ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রবাসীদের পদে পদে ভোগান্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাকাল তাদের জন্য বাড়তি ভোগান্তি নিয়ে এসেছিল। কর্মহীন হওয়া। দেশে ফিরে কর্মস্থলে ফিরতে না পারা। ফেরার সুযোগ থাকলেও ফ্লাইট না থাকা। ফ্লাইট থাকলেও বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা না থাকা। বিভিন্ন দেশের করোনার নির্দিষ্ট টিকা ও কোয়ারেন্টিন শর্ত। একের পর এক এমন অনেক সমস্যা পিছু ছাড়ছে না প্রবাসীদের। দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কিছু দেশ এখনো ভ্রমণ বিধিনিষেধ দিয়ে রাখায় সব প্রস্তুতির পরও কর্মস্থলে যেতে পারছেন না প্রবাসীরা। নানা সময়ে সমস্যায় পরে দাবি আদায়ে রাজপথে নামতে হচ্ছে তাদের। প্রবাসীদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে তারা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
করোনায় সৃষ্ট সংকট কাটিয়ে উঠছে বহির্বিশ্বের বহু দেশ। স্বাভাবিক হয়ে উঠছে জনজীবন। বাংলাদেশে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সংকট যেন কাটছেই না। করোনাকালীন সময়ে দেশে আসা প্রবাসীদের ফেরত নিতে একের পর এক শর্ত আরোপ করছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ। তবে এসব শর্ত মেনে প্রবাসীদের বিদেশ যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে। এতে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে বেড়েছে অনিশ্চয়তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা প্রয়োগে বিলম্বের কারণেই সংকট বেড়েছে। দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা টিকা না পাওয়ায় বহির্বিশ্বের শ্রমবাজারে তাদের অবস্থান নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা হয়, সেসব দেশের নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করলে প্রবাসী কর্মীদের ভোগান্তি কমে আসবে।
গত বছরের শুরু থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখের অধিক প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেছেন। এদের অনেকেই করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন, কেউ কেউ কর্মস্থল বন্ধ থাকায় কিংবা ভিসার মেয়াদ শেষ করে দেশে এসেছেন। বিভিন্ন কারণে দেশে এসে করোনায় আটকা পড়েন তারা। ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনার বিস্তার বাড়তে থাকায় বিভিন্ন দেশে শুরু হয় লকডাউন। এতে বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিপাকে পড়েন প্রবাসীরা। তখন অনেকে কর্মস্থলে ফিরতে চাইলেও পারেননি।
গত বছরের অক্টোবরে করোনার প্রথম ঢেউ কিছুটা কমে আসলে সৌদিসহ কয়েকটি দেশে প্রবাসীরা ফেরত যাওয়ার সুযোগ পায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয় সৌদি এয়ারলাইন্সসহ কয়েকটি ফ্লাইট। তখন টিকিট সংকটে পড়েন প্রবাসীরা। সীমিত সংখ্যক আসনের বিপরীতে কয়েকগুণ বেশি যাত্রীর চাপ দেখা দেয়। তাদের অনেকেই দেশে ফেরার সময় রিটার্ন টিকিট নিয়ে ফিরেন। নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট চালু না হওয়ায় রিটান টিকিটের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। তখন সৌদি আরবে ফেরা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। অনেকে রিটার্ন টিকিট আপডেট করতে রাজধানীর বিমানবন্দর, মতিঝিল ও কাওরান বাজার এলাকায় ভিড় করেন। টিকিট না পেয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সৌদি প্রবাসীরা। সে সময়েও টিকিট না পাওয়া ও ফ্লাইট জটিলতার কারণে কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি অনেকে। ততদিনে অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। নানা ভোগান্তি ও উচ্চ দামে টিকিট কেটেও যেতে পারেননি কেউ কেউ। সৌদি প্রবাসীরা আকামার মেয়াদ বাড়াতে চাইলেও অধিকাংশ নিয়োগদাতা তখন সাড়া দেয়নি। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন তারা।
পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সৌদি সরকারের দেয়া নতুন বিধিনিষেধে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এসব প্রবাসীরা। ফ্লাইট নিয়ে বিমানবন্দরে পড়েন চরম বিড়ম্বনায়। বাংলাদেশ থেকে করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে সৌদি পৌঁছালেও হোটেলে নিজ খরচে ৭ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। এতে অগ্রিম হোটেল বুকিং দেয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। যারা হোটেল বুকিং দিয়েছেন তাদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত প্রায় ৫০ হাজার থেকে পৌনে এক লাখ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে চলতি বছর করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হলে নড়েচড়ে বসে বিভিন্ন দেশ। টিকা গ্রহণ ছাড়া কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞাও আসে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়। তখন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীরা বয়স ও জাতীয় পরিচয়পত্র জটিলতার কারণে টিকা নিতে পারেননি। এতে থেমে যায় অনেকের বিদেশ যাত্রার স্বপ্ন। প্রবাসীরা টিকা পেতে সরকারের কাছে আবেদনও করেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। তবে ততদিনে অনেকের ভিসা ও আকামার মেয়াদ ফুুরিয়ে যায়।
গত জুন-জুলাই মাসে কর্মস্থলে গমন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন টিকা রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। বিদেশগামী কর্মীদের টিকার জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফরমে রেজিস্ট্রেশনের সুবিধার্থে ২রা জুলাই থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু করে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি। তখনও সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনে বিড়ম্বনায় পড়েন তারা। পরবর্তীতে দ্রুত সময়ে টিকা রেজিস্ট্রেশন করতে বিএমইটি চালু করে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ। বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধন ও স্মার্টকার্ড না থাকায় সেখানেও ভোগান্তির শিকার হন তারা। পরবর্তীতে বিএমইটির নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এসে প্রবাসীরা টিকার নিবন্ধন করেন। সরকার রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রবাসীদের টিকা কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করেছে। তবে শুরু থেকেই প্রবাসীরা টিকা পাওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ করে আসছেন। অনেকে নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে গিয়েও টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন। আবার কখনো কখনো টিকাকেন্দ্রে বিক্ষোভ করছেন প্রবাসীরা। নির্দিষ্ট সময়ে টিকা না পেয়ে অনেকেই প্রবাসে ফিরতে পারেননি। এরই মধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। প্রবাসীরা যে পরিমাণ নিবন্ধন করেছে তার তুলনায় স্বল্প সংখ্যক প্রবাসীদেরকে টিকা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকে বলছেন, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি’র মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করলেও টিকার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনের ১ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো টিকা নেয়ার এসএমএস আসেনি। এতে প্রবাসে ফেরা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। অনেকে এসএমএস পেয়ে টিকাকেন্দ্রে গেলেও মিলছে না টিকা। গত ১১ই সেপ্টেম্বর এনিয়ে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা মেডিকেলের সামনে বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা। নির্দিষ্ট দিনে টিকা না পাওয়া প্রবাসীরা জানান, গত ৯ই সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেলে কয়েক শতাধিক প্রবাসীকে টিকা দেয়ার কথা থাকলেও, এদিন প্রবাসীরা টিকা পাননি।
এদিকে বাংলাদেশের আরেকটি বড় শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। করোনাকালীন প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফিরেছেন। দেশে ছুটি কাটিয়ে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী টিকিট কেটে রেখেছেন আরব আমিরাতে ফিরতে। করোনার সংক্রমণের কারণে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা নির্দিষ্ট সময়ে ফিরতে পারেনি। তবে গত আগস্ট ফের শ্রমবাজার খুলে দেয়া হয়। তখন দেশটির সরকার জানিয়েছে যেসব দেশের বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর টেস্টের সুবিধা চালু থাকতে সেসব দেশের প্রবাসীরা আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে এর এক মাস পেরিয়ে গেলেও বিমানবন্দর আরটিপিসিআর টেস্টের সুবিধা চালু হয়নি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নির্দেশনাও দেন। নির্দেশনার ১ সপ্তাহ সময়েও আরটিপিসিআর ল্যাব বসেনি। এতে আবর আমিরাত প্রবাসীদের কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রবাসী কর্মীরা। গত সোম ও মঙ্গলবার তারা বিক্ষোভ করেন। তারা ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনের গেট অবরোধ করে রাখেন। যদিও পরের দিন হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়।
