ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার হাট!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ২৮০ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
মেহেরপুরে বামনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় হাট বসিয়েছেন মেহেরপুর শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন জুয়েল। কয়েকদিন ধরে মাইকিং করে হ্যান্ডবিল বিলিসহ বিদ্যালয়ের সামনে বড় বড় ব্যানার টাঙিয়ে প্রচার চালিয়ে তিনি এ হাট বসিয়েছেন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা কিছুই জানে না। এদিকে হাটের পরিচালক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন জুয়েলের দাবি, তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে সম্মতি নিয়েছেন।
গ্রামবাসী জানায়, মেহেরপুর সদর থানার আমদহ গ্রামে বামনপাড়া মোড়ে বামনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে মেহেরপুর শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন জুয়েল ও তার লোকজন নিয়ে গত শুক্রবারে পুরাতন মোটরসাইকেল, নসিমন, করিমন ক্রয়-বিক্রয়ের হাট বসিয়েছেন। এর জন্য কয়েকদিন ধরে মাইকিং, প্রচারপত্র বিলি ও ব্যানার টাঙিয়ে প্রচারও করেছেন। গত শুক্রবার জাকজমক আয়োজনের মাধ্যমে হাটের উদ্বোধন করে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রতি শুক্রবার স্কুল মাঠে হাট বসবে।
বামনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফৌজিয়া আফরোজ তুলি বলেন, ‘হাট পরিচালনাকারীরা আমার কাছে এসেছিল। তারা বারবার করে আমাকে বলেছে হাট বসানোর জন্য রেজুলেশন করতে, আপনাকে কিছু টাকা দেব। আমি বলেছি হবে না। আমার স্কুল নোংরা হবে আর আপনারা ব্যবসা করবেন, তা হবে না। তাতে আমাকে বলল মন্ত্রী নাকি উনাদের নির্দেশ দিয়েছেন এখানে হাট বসাতে। আমি উনাদের বলেছি মন্ত্রী মহোদয়কে আমাকে নির্দেশ দিতে হবে। তাতে ওরা আমাকে বলল স্কুলে প্রতি শুক্রবার হাট হবে। আমি বলেছি শনিবারে স্কুল খুলবে। তখনতো ভীষন ঝামেলা হবে। স্কুল মাঠে কোনোভাবে হাট করার সুযোগ নেই। আমার স্কুলমাঠ কেন হাট হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘এ হাটের সাথে স্কুলেল সভাপতি দরুদ আলীও জড়িত আছে। সেও আমাকে হাটের জন্য ফোন দিয়েছে। আমি তাকেও না করে দিয়েছি। আমি এই বিষয়টি ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি দরুদ আলী বলেন, ‘হাট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা স্ট্যাম্পে লিখিত নিয়েছি বিদ্যালয়ের কোনো ক্ষতি হলে, তা তারা পূরণ করে দেবে। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের কোনো আয় নেই। এ থেকে বিদ্যালয়ের কিছু আয় হবে। বিষয়টি প্রধান শিক্ষকও জানেন।’ তিনি আরও বলেন, এলাকার লোকের দাবি ও আবদার পূরণ করতে এটা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আপিল উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাট বসানোর কোনো সুযোগ নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলম বলেন, ‘তারা আমার কাছে এসেছিল হাটের বিষয়ে কথা বলেছে। আমি তাদের জানিয়ে দিয়েছি আমাদের নির্ধারিত হাট আছে। সেটা আমরা নিয়ম মেনে ইজারা দিই। এর বাইরে আমাদের হাটের অনুমোদন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও হাটের পরিচালক কামাল হোসেন জুয়েল বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের জন্য হাট বসানো হচ্ছে। এতে কিছু লোকের কর্মসংস্থান হবে। এ বিষয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। সকলেই মৌনসম্মতি দিয়েছে। তবে হাটের বিষয়ে যদি স্কুল কর্তৃপক্ষ বা কারোর কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে আমরা হাট অন্যত্র সরিয়ে নেব।’ তিনি আরও বলেন, আলমডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরণের হাট চলে। তবে তিনি স্বীকার করেন হাট বসানোর কোনো বৈধ অনুমতি তাদের নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার হাট!

