ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে সাইবার অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর-তরুণরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মে ২০২১
  • / ৫৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশে অনলাইন এবং অ্যাপ ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও মানব পাচার কিছুই বাদ যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয়, এতে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-তরুণরা। সম্প্রতি সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ এক নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় ভারতের ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ পাঁচ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের একজন এ ভি হৃদয়। তিনি ‘টিকটক হৃদয়’ নামে পরিচিত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, টিকটক অ্যাপে কাজ করার প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচারের অপরাধ করে আসছিলো হৃদয়। তিনিসহ ভারতে আটককৃতরা বাংলাদেশ থেকে এক তরুণীকে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে নির্যাতন করে। সেই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরেই ভারতের পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। তবে মেয়েটির খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
মেয়েটির বাবা ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মামলা করার পর বাংলাদেশের পুলিশও অভিযুক্তদের ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে। পুলিশের দাবি, তারা টিকটক ভিডিও করার আড়ালে একটি সংঘবদ্ধ নারী পাচারকারী চক্র হিসেবে কাজ করত। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে আরেকটি অনলাইন অপরাধী চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি। তার ‘স্ট্রিমকার’ নামে একটি জুয়ার অ্যাপ ব্যবহার করে দেশের বাইরে টাকা পাচার করে আসছিল। এই চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তারা এই জুয়ায় বিটকয়েনসহ আরো কিছু অনলাইন মুদ্রা ব্যবহার করত। অনলাইনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা, যৌন হয়রানিসহ আরও অনেক অপরাধ বাংলাদেশে আগে থেকেই চলছে। কিন্তু নতুন ধরনের এই অপরাধ শঙ্কার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর এইসব অপরাধের জন্য অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপে অপরাধীদের নানা ধরনের গ্রুপ আছে। তদন্তে সেসব গ্রুপ-এর নাম জানা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর এলএসডি মাদকের সন্ধান পেয়েছে। এই মাদকের যোগাযোগও চলে অনলাইনে। ফেসবুকে এই মাদক সেবন ও সরবারাহকারীদের একাধিক গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া গত অক্টোবরে অনলাইন পর্নোগ্রাফির সাথে যুক্ত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়ের তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা পর্নোগ্রফির বাজার গড়ে তুলেছিলো উন্নত বিশ্বে। নানা প্রলোভন আর বন্ধুত্বের আড়ালে তারা পর্নোগ্রাফি তৈরি করত। এর আগেও ২০১৪ সালে এরকম আরেকটি গ্রুপ ধরা পড়ে।
ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে ২০১৮ সালে সরাসরি ঢাকা শহর থেকে অভিযোগ আসে এক হাজার ৭৬৫টি। এছাড়া হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায় ছয় হাজার ৩০০। ২০১৯ সালে সরাসরি অভিযোগের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৯৩২টি। আর হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায় ৯ হাজার ২২৭টি। ২০১৯ সালে মোট অভিযোগের ৫৩ শতাংশ করেছেন পুরষ আর বাকি ৪৭ শতাংশ।
সমাধান কী?
অনলাইনকেন্দ্রিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বিভিন্ন অ্যাপস বন্ধের প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে। তবে তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা মনে করেন, অ্যাপস বন্ধ করা যেমন কঠিন তেমনি সেগুলো নিষিদ্ধ করেও লাভ নাই। ‘নিষিদ্ধ করে ব্যবহার ঠেকানো যায় না। এর জন্য দুইটি বিষয়ে জোর দেয়া প্রয়োজন। সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের সক্ষমতা আরো বাড়ানো এবং দরকার প্যারেন্টাল গাইডেন্স,’ বলেন তিনি। তার মতে, ‘সন্তান যে গ্যাজেটটি ব্যবহার করছে তার প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অন করে দিতে হবে। ফলে সন্তান যদি কোনো নিষিদ্ধ অ্যাপ ব্যবহার করে, সাইটে ঢোকে বা গ্রুপে তৎপর হয় তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তার নোটিফিকেশন পাবেন।’
ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে সাইবার অপরাধের ধরন প্রতিদিনই পাল্টে যাচ্ছে। আমরাও সেই অনুযায়ী আমাদের তদন্ত, অনুসন্ধান এবং প্রযুক্তি আপডেট করছি। ঢাকায় সাইবার অরপরাধ দমনে আমরা সক্ষম। কিন্তু সারাদেশে সেই সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। তবে কাজ চলছে। প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হচ্ছে।’ তিনি জানান, তাদের নীতি হলো কোনো অ্যাপ বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ঢালাও বন্ধ না করা। অপরাধ চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া তবে জুয়াসহ আরও কিছু অ্যাপ আছে যা, নিষিদ্ধ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাংলাদেশে সাইবার অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর-তরুণরা

