ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রবৃদ্ধিতে জোর না দিয়ে জীবন-জীবিকা রক্ষার আহ্বান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৩:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০২০
  • / ১৫৫ বার পড়া হয়েছে

মহামারি করোনা মোকাবিলায় ১৩ দফা বাজেট প্রস্তাবনা বিএনপির
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে সরকারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৩ দফা বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দুই দিন আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে উত্তরার নিজের বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের বাজেট ভাবনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রস্তাবনা দেন। তিনি বলেন, করোনা সঙ্কটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে কোনোভাবেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য খাতে ঝুঁকি থাকলে অর্থনীতিতে স্বস্তির কোনো অবকাশ নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা মনে করি তিন বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোয় মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে, অর্থনীতির ক্রমহ্রাসমান সঙ্কোচন রোধে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে, আয় সঙ্কোচন রোধ করতে হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। গত ৪ এপ্রিল করোনা পরিস্থিতির মোকাবেলায় বিএনপির পক্ষ থেকে ৮৭ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তার যে প্যাকেজ প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তাকে বাজেট প্রণয়নে প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
১৩ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে অগ্রাধিকার হিসেবে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমকল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠন ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার, সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠন, সরকারি বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমকল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষি ও গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কর্মহীন, কর্মক্ষম, বেকার, দরিদ্র মানুষদের নগদ অর্থসহায়তা প্রদান প্রভৃতি। স্বাস্থ্য খাতে চরম দুরবস্থার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সারা দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থা কিভাবে ভেঙে পড়েছে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে রেস্টোর করতে হবে, পুনর্গঠিত করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল করতে হবে। এমন টেকসই ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি করোনা মহামারীর মতো সঙ্কট মোকাবেলায় পর্যাপ্তসংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় যেখানে চিকিৎসকরা যুদ্ধকালীন সময়ের মতো সর্বদা প্রস্তুত থাকবেন একটি ইন বিল্ড সিস্টেমের আওতায়। স্বাস্থ্য খাতে প্রত্যেকের জন্য পারিবারিক ডাক্তার, নার্স ও অবকাঠামোসহ সামগ্রিক ব্যয়ে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ভাতার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে বিএনপির বাজেট প্রস্তাবনায়।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ‘দিন আনে দিন খায়’ শ্রেণীর মানুষকে সর্বজনীন সামাজিক কর্মসূচির আওতায় এনে তাদের নগদ অর্থসহায়তা প্রদান, বেকার ভাতা-প্রতিবন্ধী ভাতা-শিশু প্রতিপালন ভাতা- পেনশন ভাতা-আবাসন সুবিধা, স্বাস্থ্যভাতা প্রদানে এ খাতে জিডিপির ৬-৭ শতাংশ বরাদ্দ, আইটি প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে বিশেষ বরাদ্দ, কৃষি ও খাদ্য খাতে জিডিপি ও বাজেটের কমপক্ষে ১ দশমিক ৫ ও ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ বরাদ্দ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে বরাদ্দ জিডিপির দশমিক ৭৩ শতাংশ ও বাজেটের ২ দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি, সবুজ শিল্পায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতির উজ্জীবন, সমন্বিত শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে ইকুইটি ম্যাচিং তহবিল ও কৃষি কমিশন গঠন, প্রবাসীদের সহজশর্তে ঋণ প্রদানের সুপারিশও করা হয়েছে বিএনপির এ প্রস্তাবনায়। মালিক সমিতির পোশাকশ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মহামারী সঙ্কটকালে শ্রমিকরা যাতে কর্মহীন হয়ে না পড়েন সে জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা নিয়েছেন মালিকরা। প্রণোদনাও নেবেন, ছাঁটাইও করবেনÑ এ দুটো একসাথে চলতে পারে না। মোদ্দাকথা, এ সঙ্কট চলাকালে শ্রমিক ছাঁটাই হবে অমানবিক ভুল সিদ্ধান্ত। মহামারী পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস, বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ ভর্তুকি বাদ দেয়া, অতিরিক্ত জনবলের বিষয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে বিদেশী অনুদান বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদি কম সুদ ও গ্রেস পিরিয়ড সম্পন্ন বিদেশী ঋণ নেয়া, অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ না নেয়া ট্রেজারি বিল ও সঞ্চয়পত্রের ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্র্রার আমদানি তহবিল গঠন, সহজে কর আদায়ের খাতগুলো এক্সপ্লোর করা, দেশে অবস্থানরত কর্মরত অনিবন্ধিত প্রায় আড়াই লাখ বিদেশী নাগরিকের কাছ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ও আয়কর বাবদ প্রায় দেড় মিলিয়ন অর্থ আদায় করা, ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল সক্রিয় করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে কর বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা অদলবদল বা কারেন্সি সোয়াপ, বার্টার ব্যবস্থা চালুর পদক্ষেপ গ্রহণ, পুঁজিবাজার বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি কঠোরভাবে মনিটরিং করার মাধ্যমে বাজেটে অর্থসঙ্কুলানের ব্যবস্থা করার সুপারিশও করা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবনায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনীতি সঙ্কুচিত হওয়ায় আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর কমবে। ফলে রাজস্ব আশানুরূপ হবে না। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশী ঋণের ওপর জোর দিতে হবে। বাজেট ঘাটতি ও জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত সহনীয় কোঠায় রাখতে হবে। শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে তারল্য জোগানের মাধ্যমে এ মহামারীর সঙ্কটকাল থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। প্রয়োজন সক্রিয় রাজস্বনীতির।
ঋণখেলাপি ও সুশাসনের অভাবে অনেকেই ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার, ভর্তুকি ও দুর্ণীতি বিস্তারে সরকারের সমালোচনাও করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সব কিছুর মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। আমূল পরিবর্তন না করলে অর্থনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থবির হয়ে যাবে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের আঘাত আসবে। এ পরিবর্তন কিভাবে ঘটবে তা নির্ভর করবে রাষ্ট্রের সাথে জনগণের সম্পর্কের ওপর। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছে সরকার কতটুকু জবাবদিহি করছে তার ওপর। তিনি বলেন, জনগণের কাছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটের তোয়াক্কা করে না। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে সরকারের কোনো বৈধতা নেই। তারপরও এ মহাসঙ্কটের সময়ে বৃহত্তর স্বার্থে আমরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্রয়াসের আহবান জানাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থতা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিণতির দায় বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রবৃদ্ধিতে জোর না দিয়ে জীবন-জীবিকা রক্ষার আহ্বান

আপলোড টাইম : ১১:১৩:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০২০

মহামারি করোনা মোকাবিলায় ১৩ দফা বাজেট প্রস্তাবনা বিএনপির
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে সরকারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৩ দফা বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দুই দিন আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে উত্তরার নিজের বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের বাজেট ভাবনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রস্তাবনা দেন। তিনি বলেন, করোনা সঙ্কটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে কোনোভাবেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য খাতে ঝুঁকি থাকলে অর্থনীতিতে স্বস্তির কোনো অবকাশ নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা মনে করি তিন বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোয় মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে, অর্থনীতির ক্রমহ্রাসমান সঙ্কোচন রোধে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে, আয় সঙ্কোচন রোধ করতে হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। গত ৪ এপ্রিল করোনা পরিস্থিতির মোকাবেলায় বিএনপির পক্ষ থেকে ৮৭ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তার যে প্যাকেজ প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তাকে বাজেট প্রণয়নে প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
১৩ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে অগ্রাধিকার হিসেবে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমকল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠন ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার, সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠন, সরকারি বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমকল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষি ও গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কর্মহীন, কর্মক্ষম, বেকার, দরিদ্র মানুষদের নগদ অর্থসহায়তা প্রদান প্রভৃতি। স্বাস্থ্য খাতে চরম দুরবস্থার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সারা দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থা কিভাবে ভেঙে পড়েছে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে রেস্টোর করতে হবে, পুনর্গঠিত করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল করতে হবে। এমন টেকসই ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি করোনা মহামারীর মতো সঙ্কট মোকাবেলায় পর্যাপ্তসংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় যেখানে চিকিৎসকরা যুদ্ধকালীন সময়ের মতো সর্বদা প্রস্তুত থাকবেন একটি ইন বিল্ড সিস্টেমের আওতায়। স্বাস্থ্য খাতে প্রত্যেকের জন্য পারিবারিক ডাক্তার, নার্স ও অবকাঠামোসহ সামগ্রিক ব্যয়ে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ভাতার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে বিএনপির বাজেট প্রস্তাবনায়।