ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা; চাপে পড়ছে অর্থনীতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২২
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বের চলমান ঘটনাপ্রবাহ অর্থনীতির জন্য অনুকূল নয়। বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ কমে আসার সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসতে শুরু করেছিল। নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মানুষের চলাচল, ব্যবসাবাণিজ্য, দাফতরিক কর্মকাণ্ড এখন পুরোদমে চলছে। মহামারিজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠে বিশ্ব-অর্থনীতি আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছে এমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল; কিন্তু সম্প্রতি ইউক্রেন সঙ্কট নতুন আঘাত হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনে চলতি রুশ আক্রমণে বিশ্ববাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আরো বাড়বে। সেই সাথে বাড়বে খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দামও। কারণ বিশ্বে খাদ্যশস্যের একটি উল্লেøখযোগ্য অংশের জোগান দেয় ইউক্রেন। বাংলাদেশে মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার তেমন কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি অর্থনীতির কোন খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সরকারিভাবে এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যানও নেই। নেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার বিষয়েও কোনো জরিপ। তবে বিশ্ব-অর্থনীতি স্বাভাবিক হয়ে আসার সাথে সাথে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত পোশাক রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে বলে খাতসংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে জানা যায়। কিন্তু তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ করোনাপূর্ব সময়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না জানা যায়নি। বরং আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম এখন তৈরী পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বৈশ্বিক সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাতে ধস নেমেছে। প্রবাসী আয় গত তিন মাস ধরে ক্রমাগত কমছে। গণমাধ্যমের খবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রেমিট্যান্স-প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে নেতিবাচক। এই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৯ শতাংশ। এর ফলে সঙ্কট বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে। আমদানি ব্যয় বাড়ছে বিপুল হারে; কিন্তু রফতানি আয় আশাব্যঞ্জক নয়। আমদানি ও রফতানি আয়ের মধ্যকার ঘাটতি পূরণ হতো যে প্রবাসী আয় থেকে সেটি এখন আর হচ্ছে না। জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বৃদ্ধির পরিমাণ সাড়ে ৫৪ শতাংশ। এর প্রভাব পড়েছে ডলারের বাজারে। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় ঘাটতি মেটানোর মতো ডলারের জোগান নেই। সে জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ভেঙে ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। গত সাত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে ৩২৮ কোটি মার্কিন ডলার। এসব কারণে বাজারে ডলারের দাম বাড়ছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে; কিন্তু খোলাবাজারে বিক্রি হয়েছে ৮৯ টাকার কাছাকাছি। ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বাজারে ডলারের সঙ্কট আরো বাড়বে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। আবার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির প্রক্রিয়ায়ও বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন হবে। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো সমস্যার মুখে পড়ছে। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান না করেই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলছে। ফলে মূল্য পরিশোধের সময় পড়ছে বেকায়দায়। রফতানি আয় কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না যাওয়া, আমদানি ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সাথে দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ঢালাও অর্থ ব্যয় সার্বিকভাবে অর্থনীতির জন্য শুভ হচ্ছে না। সরকারের চলতি ব্যয়ের ওপরও এটি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তা বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দেবে। এ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া জরুরি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা; চাপে পড়ছে অর্থনীতি

আপলোড টাইম : ১০:২৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২২

বিশ্বের চলমান ঘটনাপ্রবাহ অর্থনীতির জন্য অনুকূল নয়। বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ কমে আসার সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসতে শুরু করেছিল। নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মানুষের চলাচল, ব্যবসাবাণিজ্য, দাফতরিক কর্মকাণ্ড এখন পুরোদমে চলছে। মহামারিজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠে বিশ্ব-অর্থনীতি আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছে এমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল; কিন্তু সম্প্রতি ইউক্রেন সঙ্কট নতুন আঘাত হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনে চলতি রুশ আক্রমণে বিশ্ববাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আরো বাড়বে। সেই সাথে বাড়বে খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দামও। কারণ বিশ্বে খাদ্যশস্যের একটি উল্লেøখযোগ্য অংশের জোগান দেয় ইউক্রেন। বাংলাদেশে মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার তেমন কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি অর্থনীতির কোন খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সরকারিভাবে এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যানও নেই। নেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার বিষয়েও কোনো জরিপ। তবে বিশ্ব-অর্থনীতি স্বাভাবিক হয়ে আসার সাথে সাথে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত পোশাক রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে বলে খাতসংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে জানা যায়। কিন্তু তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ করোনাপূর্ব সময়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না জানা যায়নি। বরং আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম এখন তৈরী পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বৈশ্বিক সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাতে ধস নেমেছে। প্রবাসী আয় গত তিন মাস ধরে ক্রমাগত কমছে। গণমাধ্যমের খবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রেমিট্যান্স-প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে নেতিবাচক। এই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৯ শতাংশ। এর ফলে সঙ্কট বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে। আমদানি ব্যয় বাড়ছে বিপুল হারে; কিন্তু রফতানি আয় আশাব্যঞ্জক নয়। আমদানি ও রফতানি আয়ের মধ্যকার ঘাটতি পূরণ হতো যে প্রবাসী আয় থেকে সেটি এখন আর হচ্ছে না। জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বৃদ্ধির পরিমাণ সাড়ে ৫৪ শতাংশ। এর প্রভাব পড়েছে ডলারের বাজারে। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় ঘাটতি মেটানোর মতো ডলারের জোগান নেই। সে জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ভেঙে ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। গত সাত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে ৩২৮ কোটি মার্কিন ডলার। এসব কারণে বাজারে ডলারের দাম বাড়ছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে; কিন্তু খোলাবাজারে বিক্রি হয়েছে ৮৯ টাকার কাছাকাছি। ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বাজারে ডলারের সঙ্কট আরো বাড়বে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। আবার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির প্রক্রিয়ায়ও বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন হবে। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো সমস্যার মুখে পড়ছে। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান না করেই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলছে। ফলে মূল্য পরিশোধের সময় পড়ছে বেকায়দায়। রফতানি আয় কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না যাওয়া, আমদানি ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সাথে দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ঢালাও অর্থ ব্যয় সার্বিকভাবে অর্থনীতির জন্য শুভ হচ্ছে না। সরকারের চলতি ব্যয়ের ওপরও এটি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তা বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দেবে। এ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া জরুরি।