসে ছিলেন। বাকি দুজন তার বাড়ির বৈঠকখানায় যান। এমপি বৈঠকখানায় ছিলেন। এ সময় তিনটি গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এর পরপরই দুজন দ্রুত বৈঠকখানা থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এমপি লিটনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এমপির ডান হাতে দুটি ও বুকের ডান পাশে একটি গুলি লাগে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুন্দরগঞ্জের শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি ছিলেন মনজুরুল ইসলাম লিটন। তিনি জামিনে ছিলেন। এমপি লিটনের স্ত্রী খোরশেদ জাহান বলেন, মাগরিবের নামাজের পরপর মোটরসাইকেলে অজ্ঞাত পরিচয় তিন যুবক বাড়িতে ঢুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। সাংসদের কর্মচারী জুয়েল বলেন, ‘সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে পাঁচ যুবক স্যারের কাছে আসেন। এদের মধ্যে তিনজন ঘরে ঢুকে স্যারের সঙ্গে কথা বলতে না বলতেই এলোপাতাড়ি গুলি করে চলে যায়।’ এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। বিকালে তার নিজ ঘরে টেলিভিশন দেখছিলেন। হঠাৎ করে মোটরসাইকেলে করে তিন যুবক তার বাড়িতে আসে। এ সময় তিনি লিটনের ঘরের সামনে বারান্দায় বসে ছিলেন। ওই যুবকরা হেলমেট পরা ছিল। একজন মোটরসাইকেলে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুজন তার কাছে এসে এমপি লিটনের অবস্থান জানতে চান। পরে তিনি ঘরে আছেন বললে দুই যুবক ঘরে ঢুকেই এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এরপর তারা দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। এ সময় বাড়িতে কাজের দুই-তিন জন লোক ছাড়া কেউ ছিল না। স্থানীয়রা জানান, এমপি লিটনের বাড়ির পাশে স্থানীয়দের আয়োজনে একটি ইসলামী জলসার (তাফসিরুল) মাহফিল ছিল। বাদ আসর থেকে শুরু হওয়া তাফসিরুল মাহফিলে আশপাশের লোকজনসহ বহিরাগত লোকজনের সমাগম ছিল। ২০১৫ সালের দুই অক্টোবর সকালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোপালচরণ গ্রামের বাড়ির পাশের সড়কে চাচার সঙ্গে হাঁটতে বের হয় শিশু শাহাদাত। তখন সে এমপি লিটনের গুলিতে আহত হয়। এই ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক আন্দোলন হয়। তিন অক্টোবর রাতে শাহাদাতের বাবা সাজু মিয়া হত্যাচেষ্টা ও গুরুতর জখমের অভিযোগে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ওই দিনই সন্ধ্যায় এমপি তার আত্মীয়ের মাধ্যমে দুইটি অস্ত্র থানায় জমা দেন। ৬ অক্টোবর রাতে বসতবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে উপজেলার উত্তর শাহবাজ গ্রামের হাফিজার রহমান ম-ল বাদী হয়ে এমপিকে প্রধান আসামি করে মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে একই থানায় আরেকটি মামলা করেন। ১৪ অক্টোবর রাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে তিনি জামিন পান।