ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি প্লাস

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৯
  • / ৪৭৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
নিত্যপণ্যের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় হলো পেঁয়াজ। এটি ছাড়া রান্নাই হয় না। কেউ করলেও তা থেকে যায় একেবারেই স্বাদশূন্য ও অখাদ্য। অর্থাৎ খাবারকে উপযোগী করতে পেঁয়াজের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। ফলে ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সারা দেশে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এখনো পেঁয়াজ প্রতিদিনই এক অপরিহার্য বস্তু। এখন সেই পেঁয়াজের ঝাঁজেই রীতিমত উত্তপ্ত সারাদেশ। দাম বাড়তে বাড়তে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে পেঁয়াজ। দীর্ঘদিন পণ্যটি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় ওঠানামা করলেও গতকাল বৃহস্পতিবার তা সবকিছু ছাপিয়ে কেজিপ্রতি দাম এক লাফে ৫০-৬০ টাকা বেড়ে তা ডাবল সেঞ্চুরি পার করেছে। এটা শুধু রাজধানী নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারেও এই দামের উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। এদিকে পণ্যটির আকাশছোঁয়া দামের কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন ক্রেতারা। তারা এর জন্য ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও অতি মুনাফা প্রবণতাকে যেমন দুষছেন, তেমনি ক্ষোভ ঝাড়তে ছাড়ছেন না সরকারের নীতিনির্ধারণী সংশ্লিষ্টদের ওপরও। দামের এ বাড়তি বোঝা রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোক্তার। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।
পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরিতে একদিনেই বদলে গেছে ক্রেতা-বিক্রেতার লেনদেন পরিস্থিতিও। এতদিন যারা ন্যূনতম ১ কেজি থেকে ৫ কেজি পেঁয়াজ সচরাচর কিনেছেন বা বিক্রি করেছেন, এখন সেই বেচাবিক্রির পরিমাণ এক পোয়া থেকে হাফ কেজিতে নেমে গেছে। শুধু ক্রেতা-ভোক্তাপর্যায়ে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থেমে নেই। পেঁয়াজের ঝাঁজ লেগেছে জাতীয় সংসদেও। পণ্যটির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে গতকাল সংসদে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক সাংসদ। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজের মজুদও প্রায় শেষ। এর সঙ্গে নতুন ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল।’ ঘূর্ণিঝড়ে পেঁয়াজ পরিবহনে বিঘ্ন ঘটেছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বেড়েছে।
সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কিছু গুদাম ও আড়তে অভিযান চালায়। সেখানে ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৬০ টাকার বেশি বিক্রি না করতে ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দেয়। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যখন দাম আরও বাড়তে থাকে, তখন আগুনে ঘি ঢালার মতোই বাণিজ্যমন্ত্রীর এক মন্তব্যে তোলপাড় হয় দেশ। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে পেঁয়াজের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, আপাতত পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে নামার সম্ভাবনা নেই।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, মন্ত্রীর এ কথাতে ব্যবসায়ীরা আরও আসকারা পেয়েছেন। ফলে পুরনো ইস্যুর সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল টেনে এনে পেঁয়াজের দাম সংঘবদ্ধভাবে ২০০ টাকায় উঠিয়ে দিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম নিয়ে যখন এতো অস্থিরতা, তখন সেই নিয়ন্ত্রণকারী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীই নেই দেশে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দাপ্তরিক কাজে বর্তমানে তিনি বিদেশ সফরে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সরকার দলীয় সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম সংসদে বলেন, পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে সেটা খারাপ হবে। পেঁয়াজের দাম প্রায় ২০০ টাকা হয়ে গেছে। নাসিম বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন ১০০ টাকার নিচে দাম নামবে না, তাহলে ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ পেয়ে যায়। বলা হচ্ছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তাহলে কেন দাম বাড়ছে এটা বোধগম্য নয়। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে পেঁয়াজের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া ও তৎপর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
