ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বন্দুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ মাদকব্যবসায়ী পাপ্পু খোড়ার দাফনকার্য সম্পন্ন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ নভেম্বর ২০১৮
  • / ৩৫২ বার পড়া হয়েছে

চোরাকারবারী থেকে হয়ে ওঠে মাদকের গডফাদার
দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের উজলপুর খড়কুড়োর মাঠে পুলিশের সাথে মাদকব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আবুল বাশার পাপ্পু ওরফে পাপ্পু খোড়ার (৪২) দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যার দিকে লাশ নিজ গ্রাম আকন্দবাড়িয়া আনলে শতশত নারী পুরুষ তার লাশ দেখতে ছুটে আসে। বাদ এশা ঈদগাহ মাঠে জানাযা শেষে গ্রামের পুরাতন কবরস্থানে তার দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
কে এই পাপ্পু: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাবেগমপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা মাদকখ্যাত নামে পরিচিত আকন্দবাড়িয়া গ্রামের মাঝপাড়ার বজলুর রহমানের ছেলে আবুল বাশার পাপ্পু ওরফে পাপ্পু খোড়া (৪২)। পিতা বজলুর রহমানের ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে পাপ্পু ছিলো সেজো ছেলে। মাদকব্যবসায়ী বলে এক শ্রেণীর মানুষ যেমন তাকে ঘৃনা করতো তেমনি আর এক শ্রেণীর মানুষ তাকে ভালোও বাসতো। স্থানীয় কয়েকজন জানায়, গরীব প্রতিবেশীদের বিপদে সে প্রতিনিয়ত সহযোগীতা করতো। নিয়মিত সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলো। সে ইউনিয়ন যুবলীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ছিলো বলে জানা যায়। সাংসারিক জীবনে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, তিনটি বিবাহে আবদ্ধ হয়েছিলেন। প্রথম স্ত্রীর ১ মেয়ে পিয়াসা (১৯) অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী ও এক ছেলে জাকারিয়া (১৪) জেএসসি পরিক্ষার্থী। ২য় স্ত্রী মসজিদ গাঙপাড়ার মৃত মিজানুরের স্ত্রী বেবি খাতুন ও ৩য় স্ত্রী ঈদগাঁহ পাড়ার মৃত বদার স্ত্রী আনোয়ারা ওরফে আনু।


কিভাবে পাপ্পুর উত্থান: পিতা বজলুর রহমানের ১০ সন্তান হওয়ায় সংসারের দৈন্যতায় লেখাপড়া ৩য় শ্রেণীর গন্ডি পার হতে পারেনি আবুল বাশার পাপ্পু। নাবালক ছেড়ে সাবালকের কোটায় পা দেওয়ার সাথে সাথে পিতার সাথে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতেন। পরে সীমান্তের পার্শবর্তী গ্রাম হওয়ায় ভারতীয় বিভিন্ন পন্যের অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে নব্বই দশকে দিকে চিনি ও লবনের ব্যবসা শুরু করে একদল চোরাকারবারীদের সাথে। পরে কিছু অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসলে ভারতের আলোচিত বিন্দা নামের এক ব্যক্তির সাথে শুরু করে সুতার ব্যবসা। মহাজন বিন্দার সাথে দীর্ঘদিন সুতার ব্যাবসা, ভারতীয় শাড়ী, লাভলী কাপড় ও ভিছিবির ব্যবসা করে বেশ অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে তার। পরে ভারতের বিন্দার পরামর্শে ২০০৮ সালের দিকে শুরু করে মাদকের ব্যবসা। মাদক ব্যবসার শুরুতেই বেশ কয়েকটি বড় চালান আটক হলেও পাপ্পু ছিলো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। শুরুটা খারাপ হলেও ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একচোটিয়া ফেনসিডিলের ব্যবসা করে আসছিলো।
এসময়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে তার ফেনসিডিল ব্যবসার প্রসার ঘটলেও বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি মামলায় নাম হওয়ায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নামে খ্যাতি লাভ করে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি এসে তার ব্যবসায় ধ্বস নামে। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় বেশ কয়েকবার মাদক ও অস্ত্র নিয়ে আটক হওয়ার পর জেল খেটে আবারও পুরনো ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। তবে এ সময়ে মধ্যে তিনি মাদকের ব্যবসা করে গ্রামেই প্রায় অর্ধশত বিঘা জমি কেনে এবং মোটা অংকের অর্থের মালিক বলে জানা যায়। পরিবারের সকল সদস্যরা তার এই পথ থেকে সরে আসতে বললেও কাচা টাকা মোহ তাকে ওই পথ থেকে ফিরে আসতে দেয়নি। অবশেষে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে তার প্রাণ গেলো। নিহতের পূর্ব মহুর্ত পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা ও ৬টি মাদকের মামলা ছিলো বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বন্দুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ মাদকব্যবসায়ী পাপ্পু খোড়ার দাফনকার্য সম্পন্ন

