ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি : জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করা হোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ৩১৪ বার পড়া হয়েছে

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ার পর এই মজুরি ঘোষণা করা হলো। ঘোষণা অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে আট হাজার টাকা। আগের মজুরির চেয়ে যা ৫১ শতাংশ বেশি। আগামী ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারির পর এই মজুরি কার্যকর হবে। এদিকে ন্যূনতম নতুন মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতে, আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকার পোশাকশিল্প মালিকদের কাছে নতি স্বীকার করেছে। তাদের মতে, এই মজুরি কাঠামো কারখানা মালিকদের পক্ষে গেছে। উল্লেখ্য, শ্রমিকদের দাবি ছিল ১৬ হাজার টাকা এবং সিপিডি ১০ হাজার ২৮ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করেছিল। অন্যদিকে মালিকপক্ষ ছয় হাজার ৩৬০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করেছিল। নতুন মজুরি কাঠামোতে মূল বেতন ধরা হয়েছে চার হাজার ১০০ টাকা, বাড়িভাড়া দুই হাজার ৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ৩৫০ টাকা ও খাদ্যভাতা ৯০০ টাকা। আজকের দিনের বাস্তবতায় তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য এই মজুরি কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে যখন রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ন্যূনতম মজুরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের চেয়ে অনেক বেশি ঘোষণা করা হয়েছে তখন বেসরকারি খাতের শ্রমিকরা কেন বঞ্চিত হবে এমন প্রশ্ন অনেকেরই। তৈরি পোশাক শিল্প অনেক দিন থেকেই দেশের প্রধান রপ্তানি খাত। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বেশির ভাগই আসে এই শিল্প থেকে। চলতি বাজারদরের সঙ্গে এই মজুরি মোটেও সংগতিপূর্ণ নয় বলে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা। ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, আইএলও কনভেনশন অনুসারে বর্তমান বাজারদর, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং শ্রমিকের জীবনমান বিবেচনায় এর চেয়ে কম মজুরি গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে মালিকপক্ষের দাবি, মজুরি কাঠামোতে ভারসাম্য রাখতে হবে। অন্যথায় বেতন বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে সেটা হবে বড় ক্ষতি। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোর কথা বলে অথচ দাম বাড়ানোর কথা বললে এড়িয়ে যায়। শিল্প বিকাশের শুরু থেকেই শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিকাশমান শিল্পকে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে দিতে হবে। শিল্পের বিকাশে শ্রমিকের অবদানও কম নয়। কাজেই তাদের জীবনমানের নিশ্চয়তা বিধানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সামগ্রিক অবস্থা, বিশেষ করে বর্তমান বাজারদর, মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে আমরা মনে করি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি : জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করা হোক

আপলোড টাইম : ০৮:০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ার পর এই মজুরি ঘোষণা করা হলো। ঘোষণা অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে আট হাজার টাকা। আগের মজুরির চেয়ে যা ৫১ শতাংশ বেশি। আগামী ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারির পর এই মজুরি কার্যকর হবে। এদিকে ন্যূনতম নতুন মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতে, আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকার পোশাকশিল্প মালিকদের কাছে নতি স্বীকার করেছে। তাদের মতে, এই মজুরি কাঠামো কারখানা মালিকদের পক্ষে গেছে। উল্লেখ্য, শ্রমিকদের দাবি ছিল ১৬ হাজার টাকা এবং সিপিডি ১০ হাজার ২৮ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করেছিল। অন্যদিকে মালিকপক্ষ ছয় হাজার ৩৬০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করেছিল। নতুন মজুরি কাঠামোতে মূল বেতন ধরা হয়েছে চার হাজার ১০০ টাকা, বাড়িভাড়া দুই হাজার ৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ৩৫০ টাকা ও খাদ্যভাতা ৯০০ টাকা। আজকের দিনের বাস্তবতায় তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য এই মজুরি কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে যখন রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ন্যূনতম মজুরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের চেয়ে অনেক বেশি ঘোষণা করা হয়েছে তখন বেসরকারি খাতের শ্রমিকরা কেন বঞ্চিত হবে এমন প্রশ্ন অনেকেরই। তৈরি পোশাক শিল্প অনেক দিন থেকেই দেশের প্রধান রপ্তানি খাত। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বেশির ভাগই আসে এই শিল্প থেকে। চলতি বাজারদরের সঙ্গে এই মজুরি মোটেও সংগতিপূর্ণ নয় বলে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা। ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, আইএলও কনভেনশন অনুসারে বর্তমান বাজারদর, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং শ্রমিকের জীবনমান বিবেচনায় এর চেয়ে কম মজুরি গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে মালিকপক্ষের দাবি, মজুরি কাঠামোতে ভারসাম্য রাখতে হবে। অন্যথায় বেতন বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে সেটা হবে বড় ক্ষতি। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোর কথা বলে অথচ দাম বাড়ানোর কথা বললে এড়িয়ে যায়। শিল্প বিকাশের শুরু থেকেই শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিকাশমান শিল্পকে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে দিতে হবে। শিল্পের বিকাশে শ্রমিকের অবদানও কম নয়। কাজেই তাদের জীবনমানের নিশ্চয়তা বিধানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সামগ্রিক অবস্থা, বিশেষ করে বর্তমান বাজারদর, মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে আমরা মনে করি।