ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রথম শিরোপায় বিশ্বকাপে বার্তা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫০:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯
  • / ২৩৭ বার পড়া হয়েছে

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৪ ওভারে ১৫২/১, বাংলাদেশ : ২২.৫ ওভারে ২১৩/৫, ফল : ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
সমীকরণ প্রতিবেদন:
পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে তিনি স্বচ্ছন্দ নন। তবে স্পিনটা খারাপ করেন না। তাই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঢুকে পড়েছিলেন একরকম ফাঁকতালে। যদিও মাশরাফি বিন মর্তুজা সেদিনও বলছিলেন, ‘ও কিভাবে যেন পেসারদের মেরে দেয়।’ মোসাদ্দেক হোসেন পেসারদের মারলেন প্রচ-। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ বলে ফিফটি করেছেন এবং তাতেই বৃষ্টির কারণে টি-টোয়েন্টির দৈর্ঘ্যে নেমে আসা ফাইনাল ৫ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। এ জয়ের মাহাত্ম্য অবশ্য শুধুই আরেকটি ম্যাচ জয় নয়, এ জয় যে ফাইনালের গেরো খোলার ম্যাচও। বহুজাতিক যেকোনো আসরে ছয়বার ফাইনালে হারের বৃত্ত ভাঙা জয় এটা। বৃষ্টিতে প্রায় সোয়া ৫ ঘণ্টা বিরতির পর খেলা শুরু হওয়া অলক্ষ্যে যেন আরেকটি ফাইনাল হারের হুমকিই দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। ২৪ ওভারে খেলা হবে। তবে তার আগেই যে ২০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান তুলে লক্ষ্যটাকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে ক্যারিবীয়রা। বাকি অংশে শাই হোপকে হারিয়ে ক্যারিবীয়রা ১৫২ রান করায় বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১০ রান। টি-টোয়েন্টির জামানায় পুরো ৫০ ওভারে তিনশোর্ধ্ব ইনিংস তাড়া করার চেয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ অবশ্যই। তবু বাংলাদেশ কবে টি-টোয়েন্টিতে বলে-কয়ে দুই শ রান করেছে? তাই শঙ্কা ছিল।
শঙ্কার মেঘ সরানোর প্রথম কাজটা করেছেন সৌম্য সরকার। ১৩ বলে তামিম ইকবাল ১৮ রান করে সাজঘরে ফেরার সময়ও বাংলাদেশ যে ষষ্ঠ ওভারেই ৫৯ রান তুলে বসে আছে, তা সৌম্যর সৌজন্যে। আশা ছেড়ে দেওয়ার কারণ তাই ঘটেনি তখনো। কিন্তু সাব্বির রহমান যে ক্রিজে এসেই এলবিডাব্লিউ। সেই ধাক্কাও সৌম্য আর মুশফিকুর রহিম মিলে সামাল দিয়ে গেছেন। কিন্তু ৩৪ রানের ব্যবধানে সৌম্য, মুশফিকের পর মোহাম্মদ মিঠুনের বিদায়ে আরেকটি ফাইনালে বিষাদে ঢাকা পড়ার শঙ্কা জেগেছিল। তবে উইকেট পতনের পরও রান রেটে পিছিয়ে ছিল না বাংলাদেশ। আর সে সুবিধাটাই কাজে লাগিয়েছিলেন মাহমুদ উল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন। স্ট্যাটাস অনুযায়ী বাকি পথটুকু বাংলাদেশকে বয়ে নিয়ে বেড়ানোর কথা মাহমুদের। তবে মোসাদ্দেকের মনে সম্ভবত অন্য কিছুই ছিল। মাহমুদ উইকেট আগলে স্ট্রাইক দিয়েছেন মোসাদ্দেককে। আর নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছেন মোসাদ্দেক। মাত্র ২৪ বলে ২ বাউন্ডারির সঙ্গে ৫ ছক্কায় সাজানো ৫২ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংসে অসাধারণ সব শটও খেলেছেন মোসাদ্দেক। যে পেস বোলিং নিয়ে এত কথা শুনতেন, সেই পেস বোলিংয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে বাউন্ডারি মেরেছেন, পুলও খেলেছেন মোসাদ্দেক। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এর চেয়ে ভালো প্রস্তুতি তাঁর জন্য আর কী হতে পারত! অবশ্য পুরস্কার বিতরণীর সময় পুরো দলের প্রস্তুতি নিয়েই সন্তুষ্ট মাশরাফি, ‘বিশ্বকাপে এমন জয় অনুপ্রেরণা জোগাবে। বড় রান তাড়া করার সামর্থ্য যে আছে, সেটি বোঝা গেল।’ মাত্র ২২.৩ ওভারে ২১২ রান করে ফেলা দলের অধিনায়ক এমন দাবি করতেই পারেন।
সকাল থেকেই আকাশের মুখ গোমড়া, খেলার সঙ্গে সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও শুরু। তাতে মাশরাফি বিন মর্তুজার টস জেতাকে পয়মন্তই মনে হচ্ছিল। এমন পরিবেশে যা করে সবাই, বাংলাদেশ অধিনায়কও তা-ই করেছেন। প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে কন্ডিশনের সুবিধা নিতে চেয়েছেন। কিন্তু পুরো আসরে দারুণ ফর্মে থাকা শাই হোপের সঙ্গে রানের ফুল ফুটছে যে সুনীল অ্যামব্রিসের ব্যাটেও। তাঁদের দাপটে বলের লাইন লেন্থ ভুলে যেতে সময় লাগেনি বাংলাদেশি পেসারদের। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের এক ওভারে তিন বাউন্ডারিতে রানের শিকল ভাঙার পর মোস্তাফিজুর রহমানের ওপরও চড়াও হয়েছেন দুই
ক্যারিবীয় ওপেনার। অবশ্য এতে হোপ ও অ্যামব্রিসের কৃতিত্বের সঙ্গে মোস্তাফিজের ব্যর্থতারও অবদান রয়েছে। কখনো হাফভলি কখনো বা শর্ট বল করে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানের স্ট্রোকপ্লে নির্বিঘ্ন করেছেন, যদিও সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে তাঁর ওপরই আস্থা ছিল সবচেয়ে বেশি। আগের ম্যাচগুলোয় মাঝের ওভারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল বাংলাদেশের স্পিনারদের। সাকিবের অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহে বড় ঘাটতি। সঙ্গে ভেজা আউটফিল্ডের কারণে বল গ্রিপ করাও কঠিন হয়ে উঠেছিল মেহেদী হাসান মিরাজ আর মোসাদ্দেকের জন্য। তাতে উইকেট যেমন মেলেনি, তেমনি রান আটকানোর কাজটাও আর করা হয়নি। এমন অবস্থায় বৃষ্টির জোর বাড়াকে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদ। ততক্ষণে যে তিন শ টপকে রান পাহাড় গড়ার ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেছেন শাই হোপ ও অ্যামব্রিস। ২১তম ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান কোথায় গিয়ে ঠেকত, কে জানে! একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, খেলাই বুঝি হবে না আর। সে ক্ষেত্রে পুল পর্বে জয়ের সুবাদে শিরোপা বাংলাদেশ অধিনায়কের হাতেই উঠত। কিন্তু কুড়িয়ে পাওয়া শিরোপায় তো আর গর্ব নেই। সৌম্য, মাহমুদ উল্লাহ আর মোসাদ্দেকের দুর্র্ধষ ব্যাটিংয়ে শেষমেশ গর্ব গায়ে মেখেই ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথম শিরোপাজয়ের উৎসব করেছে বাংলাদেশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রথম শিরোপায় বিশ্বকাপে বার্তা

আপলোড টাইম : ১০:৫০:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৪ ওভারে ১৫২/১, বাংলাদেশ : ২২.৫ ওভারে ২১৩/৫, ফল : ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
সমীকরণ প্রতিবেদন:
পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে তিনি স্বচ্ছন্দ নন। তবে স্পিনটা খারাপ করেন না। তাই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঢুকে পড়েছিলেন একরকম ফাঁকতালে। যদিও মাশরাফি বিন মর্তুজা সেদিনও বলছিলেন, ‘ও কিভাবে যেন পেসারদের মেরে দেয়।’ মোসাদ্দেক হোসেন পেসারদের মারলেন প্রচ-। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ বলে ফিফটি করেছেন এবং তাতেই বৃষ্টির কারণে টি-টোয়েন্টির দৈর্ঘ্যে নেমে আসা ফাইনাল ৫ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। এ জয়ের মাহাত্ম্য অবশ্য শুধুই আরেকটি ম্যাচ জয় নয়, এ জয় যে ফাইনালের গেরো খোলার ম্যাচও। বহুজাতিক যেকোনো আসরে ছয়বার ফাইনালে হারের বৃত্ত ভাঙা জয় এটা। বৃষ্টিতে প্রায় সোয়া ৫ ঘণ্টা বিরতির পর খেলা শুরু হওয়া অলক্ষ্যে যেন আরেকটি ফাইনাল হারের হুমকিই দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। ২৪ ওভারে খেলা হবে। তবে তার আগেই যে ২০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান তুলে লক্ষ্যটাকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে ক্যারিবীয়রা। বাকি অংশে শাই হোপকে হারিয়ে ক্যারিবীয়রা ১৫২ রান করায় বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১০ রান। টি-টোয়েন্টির জামানায় পুরো ৫০ ওভারে তিনশোর্ধ্ব ইনিংস তাড়া করার চেয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ অবশ্যই। তবু বাংলাদেশ কবে টি-টোয়েন্টিতে বলে-কয়ে দুই শ রান করেছে? তাই শঙ্কা ছিল।
