ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাইক দুর্ঘটনায় তরুণদের মৃত্যু চাই আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর ২০২১
  • / ১১ বার পড়া হয়েছে

দেশে মোটরসাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। দেশেই উৎপাদনের কারণে দাম কমায় এবং যানজট এড়িয়ে চলতে পারায় এর চাহিদা ক্রমেই বাড়তির দিকে। ২০১০ সালে নিবন্ধিত যানবাহনের প্রায় ৫৩ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল; সেখানে ২০২১ সালে এ হার প্রায় ৭০ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরে প্রতিদিন গড়ে ৯৪৫টি নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে। বিআরটিএ’র তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সাল পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৫৫ হাজার ৫১৪টি। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এ সংখ্যা হয়েছে ৩৪ লাখ ১২ হাজার ৭৩০টি। এর বাইরে আরো কয়েক লাখ অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে।

দুশ্চিন্তার কারণ হলো, দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার যেমন দ্রুত বাড়ছে, ঠিক তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাইক দুর্ঘটনা। গবেষণার তথ্যানুযায়ী, চার চাকার গাড়ির তুলনায় মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ গুণ। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, ২০১৯ সালে সারা দেশে সড়কপথে দুর্ঘটনার ২১ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেলের। আর গত বছর এ হার বেড়ে হয় ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে সড়কে মৃত্যুর ২৮ শতাংশ ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ৩১ শতাংশ।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ৮ নভেম্বর নবম শ্রেণীর তিন ছাত্র এবং চলতি ১২ নভেম্বর একই জেলার ভূঞাপুরে আরো তিন কিশোর বাইক নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে প্রাণ হারালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কিশোর-তরুণদের মৃত্যুর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। সাম্প্রতিক সময়ে মোটরবাইক কম বয়সীদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কিশোর-তরুণরা সহজাত প্রবৃত্তির কারণেই গতি ভালোবাসে। এ কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের ৭৯ শতাংশই একুশ বছরের কম বয়সী। ১৭ শতাংশ ত্রিশের কম বয়সী। বাকি ৪ শতাংশের বয়স ত্রিশের বেশি। দেখা যাচ্ছে, বাইক দুর্ঘটনার সাথে বয়সের সম্পর্ক রয়েছে।
দুর্ঘটনায় যে বয়সের তরুণরা মারা যাচ্ছে, সেই বয়সে তাদের মধ্যে পুরুষত্বের অহং কাজ করে। বন্ধুদের সামনে নিজেকে জাহির করতে মোটরসাইকেল কিনতে চায়। আবার রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে কিশোর-তরুণরা মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। যখন দেখে মোটরসাইকেল থাকলে ক্ষমতার দাপট দেখানো যায়, তখনই সামর্থ্যবান পরিবারের কিশোররা বাইক পেতে চায়। এ প্রবণতা রোধ করতে বাবা-মাকে সন্তানকে বোঝাতে হবে মোটরসাইকেলের কুফল কী। সেই সাথে কিশোর-তরুণদের দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মোটরসাইকেলে মহড়া বন্ধ করতে হবে। অবশ্য, এ সিদ্ধান্ত রাজনীতিকদেরই নিতে হবে।

লক্ষণীয়, ১৮ বছরের কম বয়সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া না গেলেও অনেক কিশোর অবাধে মোটরসাইকেল চালায়। সড়কে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নজরদারি ঢিলেঢালা হওয়া এর অন্যতম কারণ। তাদের গতির খেলায় মেতে ওঠার পরিণামে ঘটে দুর্ঘটনা। বাড়ে হতাহতের ঘটনা। দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে, কিশোর-তরুণদের বাইক চালানো বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হবে যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তাদের কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি না করা। গাড়ির সিসিও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিএসটিআইয়ের গাইডলাইন মেনে ল্যাব টেস্টে উত্তীর্ণ হেলমেট বাজারে বিক্রি করতে হবে।
আইনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালালে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ছয় মাস কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ কথাও মনে রাখা জরুরি, শুধু আইন করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। অভিভাবকসহ অংশীজনদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে, মোটরসাইকেল ঝুঁঁকিপূর্ণ। সন্তানরা বায়না ধরলেই বাইক কিনে দেয়া যাবে না। একই সাথে অদক্ষ চালকের জন্য মোটরসাইকেল কত ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। এ ছাড়া স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রাফিক নিয়ম অন্তর্ভুক্ত থাকা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষার্থীরা যানবাহন সম্পর্কে জেনে সচেতন হতে পারে। তবেই সম্ভব দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা।

