ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রতিদিন বাড়ছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২২:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহে করোনা ও উপসর্গে ১৬ জনের মৃত্যু
সারাদেশে করোনায় তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু, শনাক্ত ১১ হাজার ২৯১
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রান্ত ও মৃত্যুর সঙ্গে যেন প্রতিদিন অভস্ত হয়ে উঠছে দেশ। দেশে কমছেই না করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সারাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে আরও ১১ হাজার ২৯১ জনের শরীরে। এদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১১০ জনের শরীরে। গতকাল মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ জন। গতকাল ঝিনাইদহে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৮৯ জনের শরীরে।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে নতুন করে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত দুজন ও উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সদর হাসপাতালের ডেডিকেটেড করোনা ইউনিটের রেড জোনে ও ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই সাতজনের মৃত্যু হয়। গতকাল জেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ১১০ জনের শরীরে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৭০ জনে।
গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালের রেড জোন আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়িপাড়ার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী সাজেদা বেগম (৬০) ও একই উপজেলার শরিষাডাঙ্গা গ্রামের আলী মদ্দীনের মেয়ে রশুফা বেগমের (৬০)।
জানা যায়, গত ০৫ জুলাই র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনা শনাক্ত হয় সাজেদা বেগমের নমুনায়। ওইদিনই তাঁকে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। এছাড়াও গত ২০ জুলাই র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনা শনাক্ত হন রশুফা বেগম। এর পর থেকেই সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন রশুফা। গত শনিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তাঁর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্ঠিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে।
গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে নিহতরা হলেন- গোলাম হোসেনের মেয়ে সমিরণ নেছা (৬৫), মফিজ উদ্দীনের মেয়ে কুটিলআ খাতুন (৬৪), এলাহী মণ্ডলের মেয়ে আজিরণ বেগম (৮৫), আনিস হোসেনের স্ত্রী রওশানা বেগম (৫৫) ও হোম কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎমাধীন অবস্থায় একজনসহ মোট পাঁচজন।
গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষিত ৫০৩টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ১১০টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাকী ৩৯৩টি নমুনার ফলাফল নেগেটিভ আসে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ২১.৮৬ শতাংশ। গতকাল নতুন শনাক্ত ১১০জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৬৪জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ২২ জন ও জীবননগর উপজেলার ৯ জন রয়েছে। গতকাল জেলায় করোনা থেকে আরও ৫৯ সুস্থ হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৫ জন। গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য ৪৮৯টি নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ্ আকরাম জানান, গতকাল সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে পজিটিভ এমন দুজন ও উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনসহ মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর নিহত সাতজনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। উক্তা নমুনাগুলি কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার জন্য পেরণ করা হবে। গতকালই করোনা প্রটোকলে নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে জেলায় আক্রান্ত হয়ে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৫০ জনের ও জেলার বাইরে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৭ জনের।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ২১ হাজার ১৫৪টি, প্রাপ্ত ফলাফল ২১ হাজার পাঁচটি, পজিটিভ ৫ হাজার ৭৭০ জন। জেলায় বর্তমানে ১ হাজার ৯৩৮ জন হোম আইসোলেশন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে রয়েছে। এর মধ্যে হোম আইসোলেশনে আছে ১ হাজার ৯৩৮ জন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে ১০৪ জন। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬৭ জনের। এর মধ্যে জেলায় আক্রান্ত হয়ে জেলার হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে ১৫০ জনের। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত অন্য ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে।
মেহেরপুর:
মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত নয়টায় মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জিন এক্সপার্ট ল্যাবে পরীক্ষিত ২৩৯টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে এর মধ্যে ৬০টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্ত ৬০ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ২৪ জন, গাংনী উপজেলার ১৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ১৭ জন রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৫.১০ শতাংশ। মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় মোট পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৫৮২ জন। এর মধ্যে সদরে ১২৩ জন, গাংনীতে ৩৩৪ ও মুজিবনগরে ১২৫ জন। এ পর্যন্ত মেহেরপুরে মারা গেছেন মোট ১২৪ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৫৫ জন, গাংনী ৪৩ জন ও মুজিবনগরে ২৬ জন।
ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৬ জন। এছাড়াও নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৮৯ জনের শরীরে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত দুজনন ও উপসর্গ ইয়োলো জোনে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ২৪ ঘণ্টায় ৭১৭ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এসেছে এর মধ্যে ২৭৯টি নমুনার ফলাফল পজিটিভ। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৮.৯১ শতাংশ। এর মধ্যে শুধুমাত্র সদর উপজেলাতেয় আক্রান্ত হয়েছে ১৫৪ জন। এছাড়াও শৈলকুপায় ১৫ জন, হরিণাকুণ্ডুতে ১৮ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪৯ জন, কোটচাঁদপুরে ৩৫ জন ও মহেশপুরে আট জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৭ হাজার ১০৫ জনে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, হঠাৎ করেই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগীর চাপ বেড়েছে। গত ২ দিন হাসপাতালে রোগী ভর্তি বেশি হচ্ছে। গত ২৩ জুলাই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৮৭ জন। সেখানে বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১০৬ জন।
সারাদেশ:
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৯ হাজার ২৭৪ জনে। এর আগে গত ১৯ জুলাই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১১ হাজার ২৯১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৫ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ৯৭২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে আগের নমুনাসহ এদিন ৩৭ হাজার ৫৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যেখানে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৫৮৪ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ জন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মারা যাওয়া ২২৮ জনের মধ্যে ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩৩ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮ জন ও ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২ জন ও শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১২৫ জন ও মহিলা ১০৩ জন। যাদের মধ্যে বাসায় ১৪ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৬৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, খুলনা বিভাগে ৫০ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন, সিলেট বিভাগে ১১ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫ জন মারা গেছেন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রতিদিন বাড়ছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা

আপলোড টাইম : ০৮:২২:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহে করোনা ও উপসর্গে ১৬ জনের মৃত্যু
সারাদেশে করোনায় তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু, শনাক্ত ১১ হাজার ২৯১
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রান্ত ও মৃত্যুর সঙ্গে যেন প্রতিদিন অভস্ত হয়ে উঠছে দেশ। দেশে কমছেই না করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সারাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে আরও ১১ হাজার ২৯১ জনের শরীরে। এদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১১০ জনের শরীরে। গতকাল মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ জন। গতকাল ঝিনাইদহে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৮৯ জনের শরীরে।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে নতুন করে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত দুজন ও উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সদর হাসপাতালের ডেডিকেটেড করোনা ইউনিটের রেড জোনে ও ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই সাতজনের মৃত্যু হয়। গতকাল জেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ১১০ জনের শরীরে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৭০ জনে।
গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালের রেড জোন আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়িপাড়ার হাফিজুর রহমানের স্ত্রী সাজেদা বেগম (৬০) ও একই উপজেলার শরিষাডাঙ্গা গ্রামের আলী মদ্দীনের মেয়ে রশুফা বেগমের (৬০)।
জানা যায়, গত ০৫ জুলাই র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনা শনাক্ত হয় সাজেদা বেগমের নমুনায়। ওইদিনই তাঁকে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। এছাড়াও গত ২০ জুলাই র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনা শনাক্ত হন রশুফা বেগম। এর পর থেকেই সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন রশুফা। গত শনিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তাঁর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্ঠিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে।
গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে নিহতরা হলেন- গোলাম হোসেনের মেয়ে সমিরণ নেছা (৬৫), মফিজ উদ্দীনের মেয়ে কুটিলআ খাতুন (৬৪), এলাহী মণ্ডলের মেয়ে আজিরণ বেগম (৮৫), আনিস হোসেনের স্ত্রী রওশানা বেগম (৫৫) ও হোম কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎমাধীন অবস্থায় একজনসহ মোট পাঁচজন।
গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষিত ৫০৩টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ১১০টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাকী ৩৯৩টি নমুনার ফলাফল নেগেটিভ আসে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ২১.৮৬ শতাংশ। গতকাল নতুন শনাক্ত ১১০জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৬৪জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ২২ জন ও জীবননগর উপজেলার ৯ জন রয়েছে। গতকাল জেলায় করোনা থেকে আরও ৫৯ সুস্থ হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৫ জন। গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য ৪৮৯টি নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ্ আকরাম জানান, গতকাল সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে পজিটিভ এমন দুজন ও উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনসহ মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর নিহত সাতজনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। উক্তা নমুনাগুলি কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার জন্য পেরণ করা হবে। গতকালই করোনা প্রটোকলে নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে জেলায় আক্রান্ত হয়ে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৫০ জনের ও জেলার বাইরে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৭ জনের।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ২১ হাজার ১৫৪টি, প্রাপ্ত ফলাফল ২১ হাজার পাঁচটি, পজিটিভ ৫ হাজার ৭৭০ জন। জেলায় বর্তমানে ১ হাজার ৯৩৮ জন হোম আইসোলেশন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে রয়েছে। এর মধ্যে হোম আইসোলেশনে আছে ১ হাজার ৯৩৮ জন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে ১০৪ জন। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬৭ জনের। এর মধ্যে জেলায় আক্রান্ত হয়ে জেলার হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে ১৫০ জনের। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত অন্য ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে।
মেহেরপুর:
মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত নয়টায় মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জিন এক্সপার্ট ল্যাবে পরীক্ষিত ২৩৯টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে এর মধ্যে ৬০টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্ত ৬০ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ২৪ জন, গাংনী উপজেলার ১৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ১৭ জন রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৫.১০ শতাংশ। মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় মোট পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৫৮২ জন। এর মধ্যে সদরে ১২৩ জন, গাংনীতে ৩৩৪ ও মুজিবনগরে ১২৫ জন। এ পর্যন্ত মেহেরপুরে মারা গেছেন মোট ১২৪ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৫৫ জন, গাংনী ৪৩ জন ও মুজিবনগরে ২৬ জন।
ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৬ জন। এছাড়াও নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৮৯ জনের শরীরে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত দুজনন ও উপসর্গ ইয়োলো জোনে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ২৪ ঘণ্টায় ৭১৭ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এসেছে এর মধ্যে ২৭৯টি নমুনার ফলাফল পজিটিভ। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৮.৯১ শতাংশ। এর মধ্যে শুধুমাত্র সদর উপজেলাতেয় আক্রান্ত হয়েছে ১৫৪ জন। এছাড়াও শৈলকুপায় ১৫ জন, হরিণাকুণ্ডুতে ১৮ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪৯ জন, কোটচাঁদপুরে ৩৫ জন ও মহেশপুরে আট জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৭ হাজার ১০৫ জনে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, হঠাৎ করেই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগীর চাপ বেড়েছে। গত ২ দিন হাসপাতালে রোগী ভর্তি বেশি হচ্ছে। গত ২৩ জুলাই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৮৭ জন। সেখানে বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১০৬ জন।
সারাদেশ:
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৯ হাজার ২৭৪ জনে। এর আগে গত ১৯ জুলাই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১১ হাজার ২৯১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৫ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ৯৭২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে আগের নমুনাসহ এদিন ৩৭ হাজার ৫৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যেখানে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৫৮৪ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ জন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মারা যাওয়া ২২৮ জনের মধ্যে ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩৩ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮ জন ও ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২ জন ও শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১২৫ জন ও মহিলা ১০৩ জন। যাদের মধ্যে বাসায় ১৪ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৬৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, খুলনা বিভাগে ৫০ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন, সিলেট বিভাগে ১১ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫ জন মারা গেছেন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।