ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০১৯
  • / ২৩১ বার পড়া হয়েছে

জড়িতরা যেন রেয়াত না পায়
শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে যেসব কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়, সেসব বিনা শুল্কে আমদানির সুবিধা দিয়েছে সরকার এটাই বন্ড সুবিধা। এ সুবিধা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে শর্ত রয়েছে আমদানীকৃত কাঁচামালের পুরোটাই কারখানায় ব্যবহার করতে হবে, অন্যত্র বিক্রি করা যাবে না, মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানি করা যাবে না। বাস্তবে এসব শর্ত মানা হয় না। অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে। অপব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান আগেও চিহ্নিত করা হয়েছে; নতুন করে আরো ২২৮ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট নতুন করে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনকে অবহিত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান কত টাকার পণ্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানি করেছে, তারও তদন্ত করছে কমিশনারেট। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট বন্ড দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগে ২২৮ প্রতিষ্ঠানের ৩১৬ মালিককে তলব করে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মঙ্গলবার চিঠি দেওয়া শুরু হয়েছে। চিঠি পাওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কমিশনারেটে হাজির হতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করে ব্যাখ্যা চাইবেন। কমিশনারেট বলছে, যেসব প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেসবের মধ্যে ১০৯টি প্রতিষ্ঠান মূলত কাগজে-কলমে আছে। অনেকগুলোই বাস্তবে অস্তিত্বহীন। আবার অনেকগুলো অকার্যকর, অর্থাৎ একসময় সক্রিয় থাকলেও তিন বছর ধরে এগুলো উৎপাদনে নেই। ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি রপ্তানিকারক ১৩০টি, পরোক্ষ রপ্তানিকারক ৮২টি এবং সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা নেয় ১৫টি প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে অন্তত দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিলেছে, যারা ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেছে। অনিয়মে জড়িত প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে মালিককে তলব করার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে উদ্যোগ সফল করায় ঝামেলা বিস্তর। অতীতে বন্ড দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তলবের চিঠি পাঠানো হলেও অকার্যকর ও অস্তিত্বহীন কারখানার একজন মালিককেও পাওয়া যায়নি। শাস্তি হিসেবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে বন্ড সুবিধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, সাময়িকভাবে বিন (বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর) অকার্যকর করা ও ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত মালিককে না পাওয়ায় পাওনা রাজস্ব আদায়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীর অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। সেটা নিশ্চিত করতে হলে শুধু অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করলেই হবে না, মালিককেও খুঁজে বের করতে হবে। অনিয়মে জড়িত অস্তিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। দোষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জেল বা জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার বা রাষ্ট্র যে সুবিধা দিচ্ছে তার অপব্যবহারকারী যেন রেয়াত না পায়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার

আপলোড টাইম : ০৯:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০১৯

জড়িতরা যেন রেয়াত না পায়
শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে যেসব কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়, সেসব বিনা শুল্কে আমদানির সুবিধা দিয়েছে সরকার এটাই বন্ড সুবিধা। এ সুবিধা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে শর্ত রয়েছে আমদানীকৃত কাঁচামালের পুরোটাই কারখানায় ব্যবহার করতে হবে, অন্যত্র বিক্রি করা যাবে না, মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানি করা যাবে না। বাস্তবে এসব শর্ত মানা হয় না। অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে। অপব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান আগেও চিহ্নিত করা হয়েছে; নতুন করে আরো ২২৮ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট নতুন করে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনকে অবহিত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান কত টাকার পণ্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানি করেছে, তারও তদন্ত করছে কমিশনারেট। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট বন্ড দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগে ২২৮ প্রতিষ্ঠানের ৩১৬ মালিককে তলব করে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মঙ্গলবার চিঠি দেওয়া শুরু হয়েছে। চিঠি পাওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কমিশনারেটে হাজির হতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করে ব্যাখ্যা চাইবেন। কমিশনারেট বলছে, যেসব প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেসবের মধ্যে ১০৯টি প্রতিষ্ঠান মূলত কাগজে-কলমে আছে। অনেকগুলোই বাস্তবে অস্তিত্বহীন। আবার অনেকগুলো অকার্যকর, অর্থাৎ একসময় সক্রিয় থাকলেও তিন বছর ধরে এগুলো উৎপাদনে নেই। ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি রপ্তানিকারক ১৩০টি, পরোক্ষ রপ্তানিকারক ৮২টি এবং সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা নেয় ১৫টি প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে অন্তত দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিলেছে, যারা ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেছে। অনিয়মে জড়িত প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে মালিককে তলব করার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে উদ্যোগ সফল করায় ঝামেলা বিস্তর। অতীতে বন্ড দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তলবের চিঠি পাঠানো হলেও অকার্যকর ও অস্তিত্বহীন কারখানার একজন মালিককেও পাওয়া যায়নি। শাস্তি হিসেবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে বন্ড সুবিধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, সাময়িকভাবে বিন (বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর) অকার্যকর করা ও ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত মালিককে না পাওয়ায় পাওনা রাজস্ব আদায়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীর অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। সেটা নিশ্চিত করতে হলে শুধু অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করলেই হবে না, মালিককেও খুঁজে বের করতে হবে। অনিয়মে জড়িত অস্তিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। দোষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জেল বা জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার বা রাষ্ট্র যে সুবিধা দিচ্ছে তার অপব্যবহারকারী যেন রেয়াত না পায়।