ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বছরজুড়ে অস্থির থাকবে আবহাওয়া

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫২:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৯১ বার পড়া হয়েছে

পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে দেশে দেশে আবহাওয়ায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী উন্নত বিশ্ব। আর খেসারত বেশি দিতে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। আবহাওয়া ও জলবায়ুসংক্রান্ত বিশ্লেষণ বলছে, দেশে গত এক যুগে প্রকৃতির অস্বাভাবিক আচরণ ক্রমেই বাড়ছে। যেমন বৃষ্টি, বন্যা, ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের কারণে দেশের উপকূল থেকে উত্তরাঞ্চল, সব এলাকার মানুষ তিন বছর আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ভুগছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আমাদের চিরায়ত ঋতুচক্রে এ বছরের প্রথম থেকেই অস্থির আচরণ শুরু করেছে আবহাওয়া। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, চলতি বছর শীতল মাস ডিসেম্বর ও জানুয়ারিজুড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ছিল। শহরে ছিল ২ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা। গত বছর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ ক্ষণে ক্ষণে আবহাওয়ার রূপবদল দেখেছে। মুখোমুখি হয়েছে ঘন ঘন নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি আর বন্যার। এ বছরও আমাদের এসবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস তা-ই বলছে। আবহাওয়ার বৈরী আচরণ কৃষিসহ দেশের মানুষের জীবনযাপনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এবার ‘লা নিনা’র কারণে মার্চ-এপ্রিলের দিকে বৃষ্টি বেশি হতে পারে। ফলে আগাম বন্যার আশঙ্কা বেশি। ২০১৭ সালে এ ধরনের বন্যায় পড়েছিল বাংলাদেশ। ফলে হাওরে ফসলহানি হয়েছিল। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১২ ও ২০১৭ সাল ছিল লা নিনা বছর। ওই সব বছরে অতিবৃষ্টিতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। ফলে চাল ও গমের উৎপাদন কমে যায়, দাম বেড়ে যায়। এ বছরও একই পরিস্থিতি হতে পারে। এবার বঙ্গোপসাগরের ওপর উষ্ণ বায়ু সক্রিয় আছে। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত উষ্ণ বায়ুর এই সক্রিয়তা থাকবে। ফলে বছরজুড়ে এর নানা প্রভাবের মধ্যে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। শীত, গরম, রোদ-বৃষ্টি, নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ছাড়িয়ে এটি কৃষি ও মৎস্যসহ সার্বিক উৎপাদনব্যবস্থায় প্রভাব ফেলবে। পাল্টে দেবে আমদানি-রফতানির হিসাব। ছায়া ফেলতে পারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। দেশে অতিবৃষ্টি হতে পারে। এতে আগাম বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম বন্যায় আমন ধানে উৎপাদন কমে যায় ১৫ লাখ টন। এতে দেশে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে তিন বছর পর চাল আমদানি করতে হচ্ছে।
মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে কালবৈশাখী আর বজ্রপাত বেশি হয়। এবার তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। পুঞ্জীভূত তাপের কারণে সাগরে লঘুচাপ ও নিম্নচাপ বেশি তৈরি হবে। ফলে এবারো ওই তিন মাসজুড়ে বজ্রপাত বেশি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত বছরও বাংলাদেশে বজ্রপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি হয়েছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, আগের বছরগুলোর চেয়ে গত বছর বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর হারও ১০ শতাংশ ছিল বেশি। জানুয়ারি থেকে এবার বঙ্গোপসাগর এবং মূল ভূখণ্ডে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। এতে মার্চ-এপ্রিলে বজ্রপাত বেশি হতে পারে। গত বছর আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে কৃষি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবারো কৃষি, উন্নয়নকাজসহ সব পরিকল্পনায় আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি মাথায় রেখে এগোতে হবে। লা নিনা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনে উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে বন্যা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলোÑ বন্যা আসার আগে এপ্রিলের মধ্যে পাকবে, এমন ধানের জাত উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপখাওয়াতে সক্ষম এমন ফসলের জাত উদ্ভাবন করলেই হবে না। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও অন্যান্য দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। সবার আগে জলবায়ু পরিবর্তনের লাগাম যাতে টানা যায়, অর্থাৎ বিশ্বের তাপমাত্রা যেন এ শতাব্দীতে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে, সে জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বছরজুড়ে অস্থির থাকবে আবহাওয়া

