ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ অধিকাংশ ক্লিনিকের নেই লাইসেন্স

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মে ২০১৮
  • / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে

জীবননগরে অবৈধভাবে চলছে জমজমাট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ব্যবসা
জাহিদ বাবু/মিঠুন মাহমুদ: জীবননগর উপজেলায় প্রশাসনের বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে অবৈধভাবে চলছে জমজমাট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ব্যবসা। নিয়মিত মনিটরিং না করায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি সেবার নামে ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার খুলে চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে প্রতিনিয়িত প্রতারণা করে চলেছে। ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত মানা বা থাকার কথা তার কিছুই মানা হচ্ছে না বললেই চলে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জন অফিসের সবুজ সংকেত মাথায় নিয়েই এসমস্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর মালিকরা অবাধে তাদের অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিকের ব্যবসা রমরমাভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার বহুল আলোচিত সমালোচিত ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে ভুল অস্ত্রপচারের কারণে ২০ জন রোগী অন্ধ হয়ে গেলেও লাইসেন্সবিহীন এসমস্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে এখনো পর্যন্ত সংশ্লি¬ষ্ট বিভাগের উদ্ধতর্ন কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। এ কারণে উপজেলার সচেতন মহলের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলায় ৮টি কিèনিকের মধ্যে চলতি বছরে শুধু একটি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন করা আছে। এবং উপজেলার ৯টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মধ্যে শুধু ৩টির লাইসেনন্স থাকলেও নবায়ন করা আছে মাত্র একটি। মেডিকেল প্রাকটিস এন্ড প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিনেন্স ১৯৮২ তে বলা হয়েছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ও নির্ধারিত স্থান সম্বলিত নির্দিষ্ট কক্ষ, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ৩ জন বিশেষজ্ঞ ও আবাসিক চিকিৎসক, ১ জন সার্জন ও ৩ জন স্টাফ নার্স থাকতে হবে। এসব শর্ত পুরণ সাপেক্ষে বেসরকারী পর্যায়ে ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোম ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোকে লাইসেন্স দেবার কথা। কিন্তু জীবননগরে এসবের কোন কিছুই মানা হচ্ছে না। ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক আছে কিন্তু প্রয়োজনীয় কোন জিনিসপত্র নেই। নামে নার্স থাকলেও অশিক্ষিত আর অদক্ষতায় শরীরে নার্সের পোশাক পরিয়ে নার্স সাজানো হয়। এসব বিষয়ে সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের একেবারেই নজরদারী নেই। জীবননগর উপজেলা শহরে ৮টি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ছাড়া অধিকাংশ ক্লিনিক এ্যান্ড নার্সিং হোমগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও সেবিকা নেই। এছাড়া যথোপযুক্ত অস্ত্রপচার কক্ষ ও নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন এবং আনাড়ী চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে অনেক রোগী মারা গেছেন এবং ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অনেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, ক্লিনিকগুলোতে নিজস্ব কোন সার্জন বা চিকিৎসক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত কোন সেবিকা না থাকায় ভাড়াটিয়া চিকিৎসক ও সেবিকাদের দিয়েই এসব ক্লিনিকগুলো চালানো হচ্ছে। উপজেলার ক্লিনিক মালিকরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে রোগীদের সাথে নিয়মিত প্রতারনা করে চলেছেন। এসব অবৈধ ক্লিনিকের কিছু দালাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের প্রধান ফটকের মুখে দাঁড়িয়ে থাকেন। এসব দালাল হাসপাতালে আসা রোগীদের নানা প্রলোভণ দেখিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি করেন। এদিকে, বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন হাল চিকিৎসকের কাছে রোগী গেলেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানাবিধ পরীক্ষা নিরিক্ষা করার জন্য তাদেরকে চিকিৎসকের নির্ধারিত ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অথচ দু’একটি বাদে এসব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে কোন প্যাথলজিষ্ট বা আল্ট্রাসনোলজিষ্ট নেই। টেকনেসিয়ানরাই এসব পরীক্ষা করে রোগীর হাতে রিপোর্ট ধরিয়ে দেন। একজন রোগীকে একই সময়ে পৃথক দুটি ডায়গনষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে দু’রকম রিপোর্ট পাওয়া যায় বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। শুধু তাই নয় শহরের অনেক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্টের ফলে অনেক রোগী অপারেশন করে মৃত্যু হলেও অসাধু কিছু ডাক্তারদের সহযোগিতায় তা অন্য রোগের কথা বলে বিষয়টি ধামা চাপা দিয়ে ফেলে। সম্প্রতি শহরের শাপলা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নেপা থেকে একটি রোগী পরীক্ষা করতে এলে তাকে ভুল রিপোর্ট দিয়ে অপারেশন করে দেখা যায় ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল। শুধু তাই নয় শাপলা ডায়গনষ্টিক সেন্টারে এর আগেও বেশ কয়েকবার ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মো. খাইরুল আলমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন যে সমস্থ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলো আছে তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ গ্রহন করা হবে। এদিকে চিকিৎসাসেবার নামে সাধারন মানুষের সাথে প্রতিনিয়িত প্রতারনা করায় এলাকার সচেতন মহল হতাশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ অধিকাংশ ক্লিনিকের নেই লাইসেন্স

