ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রবাসে প্রতারণার শিকার মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৮:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • / ২৮০ বার পড়া হয়েছে

দেশে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় কিংবা উপযুক্ত কাজ না পাওয়ায় তরুণ-যুবকদের একটি বড় অংশ বিদেশে পাড়ি জমাতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বৈধ পথে সুযোগ না পেলে অবৈধ পথে পাড়ি জমাতেও তারা পিছপা হয় না। অতীতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের বনে-জঙ্গলে বাংলাদেশিদের অনেক গণকবরও আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও বিদেশে পাড়ি জমানোর বেপরোয়া চেষ্টা এখনো আছে। আর তাতে লাভবান হচ্ছে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভিটামাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশে যাওয়া তরুণরা। প্রতিশ্রুত বেতন তো নয়ই, বিদেশে গিয়ে অনেকে কাজও পায় না। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। একসময় খালি হাতে ফিরেও আসতে হয়।
বিদেশে বাংলাদেশের প্রধান শ্রবাজার হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব। এখনো বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ আসে এই দেশটি থেকেই। কিন্তু দেশটির আগের অবস্থা এখন নেই। তেলের দাম কমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি নাজুক হয়ে পড়েছে। বড় ধরনের বাজেট ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তার ওপর যুদ্ধ-বিবাদ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। ঘাটতি মোকাবেলায় করারোপের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যমূল্য বা জীবনযাত্রার ব্যয়। তদুপরি কাজের ক্ষেত্রও ক্রমে কমে আসছে। দেশটির নিজস্ব লোকজনই ক্রমে বেশি করে বেকারত্বের শিকার হচ্ছে। জানা যায়, বর্তমানে সৌদি নাগরিকদেরই বেকারত্বের হার ১২.৮ শতাংশ। বাংলাদেশের কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে অনেক বাংলাদেশিকে সৌদি আরব পাঠাচ্ছে। তারাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ছে। ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের কথা বলে নিয়ে গেলেও দেখা যায় বেতন দেওয়া হয় অর্ধেকেরও কম। তাতে নিজেরই থাকা-খাওয়া হয় না। বাড়িতে টাকা পাঠানোর সুযোগই থাকে না। অথচ ঋণ পরিশোধের জন্য স্বজনদের থাকতে হয় অব্যাহত চাপের মুখে। সরকারকে বিষয়টি জরুরি বিবেচনায় নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রিক্রুটিং এজেন্সি ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কর্মকা- কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণে সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা অছে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অভিযোগ আছে, জনপ্রতি নেওয়া হয় পাঁচ লাখ থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত। এটি বন্ধ করতে হবে। জানা যায়, সৌদি আরবে থাকা অনেক বাংলাদেশি অবৈধ ভিসা বা এনওসি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। সৌদি আইনেও এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। দূতাবাসের সাহায্য নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে এ প্রতারণা ঠেকাতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষ যাতে দালালদের খপ্পরে না পড়ে সে জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রবাসে প্রতারণার শিকার মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করুন

আপলোড টাইম : ০৯:৩৮:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

দেশে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় কিংবা উপযুক্ত কাজ না পাওয়ায় তরুণ-যুবকদের একটি বড় অংশ বিদেশে পাড়ি জমাতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বৈধ পথে সুযোগ না পেলে অবৈধ পথে পাড়ি জমাতেও তারা পিছপা হয় না। অতীতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের বনে-জঙ্গলে বাংলাদেশিদের অনেক গণকবরও আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও বিদেশে পাড়ি জমানোর বেপরোয়া চেষ্টা এখনো আছে। আর তাতে লাভবান হচ্ছে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভিটামাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশে যাওয়া তরুণরা। প্রতিশ্রুত বেতন তো নয়ই, বিদেশে গিয়ে অনেকে কাজও পায় না। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। একসময় খালি হাতে ফিরেও আসতে হয়।
বিদেশে বাংলাদেশের প্রধান শ্রবাজার হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব। এখনো বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ আসে এই দেশটি থেকেই। কিন্তু দেশটির আগের অবস্থা এখন নেই। তেলের দাম কমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি নাজুক হয়ে পড়েছে। বড় ধরনের বাজেট ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তার ওপর যুদ্ধ-বিবাদ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। ঘাটতি মোকাবেলায় করারোপের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যমূল্য বা জীবনযাত্রার ব্যয়। তদুপরি কাজের ক্ষেত্রও ক্রমে কমে আসছে। দেশটির নিজস্ব লোকজনই ক্রমে বেশি করে বেকারত্বের শিকার হচ্ছে। জানা যায়, বর্তমানে সৌদি নাগরিকদেরই বেকারত্বের হার ১২.৮ শতাংশ। বাংলাদেশের কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে অনেক বাংলাদেশিকে সৌদি আরব পাঠাচ্ছে। তারাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ছে। ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের কথা বলে নিয়ে গেলেও দেখা যায় বেতন দেওয়া হয় অর্ধেকেরও কম। তাতে নিজেরই থাকা-খাওয়া হয় না। বাড়িতে টাকা পাঠানোর সুযোগই থাকে না। অথচ ঋণ পরিশোধের জন্য স্বজনদের থাকতে হয় অব্যাহত চাপের মুখে। সরকারকে বিষয়টি জরুরি বিবেচনায় নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রিক্রুটিং এজেন্সি ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কর্মকা- কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণে সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা অছে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অভিযোগ আছে, জনপ্রতি নেওয়া হয় পাঁচ লাখ থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত। এটি বন্ধ করতে হবে। জানা যায়, সৌদি আরবে থাকা অনেক বাংলাদেশি অবৈধ ভিসা বা এনওসি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। সৌদি আইনেও এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। দূতাবাসের সাহায্য নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে এ প্রতারণা ঠেকাতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষ যাতে দালালদের খপ্পরে না পড়ে সে জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।