ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর প্রস্তাব পেশ করতে যৌথ সংবাদ সম্মেলন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১২:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০২০
  • / ২২২ বার পড়া হয়েছে

গাংনী অফিস:
‘জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ অর্থ-বছরের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর প্রস্তাব পেশ করতে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট খুলনা বিভাগে কার্যরত ১০ জেলার প্রতিনিধি ও এইড ফাউন্ডেশন। সংবাদ সম্মেলনে সকল তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ ও সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে দুইটিতে নামিয়ে আনার জোর দাবি জানানো হয়। আগামী অর্থ-বছরের জন্য সকল তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও করারোপের প্রস্তাব পেশ করার পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর ‘জাতীয় তামাক কর নীতি’ প্রণয়নসহ নানাা সুপারিশও পেশ করে তারা। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় মিটিং সফটওয়্যার ‘জুম’ এ ‘বাজেট প্রতিক্রিয়া: তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনির্দিষ্ট করারোপ ও বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এইড ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে এইড ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জনাব শাগুফতা সুলতানা সাংবাদিকদের কাছে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধির প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেখানে সিগারেটের মূল্যস্তর ৪টি থেকে কমিয়ে ২টি নির্ধারণ করে নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ৬৫+ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং উচ্চস্তরে ১০ শলাকা মূল্য ১২৫+ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। বিড়িতে বিভিন্ন বিভাজন তুলে ফিল্টার ছাড়া ২৫ শলাকা খুচরা মূল্য ৪০ টাকা, ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৬.৮৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং ফিল্টারসহ ২০ শলাকা খুচরা মূল্য ৩২ টাকা; ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৫.৪৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪১ টাকা; ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৫.৭১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৩ টাকা; ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৩.৪৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। একইসাথে সকল তামাকজাত পণ্যে ১৫% ভ্যাট আরোপের পাশাপাশি ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপেরও প্রস্তাব করা হয়।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত এ কর কাঠামো বাস্তবায়ন হলে সিগারেট আসক্তির হার ১৩.৬% এর কাছাকাছি থেকে কমে প্রায় ১১.৯% এ নেমে আসবে এবং বিড়ি আসক্তির হার ৫.০% থেকে ৩.৩% এ নেমে আসবে, যা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথ এগিয়ে নেবে। একইসঙ্গে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব হবে। যা করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বাংলাদেশে ১,২৬,০০০ জন মারা যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, অথচ একইসময়ে (২০১৭-১৮) তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের পরিমাণ মাত্র ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ২০ লক্ষ ধুমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দেবে, ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এতে ৬ লক্ষ ধূমপায়ীর জীবন রক্ষা হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান কর ব্যবস্থা তামাক কোম্পানীকে যেভাবে লাভবান করছে তাও বন্ধ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য সুপারিশ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিড়ির দাম যথেষ্ট বাড়িয়ে সস্তা সিগারেটের সাথে এর দামের পার্থক্য কমিয়ে আনা যাতে ব্যবহারকারীর একটির বদলে অন্যটি ব্যবহারের সুযোগ কমে আসে, সকল তামাক পণ্য প্যাকেজিং এর মানদণ্ড ও পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া, মূল্যস্ফীতি ও আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করা, কঠোর লাইসেন্সিং ও ট্রেসিং ব্যবস্থাসহ তামাক কর প্রশাসন শক্তিশালী করা, কর ফাঁকির জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রহণ, ই-সিগারেটের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা এবং অবিলম্বে একটি সময়োপযোগী, সহজ ও কার্যকর ‘জাতীয় তামাক কর নীতি’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে এইড ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী তারিকুল ইসলাম পলাশের সভাপতিত্বে সঞ্চলনা করেন এইড ফাউন্ডেশনের ন্যাশনাল প্রোগাম অফিসার আবু নাসের অনীক। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবদেন দাতা সংস্থা দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, বিইইআর এর প্রোগাম অফিসার হামিদুল হক হিল্লোল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর প্রস্তাব পেশ করতে যৌথ সংবাদ সম্মেলন

