ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফুটবলে দৈন্যদশা ঘুচবে কবে?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৩৭০ বার পড়া হয়েছে

ফুটবল মানেই উন্মাদনা, শিহরণ জাগানিয়া কিছু। হয়তো ক্রিকেট এখন বেশি আলোড়ন তোলে মানুষের মনে; কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে, পরিপূর্ণ আবেগ, ক্ষুরধার মস্তিষ্কে মানুষ ফুটবলটাকেই বেশি উপভোগ করে। আজ যে আমরা খেলায় ‘বহুজাতিক’ আনন্দ দেখতে পাই, এর শুরুটা কিন্তু ফুটবল দিয়েই। বাংলাদেশেও সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। তবে মানুষ স্বভাবগত কারণেই সাফল্যের পূজারি। সাফল্য না পেলে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যায় না। বাংলাদেশেও তা-ই হয়েছে। ১৯৮৪ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলো নিয়ে সাফ গেমস শুরু হলে বাংলাদেশের ফুটবলে লক্ষ্য নির্ধারণ হয় সাফ স্বর্ণপদক। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য। উপমহাদেশে সেরা ফুটবল শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হতো কেবল ভারতকে।
অথচ ভারতের অনুপস্থিতিতে প্রথম সাফ গেমসে নেপালের কাছে ফাইনালে হেরে যায় বাংলাদেশ। প্রথমবারেই শুধু নয়, সাফ গেমস ফুটবলে ব্যর্থতা নিয়মিত হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য। এ প্রেক্ষাপটে দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। বিশ্বকাপ খেলার হাতছানি থাকায় গত শতাব্দীর ’৯০-এর দশকের শুরুতে ফুটবলের জায়গা দখল করে নেয় ক্রিকেট। ফুটবলে দর্শক কমতে থাকে।
কাজী সালাউদ্দিন, এমেকা, জাকারিয়া পিন্টু, অমলেশ, সাব্বির, কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্না- এ নামগুলো বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। যখনই দেশের ফুটবলের প্রসঙ্গ ওঠে, তখনই এ নামগুলো ঘুরেফিরে আসে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে আমরা দেশে যে ফুটবল জাগরণ দেখতে পাই, তাতে এদের অবদান ছিল অসামান্য।
কারও কারও মতে দেশে ফুটবল এখন ‘কোমায়’। মানতেই হবে এ অবনমন একদিনে হয়নি, ধীরে ধীরে হয়েছে। বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন ঘরোয়া ফুটবলের ম্যাচগুলোতে বিপুল দর্শক সমাগম হতো। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হলে তো কথাই নেই।
এখন যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে কোনো টেস্ট প্লেয়িং দেশের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলে মাঠে দর্শক উপচে পড়ে, ঠিক তেমন অবস্থা আমরা দেখেছি একসময় ঘরোয়া ফুটবলে। আবাহনী-মোহামেডান খেলার দিন তো যার যার সমর্থকগোষ্ঠীর ব্যানারে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যানার নিয়ে স্টেডিয়ামে আসত দর্শকরা, যা এখন ভাবলে অবিশ্বাস্য মনে হবে।
একসময় গ্রামের স্কুলগুলোর মাঠেও পালা করে ফুটবল খেলা হতো। শুকনো মৌসুমে আমন ধান ওঠার পর গ্রামের নাড়াক্ষেতে আকর্ষণীয় ফুটবল খেলা হতো নিয়মিত। প্রাথমিক থেকে উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে নিয়মিত প্রতিযোগিতা হতো। প্রতিযোগিতা হতো থানা থেকে জেলা পর্যায়ের পর বিভাগীয়, সর্বশেষ জাতীয় পর্যায়ে। সেসব প্রতিযোগিতা আজ আর নেই। উদ্যোগের অভাবে জনপ্রিয় ফুটবল মনে আর মুখে আছে, বাস্তবের মাঠে অনুপস্থিত। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে খেলোয়াড় তৈরির কারখানা।
ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল এগোবে না কেন, সেদেশের প্রেসিডেন্টের রাশিয়ার মাঠে সদর্প উপস্থিতি এবং নিজের পয়সায় বিমানের সাধারণ আসনে যাওয়া থেকে শুরু করে বৃষ্টিস্নাত মাঠে বিজয়-বিজিত সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে অভিন্ন আচরণ ফুটবলপ্রেমী বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
একসময় র‌্যাংকিংয়ে আমাদের চেয়ে পেছনে থাকা ক্রোয়েশিয়া যদি বিশ্বকাপে রানার্সআপ হতে পারে, আইসল্যান্ড ও পানামার মতো কম জনগোষ্ঠীর দেশ যদি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারে, আমরা ১৭ কোটি মানুষের দেশ কেন সেটা পারব না। কেন আমরা ১১ জন ফুটবলার তৈরি করতে পারব না। এ দৈন্য আর কতকাল?

