ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফিরে দেখা ২০১৭ উত্তেজনায় শুরু, অস্থিরতায় শেষ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৫:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারী ২০১৮
  • / ৫২৪ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট: আজ বছরের প্রথম দিন। নতুন বছরের শুরু। এরই সন্ধিক্ষণে শত শত শিক্ষক ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান করছেন টানা পাঁচ দিন ধরে। গতকাল রোববার বছরের শেষ সূর্যোদয়ের দিন থেকে আমরণ অনশন শুরু করবেন। অনশনে সূচনা হবে তাঁদের নতুন বছর। তাঁদের দাবি এমপিওতে অন্তর্ভুক্তির (বেতনের সরকারি অংশ পাওয়া)। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠনও বছরের শেষ দিনটিতে ধর্মঘটের কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে। প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত সব স্তরে ছড়িয়ে আছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁদের মোট সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। তাঁদের দাবির যুক্তি-অযুক্তি যা-ই থাক, স্তরভেদে কর্মসূচি সবার আলাদা।
২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি ও বেসরকারি, এমপিওভুক্ত ও বহির্ভূত, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার-সব শিক্ষক নিজ নিজ দাবি নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট টিউটর ও নোট-গাইডে শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়া যখন লাটে ওঠার পথে, শিক্ষকদের এই অসন্তোষ তাতে হয়ে উঠবে বোঝার ওপর শাকের আঁটি। আগামী বছর কেমন যাবে, তার একটি ইঙ্গিত মিলছে এই ছবি থেকে।
বিদায়ী বছর শুরু হয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দাবি মেনে পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িক পরিবর্তন এনে। প্রগতিশীল নানা সংগঠন, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে সরকার সেসব কানে তোলেনি। বছরটি বিদায় নিলো প্রশ্ন ফাঁসের কলঙ্ক গায়ে নিয়ে। নিয়োগ, ভর্তি বা পাবলিক-প্রশ্ন ফাঁস হয়নি এমন পরীক্ষা খুব কমই হয়েছে। বছরের সমাপ্তি হলো বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস দিয়ে।
অস্থির আদালত: ২০১৭ সাল ছিল বিচার বিভাগের জন্য দুর্যোগের বছর। বিশেষ পরিস্থিতির মুখে দেশে এই প্রথম প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও পর্যবেক্ষণ দেন। একে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠায় প্রধান বিচারপতি এক মাসের ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান। ছুটি শেষে ১০ নভে¤॥^র তিনি সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান। বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের সমর্থক বলে পরিচিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বলছে, প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। আর সরকার বলছে, দায়িত্বরত অবস্থায় অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ায় তিনি চলে যেতে বাধ্য হন।
গুম, নিখোঁজ ও ফিরে আসা : একাধিক গুমের ঘটনা বছরজুড়ে মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গুমের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৭৫ জন। পরে ৩৬ জনের হদিস পাওয়া যায়। মৃতদেহ পাওয়া যায় ৭ জনের। এখন অব্দি নিখোঁজ ৩২। খোঁজ পাওয়া ৩৬ জনের মধ্যে অন্তত ১৭ জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ বা র‌্যাব।
ইসি গঠন ও সংলাপ: বিতর্কিত রকিবউদ্দীন কমিশনের উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কারা আসছেন-সে উত্তেজনায় সরগরম ছিল বছরের প্রথম ৩৭ দিন। একটি অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে ৭ ফেব্রুয়ারি নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি।
দুদক তৎপর, তবে… দুদকের একধরনের তৎপরতা ছিল। ফাঁদ পেতে কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে গ্রেপ্তারও করা হয়। কিন্তু বড় দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে তদন্ত না করায় দুদকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বছরের শেষ দিকে এসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ কয়েকজনকে তলব করে দুদক।
পাহাড়ধস, অকালবন্যা: বিদায়ী বছর খাবি খেয়েছে তিনটি অতি আলোচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে। গত মার্চে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের ১৪২টি হাওরের ফসল ডুবে যায়। ক্ষয়ক্ষতি হয় হাওরের মানুষের জীবন ও সম্পদের। উত্তরাঞ্চলে বন্যায় মারা যায় ১৫০ জন। ৩২ জেলার ২০৮টি উপজেলা প্লাবিত হয়। জুন মাসে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মারা যায় ১৫৮ জন। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে নিহত হন ১৭০ জন।
সরকারের অস্বস্তি: বিদায়ী বছরে সরকার অস্বস্তিতে পড়েছে বেশ কয়েকটি ঘটনায়। তিন আলোচিত পণ্য ছিল চাল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ। আরও বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দামের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি সরকারকে বিব্রত করে। খেলাপি ঋণ ছিল বছরভর আলোচনার বিষয়। এর পরিমাণ এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় ফারমার্স ব্যাংক, এসআইবিএল এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। সরকারি-বেসরকারি ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টির অবস্থাই খারাপ। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ সরকারের হাতে নেওয়ার বিষয়টি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নজিরবিহীন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ফিরে দেখা ২০১৭ উত্তেজনায় শুরু, অস্থিরতায় শেষ