 

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাইক দুর্ঘটনায় তরুণদের মৃত্যু চাই আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা

আপলোড টাইম : ১০:৪৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর ২০২১

দেশে মোটরসাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। দেশেই উৎপাদনের কারণে দাম কমায় এবং যানজট এড়িয়ে চলতে পারায় এর চাহিদা ক্রমেই বাড়তির দিকে। ২০১০ সালে নিবন্ধিত যানবাহনের প্রায় ৫৩ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল; সেখানে ২০২১ সালে এ হার প্রায় ৭০ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরে প্রতিদিন গড়ে ৯৪৫টি নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে। বিআরটিএ’র তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সাল পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৫৫ হাজার ৫১৪টি। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এ সংখ্যা হয়েছে ৩৪ লাখ ১২ হাজার ৭৩০টি। এর বাইরে আরো কয়েক লাখ অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে।

দুশ্চিন্তার কারণ হলো, দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার যেমন দ্রুত বাড়ছে, ঠিক তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাইক দুর্ঘটনা। গবেষণার তথ্যানুযায়ী, চার চাকার গাড়ির তুলনায় মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ গুণ। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, ২০১৯ সালে সারা দেশে সড়কপথে দুর্ঘটনার ২১ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেলের। আর গত বছর এ হার বেড়ে হয় ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে সড়কে মৃত্যুর ২৮ শতাংশ ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ৩১ শতাংশ।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ৮ নভেম্বর নবম শ্রেণীর তিন ছাত্র এবং চলতি ১২ নভেম্বর একই জেলার ভূঞাপুরে আরো তিন কিশোর বাইক নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে প্রাণ হারালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কিশোর-তরুণদের মৃত্যুর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। সাম্প্রতিক সময়ে মোটরবাইক কম বয়সীদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কিশোর-তরুণরা সহজাত প্রবৃত্তির কারণেই গতি ভালোবাসে। এ কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের ৭৯ শতাংশই একুশ বছরের কম বয়সী। ১৭ শতাংশ ত্রিশের কম বয়সী। বাকি ৪ শতাংশের বয়স ত্রিশের বেশি। দেখা যাচ্ছে, বাইক দুর্ঘটনার সাথে বয়সের সম্পর্ক রয়েছে।
দুর্ঘটনায় যে বয়সের তরুণরা মারা যাচ্ছে, সেই বয়সে তাদের মধ্যে পুরুষত্বের অহং কাজ করে। বন্ধুদের সামনে নিজেকে জাহির করতে মোটরসাইকেল কিনতে চায়। আবার রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে কিশোর-তরুণরা মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। যখন দেখে মোটরসাইকেল থাকলে ক্ষমতার দাপট দেখানো যায়, তখনই সামর্থ্যবান পরিবারের কিশোররা বাইক পেতে চায়। এ প্রবণতা রোধ করতে বাবা-মাকে সন্তানকে বোঝাতে হবে মোটরসাইকেলের কুফল কী। সেই সাথে কিশোর-তরুণদের দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মোটরসাইকেলে মহড়া বন্ধ করতে হবে। অবশ্য, এ সিদ্ধান্ত রাজনীতিকদেরই নিতে হবে।

লক্ষণীয়, ১৮ বছরের কম বয়সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া না গেলেও অনেক কিশোর অবাধে মোটরসাইকেল চালায়। সড়কে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নজরদারি ঢিলেঢালা হওয়া এর অন্যতম কারণ। তাদের গতির খেলায় মেতে ওঠার পরিণামে ঘটে দুর্ঘটনা। বাড়ে হতাহতের ঘটনা। দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে, কিশোর-তরুণদের বাইক চালানো বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হবে যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তাদের কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি না করা। গাড়ির সিসিও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিএসটিআইয়ের গাইডলাইন মেনে ল্যাব টেস্টে উত্তীর্ণ হেলমেট বাজারে বিক্রি করতে হবে।
আইনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালালে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ছয় মাস কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ কথাও মনে রাখা জরুরি, শুধু আইন করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। অভিভাবকসহ অংশীজনদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে, মোটরসাইকেল ঝুঁঁকিপূর্ণ। সন্তানরা বায়না ধরলেই বাইক কিনে দেয়া যাবে না। একই সাথে অদক্ষ চালকের জন্য মোটরসাইকেল কত ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। এ ছাড়া স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রাফিক নিয়ম অন্তর্ভুক্ত থাকা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষার্থীরা যানবাহন সম্পর্কে জেনে সচেতন হতে পারে। তবেই সম্ভব দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা।