ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ নভেম্বর ২০২০
  • / ১১৫ বার পড়া হয়েছে

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ‘হযবরল’ অবস্থা সৃষ্টি মোটেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য, ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ ইতোমধ্যে অনলাইনে ও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এর বাইরে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি লিখিত পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত ‘গুচ্ছ পদ্ধতি’ থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও পিছু হটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগও ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য দেশে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের চিন্তা বাস্তবিক অর্থেই ঝুঁকিপূর্ণ।
কেননা, এ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শতভাগ শিক্ষার্থী বা তার পরিবারে ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকা জরুরি হলেও অনেক শিক্ষার্থীরই তা নেই। তাছাড়া রাজধানীর বাইরে বড় শহরগুলোয় পর্যন্ত ইন্টারনেট ফ্রিকোয়েন্সির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। কোনোরকম নজরদারির বাইরে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হলে নকল ঠেকানোর ব্যবস্থাও বড় রকমের একটি চ্যালেঞ্জ, যা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবশ্যই আছে। তবে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়াই বাঞ্ছনীয়। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সরব উপস্থিতিতে আগের মতো পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ অবস্থায় সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণই যুক্তিযুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধের পাশাপাশি সময়ের অপচয়ও কম হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে প্রতি বছর অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের বাড়তি ব্যয় ও সীমাহীন ভোগান্তির কথা সর্বজনবিদিত। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। সেক্ষেত্রে সবগুলো কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গুচ্ছ আকারে পরীক্ষা নেয়ার কথা ছিল। শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহল বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও দীর্ঘ এক যুগেও সেটা বাস্তবায়িত না হওয়া বেদনাদায়ক। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার পেছনের কারণ যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষকর্তাদের পরীক্ষাকালীন দায়িত্ব পালনের সুযোগে বাড়তি আয়, তা সহজেই অনুমেয়। মূলত এ উদ্দেশ্যে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ইচ্ছামতো ভর্তি ফি নির্ধারণ করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পকেট কাটছে। ভর্তি পরীক্ষাকে আয়ের উৎস না বানিয়ে ভর্তুকিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিনা ফি’তে বা নামমাত্র ফি’তে পরীক্ষা নিতে পারে। একইসঙ্গে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার দিকে যাওয়া কর্তব্য। বিষয়টি যে কঠিন কিছু নয়, তা ছাত্রছাত্রীদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রচলিত কেন্দ্রীয় গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দেশকে উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার সুযোগ অবাধ ও সহজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি ও ব্যয় কমানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে। ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সর্বোপরি সরকারের শীর্ষ মহল সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে এলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন কঠিন কিছু নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা

আপলোড টাইম : ১০:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ নভেম্বর ২০২০

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ‘হযবরল’ অবস্থা সৃষ্টি মোটেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য, ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ ইতোমধ্যে অনলাইনে ও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এর বাইরে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি লিখিত পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত ‘গুচ্ছ পদ্ধতি’ থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও পিছু হটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগও ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য দেশে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের চিন্তা বাস্তবিক অর্থেই ঝুঁকিপূর্ণ।
কেননা, এ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শতভাগ শিক্ষার্থী বা তার পরিবারে ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকা জরুরি হলেও অনেক শিক্ষার্থীরই তা নেই। তাছাড়া রাজধানীর বাইরে বড় শহরগুলোয় পর্যন্ত ইন্টারনেট ফ্রিকোয়েন্সির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। কোনোরকম নজরদারির বাইরে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হলে নকল ঠেকানোর ব্যবস্থাও বড় রকমের একটি চ্যালেঞ্জ, যা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবশ্যই আছে। তবে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়াই বাঞ্ছনীয়। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সরব উপস্থিতিতে আগের মতো পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ অবস্থায় সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণই যুক্তিযুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধের পাশাপাশি সময়ের অপচয়ও কম হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে প্রতি বছর অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের বাড়তি ব্যয় ও সীমাহীন ভোগান্তির কথা সর্বজনবিদিত। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। সেক্ষেত্রে সবগুলো কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গুচ্ছ আকারে পরীক্ষা নেয়ার কথা ছিল। শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহল বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও দীর্ঘ এক যুগেও সেটা বাস্তবায়িত না হওয়া বেদনাদায়ক। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার পেছনের কারণ যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষকর্তাদের পরীক্ষাকালীন দায়িত্ব পালনের সুযোগে বাড়তি আয়, তা সহজেই অনুমেয়। মূলত এ উদ্দেশ্যে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ইচ্ছামতো ভর্তি ফি নির্ধারণ করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পকেট কাটছে। ভর্তি পরীক্ষাকে আয়ের উৎস না বানিয়ে ভর্তুকিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিনা ফি’তে বা নামমাত্র ফি’তে পরীক্ষা নিতে পারে। একইসঙ্গে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার দিকে যাওয়া কর্তব্য। বিষয়টি যে কঠিন কিছু নয়, তা ছাত্রছাত্রীদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রচলিত কেন্দ্রীয় গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দেশকে উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার সুযোগ অবাধ ও সহজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি ও ব্যয় কমানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে। ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সর্বোপরি সরকারের শীর্ষ মহল সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে এলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন কঠিন কিছু নয়।