ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রবাসীর স্ত্রীকে অচেতন করে গলাকেটে হত্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদরের নতুন যাদবপুরে পরকীয়ার জেরে মধ্যরাতে নৃশংসতা
পরকীয়া প্রেমিক মামুন আটক, হত্যা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশের হাতে
নিজস্ব প্রতিবেদক/প্রতিবেদক, সরোজগঞ্জ:
চুয়াডাঙ্গায় প্রবাসীর স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নতুন যাদবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। গতকাল বুধবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। নিহত জেসমিন খাতুন আয়না (৩৮) নতুন যাদবপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী হাবিবুর রহমান হাবিলের স্ত্রী ও ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কেসমত ঘোড়াগাছা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। এ ঘটনায় পুলিশ গতকালই একই এলাকার ওসমান মণ্ডলের ছেলে মামুন মণ্ডলকে (২৭) আটক করে। ইতোমধ্যে পুলিশ হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বেশকিছু তথ্যও উদ্ধার হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে জেসমিন বেগম আয়নার সঙ্গে হাবিবুর রহমান হাবিলের বিবাহ হয়। ১৮ বছর পূর্বে কর্মসূত্রে কুয়েতে যান হাবিল। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় একই গ্রামের ওসমান মণ্ডলের ছেলে মামুনের সঙ্গে জেসমিন বেগমের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তবে কয়েক বছর পূর্বেই এই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর থেকে মামুন বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনে জেসমিনকে বিরক্ত করে আসছিলেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার জেসমিন বেগম তাঁর নিজ ঘরে খুন হন। সেসময় বাড়ির প্রধান ফটক ও ঘরের মূল ফটক বন্ধ ছিল। রাত দুইটার দিকে জেসমিন খাতুনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার কারণেই মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে জেসমিনকে হত্যা করেছে বলেও ধারণা করছেন তারা। এ ঘটনায় গতকালই সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামুনকে আটক করে।
ঘটনার রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে নিহত জেসমিন বেগমের নিজ ঘর থেকে থেকে একটি ছুরি, তিনটি মোবাইল ফোন, হ্যান্ডগ্লাভস ও পাঁচটি পানির গ্লাস ও একটি চামস উদ্ধার করেছে। পানির গ্লাস থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্যের গন্ধ বের হওয়ায় পুলিশ ধারণা করছে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর তাঁকে হত্যা করে গলায় ছুরি বিদ্ধ করে রেখে পালিয়ে যান খুনি।
সকালে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহত জেসমিনের গলার নিচে ও বাঁ-পাশে এবং বাঁ-হাত ও ঘাড়েসহ মোট পাঁচটি স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পেয়েছে।
নিহত জেসমিনের ননদ রাশিদা খাতুন জানান, ‘রাতে জেসমিন বাড়িতে একা ঘুমিয়ে ছিলেন। জেসমিনের দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে তাসমিনের গত মাসে বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছেলে স্থানীয় স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র আজমির মাঝেমধ্যেই রাতে তাঁর সঙ্গে ঘুমায়। গত রাতেও আজমির ফুফুর সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকায় বাড়িতে জেসমিন একা ছিলেন। হঠাৎ মধ্যরাতে জেসমিনের চিৎকার শুনতে পান রাশিদা, ছুটে গিয়ে সিঁড়ির ঘর দিয়ে ঘরে ঢুকে দেখতে পান জেসমিন নিজ ঘরে বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাঁর গলায় একটি ছুরি বিধে ছিল। খবর পেয়ে রাতেই কুতুবপুর পুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
কুতুবপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নিখিল চন্দ্র অধিকারী জানান, রাত দুইটার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমেদ হাসানুজ্জামান মোবাইল ফোনে প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যার ঘটনাটির বিষয়ে জানান। এসময় তাঁরা দ্রুত ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বাড়িটির মূল ফটক ও ঘরের কলাপসিবলের গেট তালা বন্ধ ছিল। ঘরে প্রবেশ করে তাঁরা ওই গৃহবধূর গলায় ছুরি বিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান।
নিহত নাসিমা বেগমের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য গতকালই তিন সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহাবুবুর রহমানকে সভাপতি করে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ছিলেন সদর হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম। বিকেল চারটার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন জাফরপুর গ্রামে মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ধরে নিহত জেসমিনের সাবেক প্রেমিক মামুনকে আটক করা হয়। আমরা খুনিকে শনাক্ত করতে পেরেছি। আগামীকাল (আজ) তাঁকে চুয়াডাঙ্গা আমলি আদালতে নেওয়া হবে।’ অপর দিকে, গতকাল মাগরিবের নামাজের পর নিহতের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রবাসীর স্ত্রীকে অচেতন করে গলাকেটে হত্যা

আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

চুয়াডাঙ্গা সদরের নতুন যাদবপুরে পরকীয়ার জেরে মধ্যরাতে নৃশংসতা
পরকীয়া প্রেমিক মামুন আটক, হত্যা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশের হাতে
নিজস্ব প্রতিবেদক/প্রতিবেদক, সরোজগঞ্জ:
চুয়াডাঙ্গায় প্রবাসীর স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নতুন যাদবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। গতকাল বুধবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। নিহত জেসমিন খাতুন আয়না (৩৮) নতুন যাদবপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী হাবিবুর রহমান হাবিলের স্ত্রী ও ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কেসমত ঘোড়াগাছা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। এ ঘটনায় পুলিশ গতকালই একই এলাকার ওসমান মণ্ডলের ছেলে মামুন মণ্ডলকে (২৭) আটক করে। ইতোমধ্যে পুলিশ হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বেশকিছু তথ্যও উদ্ধার হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে জেসমিন বেগম আয়নার সঙ্গে হাবিবুর রহমান হাবিলের বিবাহ হয়। ১৮ বছর পূর্বে কর্মসূত্রে কুয়েতে যান হাবিল। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় একই গ্রামের ওসমান মণ্ডলের ছেলে মামুনের সঙ্গে জেসমিন বেগমের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তবে কয়েক বছর পূর্বেই এই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর থেকে মামুন বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনে জেসমিনকে বিরক্ত করে আসছিলেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার জেসমিন বেগম তাঁর নিজ ঘরে খুন হন। সেসময় বাড়ির প্রধান ফটক ও ঘরের মূল ফটক বন্ধ ছিল। রাত দুইটার দিকে জেসমিন খাতুনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার কারণেই মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে জেসমিনকে হত্যা করেছে বলেও ধারণা করছেন তারা। এ ঘটনায় গতকালই সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামুনকে আটক করে।
ঘটনার রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে নিহত জেসমিন বেগমের নিজ ঘর থেকে থেকে একটি ছুরি, তিনটি মোবাইল ফোন, হ্যান্ডগ্লাভস ও পাঁচটি পানির গ্লাস ও একটি চামস উদ্ধার করেছে। পানির গ্লাস থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্যের গন্ধ বের হওয়ায় পুলিশ ধারণা করছে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর তাঁকে হত্যা করে গলায় ছুরি বিদ্ধ করে রেখে পালিয়ে যান খুনি।
সকালে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহত জেসমিনের গলার নিচে ও বাঁ-পাশে এবং বাঁ-হাত ও ঘাড়েসহ মোট পাঁচটি স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পেয়েছে।
নিহত জেসমিনের ননদ রাশিদা খাতুন জানান, ‘রাতে জেসমিন বাড়িতে একা ঘুমিয়ে ছিলেন। জেসমিনের দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে তাসমিনের গত মাসে বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছেলে স্থানীয় স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র আজমির মাঝেমধ্যেই রাতে তাঁর সঙ্গে ঘুমায়। গত রাতেও আজমির ফুফুর সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকায় বাড়িতে জেসমিন একা ছিলেন। হঠাৎ মধ্যরাতে জেসমিনের চিৎকার শুনতে পান রাশিদা, ছুটে গিয়ে সিঁড়ির ঘর দিয়ে ঘরে ঢুকে দেখতে পান জেসমিন নিজ ঘরে বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাঁর গলায় একটি ছুরি বিধে ছিল। খবর পেয়ে রাতেই কুতুবপুর পুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
কুতুবপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নিখিল চন্দ্র অধিকারী জানান, রাত দুইটার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমেদ হাসানুজ্জামান মোবাইল ফোনে প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যার ঘটনাটির বিষয়ে জানান। এসময় তাঁরা দ্রুত ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বাড়িটির মূল ফটক ও ঘরের কলাপসিবলের গেট তালা বন্ধ ছিল। ঘরে প্রবেশ করে তাঁরা ওই গৃহবধূর গলায় ছুরি বিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান।
নিহত নাসিমা বেগমের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য গতকালই তিন সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহাবুবুর রহমানকে সভাপতি করে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ছিলেন সদর হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম। বিকেল চারটার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন জাফরপুর গ্রামে মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ধরে নিহত জেসমিনের সাবেক প্রেমিক মামুনকে আটক করা হয়। আমরা খুনিকে শনাক্ত করতে পেরেছি। আগামীকাল (আজ) তাঁকে চুয়াডাঙ্গা আমলি আদালতে নেওয়া হবে।’ অপর দিকে, গতকাল মাগরিবের নামাজের পর নিহতের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।