ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) বছরে লোকসান গুনছে ৩৩৬ কোটি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০১৭
  • / ৩৩৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: বিটিটিবি থেকে বিটিসিএলে নামকরণ করে স্বায়ত্তশাসন দিলেও লাভের মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরে লোকসান গুনতে হয়েছে ৩৩৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৫০ টাকা।  আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ২৮৫ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার ৭৩১ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে ৩০১ কোটি টাকা। অব্যাহত লোকসানের মুখে প্রতিষ্ঠানটি এখন জর্জরিত। অথচ আধুনিকায়ন ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যেই ২০০৮ সালে বিটিটিবিকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) নামকরণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছরেও বিটিসিএল লাভের মুখ দেখেনি। বরং বেশ কিছু প্রকল্পে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় বিটিসিএল কর্মকর্তাদের সহায়তারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। ভিওআইপি ব্যবসায় সহায়তার মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক পাঁচ এমডিসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলাও করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের দায়েরকৃত মামলায় বলা হয়, বিটিসিএল কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে একটি চক্র আন্তর্জাতিক কলের ডাটা মুছে ফেলে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবশ্য বেসরকারি খাতে সেলফোন ও ফিক্সডফোন সেবা চালু হওয়ায় আগে থেকেই প্রতিযোগিতার মুখে হিমশিম খাচ্ছিল বিটিসিএল। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক কল ব্যবসায় বিটিসিএলের পাশাপাশি আরো তিনটি প্রতিষ্ঠানকে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেয়া হয়। এতে বিটিসিএলের একচেটিয়াত্ব হ্রাস পায়। এরপর থেকে রীতিমতো মিইয়ে যেতে থাকে বিটিসিএল। প্রতিবছরই লোকসানের ধকল সইতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু এ থেকে উত্তরণে কোনো চেষ্টাই নেই সংস্থাটির। অপরদিকে বেসরকারি সেলফোন ও পিএসটিএন অপারেটররা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কৌশল নিয়ে এগুতে থাকে। ফলে গ্রাহক তাদের দিকেই ঝুঁকতে থাকে। অন্যদিকে আয় বাড়াতে কিংবা গ্রাহক ধরে রাখতে বিটিসিএল কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে বিটিসিএল দিন দিন গ্রাহক হারাতে থাকে। এছাড়া গ্রাহক ল্যান্ড ফোন নিয়ে বিপাকে পড়লে অভিযোগ দিলেও দিনের পর দিন তার সমাধান হয় না। এভাবে অনেকেই ল্যান্ড ফোন ব্যবহার থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। অন্যদিকে বিটিসিএলের সংযোগও কমতে থাকে। গত অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে  এর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বিটিসিএলের অডিট রিপোর্টে দেখা যায়- সারা দেশে বিটিসিএলের টেলিফোন সংযোগ রয়েছে ৭ লাখ ১৬ হাজার। অথচ তাদের ক্ষমতা রয়েছে ১৪ লাখ ৪৪ হাজার সংযোগ দেয়ার। এ হিসাব অনুযায়ী এখনও অর্ধেক সংযোগও দেয়া হয়নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০১৩ সালে প্রায় ৯ লাখ গ্রাহক ছিল। মাত্র তিন বছরে বিটিসিএলের গ্রাহক কমেছে কমপক্ষে ২ লাখ। সংযোগক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার না হওয়ায় সংস্থাটির আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিটিসিএল সূত্র মতে, ২০০৫ সালে সে সময়ের বিটিটিবির সংযোগক্ষমতা ছিল প্রায় ১০ লাখ। আর বিটিসিএলে রূপান্তর হওয়ার পর ২০০৮ সালে সংযোগক্ষমতার ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ ছিল অব্যবহৃত। এ সময় সংযোগ ছিল ৮ লাখ ৩৬ হাজার ১১১টি। ওই বছর সংযোগ কমে যায় ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০০৯ সালে সংযোগক্ষমতার ৩৪ শতাংশই ছিল অব্যবহৃত। ২০১০ সালে সংযোগক্ষমতার ২৬ দশমিক ৭২ শতাংশ অব্যবহৃত ছিল। ২০১১ সালে সংযোগক্ষমতার ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ অব্যবহৃত ছিল। ২০১২ সালে সংযোগ কমে যায় ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ অবস্থায় বিটিসিএল গ্রাহক বাড়াতে সংযোগ মূল্য কমালেও  নিম্নমানের সেবার কারণে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে পারেনি।
সেবার মান উন্নয়ন ও সেবাসমূহের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার সংস্থাটিকে এগিয়ে নিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এক্ষেত্রে বিটিসিএলকে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় যে উদ্দেশ্যে বিটিসিএল কোম্পানি করা হয়েছিল তা পুরোপুরি ব্যর্থ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে বিটিসিএলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কী করার আছে। যেখানে হাতের কাছে মোবাইল ফোন, সেখানে ঘরে থাকা ল্যান্ড ফোনে কতটা ভরসা করবেন গ্রাহক।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) বছরে লোকসান গুনছে ৩৩৬ কোটি