আপলোড টাইম : ০৯:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মে ২০১৮

জীবননগরে অবৈধভাবে চলছে জমজমাট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ব্যবসা
জাহিদ বাবু/মিঠুন মাহমুদ: জীবননগর উপজেলায় প্রশাসনের বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে অবৈধভাবে চলছে জমজমাট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ব্যবসা। নিয়মিত মনিটরিং না করায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি সেবার নামে ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার খুলে চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে প্রতিনিয়িত প্রতারণা করে চলেছে। ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত মানা বা থাকার কথা তার কিছুই মানা হচ্ছে না বললেই চলে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জন অফিসের সবুজ সংকেত মাথায় নিয়েই এসমস্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর মালিকরা অবাধে তাদের অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিকের ব্যবসা রমরমাভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার বহুল আলোচিত সমালোচিত ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে ভুল অস্ত্রপচারের কারণে ২০ জন রোগী অন্ধ হয়ে গেলেও লাইসেন্সবিহীন এসমস্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে এখনো পর্যন্ত সংশ্লি¬ষ্ট বিভাগের উদ্ধতর্ন কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। এ কারণে উপজেলার সচেতন মহলের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলায় ৮টি কিèনিকের মধ্যে চলতি বছরে শুধু একটি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন করা আছে। এবং উপজেলার ৯টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মধ্যে শুধু ৩টির লাইসেনন্স থাকলেও নবায়ন করা আছে মাত্র একটি। মেডিকেল প্রাকটিস এন্ড প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিনেন্স ১৯৮২ তে বলা হয়েছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ও নির্ধারিত স্থান সম্বলিত নির্দিষ্ট কক্ষ, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ৩ জন বিশেষজ্ঞ ও আবাসিক চিকিৎসক, ১ জন সার্জন ও ৩ জন স্টাফ নার্স থাকতে হবে। এসব শর্ত পুরণ সাপেক্ষে বেসরকারী পর্যায়ে ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোম ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোকে লাইসেন্স দেবার কথা। কিন্তু জীবননগরে এসবের কোন কিছুই মানা হচ্ছে না। ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক আছে কিন্তু প্রয়োজনীয় কোন জিনিসপত্র নেই। নামে নার্স থাকলেও অশিক্ষিত আর অদক্ষতায় শরীরে নার্সের পোশাক পরিয়ে নার্স সাজানো হয়। এসব বিষয়ে সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের একেবারেই নজরদারী নেই। জীবননগর উপজেলা শহরে ৮টি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ছাড়া অধিকাংশ ক্লিনিক এ্যান্ড নার্সিং হোমগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও সেবিকা নেই। এছাড়া যথোপযুক্ত অস্ত্রপচার কক্ষ ও নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন এবং আনাড়ী চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে অনেক রোগী মারা গেছেন এবং ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অনেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, ক্লিনিকগুলোতে নিজস্ব কোন সার্জন বা চিকিৎসক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত কোন সেবিকা না থাকায় ভাড়াটিয়া চিকিৎসক ও সেবিকাদের দিয়েই এসব ক্লিনিকগুলো চালানো হচ্ছে। উপজেলার ক্লিনিক মালিকরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে রোগীদের সাথে নিয়মিত প্রতারনা করে চলেছেন। এসব অবৈধ ক্লিনিকের কিছু দালাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের প্রধান ফটকের মুখে দাঁড়িয়ে থাকেন। এসব দালাল হাসপাতালে আসা রোগীদের নানা প্রলোভণ দেখিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি করেন। এদিকে, বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন হাল চিকিৎসকের কাছে রোগী গেলেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানাবিধ পরীক্ষা নিরিক্ষা করার জন্য তাদেরকে চিকিৎসকের নির্ধারিত ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অথচ দু’একটি বাদে এসব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে কোন প্যাথলজিষ্ট বা আল্ট্রাসনোলজিষ্ট নেই। টেকনেসিয়ানরাই এসব পরীক্ষা করে রোগীর হাতে রিপোর্ট ধরিয়ে দেন। একজন রোগীকে একই সময়ে পৃথক দুটি ডায়গনষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে দু’রকম রিপোর্ট পাওয়া যায় বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। শুধু তাই নয় শহরের অনেক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্টের ফলে অনেক রোগী অপারেশন করে মৃত্যু হলেও অসাধু কিছু ডাক্তারদের সহযোগিতায় তা অন্য রোগের কথা বলে বিষয়টি ধামা চাপা দিয়ে ফেলে। সম্প্রতি শহরের শাপলা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নেপা থেকে একটি রোগী পরীক্ষা করতে এলে তাকে ভুল রিপোর্ট দিয়ে অপারেশন করে দেখা যায় ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল। শুধু তাই নয় শাপলা ডায়গনষ্টিক সেন্টারে এর আগেও বেশ কয়েকবার ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মো. খাইরুল আলমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন যে সমস্থ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলো আছে তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ গ্রহন করা হবে। এদিকে চিকিৎসাসেবার নামে সাধারন মানুষের সাথে প্রতিনিয়িত প্রতারনা করায় এলাকার সচেতন মহল হতাশ।