আপলোড টাইম : ১০:৩৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ নভেম্বর ২০১৮

চোরাকারবারী থেকে হয়ে ওঠে মাদকের গডফাদার
দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের উজলপুর খড়কুড়োর মাঠে পুলিশের সাথে মাদকব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আবুল বাশার পাপ্পু ওরফে পাপ্পু খোড়ার (৪২) দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যার দিকে লাশ নিজ গ্রাম আকন্দবাড়িয়া আনলে শতশত নারী পুরুষ তার লাশ দেখতে ছুটে আসে। বাদ এশা ঈদগাহ মাঠে জানাযা শেষে গ্রামের পুরাতন কবরস্থানে তার দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
কে এই পাপ্পু: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাবেগমপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা মাদকখ্যাত নামে পরিচিত আকন্দবাড়িয়া গ্রামের মাঝপাড়ার বজলুর রহমানের ছেলে আবুল বাশার পাপ্পু ওরফে পাপ্পু খোড়া (৪২)। পিতা বজলুর রহমানের ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে পাপ্পু ছিলো সেজো ছেলে। মাদকব্যবসায়ী বলে এক শ্রেণীর মানুষ যেমন তাকে ঘৃনা করতো তেমনি আর এক শ্রেণীর মানুষ তাকে ভালোও বাসতো। স্থানীয় কয়েকজন জানায়, গরীব প্রতিবেশীদের বিপদে সে প্রতিনিয়ত সহযোগীতা করতো। নিয়মিত সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলো। সে ইউনিয়ন যুবলীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ছিলো বলে জানা যায়। সাংসারিক জীবনে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, তিনটি বিবাহে আবদ্ধ হয়েছিলেন। প্রথম স্ত্রীর ১ মেয়ে পিয়াসা (১৯) অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী ও এক ছেলে জাকারিয়া (১৪) জেএসসি পরিক্ষার্থী। ২য় স্ত্রী মসজিদ গাঙপাড়ার মৃত মিজানুরের স্ত্রী বেবি খাতুন ও ৩য় স্ত্রী ঈদগাঁহ পাড়ার মৃত বদার স্ত্রী আনোয়ারা ওরফে আনু।


কিভাবে পাপ্পুর উত্থান: পিতা বজলুর রহমানের ১০ সন্তান হওয়ায় সংসারের দৈন্যতায় লেখাপড়া ৩য় শ্রেণীর গন্ডি পার হতে পারেনি আবুল বাশার পাপ্পু। নাবালক ছেড়ে সাবালকের কোটায় পা দেওয়ার সাথে সাথে পিতার সাথে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতেন। পরে সীমান্তের পার্শবর্তী গ্রাম হওয়ায় ভারতীয় বিভিন্ন পন্যের অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে নব্বই দশকে দিকে চিনি ও লবনের ব্যবসা শুরু করে একদল চোরাকারবারীদের সাথে। পরে কিছু অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসলে ভারতের আলোচিত বিন্দা নামের এক ব্যক্তির সাথে শুরু করে সুতার ব্যবসা। মহাজন বিন্দার সাথে দীর্ঘদিন সুতার ব্যাবসা, ভারতীয় শাড়ী, লাভলী কাপড় ও ভিছিবির ব্যবসা করে বেশ অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে তার। পরে ভারতের বিন্দার পরামর্শে ২০০৮ সালের দিকে শুরু করে মাদকের ব্যবসা। মাদক ব্যবসার শুরুতেই বেশ কয়েকটি বড় চালান আটক হলেও পাপ্পু ছিলো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। শুরুটা খারাপ হলেও ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একচোটিয়া ফেনসিডিলের ব্যবসা করে আসছিলো।
এসময়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে তার ফেনসিডিল ব্যবসার প্রসার ঘটলেও বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি মামলায় নাম হওয়ায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নামে খ্যাতি লাভ করে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি এসে তার ব্যবসায় ধ্বস নামে। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় বেশ কয়েকবার মাদক ও অস্ত্র নিয়ে আটক হওয়ার পর জেল খেটে আবারও পুরনো ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। তবে এ সময়ে মধ্যে তিনি মাদকের ব্যবসা করে গ্রামেই প্রায় অর্ধশত বিঘা জমি কেনে এবং মোটা অংকের অর্থের মালিক বলে জানা যায়। পরিবারের সকল সদস্যরা তার এই পথ থেকে সরে আসতে বললেও কাচা টাকা মোহ তাকে ওই পথ থেকে ফিরে আসতে দেয়নি। অবশেষে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে তার প্রাণ গেলো। নিহতের পূর্ব মহুর্ত পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা ও ৬টি মাদকের মামলা ছিলো বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।