আপলোড টাইম : ১০:১৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
মেহেরপুরে বামনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় হাট বসিয়েছেন মেহেরপুর শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন জুয়েল। কয়েকদিন ধরে মাইকিং করে হ্যান্ডবিল বিলিসহ বিদ্যালয়ের সামনে বড় বড় ব্যানার টাঙিয়ে প্রচার চালিয়ে তিনি এ হাট বসিয়েছেন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা কিছুই জানে না। এদিকে হাটের পরিচালক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন জুয়েলের দাবি, তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে সম্মতি নিয়েছেন।
গ্রামবাসী জানায়, মেহেরপুর সদর থানার আমদহ গ্রামে বামনপাড়া মোড়ে বামনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে মেহেরপুর শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন জুয়েল ও তার লোকজন নিয়ে গত শুক্রবারে পুরাতন মোটরসাইকেল, নসিমন, করিমন ক্রয়-বিক্রয়ের হাট বসিয়েছেন। এর জন্য কয়েকদিন ধরে মাইকিং, প্রচারপত্র বিলি ও ব্যানার টাঙিয়ে প্রচারও করেছেন। গত শুক্রবার জাকজমক আয়োজনের মাধ্যমে হাটের উদ্বোধন করে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রতি শুক্রবার স্কুল মাঠে হাট বসবে।
বামনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফৌজিয়া আফরোজ তুলি বলেন, ‘হাট পরিচালনাকারীরা আমার কাছে এসেছিল। তারা বারবার করে আমাকে বলেছে হাট বসানোর জন্য রেজুলেশন করতে, আপনাকে কিছু টাকা দেব। আমি বলেছি হবে না। আমার স্কুল নোংরা হবে আর আপনারা ব্যবসা করবেন, তা হবে না। তাতে আমাকে বলল মন্ত্রী নাকি উনাদের নির্দেশ দিয়েছেন এখানে হাট বসাতে। আমি উনাদের বলেছি মন্ত্রী মহোদয়কে আমাকে নির্দেশ দিতে হবে। তাতে ওরা আমাকে বলল স্কুলে প্রতি শুক্রবার হাট হবে। আমি বলেছি শনিবারে স্কুল খুলবে। তখনতো ভীষন ঝামেলা হবে। স্কুল মাঠে কোনোভাবে হাট করার সুযোগ নেই। আমার স্কুলমাঠ কেন হাট হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘এ হাটের সাথে স্কুলেল সভাপতি দরুদ আলীও জড়িত আছে। সেও আমাকে হাটের জন্য ফোন দিয়েছে। আমি তাকেও না করে দিয়েছি। আমি এই বিষয়টি ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি দরুদ আলী বলেন, ‘হাট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা স্ট্যাম্পে লিখিত নিয়েছি বিদ্যালয়ের কোনো ক্ষতি হলে, তা তারা পূরণ করে দেবে। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের কোনো আয় নেই। এ থেকে বিদ্যালয়ের কিছু আয় হবে। বিষয়টি প্রধান শিক্ষকও জানেন।’ তিনি আরও বলেন, এলাকার লোকের দাবি ও আবদার পূরণ করতে এটা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আপিল উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাট বসানোর কোনো সুযোগ নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলম বলেন, ‘তারা আমার কাছে এসেছিল হাটের বিষয়ে কথা বলেছে। আমি তাদের জানিয়ে দিয়েছি আমাদের নির্ধারিত হাট আছে। সেটা আমরা নিয়ম মেনে ইজারা দিই। এর বাইরে আমাদের হাটের অনুমোদন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও হাটের পরিচালক কামাল হোসেন জুয়েল বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের জন্য হাট বসানো হচ্ছে। এতে কিছু লোকের কর্মসংস্থান হবে। এ বিষয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। সকলেই মৌনসম্মতি দিয়েছে। তবে হাটের বিষয়ে যদি স্কুল কর্তৃপক্ষ বা কারোর কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে আমরা হাট অন্যত্র সরিয়ে নেব।’ তিনি আরও বলেন, আলমডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরণের হাট চলে। তবে তিনি স্বীকার করেন হাট বসানোর কোনো বৈধ অনুমতি তাদের নেই।