ফয়সাল নামের এক সৌদি প্রবাসী বলেন, প্রবাসীদের ভোগান্তির শেষ নেই। একটা শেষ না হতেই আরেকটার ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। প্রতিনিয়তই প্রবাসীরা নতুন নতুন নিয়মকানুনে আটকে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় দেশে আটকে থাকলেও তাদেরকে দ্রুত কর্মস্থলে ফেরাতে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এতে আমাদের কাজে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে হাজার হাজার প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাদের এখন মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের বিদেশ ফেরত কর্মীর পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৭ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেন। চলতি বছরের শুরু থেকে ২০শে জুলাই পর্যন্ত ২ লাখ ৪২ হাজার ৮৮২ জন প্রবাসী দেশে আসেন। দেশে করোনা শুরু হলেও গত বছরের মার্চে ৩ হাজার ৯৭৪ জন, এপ্রিলে ১ হাজার ৭২৩ জন, মে মাসে ৬ হাজার ৭১৬ জন, জুনে ১১ হাজার ৮৬৬ জন, জুলাইয়ে ২৮ হাজার ১৯৬ জন, আগস্টে ৪৯ হাজার ৩০৩ জন, সেপ্টেম্বরে ৬৭ হাজার ৮৫৪ জন, অক্টোবরে ৮০ হাজার ১৩২ জন, নভেম্বরে ৮০ হাজার ৯৬৮ জন, ডিসেম্বরে ৮১ হাজার ৬৫০ জন, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৩৯ হাজার ২৫৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪ হাজার ৮৫০ জন, মার্চে ৫১ হাজার ৭৮২ জন, এপ্রিলে ৪৫ হাজার ৪২০ জন, মে মাসে ২২ হাজার ৫৮২ জন, জুনে ১৯ হাজার ২৮৯ জন, জুলাইতে ১৯ হাজার ৭০১ জন প্রবাসী কর্মী বাংলাদেশে ফেরত আসেন। তবে করোনার সংক্রমণ, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, ভ্যাকসিন পেতে ভোগান্তি, ফ্লাইটের টিকিট ও আরটিপিসিআর ল্যাব জটিলতার কারণে বেশির ভাগ মানুষই তাদের কর্মস্থলে ফিরতে পারেনি।
এদিকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ডিভিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জনশক্তি রপ্তানিতে ইন্ডিয়া, মেক্সিকো, চীন, রাশিয়া এবং সিরিয়ার পরই বাংলাদেশের অবস্থান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০ লাখের বেশি কর্মী কাজ করতেন। যার অর্ধেকের বেশি সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন এবং ওমানে অবস্থান করছেন। গালফ লেবার মার্কেটস অ্যান্ড মাইগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী শুধু মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলোতে ৪২ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। করোনাভাইরাসের কারণে এসব দেশগুলোতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এতে বিপুল সংখ্যক কর্মী কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছে। নতুন করে এসব দেশে ঢুকতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রবাসীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দেশ তাদের দেশের জনগণকে সুরক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য আমাদের দেশসহ বহু দেশের কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এখন নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল রয়েছে। এতে বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তবে নির্ধারিত টিকা না পাওয়া ও বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাব এখনো স্থাপন না হওয়ায় প্রবাসীরা ফিরতে পারছেন না। এতে হাজার হাজার প্রবাসী ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। সরকারকে দ্রুত সময়ে প্রবাসী কর্মীদেরকে টিকার ডোজ সমাপ্ত করতে হবে। তাহলে এখনো যাদের ভিসার মেয়াদ আছে তারা কাজে ফিরতে পারবেন। প্রবাসীদের বিষয়ে সরকারকে আরও আন্তরিকতা দেখাতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রবাসীদের পদে পদে ভোগান্তি

আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাকাল তাদের জন্য বাড়তি ভোগান্তি নিয়ে এসেছিল। কর্মহীন হওয়া। দেশে ফিরে কর্মস্থলে ফিরতে না পারা। ফেরার সুযোগ থাকলেও ফ্লাইট না থাকা। ফ্লাইট থাকলেও বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা না থাকা। বিভিন্ন দেশের করোনার নির্দিষ্ট টিকা ও কোয়ারেন্টিন শর্ত। একের পর এক এমন অনেক সমস্যা পিছু ছাড়ছে না প্রবাসীদের। দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কিছু দেশ এখনো ভ্রমণ বিধিনিষেধ দিয়ে রাখায় সব প্রস্তুতির পরও কর্মস্থলে যেতে পারছেন না প্রবাসীরা। নানা সময়ে সমস্যায় পরে দাবি আদায়ে রাজপথে নামতে হচ্ছে তাদের। প্রবাসীদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে তারা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
করোনায় সৃষ্ট সংকট কাটিয়ে উঠছে বহির্বিশ্বের বহু দেশ। স্বাভাবিক হয়ে উঠছে জনজীবন। বাংলাদেশে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সংকট যেন কাটছেই না। করোনাকালীন সময়ে দেশে আসা প্রবাসীদের ফেরত নিতে একের পর এক শর্ত আরোপ করছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ। তবে এসব শর্ত মেনে প্রবাসীদের বিদেশ যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে। এতে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে বেড়েছে অনিশ্চয়তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা প্রয়োগে বিলম্বের কারণেই সংকট বেড়েছে। দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা টিকা না পাওয়ায় বহির্বিশ্বের শ্রমবাজারে তাদের অবস্থান নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা হয়, সেসব দেশের নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করলে প্রবাসী কর্মীদের ভোগান্তি কমে আসবে।
গত বছরের শুরু থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখের অধিক প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেছেন। এদের অনেকেই করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন, কেউ কেউ কর্মস্থল বন্ধ থাকায় কিংবা ভিসার মেয়াদ শেষ করে দেশে এসেছেন। বিভিন্ন কারণে দেশে এসে করোনায় আটকা পড়েন তারা। ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনার বিস্তার বাড়তে থাকায় বিভিন্ন দেশে শুরু হয় লকডাউন। এতে বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিপাকে পড়েন প্রবাসীরা। তখন অনেকে কর্মস্থলে ফিরতে চাইলেও পারেননি।
গত বছরের অক্টোবরে করোনার প্রথম ঢেউ কিছুটা কমে আসলে সৌদিসহ কয়েকটি দেশে প্রবাসীরা ফেরত যাওয়ার সুযোগ পায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয় সৌদি এয়ারলাইন্সসহ কয়েকটি ফ্লাইট। তখন টিকিট সংকটে পড়েন প্রবাসীরা। সীমিত সংখ্যক আসনের বিপরীতে কয়েকগুণ বেশি যাত্রীর চাপ দেখা দেয়। তাদের অনেকেই দেশে ফেরার সময় রিটার্ন টিকিট নিয়ে ফিরেন। নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট চালু না হওয়ায় রিটান টিকিটের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। তখন সৌদি আরবে ফেরা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। অনেকে রিটার্ন টিকিট আপডেট করতে রাজধানীর বিমানবন্দর, মতিঝিল ও কাওরান বাজার এলাকায় ভিড় করেন। টিকিট না পেয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সৌদি প্রবাসীরা। সে সময়েও টিকিট না পাওয়া ও ফ্লাইট জটিলতার কারণে কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি অনেকে। ততদিনে অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। নানা ভোগান্তি ও উচ্চ দামে টিকিট কেটেও যেতে পারেননি কেউ কেউ। সৌদি প্রবাসীরা আকামার মেয়াদ বাড়াতে চাইলেও অধিকাংশ নিয়োগদাতা তখন সাড়া দেয়নি। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন তারা।
পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সৌদি সরকারের দেয়া নতুন বিধিনিষেধে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এসব প্রবাসীরা। ফ্লাইট নিয়ে বিমানবন্দরে পড়েন চরম বিড়ম্বনায়। বাংলাদেশ থেকে করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে সৌদি পৌঁছালেও হোটেলে নিজ খরচে ৭ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। এতে অগ্রিম হোটেল বুকিং দেয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। যারা হোটেল বুকিং দিয়েছেন তাদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত প্রায় ৫০ হাজার থেকে পৌনে এক লাখ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে চলতি বছর করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হলে নড়েচড়ে বসে বিভিন্ন দেশ। টিকা গ্রহণ ছাড়া কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞাও আসে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়। তখন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীরা বয়স ও জাতীয় পরিচয়পত্র জটিলতার কারণে টিকা নিতে পারেননি। এতে থেমে যায় অনেকের বিদেশ যাত্রার স্বপ্ন। প্রবাসীরা টিকা পেতে সরকারের কাছে আবেদনও করেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। তবে ততদিনে অনেকের ভিসা ও আকামার মেয়াদ ফুুরিয়ে যায়।
গত জুন-জুলাই মাসে কর্মস্থলে গমন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন টিকা রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। বিদেশগামী কর্মীদের টিকার জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফরমে রেজিস্ট্রেশনের সুবিধার্থে ২রা জুলাই থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু করে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি। তখনও সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনে বিড়ম্বনায় পড়েন তারা। পরবর্তীতে দ্রুত সময়ে টিকা রেজিস্ট্রেশন করতে বিএমইটি চালু করে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ। বিএমইটি’র ডাটাবেজে নিবন্ধন ও স্মার্টকার্ড না থাকায় সেখানেও ভোগান্তির শিকার হন তারা। পরবর্তীতে বিএমইটির নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এসে প্রবাসীরা টিকার নিবন্ধন করেন। সরকার রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রবাসীদের টিকা কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করেছে। তবে শুরু থেকেই প্রবাসীরা টিকা পাওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ করে আসছেন। অনেকে নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে গিয়েও টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন। আবার কখনো কখনো টিকাকেন্দ্রে বিক্ষোভ করছেন প্রবাসীরা। নির্দিষ্ট সময়ে টিকা না পেয়ে অনেকেই প্রবাসে ফিরতে পারেননি। এরই মধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। প্রবাসীরা যে পরিমাণ নিবন্ধন করেছে তার তুলনায় স্বল্প সংখ্যক প্রবাসীদেরকে টিকা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকে বলছেন, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি’র মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করলেও টিকার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনের ১ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো টিকা নেয়ার এসএমএস আসেনি। এতে প্রবাসে ফেরা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। অনেকে এসএমএস পেয়ে টিকাকেন্দ্রে গেলেও মিলছে না টিকা। গত ১১ই সেপ্টেম্বর এনিয়ে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা মেডিকেলের সামনে বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা। নির্দিষ্ট দিনে টিকা না পাওয়া প্রবাসীরা জানান, গত ৯ই সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেলে কয়েক শতাধিক প্রবাসীকে টিকা দেয়ার কথা থাকলেও, এদিন প্রবাসীরা টিকা পাননি।
এদিকে বাংলাদেশের আরেকটি বড় শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। করোনাকালীন প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফিরেছেন। দেশে ছুটি কাটিয়ে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী টিকিট কেটে রেখেছেন আরব আমিরাতে ফিরতে। করোনার সংক্রমণের কারণে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা নির্দিষ্ট সময়ে ফিরতে পারেনি। তবে গত আগস্ট ফের শ্রমবাজার খুলে দেয়া হয়। তখন দেশটির সরকার জানিয়েছে যেসব দেশের বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর টেস্টের সুবিধা চালু থাকতে সেসব দেশের প্রবাসীরা আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে এর এক মাস পেরিয়ে গেলেও বিমানবন্দর আরটিপিসিআর টেস্টের সুবিধা চালু হয়নি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নির্দেশনাও দেন। নির্দেশনার ১ সপ্তাহ সময়েও আরটিপিসিআর ল্যাব বসেনি। এতে আবর আমিরাত প্রবাসীদের কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রবাসী কর্মীরা। গত সোম ও মঙ্গলবার তারা বিক্ষোভ করেন। তারা ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনের গেট অবরোধ করে রাখেন। যদিও পরের দিন হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়।