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ফুটবলে দৈন্যদশা ঘুচবে কবে?

আপলোড টাইম : ০৮:১৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অগাস্ট ২০১৮

ফুটবল মানেই উন্মাদনা, শিহরণ জাগানিয়া কিছু। হয়তো ক্রিকেট এখন বেশি আলোড়ন তোলে মানুষের মনে; কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে, পরিপূর্ণ আবেগ, ক্ষুরধার মস্তিষ্কে মানুষ ফুটবলটাকেই বেশি উপভোগ করে। আজ যে আমরা খেলায় ‘বহুজাতিক’ আনন্দ দেখতে পাই, এর শুরুটা কিন্তু ফুটবল দিয়েই। বাংলাদেশেও সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। তবে মানুষ স্বভাবগত কারণেই সাফল্যের পূজারি। সাফল্য না পেলে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যায় না। বাংলাদেশেও তা-ই হয়েছে। ১৯৮৪ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলো নিয়ে সাফ গেমস শুরু হলে বাংলাদেশের ফুটবলে লক্ষ্য নির্ধারণ হয় সাফ স্বর্ণপদক। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য। উপমহাদেশে সেরা ফুটবল শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হতো কেবল ভারতকে।
অথচ ভারতের অনুপস্থিতিতে প্রথম সাফ গেমসে নেপালের কাছে ফাইনালে হেরে যায় বাংলাদেশ। প্রথমবারেই শুধু নয়, সাফ গেমস ফুটবলে ব্যর্থতা নিয়মিত হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য। এ প্রেক্ষাপটে দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। বিশ্বকাপ খেলার হাতছানি থাকায় গত শতাব্দীর ’৯০-এর দশকের শুরুতে ফুটবলের জায়গা দখল করে নেয় ক্রিকেট। ফুটবলে দর্শক কমতে থাকে।
কাজী সালাউদ্দিন, এমেকা, জাকারিয়া পিন্টু, অমলেশ, সাব্বির, কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্না- এ নামগুলো বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। যখনই দেশের ফুটবলের প্রসঙ্গ ওঠে, তখনই এ নামগুলো ঘুরেফিরে আসে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে আমরা দেশে যে ফুটবল জাগরণ দেখতে পাই, তাতে এদের অবদান ছিল অসামান্য।
কারও কারও মতে দেশে ফুটবল এখন ‘কোমায়’। মানতেই হবে এ অবনমন একদিনে হয়নি, ধীরে ধীরে হয়েছে। বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন ঘরোয়া ফুটবলের ম্যাচগুলোতে বিপুল দর্শক সমাগম হতো। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হলে তো কথাই নেই।
এখন যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে কোনো টেস্ট প্লেয়িং দেশের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলে মাঠে দর্শক উপচে পড়ে, ঠিক তেমন অবস্থা আমরা দেখেছি একসময় ঘরোয়া ফুটবলে। আবাহনী-মোহামেডান খেলার দিন তো যার যার সমর্থকগোষ্ঠীর ব্যানারে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যানার নিয়ে স্টেডিয়ামে আসত দর্শকরা, যা এখন ভাবলে অবিশ্বাস্য মনে হবে।
একসময় গ্রামের স্কুলগুলোর মাঠেও পালা করে ফুটবল খেলা হতো। শুকনো মৌসুমে আমন ধান ওঠার পর গ্রামের নাড়াক্ষেতে আকর্ষণীয় ফুটবল খেলা হতো নিয়মিত। প্রাথমিক থেকে উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে নিয়মিত প্রতিযোগিতা হতো। প্রতিযোগিতা হতো থানা থেকে জেলা পর্যায়ের পর বিভাগীয়, সর্বশেষ জাতীয় পর্যায়ে। সেসব প্রতিযোগিতা আজ আর নেই। উদ্যোগের অভাবে জনপ্রিয় ফুটবল মনে আর মুখে আছে, বাস্তবের মাঠে অনুপস্থিত। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে খেলোয়াড় তৈরির কারখানা।
ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল এগোবে না কেন, সেদেশের প্রেসিডেন্টের রাশিয়ার মাঠে সদর্প উপস্থিতি এবং নিজের পয়সায় বিমানের সাধারণ আসনে যাওয়া থেকে শুরু করে বৃষ্টিস্নাত মাঠে বিজয়-বিজিত সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে অভিন্ন আচরণ ফুটবলপ্রেমী বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
একসময় র‌্যাংকিংয়ে আমাদের চেয়ে পেছনে থাকা ক্রোয়েশিয়া যদি বিশ্বকাপে রানার্সআপ হতে পারে, আইসল্যান্ড ও পানামার মতো কম জনগোষ্ঠীর দেশ যদি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারে, আমরা ১৭ কোটি মানুষের দেশ কেন সেটা পারব না। কেন আমরা ১১ জন ফুটবলার তৈরি করতে পারব না। এ দৈন্য আর কতকাল?