ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রশ্ন ফাঁসে ভিআইপিসহ ৩০০ ফোন নম্বর শনাক্ত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • / ৪২৬ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট: চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ভিআইপিদের ব্যবহৃত নম্বরসহ ৩০০ মোবাইল ও টেলিফোন নম্বর শনাক্ত করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জড়িতদের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক, পরীক্ষার্থী, অভিভাবক এবং মেডিকেল-প্রকৌশলসহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীদের অনেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে তাদের ‘ভিআইপি’ বাবা-মায়ের মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করেছেন। শনাক্ত এসব নম্বর ধরে পুলিশ এখন গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে। তবে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কর্তৃপক্ষের সব প্রচেষ্টাই যেন ব্যর্থ হচ্ছে। রোববার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) নির্দেশনা মতো পরীক্ষার আগে আধা ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হলেও এ দিন অনুষ্ঠিত আইসিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফেসবুক-মেসেঞ্জারে পাওয়া গেছে। বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ-সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটি’র প্রথম সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। কমিটির প্রধান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর সভায় সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সভায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত আগের পরীক্ষাগুলো বাতিল করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সভায় বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে পর্যালোচনা করে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান সচিব মো. আলমগীর।
সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের দায়িত্ব হলো প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা। এ পর্যন্ত ৩০০ টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর চিহ্নিত করে তা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক ও টেলিফোনে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছেন। এই নম্বরধারীদের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী, যারা বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছেন। সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও আছেন।’ সভা শেষে এতে অংশ নেওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, ওই ফোন নম্বরগুলোর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নম্বরও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এসব ভিআইপি নম্বর কেন প্রশ্ন ফাঁসে ব্যবহৃত হয়েছে, তা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা খোঁজ নিচ্ছেন বলে সভায় অংশ নেওয়া তাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের সন্তানরা বাবা-মায়ের অগোচরে এসব মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকতে পারে।
অভিযোগে জড়িতদের মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘এসব নম্বর ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু ব্লকও করা হয়েছে।’ তিনি জানান, এদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এরই মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও গ্রেফতার করা হবে। শুধু গ্রেফতারই নয়, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর আরও বলেন, এসব টেলিফোন নম্বর যাদের কাছেই পাওয়া যাবে, তিনি যে-ই হোন না কেন, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক- সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাবলিক পরীক্ষা আইন এবং সাইবার অপরাধ আইনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনও হতে পারে, তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেখান থেকেও তারা বহিষ্কার হবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি-না, মিডিয়ায় যেসব তথ্য-প্রমাণ এসেছে, তার নেতৃত্বাধীন কমিটি সেগুলো দেখে পর্যালোচনা করবে।’ সভায় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে। আসলেই ফাঁস হয়েছে কি-না, কতক্ষণ আগে ফাঁস হয়েছে, তার প্রভাবটা কী, কতজন ছাত্রছাত্রী এটির মধ্য দিয়ে প্রভাবিত হয়েছে, পরীক্ষা বাতিল করা হবে কি-না, বাতিল করা হলে কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এগুলো পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবেন তারা।’
মো. আলমগীর জানান, দেখা যাচ্ছে যে কেউ কেউ প্রশ্নপত্র পেয়েছে ৫-১০ মিনিট আগে, ওই প্রশ্ন পাওয়ায় তো বেশি প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। আবার দেখা গেছে, বেশ আগে ফাঁস হলেও ৫ বা ১০ হাজার ছেলেমেয়ে প্রশ্নপত্র পেয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছে ২০ লাখের বেশি। এমন বিষয়গুলো হিসাব-নিকাশ করবেন তারা। এরপর সুপারিশ করা হবে। কর্তৃপক্ষ (মন্ত্রণালয়) তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এ কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মনিটরিং এবং আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও বিটিআরসি প্রতিনিধি, আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি কমিটিতে রয়েছেন। রোববার প্রথমবারের মতো পরীক্ষা শুরুর আগে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হলেও তার আগেই বিভিন্ন ফেসবুক ও মেসেঞ্জার অ্যাকাউন্ট গ্রুপে চলে আসে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। রোববার ছিল ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ (আইসিটি) বিষয়ের পরীক্ষা। সকাল ১০টায় এ পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে ‘হেলপিং হ্যান্ড’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে উত্তরসহ ‘গ’ সেটের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দিয়ে দেওয়া হয়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ওই একই প্রশ্ন ও উত্তরের ছবি বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষে ভাইরাল হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়। এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার দিনগুলোতে সীমিত সময়ের জন্য ফেসবুক বন্ধ রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। পরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারা ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেবেন। এর ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখার জন্য মোবাইল অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ করতে করতে সাড়ে ৯টা বেজে যায়। ১০টার পর মোবাইল ইন্টারনেট আবার সচল হয়। অবশ্য ইন্টারনেট বন্ধের এই নির্দেশনা অন্যান্য পরীক্ষার দিনও বলবৎ থাকবে কি-না, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি বিটিআরসির কর্মকর্তারা। এবার এসএসসির প্রথম পরীক্ষা থেকেই ‘PSC_JSC_SSC_HSC_Degree out question bank.(R) ‘, ‘PSC • JSC • SSC • HSC Exam Helping Center ‘, ‘SSC Question Out 2018 ‘ নামক গ্রুপগুলোতে অসংখ্য আইডি থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে আসছে। তারপরও গ্রুপগুলো বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ফেসবুক পেজ-গ্রুপে চলছে প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিযোগিতা। আগের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সবার আগে দিয়েছে- এমন দাবি করে অসংখ্য আইডি থেকে পরের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড বা পুলিশ কিছুতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারছে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রশ্ন ফাঁসে ভিআইপিসহ ৩০০ ফোন নম্বর শনাক্ত

আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট: চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ভিআইপিদের ব্যবহৃত নম্বরসহ ৩০০ মোবাইল ও টেলিফোন নম্বর শনাক্ত করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জড়িতদের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক, পরীক্ষার্থী, অভিভাবক এবং মেডিকেল-প্রকৌশলসহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীদের অনেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে তাদের ‘ভিআইপি’ বাবা-মায়ের মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করেছেন। শনাক্ত এসব নম্বর ধরে পুলিশ এখন গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে। তবে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কর্তৃপক্ষের সব প্রচেষ্টাই যেন ব্যর্থ হচ্ছে। রোববার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) নির্দেশনা মতো পরীক্ষার আগে আধা ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হলেও এ দিন অনুষ্ঠিত আইসিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফেসবুক-মেসেঞ্জারে পাওয়া গেছে। বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ-সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটি’র প্রথম সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। কমিটির প্রধান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর সভায় সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সভায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত আগের পরীক্ষাগুলো বাতিল করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সভায় বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে পর্যালোচনা করে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান সচিব মো. আলমগীর।
সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের দায়িত্ব হলো প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা। এ পর্যন্ত ৩০০ টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর চিহ্নিত করে তা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক ও টেলিফোনে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছেন। এই নম্বরধারীদের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী, যারা বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছেন। সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও আছেন।’ সভা শেষে এতে অংশ নেওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, ওই ফোন নম্বরগুলোর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নম্বরও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এসব ভিআইপি নম্বর কেন প্রশ্ন ফাঁসে ব্যবহৃত হয়েছে, তা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা খোঁজ নিচ্ছেন বলে সভায় অংশ নেওয়া তাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের সন্তানরা বাবা-মায়ের অগোচরে এসব মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকতে পারে।
অভিযোগে জড়িতদের মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘এসব নম্বর ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু ব্লকও করা হয়েছে।’ তিনি জানান, এদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এরই মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও গ্রেফতার করা হবে। শুধু গ্রেফতারই নয়, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর আরও বলেন, এসব টেলিফোন নম্বর যাদের কাছেই পাওয়া যাবে, তিনি যে-ই হোন না কেন, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক- সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাবলিক পরীক্ষা আইন এবং সাইবার অপরাধ আইনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনও হতে পারে, তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেখান থেকেও তারা বহিষ্কার হবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি-না, মিডিয়ায় যেসব তথ্য-প্রমাণ এসেছে, তার নেতৃত্বাধীন কমিটি সেগুলো দেখে পর্যালোচনা করবে।’ সভায় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে। আসলেই ফাঁস হয়েছে কি-না, কতক্ষণ আগে ফাঁস হয়েছে, তার প্রভাবটা কী, কতজন ছাত্রছাত্রী এটির মধ্য দিয়ে প্রভাবিত হয়েছে, পরীক্ষা বাতিল করা হবে কি-না, বাতিল করা হলে কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এগুলো পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবেন তারা।’
মো. আলমগীর জানান, দেখা যাচ্ছে যে কেউ কেউ প্রশ্নপত্র পেয়েছে ৫-১০ মিনিট আগে, ওই প্রশ্ন পাওয়ায় তো বেশি প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। আবার দেখা গেছে, বেশ আগে ফাঁস হলেও ৫ বা ১০ হাজার ছেলেমেয়ে প্রশ্নপত্র পেয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছে ২০ লাখের বেশি। এমন বিষয়গুলো হিসাব-নিকাশ করবেন তারা। এরপর সুপারিশ করা হবে। কর্তৃপক্ষ (মন্ত্রণালয়) তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এ কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মনিটরিং এবং আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও বিটিআরসি প্রতিনিধি, আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি কমিটিতে রয়েছেন। রোববার প্রথমবারের মতো পরীক্ষা শুরুর আগে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হলেও তার আগেই বিভিন্ন ফেসবুক ও মেসেঞ্জার অ্যাকাউন্ট গ্রুপে চলে আসে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। রোববার ছিল ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ (আইসিটি) বিষয়ের পরীক্ষা। সকাল ১০টায় এ পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে ‘হেলপিং হ্যান্ড’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে উত্তরসহ ‘গ’ সেটের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দিয়ে দেওয়া হয়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ওই একই প্রশ্ন ও উত্তরের ছবি বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষে ভাইরাল হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়। এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার দিনগুলোতে সীমিত সময়ের জন্য ফেসবুক বন্ধ রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। পরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারা ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেবেন। এর ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখার জন্য মোবাইল অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ করতে করতে সাড়ে ৯টা বেজে যায়। ১০টার পর মোবাইল ইন্টারনেট আবার সচল হয়। অবশ্য ইন্টারনেট বন্ধের এই নির্দেশনা অন্যান্য পরীক্ষার দিনও বলবৎ থাকবে কি-না, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি বিটিআরসির কর্মকর্তারা। এবার এসএসসির প্রথম পরীক্ষা থেকেই ‘PSC_JSC_SSC_HSC_Degree out question bank.(R) ‘, ‘PSC • JSC • SSC • HSC Exam Helping Center ‘, ‘SSC Question Out 2018 ‘ নামক গ্রুপগুলোতে অসংখ্য আইডি থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে আসছে। তারপরও গ্রুপগুলো বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ফেসবুক পেজ-গ্রুপে চলছে প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিযোগিতা। আগের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সবার আগে দিয়েছে- এমন দাবি করে অসংখ্য আইডি থেকে পরের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড বা পুলিশ কিছুতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারছে না।