ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফের সংশোধন হতে পারে সড়ক পরিবহন আইন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ১৯১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত বছর দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পাস হওয়া বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন হতে পারে। জেল-জরিমানা বাড়িয়ে প্রণয়ন করা আইনটি এখনও কার্যকর হয়নি। কারণ বিধিমালা হয়নি এখনও। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আইনটিকে অত্যধিক কঠোর আখ্যা দিয়ে পরিবর্তনের দাবি করে আসছেন। গতকাল বুধবার তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন উপ-কমিটি ইঙ্গিত দিয়েছে ফের সংশোধন হতে পারে সড়ক পরিবহন আইন। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়নে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ কমিটি পরিবহনের অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। পর্যালোচনা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে বুধবার সচিবালয়ে বৈঠক হয়। এতে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান এবং সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাঁও ছিলেন।
মালিক সমিতি সূত্র জানিয়েছে, আইনের বিষয়ে তাদের আপত্তিগুলো জানানো হয়েছে উপ-কমিটিকে। এগুলো পরিবর্তন করে জেল, জরিমানা কমানোর দাবি জানানো হয়েছে। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সড়ক পরিবহন আইনে সংশোধনী আনার ইঙ্গিত দেন। সাংবাদিকদের বলেন, অংশীজনদের কাছ থেকে যেসব মতামত এসেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। তা জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে দেওয়া হবে। কাউন্সিল এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। মালিক-শ্রমিকরা জেল-জরিমানা কমানোর দাবি করেছেন, তা নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রয়েছে আরও অনেক দাবি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, শুধু সাজা কমানো নয়, অনেক দাবি ছিল তাদের। সবক’টি নিয়ে আলোচনা করেছি। সব বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সড়ক পরিবহন আইনে কী আছে, সেখানে কী ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। এগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তার সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংসদে পাসের সময় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনেক দাবি আইনে আসেনি। সেজন্য পাস হওয়া আইন প্রয়োগে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা দেখছে উপ-কমিটি। আইনে পরিবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল চাইলে আইনটি সংশোধন হতে পারে। গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে সারাদেশে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের ৯ দফার দাবি অন্যতম ছিল, মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে কঠোর আইন প্রণয়ন। নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৫ আগস্ট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায় আট বছর ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইন। সড়কে বেপরোয়া গাড়ির কারণে মৃত্যু হলে সাজা বাড়ানো হয় আইনে। বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন ভঙ্গে সাজা বাড়ানো হয়। সড়কে বিভিন্ন অপরাধ জামিন অযোগ্য করা হয়। পরের মাসে আইনটি সংসদে পাস হয়। তখন সরকারের মন্ত্রীরাও বলেছিলেন, মৃত্যুদ-ের বিধান থাকা উচিত আইনে। এক বছর পরে এসে আইন শিথিল করাকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি অবজ্ঞা বলে মনে করেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, অংশীজনরা কী চাইছেন, তা তারা বিস্তারিতভাবে শুনেছেন। সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা অবস্থানে যাওয়ার জন্য একটি সুপারিশ করবেন। সাজা কমবে না বাড়বে তা সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ব্যাপার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সড়কের অপরাধ জামিনযোগ্য করা হচ্ছে, এই কথা বলা ঠিক হবে না। একটি আইন করার পর, তা সংসদে পাস হওয়ার পরও যখন প্রয়োগ করা হয়, কিছু সুবিধা-অসুবিধার কথা উঠে আসে। উপ-কমিটি চায় আইনটির সর্বজনীন প্রয়োগে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়। সড়ক পরিবহন আইনে চালকের লাইসেন্সে ১২টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে। ট্রাফিক আইন ভাঙলে পয়েন্ট কাটা যাবে। সব পয়েন্ট কাটা গেলে বাতিল হবে লাইসেন্স। নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে চালক ও তার সহকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা। শ্রমিকরা এসব ধারা ছাড়াও চালকের জরিমানার বিধানের বিরোধী। বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালালে দুই বছরের জেল, অতিরিক্ত পণ্যবহনে তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধানেরও বিরোধিতা করছেন মালিক-শ্রমিকরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ফের সংশোধন হতে পারে সড়ক পরিবহন আইন