আপলোড টাইম : ০৯:০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মে ২০২১

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশে অনলাইন এবং অ্যাপ ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও মানব পাচার কিছুই বাদ যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয়, এতে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-তরুণরা। সম্প্রতি সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ এক নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় ভারতের ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ পাঁচ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের একজন এ ভি হৃদয়। তিনি ‘টিকটক হৃদয়’ নামে পরিচিত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, টিকটক অ্যাপে কাজ করার প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচারের অপরাধ করে আসছিলো হৃদয়। তিনিসহ ভারতে আটককৃতরা বাংলাদেশ থেকে এক তরুণীকে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে নির্যাতন করে। সেই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরেই ভারতের পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। তবে মেয়েটির খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
মেয়েটির বাবা ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মামলা করার পর বাংলাদেশের পুলিশও অভিযুক্তদের ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে। পুলিশের দাবি, তারা টিকটক ভিডিও করার আড়ালে একটি সংঘবদ্ধ নারী পাচারকারী চক্র হিসেবে কাজ করত। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে আরেকটি অনলাইন অপরাধী চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি। তার ‘স্ট্রিমকার’ নামে একটি জুয়ার অ্যাপ ব্যবহার করে দেশের বাইরে টাকা পাচার করে আসছিল। এই চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তারা এই জুয়ায় বিটকয়েনসহ আরো কিছু অনলাইন মুদ্রা ব্যবহার করত। অনলাইনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা, যৌন হয়রানিসহ আরও অনেক অপরাধ বাংলাদেশে আগে থেকেই চলছে। কিন্তু নতুন ধরনের এই অপরাধ শঙ্কার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর এইসব অপরাধের জন্য অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপে অপরাধীদের নানা ধরনের গ্রুপ আছে। তদন্তে সেসব গ্রুপ-এর নাম জানা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর এলএসডি মাদকের সন্ধান পেয়েছে। এই মাদকের যোগাযোগও চলে অনলাইনে। ফেসবুকে এই মাদক সেবন ও সরবারাহকারীদের একাধিক গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া গত অক্টোবরে অনলাইন পর্নোগ্রাফির সাথে যুক্ত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়ের তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা পর্নোগ্রফির বাজার গড়ে তুলেছিলো উন্নত বিশ্বে। নানা প্রলোভন আর বন্ধুত্বের আড়ালে তারা পর্নোগ্রাফি তৈরি করত। এর আগেও ২০১৪ সালে এরকম আরেকটি গ্রুপ ধরা পড়ে।
ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে ২০১৮ সালে সরাসরি ঢাকা শহর থেকে অভিযোগ আসে এক হাজার ৭৬৫টি। এছাড়া হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায় ছয় হাজার ৩০০। ২০১৯ সালে সরাসরি অভিযোগের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৯৩২টি। আর হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায় ৯ হাজার ২২৭টি। ২০১৯ সালে মোট অভিযোগের ৫৩ শতাংশ করেছেন পুরষ আর বাকি ৪৭ শতাংশ।
সমাধান কী?
অনলাইনকেন্দ্রিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বিভিন্ন অ্যাপস বন্ধের প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে। তবে তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা মনে করেন, অ্যাপস বন্ধ করা যেমন কঠিন তেমনি সেগুলো নিষিদ্ধ করেও লাভ নাই। ‘নিষিদ্ধ করে ব্যবহার ঠেকানো যায় না। এর জন্য দুইটি বিষয়ে জোর দেয়া প্রয়োজন। সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের সক্ষমতা আরো বাড়ানো এবং দরকার প্যারেন্টাল গাইডেন্স,’ বলেন তিনি। তার মতে, ‘সন্তান যে গ্যাজেটটি ব্যবহার করছে তার প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অন করে দিতে হবে। ফলে সন্তান যদি কোনো নিষিদ্ধ অ্যাপ ব্যবহার করে, সাইটে ঢোকে বা গ্রুপে তৎপর হয় তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তার নোটিফিকেশন পাবেন।’
ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে সাইবার অপরাধের ধরন প্রতিদিনই পাল্টে যাচ্ছে। আমরাও সেই অনুযায়ী আমাদের তদন্ত, অনুসন্ধান এবং প্রযুক্তি আপডেট করছি। ঢাকায় সাইবার অরপরাধ দমনে আমরা সক্ষম। কিন্তু সারাদেশে সেই সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। তবে কাজ চলছে। প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হচ্ছে।’ তিনি জানান, তাদের নীতি হলো কোনো অ্যাপ বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ঢালাও বন্ধ না করা। অপরাধ চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া তবে জুয়াসহ আরও কিছু অ্যাপ আছে যা, নিষিদ্ধ।