আপলোড টাইম : ০৯:১২:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০২০

গাংনী অফিস:
‘জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ অর্থ-বছরের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর প্রস্তাব পেশ করতে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট খুলনা বিভাগে কার্যরত ১০ জেলার প্রতিনিধি ও এইড ফাউন্ডেশন। সংবাদ সম্মেলনে সকল তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ ও সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে দুইটিতে নামিয়ে আনার জোর দাবি জানানো হয়। আগামী অর্থ-বছরের জন্য সকল তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও করারোপের প্রস্তাব পেশ করার পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর ‘জাতীয় তামাক কর নীতি’ প্রণয়নসহ নানাা সুপারিশও পেশ করে তারা। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় মিটিং সফটওয়্যার ‘জুম’ এ ‘বাজেট প্রতিক্রিয়া: তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনির্দিষ্ট করারোপ ও বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এইড ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে এইড ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জনাব শাগুফতা সুলতানা সাংবাদিকদের কাছে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধির প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেখানে সিগারেটের মূল্যস্তর ৪টি থেকে কমিয়ে ২টি নির্ধারণ করে নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ৬৫+ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং উচ্চস্তরে ১০ শলাকা মূল্য ১২৫+ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। বিড়িতে বিভিন্ন বিভাজন তুলে ফিল্টার ছাড়া ২৫ শলাকা খুচরা মূল্য ৪০ টাকা, ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৬.৮৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং ফিল্টারসহ ২০ শলাকা খুচরা মূল্য ৩২ টাকা; ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৫.৪৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪১ টাকা; ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৫.৭১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৩ টাকা; ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৩.৪৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। একইসাথে সকল তামাকজাত পণ্যে ১৫% ভ্যাট আরোপের পাশাপাশি ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপেরও প্রস্তাব করা হয়।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত এ কর কাঠামো বাস্তবায়ন হলে সিগারেট আসক্তির হার ১৩.৬% এর কাছাকাছি থেকে কমে প্রায় ১১.৯% এ নেমে আসবে এবং বিড়ি আসক্তির হার ৫.০% থেকে ৩.৩% এ নেমে আসবে, যা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথ এগিয়ে নেবে। একইসঙ্গে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব হবে। যা করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বাংলাদেশে ১,২৬,০০০ জন মারা যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, অথচ একইসময়ে (২০১৭-১৮) তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের পরিমাণ মাত্র ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ২০ লক্ষ ধুমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দেবে, ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এতে ৬ লক্ষ ধূমপায়ীর জীবন রক্ষা হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান কর ব্যবস্থা তামাক কোম্পানীকে যেভাবে লাভবান করছে তাও বন্ধ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য সুপারিশ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিড়ির দাম যথেষ্ট বাড়িয়ে সস্তা সিগারেটের সাথে এর দামের পার্থক্য কমিয়ে আনা যাতে ব্যবহারকারীর একটির বদলে অন্যটি ব্যবহারের সুযোগ কমে আসে, সকল তামাক পণ্য প্যাকেজিং এর মানদণ্ড ও পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া, মূল্যস্ফীতি ও আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করা, কঠোর লাইসেন্সিং ও ট্রেসিং ব্যবস্থাসহ তামাক কর প্রশাসন শক্তিশালী করা, কর ফাঁকির জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রহণ, ই-সিগারেটের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা এবং অবিলম্বে একটি সময়োপযোগী, সহজ ও কার্যকর ‘জাতীয় তামাক কর নীতি’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে এইড ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী তারিকুল ইসলাম পলাশের সভাপতিত্বে সঞ্চলনা করেন এইড ফাউন্ডেশনের ন্যাশনাল প্রোগাম অফিসার আবু নাসের অনীক। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবদেন দাতা সংস্থা দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, বিইইআর এর প্রোগাম অফিসার হামিদুল হক হিল্লোল।