ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পুলিশের হাতে যেভাবে আটক হলো আনোয়ার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০০:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মার্চ ২০১৮
  • / ৩৯০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: খুন করার পর মাথা থেকে একটি দুর্বহ ভার নেমে যায়। খুনি পালালেও থেকে যায় কিছু না কিছু। আর তা থেকেই হয় রহস্য উন্মোচন। চুয়াডাঙ্গা আবাসিক হোটেলে এক নারীর রহস্য জনক মৃত্যুর ঘটনা এক মাস অতিবাহিত হতে না হতেই মূল আসামী আনোয়ার হোসেন ওরফে ফটিককে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তবে কীভাবে তাকে আটক করা হলো আর আসল হত্যাকারীকেই বা কি ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হলো? এ প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহা. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ঘাতককে চিহ্নিত করতে পুলিশকে একটু বেগ পেতে হয়েছে; যে কারণেই তাকে আটক করতে এতটা সময় নিতে হলো। প্রথমত আমরা নিহত নারী ফরিদা খাতুনের পরিচয় সনাক্ত করেছি। তারপর তার ব্যবহৃত সিমের সিপিআর বের করে কথোপকথনের তথ্যানুসন্ধান করি। সিপিআর তথ্যানুযায়ী ওই সিমে দুইটি নম্বরে সবচেয়ে বেশি কথা বলা হয়েছে। পরে ওই দুটি নম্বরেরও সিপিআর বের করা হলে নম্বর দুটির রেজিস্ট্রেশন যদিও অন্য নামে পাওয়া যায়; কিন্তু ওই নম্বর দুটোর লোকেশন ট্র্যাকিং করে বুঝতে বাকী রইলো না এই নম্বর দুটিই ঘাতকের। কারণ লোকেশন অনুযায়ী নম্বর দুটি ঘটনার তিন চারদিন আগ থেকে চুয়াডাঙ্গার ভেতরেই ঘোরাফেরা করছিল। ঘটনার পর আবারো তার নম্বরের সিপিআর নিয়ে লোকেশন ট্র্যাকিং করে দেখা যায় নম্বর দুটি গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের অভ্যন্তরে রয়েছে। এরপর তাকে ধরতে আমরা একটি নারী সোর্স নিয়োগ করি। সন্দিগ্ধ তথ্যের ভিত্তিতে ওই সোর্স ঘাতক আনোয়ায়ের শ্বশুরবাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠে। সোর্সের তথ্যমতে ঘাতক খুন করার পর পালিয়ে গাজীপুরে ফিরে আবারো তার স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে সংসার শুরু করে। বোঝার উপায় ছিল না সে খুন করে পালিয়েছে।
এ ছাড়াও ওই নম্বর দুটি দিয়ে ফেসবুক, ইমোসহ বিভিন্ন অনলাইন অনুসন্ধান করলে ঘাতক আনোয়ারের ছবি বেরিয়ে আসে। ছবি দেখে হোটেল কর্তৃপক্ষ সনাক্ত করে- এটিই সেই ছেলে যে ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে ওই মেয়েকে নিয়ে হোটেলে উঠেছিল। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হলাম এই ছেলেই আসল ঘাতক। পরবর্তীতে ওই সোর্স আমাদেরকে আনোয়ারের আসা যাওয়ার তথ্য সরবরাহ করতে থাকে। তার অবস্থান নিশ্চিত হলে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম’র নির্দেশক্রমে গত ২৪ তারিখ সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল গাজীপুর শ্রীপুরে যায়। গতকাল গভীর রাতে গাজীপুর শ্রীপুরের নয়নপুর নামক গ্রামের বাড়ি (আনোয়ারের শ্বশুর বাড়ি) থেকে এ ঘটনার মূল আসামী ঘাতক আনোয়ার হোসেন ওরফে ফটিককে আটক করতে সক্ষম হয় তারা। রাতেই তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। মূলত পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েই দু’জনে দীর্ঘদিন যাবত মেলামেশা করে আসছিল। সম্প্রতি ফরিদা খাতুন আনোয়ারের কাছে বিয়ের দাবি তোলায় তার হাত থেকে নিস্তার পেতেই গলাটিপে হত্যা করা হয় ফরিদা খাতুনকে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পুলিশের হাতে যেভাবে আটক হলো আনোয়ার