আপলোড টাইম : ০৯:৫২:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে দেশে দেশে আবহাওয়ায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী উন্নত বিশ্ব। আর খেসারত বেশি দিতে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। আবহাওয়া ও জলবায়ুসংক্রান্ত বিশ্লেষণ বলছে, দেশে গত এক যুগে প্রকৃতির অস্বাভাবিক আচরণ ক্রমেই বাড়ছে। যেমন বৃষ্টি, বন্যা, ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের কারণে দেশের উপকূল থেকে উত্তরাঞ্চল, সব এলাকার মানুষ তিন বছর আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ভুগছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আমাদের চিরায়ত ঋতুচক্রে এ বছরের প্রথম থেকেই অস্থির আচরণ শুরু করেছে আবহাওয়া। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, চলতি বছর শীতল মাস ডিসেম্বর ও জানুয়ারিজুড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ছিল। শহরে ছিল ২ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা। গত বছর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ ক্ষণে ক্ষণে আবহাওয়ার রূপবদল দেখেছে। মুখোমুখি হয়েছে ঘন ঘন নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি আর বন্যার। এ বছরও আমাদের এসবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস তা-ই বলছে। আবহাওয়ার বৈরী আচরণ কৃষিসহ দেশের মানুষের জীবনযাপনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এবার ‘লা নিনা’র কারণে মার্চ-এপ্রিলের দিকে বৃষ্টি বেশি হতে পারে। ফলে আগাম বন্যার আশঙ্কা বেশি। ২০১৭ সালে এ ধরনের বন্যায় পড়েছিল বাংলাদেশ। ফলে হাওরে ফসলহানি হয়েছিল। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১২ ও ২০১৭ সাল ছিল লা নিনা বছর। ওই সব বছরে অতিবৃষ্টিতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। ফলে চাল ও গমের উৎপাদন কমে যায়, দাম বেড়ে যায়। এ বছরও একই পরিস্থিতি হতে পারে। এবার বঙ্গোপসাগরের ওপর উষ্ণ বায়ু সক্রিয় আছে। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত উষ্ণ বায়ুর এই সক্রিয়তা থাকবে। ফলে বছরজুড়ে এর নানা প্রভাবের মধ্যে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। শীত, গরম, রোদ-বৃষ্টি, নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ছাড়িয়ে এটি কৃষি ও মৎস্যসহ সার্বিক উৎপাদনব্যবস্থায় প্রভাব ফেলবে। পাল্টে দেবে আমদানি-রফতানির হিসাব। ছায়া ফেলতে পারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। দেশে অতিবৃষ্টি হতে পারে। এতে আগাম বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম বন্যায় আমন ধানে উৎপাদন কমে যায় ১৫ লাখ টন। এতে দেশে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে তিন বছর পর চাল আমদানি করতে হচ্ছে।
মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে কালবৈশাখী আর বজ্রপাত বেশি হয়। এবার তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। পুঞ্জীভূত তাপের কারণে সাগরে লঘুচাপ ও নিম্নচাপ বেশি তৈরি হবে। ফলে এবারো ওই তিন মাসজুড়ে বজ্রপাত বেশি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত বছরও বাংলাদেশে বজ্রপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি হয়েছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, আগের বছরগুলোর চেয়ে গত বছর বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর হারও ১০ শতাংশ ছিল বেশি। জানুয়ারি থেকে এবার বঙ্গোপসাগর এবং মূল ভূখণ্ডে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। এতে মার্চ-এপ্রিলে বজ্রপাত বেশি হতে পারে। গত বছর আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে কৃষি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবারো কৃষি, উন্নয়নকাজসহ সব পরিকল্পনায় আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি মাথায় রেখে এগোতে হবে। লা নিনা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনে উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে বন্যা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলোÑ বন্যা আসার আগে এপ্রিলের মধ্যে পাকবে, এমন ধানের জাত উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপখাওয়াতে সক্ষম এমন ফসলের জাত উদ্ভাবন করলেই হবে না। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও অন্যান্য দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। সবার আগে জলবায়ু পরিবর্তনের লাগাম যাতে টানা যায়, অর্থাৎ বিশ্বের তাপমাত্রা যেন এ শতাব্দীতে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে, সে জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।