ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রতিদিন পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:২৩:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৮
  • / ৩৭২ বার পড়া হয়েছে

যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক কাল : দিনে ৩০০ রোহিঙ্গা ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার
সমীকরণ ডেস্ক: রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত নেয়া নিয়ে গড়িমসি শুরু করেছে মিয়ানমার। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার গতি কমাতে দিনে মাত্র ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে চায় দেশটি। তবে বাংলাদেশ মনে করে, দিনে কমপক্ষে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো প্রয়োজন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের এমন টালবাহানার মধ্যে আগামীকাল সোমবার দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৪ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল শনিবার ইয়াঙগুন পৌঁছেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলমানদের বড় অংশ এরই মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক বছর ধরেই প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় পালিয়ে আশ্রয় নিয়ে আছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত ‘আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি’ (আরসা) নামের একটি অখ্যাত গ্রুপ জঙ্গি হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমার। এ হামলায় মিয়ানমারের নয়জন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করে দেশটি। তার জের হিসেবে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ওই অভিযানে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা, বাড়িঘরে আগুন, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। ওই সময়ে প্রাণভয়ে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তারপর অভিযান বন্ধ হলে রোহিঙ্গাদের আসার ঢল সাময়িকভাবে থামলেও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ফের মিয়ানমারের নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার হামলার ঘটনার কথা বলা হয়। ওই হামলায় মিয়ানমারের ১১ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে মিয়ানমার দাবি করে। তারপর নতুন করে রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার। আগস্টের পর নতুন করে আরও প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়ে আছে।
সম্প্রতি চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্স’ (এমএসএফ) এক সমীক্ষায় জানায়, রাখাইন রাজ্যে গত বছরের আগস্টে শুরু হওয়া সেনা অভিযানে প্রথম মাসেই কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বলছে, সেখানে রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ করা হয়েছে। জাতিগত নিধন ও গণহত্যার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকমহলের চাপের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয় মিয়ানমার। এ লক্ষ্যে দু’মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর অঙ্গীকার করে গত ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে দু’দেশের মধ্যে অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়। তার আলোকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে প্রত্যেক দেশের ১৫ জন করে মোট ৩০ সদস্যবিশিষ্ট যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এরই মধ্যে গঠিত হয়েছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যপরিধিও সই হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে এখন দু’দেশের মধ্যে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি নিয়ে কাজ চলছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চুক্তিটি সই হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। ফলে নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হবে। তবে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তির নানা দিক নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র জানায়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রতিদিন পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ

আপলোড টাইম : ১২:২৩:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৮

যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক কাল : দিনে ৩০০ রোহিঙ্গা ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার
সমীকরণ ডেস্ক: রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত নেয়া নিয়ে গড়িমসি শুরু করেছে মিয়ানমার। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার গতি কমাতে দিনে মাত্র ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে চায় দেশটি। তবে বাংলাদেশ মনে করে, দিনে কমপক্ষে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো প্রয়োজন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের এমন টালবাহানার মধ্যে আগামীকাল সোমবার দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৪ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল শনিবার ইয়াঙগুন পৌঁছেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলমানদের বড় অংশ এরই মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক বছর ধরেই প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় পালিয়ে আশ্রয় নিয়ে আছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত ‘আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি’ (আরসা) নামের একটি অখ্যাত গ্রুপ জঙ্গি হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমার। এ হামলায় মিয়ানমারের নয়জন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করে দেশটি। তার জের হিসেবে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ওই অভিযানে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা, বাড়িঘরে আগুন, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। ওই সময়ে প্রাণভয়ে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তারপর অভিযান বন্ধ হলে রোহিঙ্গাদের আসার ঢল সাময়িকভাবে থামলেও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ফের মিয়ানমারের নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার হামলার ঘটনার কথা বলা হয়। ওই হামলায় মিয়ানমারের ১১ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে মিয়ানমার দাবি করে। তারপর নতুন করে রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার। আগস্টের পর নতুন করে আরও প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়ে আছে।
সম্প্রতি চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্স’ (এমএসএফ) এক সমীক্ষায় জানায়, রাখাইন রাজ্যে গত বছরের আগস্টে শুরু হওয়া সেনা অভিযানে প্রথম মাসেই কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বলছে, সেখানে রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ করা হয়েছে। জাতিগত নিধন ও গণহত্যার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকমহলের চাপের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয় মিয়ানমার। এ লক্ষ্যে দু’মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর অঙ্গীকার করে গত ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে দু’দেশের মধ্যে অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়। তার আলোকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে প্রত্যেক দেশের ১৫ জন করে মোট ৩০ সদস্যবিশিষ্ট যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এরই মধ্যে গঠিত হয়েছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যপরিধিও সই হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে এখন দু’দেশের মধ্যে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি নিয়ে কাজ চলছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চুক্তিটি সই হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। ফলে নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হবে। তবে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তির নানা দিক নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র জানায়।