আপলোড টাইম : ১০:০০:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মার্চ ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক: খুন করার পর মাথা থেকে একটি দুর্বহ ভার নেমে যায়। খুনি পালালেও থেকে যায় কিছু না কিছু। আর তা থেকেই হয় রহস্য উন্মোচন। চুয়াডাঙ্গা আবাসিক হোটেলে এক নারীর রহস্য জনক মৃত্যুর ঘটনা এক মাস অতিবাহিত হতে না হতেই মূল আসামী আনোয়ার হোসেন ওরফে ফটিককে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তবে কীভাবে তাকে আটক করা হলো আর আসল হত্যাকারীকেই বা কি ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হলো? এ প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহা. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ঘাতককে চিহ্নিত করতে পুলিশকে একটু বেগ পেতে হয়েছে; যে কারণেই তাকে আটক করতে এতটা সময় নিতে হলো। প্রথমত আমরা নিহত নারী ফরিদা খাতুনের পরিচয় সনাক্ত করেছি। তারপর তার ব্যবহৃত সিমের সিপিআর বের করে কথোপকথনের তথ্যানুসন্ধান করি। সিপিআর তথ্যানুযায়ী ওই সিমে দুইটি নম্বরে সবচেয়ে বেশি কথা বলা হয়েছে। পরে ওই দুটি নম্বরেরও সিপিআর বের করা হলে নম্বর দুটির রেজিস্ট্রেশন যদিও অন্য নামে পাওয়া যায়; কিন্তু ওই নম্বর দুটোর লোকেশন ট্র্যাকিং করে বুঝতে বাকী রইলো না এই নম্বর দুটিই ঘাতকের। কারণ লোকেশন অনুযায়ী নম্বর দুটি ঘটনার তিন চারদিন আগ থেকে চুয়াডাঙ্গার ভেতরেই ঘোরাফেরা করছিল। ঘটনার পর আবারো তার নম্বরের সিপিআর নিয়ে লোকেশন ট্র্যাকিং করে দেখা যায় নম্বর দুটি গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের অভ্যন্তরে রয়েছে। এরপর তাকে ধরতে আমরা একটি নারী সোর্স নিয়োগ করি। সন্দিগ্ধ তথ্যের ভিত্তিতে ওই সোর্স ঘাতক আনোয়ায়ের শ্বশুরবাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠে। সোর্সের তথ্যমতে ঘাতক খুন করার পর পালিয়ে গাজীপুরে ফিরে আবারো তার স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে সংসার শুরু করে। বোঝার উপায় ছিল না সে খুন করে পালিয়েছে।
এ ছাড়াও ওই নম্বর দুটি দিয়ে ফেসবুক, ইমোসহ বিভিন্ন অনলাইন অনুসন্ধান করলে ঘাতক আনোয়ারের ছবি বেরিয়ে আসে। ছবি দেখে হোটেল কর্তৃপক্ষ সনাক্ত করে- এটিই সেই ছেলে যে ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে ওই মেয়েকে নিয়ে হোটেলে উঠেছিল। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হলাম এই ছেলেই আসল ঘাতক। পরবর্তীতে ওই সোর্স আমাদেরকে আনোয়ারের আসা যাওয়ার তথ্য সরবরাহ করতে থাকে। তার অবস্থান নিশ্চিত হলে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম’র নির্দেশক্রমে গত ২৪ তারিখ সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল গাজীপুর শ্রীপুরে যায়। গতকাল গভীর রাতে গাজীপুর শ্রীপুরের নয়নপুর নামক গ্রামের বাড়ি (আনোয়ারের শ্বশুর বাড়ি) থেকে এ ঘটনার মূল আসামী ঘাতক আনোয়ার হোসেন ওরফে ফটিককে আটক করতে সক্ষম হয় তারা। রাতেই তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। মূলত পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েই দু’জনে দীর্ঘদিন যাবত মেলামেশা করে আসছিল। সম্প্রতি ফরিদা খাতুন আনোয়ারের কাছে বিয়ের দাবি তোলায় তার হাত থেকে নিস্তার পেতেই গলাটিপে হত্যা করা হয় ফরিদা খাতুনকে।