ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৯:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অগাস্ট ২০২১
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের
শতকরা দুই ভাগ হারে প্রণোদনা দিয়েও প্রবাসী আয়ে গতি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ গত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রবাসী আয়ই আমাদের অর্থনীতির সব থেকে শক্তিশালী খাত। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স খাতের জাদু শেষ হয়ে আসছে। অর্থনীতির সব থেকে শক্তিশালী জায়গা বৈদেশিক খাতে এক ধরনের ভাঙন ধরেছে। অর্থনৈতিক উচ্ছ্বাসের নিচে কালো ছায়া দেখা যাচ্ছে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী বাংলাদেশী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সাথে আরো দুই টাকা যোগ করে ১০২ টাকা দেয়া হচ্ছে প্রবাসীর স্বজনদের। এর ফলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেশ অনেকটাই বেড়েছিল। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও স্ফীত হয়েছিল। কিন্তু এখন নানা কারণে এ খাতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার (১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা টাকার হিসাবে ১৫ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। এটি এর আগের মাস জুনের চেয়ে ছয় কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম। আর আগের বছরের (২০২০ সালের জুলাই) একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। এই হ্রাসপ্রাপ্তির জন্য প্রধানত বৈশ্বিক কোভিড মহামারীর ভয়াবহতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। রফতানি খাতেও পতন হয়েছে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান বলছে, বৈদেশিক খাতে এক ধরনের ভাঙন ধরেছে।
গত রোববার রাজধানীতে এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’ কী কী কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ না-ও হতে পারে তা উল্লেখ করেছেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘২০২০-২১ হিসাব বছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, যা পরে সংশোধন করে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ ধরা হয়েছে। এই ৫ দশমিক ২০ শতাংশ কোনো অবস্থায়ই টিকবে না। আমরা আগেই সমালোচনা করেছিলাম প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ পরিসংখ্যানটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে আমরা কিছু পুনরুদ্ধার দেখেছিলাম। কিন্তু শেষ তিন মাসে এসে আমরা মহামারীর দ্বিতীয় ধাক্কায় পড়েছি। গত তিন মাসের যে পরিস্থিতি, লকডাউন, যে স্থবিরতা ও মৃত্যুর প্রতিফলন কিন্তু নেই প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রায়। সুতরাং ৫ দশমিক ২০ অবশ্যই কমবে।’ অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘আশা করেছিলাম এবার পুনরুদ্ধারের বাজেট হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তেমন কিছু নেই বাজেটে। সাধারণ মানুষের সাথে সরকারের এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা ঘটে গেছে। কিছু মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যেন ব্যস্ত সবাই।’
টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাজেটের অর্ধেক বরাদ্দ হলো সরকারি কেনাকাটা। সরকারি ক্রয় খাত রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।’ ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ছোট ও মাঝারি শিল্প মাসের পর মাস পরিচালনায় নেই, যা কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশ রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দেয়ায় প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে সপ্তম স্থানে উঠে আসে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ছিল অষ্টম স্থানে। কিন্তু নেতিবাচক প্রবণতা শেষ পর্যন্ত কতটা স্থায়ী হবে সেটাও দেখার বিষয়। তবে সুলতানা কামালের বক্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারের সাথে জনগণের বিচ্ছিন্নতা সত্যিই উদ্বেগের। কারণ, অর্থনীতির জন্য যে নাজুক সময় সামনে আসছে তা থেকে উত্তরণ ঘটানো কোনো গণবিচ্ছিন্ন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা

আপলোড টাইম : ০৯:১৯:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অগাস্ট ২০২১

অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের
শতকরা দুই ভাগ হারে প্রণোদনা দিয়েও প্রবাসী আয়ে গতি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ গত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রবাসী আয়ই আমাদের অর্থনীতির সব থেকে শক্তিশালী খাত। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স খাতের জাদু শেষ হয়ে আসছে। অর্থনীতির সব থেকে শক্তিশালী জায়গা বৈদেশিক খাতে এক ধরনের ভাঙন ধরেছে। অর্থনৈতিক উচ্ছ্বাসের নিচে কালো ছায়া দেখা যাচ্ছে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী বাংলাদেশী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সাথে আরো দুই টাকা যোগ করে ১০২ টাকা দেয়া হচ্ছে প্রবাসীর স্বজনদের। এর ফলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেশ অনেকটাই বেড়েছিল। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও স্ফীত হয়েছিল। কিন্তু এখন নানা কারণে এ খাতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার (১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা টাকার হিসাবে ১৫ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। এটি এর আগের মাস জুনের চেয়ে ছয় কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম। আর আগের বছরের (২০২০ সালের জুলাই) একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। এই হ্রাসপ্রাপ্তির জন্য প্রধানত বৈশ্বিক কোভিড মহামারীর ভয়াবহতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। রফতানি খাতেও পতন হয়েছে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান বলছে, বৈদেশিক খাতে এক ধরনের ভাঙন ধরেছে।
গত রোববার রাজধানীতে এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’ কী কী কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ না-ও হতে পারে তা উল্লেখ করেছেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘২০২০-২১ হিসাব বছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, যা পরে সংশোধন করে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ ধরা হয়েছে। এই ৫ দশমিক ২০ শতাংশ কোনো অবস্থায়ই টিকবে না। আমরা আগেই সমালোচনা করেছিলাম প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ পরিসংখ্যানটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে আমরা কিছু পুনরুদ্ধার দেখেছিলাম। কিন্তু শেষ তিন মাসে এসে আমরা মহামারীর দ্বিতীয় ধাক্কায় পড়েছি। গত তিন মাসের যে পরিস্থিতি, লকডাউন, যে স্থবিরতা ও মৃত্যুর প্রতিফলন কিন্তু নেই প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রায়। সুতরাং ৫ দশমিক ২০ অবশ্যই কমবে।’ অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘আশা করেছিলাম এবার পুনরুদ্ধারের বাজেট হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তেমন কিছু নেই বাজেটে। সাধারণ মানুষের সাথে সরকারের এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা ঘটে গেছে। কিছু মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যেন ব্যস্ত সবাই।’
টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাজেটের অর্ধেক বরাদ্দ হলো সরকারি কেনাকাটা। সরকারি ক্রয় খাত রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।’ ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ছোট ও মাঝারি শিল্প মাসের পর মাস পরিচালনায় নেই, যা কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশ রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দেয়ায় প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে সপ্তম স্থানে উঠে আসে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ছিল অষ্টম স্থানে। কিন্তু নেতিবাচক প্রবণতা শেষ পর্যন্ত কতটা স্থায়ী হবে সেটাও দেখার বিষয়। তবে সুলতানা কামালের বক্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারের সাথে জনগণের বিচ্ছিন্নতা সত্যিই উদ্বেগের। কারণ, অর্থনীতির জন্য যে নাজুক সময় সামনে আসছে তা থেকে উত্তরণ ঘটানো কোনো গণবিচ্ছিন্ন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।