তবে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির ঘটনা সাময়িক। পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে দেশে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। কিছু পেঁয়াজ ইতোমধ্যে দেশে এসেছে। অনেক পেঁয়াজ পাইপলাইনে রয়েছে। কিন্তু সমুদ্রপথে আসছে বলে একটু সময় লাগছে। খুব শিগগিরই এসব পেঁয়াজ দেশে আসবে। তা বাজারে ঢুকলেই দাম সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে। তাছাড়া এরই মধ্যে দেশেও পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুর, পাবনাসহ কয়েকটি জেলার দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। এসবের ইতিবাচক প্রভাব শিগগিরই বাজারে দেখা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জাফর উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে মন্ত্রণালয় রাত-দিন কাজ করছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে এতদিন যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে তার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে আগামী দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে জানান তিনি।
ভোক্তারা জানিয়েছেন, অনেক আগেই পেঁয়াজের দাম ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এর দাম নিয়ে এতদিন নিম্নআয়ের মানুষের হাহাকার শোনা গেছে। এখন দাম ২০০-র কোটা ছাড়িয়ে যাওয়ায় রীতিমতো মধ্যবিত্তের পরিবারেও সেই হাহাকার স্পর্শ করেছে। তাদের দাবি, এই দামে পেঁয়াজ কেনার সাধ্য মুষ্টিমেয় ধনী পরিবার ছাড়া কারো নেই। বাঁচার জন্য, খাওয়ার জন্য কেউ পেঁয়াজ কিনলেও তা বেশিরভাগ পরিবারকেই পরিমাণের সঙ্গে আপস করতে হবে।
পেঁয়াজের লাগামহীন দামের কারণে অস্বস্তিতে পড়েছে সব শ্রেণির মানুষ। পরিস্থিতি এমন বাস্তবতা তৈরি করেছে— যেখানে অনেক ভিক্ষুক এখন টাকার জন্য ভিক্ষা না করে দোকানে দোকানে কিংবা আড়তে আড়তে গিয়ে একটি পেঁয়াজ ভিক্ষা চাইছেন। গত সপ্তায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই সময়ে রাজধানীর বাজারগুলোয় এক কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভালোমানের সেই এক কেজি পেঁয়াজই ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া অপেক্ষাকৃত খারাপ মানের ছোট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা দরে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। যা খুচরা বাজার খিলগাঁও, রামপুরা, সেগুনবাগিচা, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন বাজারগুলোয় তা মানভেদে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান পেঁয়াজের দাম নিয়ে এই অস্থিরতার পেছনে সুযোগ সন্ধানী একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, পেঁয়াজের দামে কারসাজির বিষয়টি স্পষ্ট। কিছুটা সংকট আছে। কিন্তু পেঁয়াজ তো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কোনোভাবেই দাম ২০০ টাকায় ওঠার কথা নয়। এর জন্য তিনি বাজারে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর দুর্বল তদারকি এবং দায়ীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি না দেয়াকেই দুষছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি প্লাস

আপলোড টাইম : ১১:০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
নিত্যপণ্যের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় হলো পেঁয়াজ। এটি ছাড়া রান্নাই হয় না। কেউ করলেও তা থেকে যায় একেবারেই স্বাদশূন্য ও অখাদ্য। অর্থাৎ খাবারকে উপযোগী করতে পেঁয়াজের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। ফলে ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সারা দেশে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এখনো পেঁয়াজ প্রতিদিনই এক অপরিহার্য বস্তু। এখন সেই পেঁয়াজের ঝাঁজেই রীতিমত উত্তপ্ত সারাদেশ। দাম বাড়তে বাড়তে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে পেঁয়াজ। দীর্ঘদিন পণ্যটি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় ওঠানামা করলেও গতকাল বৃহস্পতিবার তা সবকিছু ছাপিয়ে কেজিপ্রতি দাম এক লাফে ৫০-৬০ টাকা বেড়ে তা ডাবল সেঞ্চুরি পার করেছে। এটা শুধু রাজধানী নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারেও এই দামের উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। এদিকে পণ্যটির আকাশছোঁয়া দামের কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন ক্রেতারা। তারা এর জন্য ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও অতি মুনাফা প্রবণতাকে যেমন দুষছেন, তেমনি ক্ষোভ ঝাড়তে ছাড়ছেন না সরকারের নীতিনির্ধারণী সংশ্লিষ্টদের ওপরও। দামের এ বাড়তি বোঝা রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোক্তার। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।
পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরিতে একদিনেই বদলে গেছে ক্রেতা-বিক্রেতার লেনদেন পরিস্থিতিও। এতদিন যারা ন্যূনতম ১ কেজি থেকে ৫ কেজি পেঁয়াজ সচরাচর কিনেছেন বা বিক্রি করেছেন, এখন সেই বেচাবিক্রির পরিমাণ এক পোয়া থেকে হাফ কেজিতে নেমে গেছে। শুধু ক্রেতা-ভোক্তাপর্যায়ে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থেমে নেই। পেঁয়াজের ঝাঁজ লেগেছে জাতীয় সংসদেও। পণ্যটির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে গতকাল সংসদে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক সাংসদ। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজের মজুদও প্রায় শেষ। এর সঙ্গে নতুন ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল।’ ঘূর্ণিঝড়ে পেঁয়াজ পরিবহনে বিঘ্ন ঘটেছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বেড়েছে।
সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কিছু গুদাম ও আড়তে অভিযান চালায়। সেখানে ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৬০ টাকার বেশি বিক্রি না করতে ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দেয়। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যখন দাম আরও বাড়তে থাকে, তখন আগুনে ঘি ঢালার মতোই বাণিজ্যমন্ত্রীর এক মন্তব্যে তোলপাড় হয় দেশ। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে পেঁয়াজের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, আপাতত পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে নামার সম্ভাবনা নেই।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, মন্ত্রীর এ কথাতে ব্যবসায়ীরা আরও আসকারা পেয়েছেন। ফলে পুরনো ইস্যুর সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল টেনে এনে পেঁয়াজের দাম সংঘবদ্ধভাবে ২০০ টাকায় উঠিয়ে দিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম নিয়ে যখন এতো অস্থিরতা, তখন সেই নিয়ন্ত্রণকারী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীই নেই দেশে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দাপ্তরিক কাজে বর্তমানে তিনি বিদেশ সফরে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সরকার দলীয় সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম সংসদে বলেন, পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে সেটা খারাপ হবে। পেঁয়াজের দাম প্রায় ২০০ টাকা হয়ে গেছে। নাসিম বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন ১০০ টাকার নিচে দাম নামবে না, তাহলে ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ পেয়ে যায়। বলা হচ্ছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তাহলে কেন দাম বাড়ছে এটা বোধগম্য নয়। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে পেঁয়াজের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া ও তৎপর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
তবে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির ঘটনা সাময়িক। পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে দেশে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। কিছু পেঁয়াজ ইতোমধ্যে দেশে এসেছে। অনেক পেঁয়াজ পাইপলাইনে রয়েছে। কিন্তু সমুদ্রপথে আসছে বলে একটু সময় লাগছে। খুব শিগগিরই এসব পেঁয়াজ দেশে আসবে। তা বাজারে ঢুকলেই দাম সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে। তাছাড়া এরই মধ্যে দেশেও পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুর, পাবনাসহ কয়েকটি জেলার দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। এসবের ইতিবাচক প্রভাব শিগগিরই বাজারে দেখা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জাফর উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে মন্ত্রণালয় রাত-দিন কাজ করছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে এতদিন যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে তার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে আগামী দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে জানান তিনি।
ভোক্তারা জানিয়েছেন, অনেক আগেই পেঁয়াজের দাম ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এর দাম নিয়ে এতদিন নিম্নআয়ের মানুষের হাহাকার শোনা গেছে। এখন দাম ২০০-র কোটা ছাড়িয়ে যাওয়ায় রীতিমতো মধ্যবিত্তের পরিবারেও সেই হাহাকার স্পর্শ করেছে। তাদের দাবি, এই দামে পেঁয়াজ কেনার সাধ্য মুষ্টিমেয় ধনী পরিবার ছাড়া কারো নেই। বাঁচার জন্য, খাওয়ার জন্য কেউ পেঁয়াজ কিনলেও তা বেশিরভাগ পরিবারকেই পরিমাণের সঙ্গে আপস করতে হবে।
পেঁয়াজের লাগামহীন দামের কারণে অস্বস্তিতে পড়েছে সব শ্রেণির মানুষ। পরিস্থিতি এমন বাস্তবতা তৈরি করেছে— যেখানে অনেক ভিক্ষুক এখন টাকার জন্য ভিক্ষা না করে দোকানে দোকানে কিংবা আড়তে আড়তে গিয়ে একটি পেঁয়াজ ভিক্ষা চাইছেন। গত সপ্তায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই সময়ে রাজধানীর বাজারগুলোয় এক কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভালোমানের সেই এক কেজি পেঁয়াজই ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া অপেক্ষাকৃত খারাপ মানের ছোট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা দরে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। যা খুচরা বাজার খিলগাঁও, রামপুরা, সেগুনবাগিচা, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন বাজারগুলোয় তা মানভেদে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান পেঁয়াজের দাম নিয়ে এই অস্থিরতার পেছনে সুযোগ সন্ধানী একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, পেঁয়াজের দামে কারসাজির বিষয়টি স্পষ্ট। কিছুটা সংকট আছে। কিন্তু পেঁয়াজ তো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কোনোভাবেই দাম ২০০ টাকায় ওঠার কথা নয়। এর জন্য তিনি বাজারে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর দুর্বল তদারকি এবং দায়ীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি না দেয়াকেই দুষছেন।