আপলোড টাইম : ১১:২৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: বিটিটিবি থেকে বিটিসিএলে নামকরণ করে স্বায়ত্তশাসন দিলেও লাভের মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরে লোকসান গুনতে হয়েছে ৩৩৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৫০ টাকা।  আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ২৮৫ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার ৭৩১ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে ৩০১ কোটি টাকা। অব্যাহত লোকসানের মুখে প্রতিষ্ঠানটি এখন জর্জরিত। অথচ আধুনিকায়ন ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যেই ২০০৮ সালে বিটিটিবিকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) নামকরণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছরেও বিটিসিএল লাভের মুখ দেখেনি। বরং বেশ কিছু প্রকল্পে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় বিটিসিএল কর্মকর্তাদের সহায়তারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। ভিওআইপি ব্যবসায় সহায়তার মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক পাঁচ এমডিসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলাও করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের দায়েরকৃত মামলায় বলা হয়, বিটিসিএল কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে একটি চক্র আন্তর্জাতিক কলের ডাটা মুছে ফেলে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবশ্য বেসরকারি খাতে সেলফোন ও ফিক্সডফোন সেবা চালু হওয়ায় আগে থেকেই প্রতিযোগিতার মুখে হিমশিম খাচ্ছিল বিটিসিএল। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক কল ব্যবসায় বিটিসিএলের পাশাপাশি আরো তিনটি প্রতিষ্ঠানকে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেয়া হয়। এতে বিটিসিএলের একচেটিয়াত্ব হ্রাস পায়। এরপর থেকে রীতিমতো মিইয়ে যেতে থাকে বিটিসিএল। প্রতিবছরই লোকসানের ধকল সইতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু এ থেকে উত্তরণে কোনো চেষ্টাই নেই সংস্থাটির। অপরদিকে বেসরকারি সেলফোন ও পিএসটিএন অপারেটররা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কৌশল নিয়ে এগুতে থাকে। ফলে গ্রাহক তাদের দিকেই ঝুঁকতে থাকে। অন্যদিকে আয় বাড়াতে কিংবা গ্রাহক ধরে রাখতে বিটিসিএল কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে বিটিসিএল দিন দিন গ্রাহক হারাতে থাকে। এছাড়া গ্রাহক ল্যান্ড ফোন নিয়ে বিপাকে পড়লে অভিযোগ দিলেও দিনের পর দিন তার সমাধান হয় না। এভাবে অনেকেই ল্যান্ড ফোন ব্যবহার থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। অন্যদিকে বিটিসিএলের সংযোগও কমতে থাকে। গত অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে  এর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বিটিসিএলের অডিট রিপোর্টে দেখা যায়- সারা দেশে বিটিসিএলের টেলিফোন সংযোগ রয়েছে ৭ লাখ ১৬ হাজার। অথচ তাদের ক্ষমতা রয়েছে ১৪ লাখ ৪৪ হাজার সংযোগ দেয়ার। এ হিসাব অনুযায়ী এখনও অর্ধেক সংযোগও দেয়া হয়নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০১৩ সালে প্রায় ৯ লাখ গ্রাহক ছিল। মাত্র তিন বছরে বিটিসিএলের গ্রাহক কমেছে কমপক্ষে ২ লাখ। সংযোগক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার না হওয়ায় সংস্থাটির আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিটিসিএল সূত্র মতে, ২০০৫ সালে সে সময়ের বিটিটিবির সংযোগক্ষমতা ছিল প্রায় ১০ লাখ। আর বিটিসিএলে রূপান্তর হওয়ার পর ২০০৮ সালে সংযোগক্ষমতার ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ ছিল অব্যবহৃত। এ সময় সংযোগ ছিল ৮ লাখ ৩৬ হাজার ১১১টি। ওই বছর সংযোগ কমে যায় ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০০৯ সালে সংযোগক্ষমতার ৩৪ শতাংশই ছিল অব্যবহৃত। ২০১০ সালে সংযোগক্ষমতার ২৬ দশমিক ৭২ শতাংশ অব্যবহৃত ছিল। ২০১১ সালে সংযোগক্ষমতার ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ অব্যবহৃত ছিল। ২০১২ সালে সংযোগ কমে যায় ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ অবস্থায় বিটিসিএল গ্রাহক বাড়াতে সংযোগ মূল্য কমালেও  নিম্নমানের সেবার কারণে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে পারেনি।
সেবার মান উন্নয়ন ও সেবাসমূহের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার সংস্থাটিকে এগিয়ে নিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এক্ষেত্রে বিটিসিএলকে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় যে উদ্দেশ্যে বিটিসিএল কোম্পানি করা হয়েছিল তা পুরোপুরি ব্যর্থ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে বিটিসিএলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কী করার আছে। যেখানে হাতের কাছে মোবাইল ফোন, সেখানে ঘরে থাকা ল্যান্ড ফোনে কতটা ভরসা করবেন গ্রাহক।