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ‘দিন আনে দিন খায়’ শ্রেণীর মানুষকে সর্বজনীন সামাজিক কর্মসূচির আওতায় এনে তাদের নগদ অর্থসহায়তা প্রদান, বেকার ভাতা-প্রতিবন্ধী ভাতা-শিশু প্রতিপালন ভাতা- পেনশন ভাতা-আবাসন সুবিধা, স্বাস্থ্যভাতা প্রদানে এ খাতে জিডিপির ৬-৭ শতাংশ বরাদ্দ, আইটি প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে বিশেষ বরাদ্দ, কৃষি ও খাদ্য খাতে জিডিপি ও বাজেটের কমপক্ষে ১ দশমিক ৫ ও ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ বরাদ্দ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে বরাদ্দ জিডিপির দশমিক ৭৩ শতাংশ ও বাজেটের ২ দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি, সবুজ শিল্পায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতির উজ্জীবন, সমন্বিত শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে ইকুইটি ম্যাচিং তহবিল ও কৃষি কমিশন গঠন, প্রবাসীদের সহজশর্তে ঋণ প্রদানের সুপারিশও করা হয়েছে বিএনপির এ প্রস্তাবনায়। মালিক সমিতির পোশাকশ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মহামারী সঙ্কটকালে শ্রমিকরা যাতে কর্মহীন হয়ে না পড়েন সে জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা নিয়েছেন মালিকরা। প্রণোদনাও নেবেন, ছাঁটাইও করবেনÑ এ দুটো একসাথে চলতে পারে না। মোদ্দাকথা, এ সঙ্কট চলাকালে শ্রমিক ছাঁটাই হবে অমানবিক ভুল সিদ্ধান্ত। মহামারী পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস, বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ ভর্তুকি বাদ দেয়া, অতিরিক্ত জনবলের বিষয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে বিদেশী অনুদান বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদি কম সুদ ও গ্রেস পিরিয়ড সম্পন্ন বিদেশী ঋণ নেয়া, অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ না নেয়া ট্রেজারি বিল ও সঞ্চয়পত্রের ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্র্রার আমদানি তহবিল গঠন, সহজে কর আদায়ের খাতগুলো এক্সপ্লোর করা, দেশে অবস্থানরত কর্মরত অনিবন্ধিত প্রায় আড়াই লাখ বিদেশী নাগরিকের কাছ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ও আয়কর বাবদ প্রায় দেড় মিলিয়ন অর্থ আদায় করা, ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল সক্রিয় করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে কর বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা অদলবদল বা কারেন্সি সোয়াপ, বার্টার ব্যবস্থা চালুর পদক্ষেপ গ্রহণ, পুঁজিবাজার বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি কঠোরভাবে মনিটরিং করার মাধ্যমে বাজেটে অর্থসঙ্কুলানের ব্যবস্থা করার সুপারিশও করা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবনায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনীতি সঙ্কুচিত হওয়ায় আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর কমবে। ফলে রাজস্ব আশানুরূপ হবে না। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশী ঋণের ওপর জোর দিতে হবে। বাজেট ঘাটতি ও জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত সহনীয় কোঠায় রাখতে হবে। শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে তারল্য জোগানের মাধ্যমে এ মহামারীর সঙ্কটকাল থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। প্রয়োজন সক্রিয় রাজস্বনীতির।
ঋণখেলাপি ও সুশাসনের অভাবে অনেকেই ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার, ভর্তুকি ও দুর্ণীতি বিস্তারে সরকারের সমালোচনাও করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সব কিছুর মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। আমূল পরিবর্তন না করলে অর্থনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থবির হয়ে যাবে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের আঘাত আসবে। এ পরিবর্তন কিভাবে ঘটবে তা নির্ভর করবে রাষ্ট্রের সাথে জনগণের সম্পর্কের ওপর। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছে সরকার কতটুকু জবাবদিহি করছে তার ওপর। তিনি বলেন, জনগণের কাছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটের তোয়াক্কা করে না। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে সরকারের কোনো বৈধতা নেই। তারপরও এ মহাসঙ্কটের সময়ে বৃহত্তর স্বার্থে আমরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্রয়াসের আহবান জানাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থতা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিণতির দায় বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।