ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পুনরুজ্জীবনের আশায় দেহ সংরক্ষণের নির্দেশ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৬
  • / ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে

alcor-large_trans

প্রযুক্তি ডেস্ক: ঠাণ্ডা বা শীতল তাপমাত্রায় কোনো কিছু সংরক্ষণ করা বস্তুকে দীর্ঘ সময় পরও কাজে লাগানো যায়। তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই তো সংরক্ষণ করা ডিম্বাণু ব্যবহার করে মা হতে পেরেছিলেন প্রাক্তন বিশ্ব সুন্দরী ডায়না হেডেন। তাই বলে ঠাণ্ডায় মৃতদেহ জমিয়ে রেখে ১০০ বছর পর তাতে ফের প্রাণ ফেরানোর চিন্তাভাবনা করাটা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে যেতে পারে। অসম্ভব বলেই মনে হতে পারে এ ভাবনাকে। তবে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করার প্রয়াস চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিল ১৪ বছর বয়সী এক ছাত্রী। মৃত্যুর পর দেহ সংরক্ষণের জন্য লন্ডনের হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছিল সে। অক্টোবর মাসে অনুমতি মিলেছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে এতদিন বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। িেলগ্রাফে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বাবা–মায়ের বিচ্ছেদের পর ৮ বছর ধরে বাবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ছিল না ওই কিশোরীর। মা–ই তার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। হঠাৎ শরীর ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে কিশোরীটির। বেশিদিন তাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তখনই দেহ সংরক্ষণের কথা জানতে পারে মেয়েটি। নিজের মৃত্যুর পর শরীর সংরক্ষণের বিষয়ে মায়ের সমর্থনে আদালতের দ্বারস্থ হয় সে। কিশোরীটির বিশ্বাস, ১০০ বছর চিকিৎসা বিজ্ঞান আরো উন্নত হবে। সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তখন তাকে আবারও বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হবে। এই ভাবনা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে বিচারককে একটি চিঠি লেখে সে। সেখানে তার বক্তব্য ছিল- আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর। এখুনি মরতে চাই না, কিন্তু আমি জানি, আমি ধীরে ধীরেৃৃ.। আমি আরও দীর্ঘদিন বাঁচতে চাই। আমি এর পরিবর্তন চাই। আমি মরে যাচ্ছি। কিন্তু আমি ফিরে আসতে চাই, হোক সে দু’শত বছর। মেয়েটির আবেদন পেয়ে তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তিনি মেয়ের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানান। এরপরও মেয়েটির আর্জিতে সাড়া না দিয়ে পারেননি লন্ডন হাইকোর্টের বিচারক পিটার জ্যাকসন। তিনি ১০০ বছর মরণোত্তর দেহ সংরক্ষণের বিষয়ে নির্দেশ দেন। জ্যাকসন জানিয়েছেন, দ্রুত তার মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু করা হোক। তার মৃতদেহের উপর একমাত্র তার মায়েরই অধিকার থাকবে। তিনি যখন মনে করবেন মৃতদেহের সৎকার করতে পারবেন। এই খুশির খবরটা অবশ্য জেনে যেতে পারেনি ওই কিশোরী। আদালতের এই রায়ের আগেই ১৭ অক্টোবর লন্ডনের হাসপাতালে সেই কিশোরী মারা যায়। মায়ের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের দেখাটাও হয়নি। কারণ, মা তখন আইন-আদালত নিয়েই অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হলেও, দীর্ঘ সময় পর মেয়েটির জীবন ফিরে পাওয়া নিয়ে সন্দিহান বিচারক জ্যাকসন। আপাতত তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে কিশোরীটির মৃতদেহ। নাইট্রোজেন গ্যাসকে তরল নাইট্রোজেনে নিয়ে যেতে লাগে -১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। অর্থাৎ জলের হিমাঙ্কের থেকে যদি তাপমাত্রা ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে নিয়ে যায়, তবেই তরল নাইট্রোজেন পাওয়া যায়। নাইট্রোজেনের হিমাঙ্ক -২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় ১০০ বছর কেন, শতকের পর শতক অবিকৃত থেকে যেতে পারে জীবদেহ। এইভাবে আরও যাদের মৃতদেহ সংরক্ষিত আছে-  -প্রথম সংরক্ষিত মৃতদেহটি হলো ড. জেমস বেডফোর্ডের। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তার মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়। -এরপর ২০১৪ সালে আরও ২৫০ জনের মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়। -সর্বশেষ তালিকায় এবার নাম ঢুকলো এই কিশোরীরও।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পুনরুজ্জীবনের আশায় দেহ সংরক্ষণের নির্দেশ!