ফয়সাল নামের এক সৌদি প্রবাসী বলেন, প্রবাসীদের ভোগান্তির শেষ নেই। একটা শেষ না হতেই আরেকটার ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। প্রতিনিয়তই প্রবাসীরা নতুন নতুন নিয়মকানুনে আটকে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় দেশে আটকে থাকলেও তাদেরকে দ্রুত কর্মস্থলে ফেরাতে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এতে আমাদের কাজে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে হাজার হাজার প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাদের এখন মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের বিদেশ ফেরত কর্মীর পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৭ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেন। চলতি বছরের শুরু থেকে ২০শে জুলাই পর্যন্ত ২ লাখ ৪২ হাজার ৮৮২ জন প্রবাসী দেশে আসেন। দেশে করোনা শুরু হলেও গত বছরের মার্চে ৩ হাজার ৯৭৪ জন, এপ্রিলে ১ হাজার ৭২৩ জন, মে মাসে ৬ হাজার ৭১৬ জন, জুনে ১১ হাজার ৮৬৬ জন, জুলাইয়ে ২৮ হাজার ১৯৬ জন, আগস্টে ৪৯ হাজার ৩০৩ জন, সেপ্টেম্বরে ৬৭ হাজার ৮৫৪ জন, অক্টোবরে ৮০ হাজার ১৩২ জন, নভেম্বরে ৮০ হাজার ৯৬৮ জন, ডিসেম্বরে ৮১ হাজার ৬৫০ জন, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৩৯ হাজার ২৫৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪ হাজার ৮৫০ জন, মার্চে ৫১ হাজার ৭৮২ জন, এপ্রিলে ৪৫ হাজার ৪২০ জন, মে মাসে ২২ হাজার ৫৮২ জন, জুনে ১৯ হাজার ২৮৯ জন, জুলাইতে ১৯ হাজার ৭০১ জন প্রবাসী কর্মী বাংলাদেশে ফেরত আসেন। তবে করোনার সংক্রমণ, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, ভ্যাকসিন পেতে ভোগান্তি, ফ্লাইটের টিকিট ও আরটিপিসিআর ল্যাব জটিলতার কারণে বেশির ভাগ মানুষই তাদের কর্মস্থলে ফিরতে পারেনি।
এদিকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ডিভিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জনশক্তি রপ্তানিতে ইন্ডিয়া, মেক্সিকো, চীন, রাশিয়া এবং সিরিয়ার পরই বাংলাদেশের অবস্থান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০ লাখের বেশি কর্মী কাজ করতেন। যার অর্ধেকের বেশি সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন এবং ওমানে অবস্থান করছেন। গালফ লেবার মার্কেটস অ্যান্ড মাইগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী শুধু মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলোতে ৪২ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। করোনাভাইরাসের কারণে এসব দেশগুলোতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এতে বিপুল সংখ্যক কর্মী কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছে। নতুন করে এসব দেশে ঢুকতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রবাসীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দেশ তাদের দেশের জনগণকে সুরক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য আমাদের দেশসহ বহু দেশের কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এখন নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল রয়েছে। এতে বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তবে নির্ধারিত টিকা না পাওয়া ও বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাব এখনো স্থাপন না হওয়ায় প্রবাসীরা ফিরতে পারছেন না। এতে হাজার হাজার প্রবাসী ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। সরকারকে দ্রুত সময়ে প্রবাসী কর্মীদেরকে টিকার ডোজ সমাপ্ত করতে হবে। তাহলে এখনো যাদের ভিসার মেয়াদ আছে তারা কাজে ফিরতে পারবেন। প্রবাসীদের বিষয়ে সরকারকে আরও আন্তরিকতা দেখাতে হবে।