আপলোড টাইম : ১০:৪৫:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারী ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট: আজ বছরের প্রথম দিন। নতুন বছরের শুরু। এরই সন্ধিক্ষণে শত শত শিক্ষক ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান করছেন টানা পাঁচ দিন ধরে। গতকাল রোববার বছরের শেষ সূর্যোদয়ের দিন থেকে আমরণ অনশন শুরু করবেন। অনশনে সূচনা হবে তাঁদের নতুন বছর। তাঁদের দাবি এমপিওতে অন্তর্ভুক্তির (বেতনের সরকারি অংশ পাওয়া)। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠনও বছরের শেষ দিনটিতে ধর্মঘটের কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে। প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত সব স্তরে ছড়িয়ে আছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁদের মোট সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। তাঁদের দাবির যুক্তি-অযুক্তি যা-ই থাক, স্তরভেদে কর্মসূচি সবার আলাদা।
২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি ও বেসরকারি, এমপিওভুক্ত ও বহির্ভূত, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার-সব শিক্ষক নিজ নিজ দাবি নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট টিউটর ও নোট-গাইডে শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়া যখন লাটে ওঠার পথে, শিক্ষকদের এই অসন্তোষ তাতে হয়ে উঠবে বোঝার ওপর শাকের আঁটি। আগামী বছর কেমন যাবে, তার একটি ইঙ্গিত মিলছে এই ছবি থেকে।
বিদায়ী বছর শুরু হয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দাবি মেনে পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িক পরিবর্তন এনে। প্রগতিশীল নানা সংগঠন, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে সরকার সেসব কানে তোলেনি। বছরটি বিদায় নিলো প্রশ্ন ফাঁসের কলঙ্ক গায়ে নিয়ে। নিয়োগ, ভর্তি বা পাবলিক-প্রশ্ন ফাঁস হয়নি এমন পরীক্ষা খুব কমই হয়েছে। বছরের সমাপ্তি হলো বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস দিয়ে।
অস্থির আদালত: ২০১৭ সাল ছিল বিচার বিভাগের জন্য দুর্যোগের বছর। বিশেষ পরিস্থিতির মুখে দেশে এই প্রথম প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও পর্যবেক্ষণ দেন। একে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠায় প্রধান বিচারপতি এক মাসের ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান। ছুটি শেষে ১০ নভে¤॥^র তিনি সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান। বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের সমর্থক বলে পরিচিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বলছে, প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। আর সরকার বলছে, দায়িত্বরত অবস্থায় অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ায় তিনি চলে যেতে বাধ্য হন।
গুম, নিখোঁজ ও ফিরে আসা : একাধিক গুমের ঘটনা বছরজুড়ে মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গুমের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৭৫ জন। পরে ৩৬ জনের হদিস পাওয়া যায়। মৃতদেহ পাওয়া যায় ৭ জনের। এখন অব্দি নিখোঁজ ৩২। খোঁজ পাওয়া ৩৬ জনের মধ্যে অন্তত ১৭ জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ বা র‌্যাব।
ইসি গঠন ও সংলাপ: বিতর্কিত রকিবউদ্দীন কমিশনের উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কারা আসছেন-সে উত্তেজনায় সরগরম ছিল বছরের প্রথম ৩৭ দিন। একটি অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে ৭ ফেব্রুয়ারি নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি।
দুদক তৎপর, তবে… দুদকের একধরনের তৎপরতা ছিল। ফাঁদ পেতে কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে গ্রেপ্তারও করা হয়। কিন্তু বড় দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে তদন্ত না করায় দুদকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বছরের শেষ দিকে এসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ কয়েকজনকে তলব করে দুদক।
পাহাড়ধস, অকালবন্যা: বিদায়ী বছর খাবি খেয়েছে তিনটি অতি আলোচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে। গত মার্চে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের ১৪২টি হাওরের ফসল ডুবে যায়। ক্ষয়ক্ষতি হয় হাওরের মানুষের জীবন ও সম্পদের। উত্তরাঞ্চলে বন্যায় মারা যায় ১৫০ জন। ৩২ জেলার ২০৮টি উপজেলা প্লাবিত হয়। জুন মাসে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মারা যায় ১৫৮ জন। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে নিহত হন ১৭০ জন।
সরকারের অস্বস্তি: বিদায়ী বছরে সরকার অস্বস্তিতে পড়েছে বেশ কয়েকটি ঘটনায়। তিন আলোচিত পণ্য ছিল চাল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ। আরও বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দামের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি সরকারকে বিব্রত করে। খেলাপি ঋণ ছিল বছরভর আলোচনার বিষয়। এর পরিমাণ এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় ফারমার্স ব্যাংক, এসআইবিএল এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। সরকারি-বেসরকারি ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টির অবস্থাই খারাপ। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ সরকারের হাতে নেওয়ার বিষয়টি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নজিরবিহীন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।