আপলোড টাইম : ০৯:১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

alcor-large_trans

প্রযুক্তি ডেস্ক: ঠাণ্ডা বা শীতল তাপমাত্রায় কোনো কিছু সংরক্ষণ করা বস্তুকে দীর্ঘ সময় পরও কাজে লাগানো যায়। তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই তো সংরক্ষণ করা ডিম্বাণু ব্যবহার করে মা হতে পেরেছিলেন প্রাক্তন বিশ্ব সুন্দরী ডায়না হেডেন। তাই বলে ঠাণ্ডায় মৃতদেহ জমিয়ে রেখে ১০০ বছর পর তাতে ফের প্রাণ ফেরানোর চিন্তাভাবনা করাটা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে যেতে পারে। অসম্ভব বলেই মনে হতে পারে এ ভাবনাকে। তবে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করার প্রয়াস চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিল ১৪ বছর বয়সী এক ছাত্রী। মৃত্যুর পর দেহ সংরক্ষণের জন্য লন্ডনের হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছিল সে। অক্টোবর মাসে অনুমতি মিলেছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে এতদিন বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। িেলগ্রাফে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বাবা–মায়ের বিচ্ছেদের পর ৮ বছর ধরে বাবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ছিল না ওই কিশোরীর। মা–ই তার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। হঠাৎ শরীর ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে কিশোরীটির। বেশিদিন তাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তখনই দেহ সংরক্ষণের কথা জানতে পারে মেয়েটি। নিজের মৃত্যুর পর শরীর সংরক্ষণের বিষয়ে মায়ের সমর্থনে আদালতের দ্বারস্থ হয় সে। কিশোরীটির বিশ্বাস, ১০০ বছর চিকিৎসা বিজ্ঞান আরো উন্নত হবে। সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তখন তাকে আবারও বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হবে। এই ভাবনা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে বিচারককে একটি চিঠি লেখে সে। সেখানে তার বক্তব্য ছিল- আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর। এখুনি মরতে চাই না, কিন্তু আমি জানি, আমি ধীরে ধীরেৃৃ.। আমি আরও দীর্ঘদিন বাঁচতে চাই। আমি এর পরিবর্তন চাই। আমি মরে যাচ্ছি। কিন্তু আমি ফিরে আসতে চাই, হোক সে দু’শত বছর। মেয়েটির আবেদন পেয়ে তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তিনি মেয়ের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানান। এরপরও মেয়েটির আর্জিতে সাড়া না দিয়ে পারেননি লন্ডন হাইকোর্টের বিচারক পিটার জ্যাকসন। তিনি ১০০ বছর মরণোত্তর দেহ সংরক্ষণের বিষয়ে নির্দেশ দেন। জ্যাকসন জানিয়েছেন, দ্রুত তার মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু করা হোক। তার মৃতদেহের উপর একমাত্র তার মায়েরই অধিকার থাকবে। তিনি যখন মনে করবেন মৃতদেহের সৎকার করতে পারবেন। এই খুশির খবরটা অবশ্য জেনে যেতে পারেনি ওই কিশোরী। আদালতের এই রায়ের আগেই ১৭ অক্টোবর লন্ডনের হাসপাতালে সেই কিশোরী মারা যায়। মায়ের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের দেখাটাও হয়নি। কারণ, মা তখন আইন-আদালত নিয়েই অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হলেও, দীর্ঘ সময় পর মেয়েটির জীবন ফিরে পাওয়া নিয়ে সন্দিহান বিচারক জ্যাকসন। আপাতত তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে কিশোরীটির মৃতদেহ। নাইট্রোজেন গ্যাসকে তরল নাইট্রোজেনে নিয়ে যেতে লাগে -১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। অর্থাৎ জলের হিমাঙ্কের থেকে যদি তাপমাত্রা ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে নিয়ে যায়, তবেই তরল নাইট্রোজেন পাওয়া যায়। নাইট্রোজেনের হিমাঙ্ক -২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় ১০০ বছর কেন, শতকের পর শতক অবিকৃত থেকে যেতে পারে জীবদেহ। এইভাবে আরও যাদের মৃতদেহ সংরক্ষিত আছে-  -প্রথম সংরক্ষিত মৃতদেহটি হলো ড. জেমস বেডফোর্ডের। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তার মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়। -এরপর ২০১৪ সালে আরও ২৫০ জনের মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়। -সর্বশেষ তালিকায় এবার নাম ঢুকলো এই কিশোরীরও।