আপলোড টাইম : ১০:২৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত বছর দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পাস হওয়া বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন হতে পারে। জেল-জরিমানা বাড়িয়ে প্রণয়ন করা আইনটি এখনও কার্যকর হয়নি। কারণ বিধিমালা হয়নি এখনও। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আইনটিকে অত্যধিক কঠোর আখ্যা দিয়ে পরিবর্তনের দাবি করে আসছেন। গতকাল বুধবার তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন উপ-কমিটি ইঙ্গিত দিয়েছে ফের সংশোধন হতে পারে সড়ক পরিবহন আইন। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়নে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ কমিটি পরিবহনের অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। পর্যালোচনা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে বুধবার সচিবালয়ে বৈঠক হয়। এতে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান এবং সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাঁও ছিলেন।
মালিক সমিতি সূত্র জানিয়েছে, আইনের বিষয়ে তাদের আপত্তিগুলো জানানো হয়েছে উপ-কমিটিকে। এগুলো পরিবর্তন করে জেল, জরিমানা কমানোর দাবি জানানো হয়েছে। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সড়ক পরিবহন আইনে সংশোধনী আনার ইঙ্গিত দেন। সাংবাদিকদের বলেন, অংশীজনদের কাছ থেকে যেসব মতামত এসেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। তা জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে দেওয়া হবে। কাউন্সিল এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। মালিক-শ্রমিকরা জেল-জরিমানা কমানোর দাবি করেছেন, তা নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রয়েছে আরও অনেক দাবি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, শুধু সাজা কমানো নয়, অনেক দাবি ছিল তাদের। সবক’টি নিয়ে আলোচনা করেছি। সব বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সড়ক পরিবহন আইনে কী আছে, সেখানে কী ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। এগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তার সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংসদে পাসের সময় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনেক দাবি আইনে আসেনি। সেজন্য পাস হওয়া আইন প্রয়োগে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা দেখছে উপ-কমিটি। আইনে পরিবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল চাইলে আইনটি সংশোধন হতে পারে। গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে সারাদেশে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের ৯ দফার দাবি অন্যতম ছিল, মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে কঠোর আইন প্রণয়ন। নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৫ আগস্ট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায় আট বছর ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইন। সড়কে বেপরোয়া গাড়ির কারণে মৃত্যু হলে সাজা বাড়ানো হয় আইনে। বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন ভঙ্গে সাজা বাড়ানো হয়। সড়কে বিভিন্ন অপরাধ জামিন অযোগ্য করা হয়। পরের মাসে আইনটি সংসদে পাস হয়। তখন সরকারের মন্ত্রীরাও বলেছিলেন, মৃত্যুদ-ের বিধান থাকা উচিত আইনে। এক বছর পরে এসে আইন শিথিল করাকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি অবজ্ঞা বলে মনে করেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, অংশীজনরা কী চাইছেন, তা তারা বিস্তারিতভাবে শুনেছেন। সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা অবস্থানে যাওয়ার জন্য একটি সুপারিশ করবেন। সাজা কমবে না বাড়বে তা সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ব্যাপার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সড়কের অপরাধ জামিনযোগ্য করা হচ্ছে, এই কথা বলা ঠিক হবে না। একটি আইন করার পর, তা সংসদে পাস হওয়ার পরও যখন প্রয়োগ করা হয়, কিছু সুবিধা-অসুবিধার কথা উঠে আসে। উপ-কমিটি চায় আইনটির সর্বজনীন প্রয়োগে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়। সড়ক পরিবহন আইনে চালকের লাইসেন্সে ১২টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে। ট্রাফিক আইন ভাঙলে পয়েন্ট কাটা যাবে। সব পয়েন্ট কাটা গেলে বাতিল হবে লাইসেন্স। নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে চালক ও তার সহকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা। শ্রমিকরা এসব ধারা ছাড়াও চালকের জরিমানার বিধানের বিরোধী। বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালালে দুই বছরের জেল, অতিরিক্ত পণ্যবহনে তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধানেরও বিরোধিতা করছেন মালিক-শ্রমিকরা।