শঙ্কার মেঘ সরানোর প্রথম কাজটা করেছেন সৌম্য সরকার। ১৩ বলে তামিম ইকবাল ১৮ রান করে সাজঘরে ফেরার সময়ও বাংলাদেশ যে ষষ্ঠ ওভারেই ৫৯ রান তুলে বসে আছে, তা সৌম্যর সৌজন্যে। আশা ছেড়ে দেওয়ার কারণ তাই ঘটেনি তখনো। কিন্তু সাব্বির রহমান যে ক্রিজে এসেই এলবিডাব্লিউ। সেই ধাক্কাও সৌম্য আর মুশফিকুর রহিম মিলে সামাল দিয়ে গেছেন। কিন্তু ৩৪ রানের ব্যবধানে সৌম্য, মুশফিকের পর মোহাম্মদ মিঠুনের বিদায়ে আরেকটি ফাইনালে বিষাদে ঢাকা পড়ার শঙ্কা জেগেছিল। তবে উইকেট পতনের পরও রান রেটে পিছিয়ে ছিল না বাংলাদেশ। আর সে সুবিধাটাই কাজে লাগিয়েছিলেন মাহমুদ উল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন। স্ট্যাটাস অনুযায়ী বাকি পথটুকু বাংলাদেশকে বয়ে নিয়ে বেড়ানোর কথা মাহমুদের। তবে মোসাদ্দেকের মনে সম্ভবত অন্য কিছুই ছিল। মাহমুদ উইকেট আগলে স্ট্রাইক দিয়েছেন মোসাদ্দেককে। আর নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছেন মোসাদ্দেক। মাত্র ২৪ বলে ২ বাউন্ডারির সঙ্গে ৫ ছক্কায় সাজানো ৫২ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংসে অসাধারণ সব শটও খেলেছেন মোসাদ্দেক। যে পেস বোলিং নিয়ে এত কথা শুনতেন, সেই পেস বোলিংয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে বাউন্ডারি মেরেছেন, পুলও খেলেছেন মোসাদ্দেক। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এর চেয়ে ভালো প্রস্তুতি তাঁর জন্য আর কী হতে পারত! অবশ্য পুরস্কার বিতরণীর সময় পুরো দলের প্রস্তুতি নিয়েই সন্তুষ্ট মাশরাফি, ‘বিশ্বকাপে এমন জয় অনুপ্রেরণা জোগাবে। বড় রান তাড়া করার সামর্থ্য যে আছে, সেটি বোঝা গেল।’ মাত্র ২২.৩ ওভারে ২১২ রান করে ফেলা দলের অধিনায়ক এমন দাবি করতেই পারেন।
সকাল থেকেই আকাশের মুখ গোমড়া, খেলার সঙ্গে সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও শুরু। তাতে মাশরাফি বিন মর্তুজার টস জেতাকে পয়মন্তই মনে হচ্ছিল। এমন পরিবেশে যা করে সবাই, বাংলাদেশ অধিনায়কও তা-ই করেছেন। প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে কন্ডিশনের সুবিধা নিতে চেয়েছেন। কিন্তু পুরো আসরে দারুণ ফর্মে থাকা শাই হোপের সঙ্গে রানের ফুল ফুটছে যে সুনীল অ্যামব্রিসের ব্যাটেও। তাঁদের দাপটে বলের লাইন লেন্থ ভুলে যেতে সময় লাগেনি বাংলাদেশি পেসারদের। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের এক ওভারে তিন বাউন্ডারিতে রানের শিকল ভাঙার পর মোস্তাফিজুর রহমানের ওপরও চড়াও হয়েছেন দুই
ক্যারিবীয় ওপেনার। অবশ্য এতে হোপ ও অ্যামব্রিসের কৃতিত্বের সঙ্গে মোস্তাফিজের ব্যর্থতারও অবদান রয়েছে। কখনো হাফভলি কখনো বা শর্ট বল করে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানের স্ট্রোকপ্লে নির্বিঘ্ন করেছেন, যদিও সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে তাঁর ওপরই আস্থা ছিল সবচেয়ে বেশি। আগের ম্যাচগুলোয় মাঝের ওভারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল বাংলাদেশের স্পিনারদের। সাকিবের অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহে বড় ঘাটতি। সঙ্গে ভেজা আউটফিল্ডের কারণে বল গ্রিপ করাও কঠিন হয়ে উঠেছিল মেহেদী হাসান মিরাজ আর মোসাদ্দেকের জন্য। তাতে উইকেট যেমন মেলেনি, তেমনি রান আটকানোর কাজটাও আর করা হয়নি। এমন অবস্থায় বৃষ্টির জোর বাড়াকে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদ। ততক্ষণে যে তিন শ টপকে রান পাহাড় গড়ার ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেছেন শাই হোপ ও অ্যামব্রিস। ২১তম ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান কোথায় গিয়ে ঠেকত, কে জানে! একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, খেলাই বুঝি হবে না আর। সে ক্ষেত্রে পুল পর্বে জয়ের সুবাদে শিরোপা বাংলাদেশ অধিনায়কের হাতেই উঠত। কিন্তু কুড়িয়ে পাওয়া শিরোপায় তো আর গর্ব নেই। সৌম্য, মাহমুদ উল্লাহ আর মোসাদ্দেকের দুর্র্ধষ ব্যাটিংয়ে শেষমেশ গর্ব গায়ে মেখেই ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথম শিরোপাজয়ের উৎসব করেছে বাংলাদেশ।