ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পানিতে থাকছে ময়লা-জীবাণু, চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:১৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১
  • / ৭০ বার পড়া হয়েছে

জীবননগরে লাইসেন্স ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে পানি শোধনাগার

মিঠুন মাহমুদ/এ আর ডাবলু:
পানির অপর নাম জীবন, সেই জীবন বাঁচানো পানি নিয়েই জীবননগরে শুরু হয়েছে প্রতারণা। পানি শোধন করে খাবার পানি বলে বিক্রয়ের জন্য বিএসটিআই-এর অনুমোদন বা পরীক্ষা কেন্দ্র ছাড়াই প্রকাশ্য জীবননগর শহরে স্থাপন করা হয়েছে পানি শোধনাগার। ২০১৮ সালে লাইসেন্স ছাড়াই জারের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়ে, তা বিক্রি করে যাচ্ছে টেকনো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি পিউর ড্রিংকিং ওয়াটার এবং মিম ওয়াটার নামের দুটি কারখানা। লোক দেখানো ছোট আকারের পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট বসিয়ে জীবননগর পৌরসভা থেকে শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি জারে ভরে পানি বাজারজাত করছে।
জীবননগর পৌর শহরের নারায়ণপুর মোড় টেকনো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি পিউর ড্রিংকিং ওয়াটার এবং জীবননগর পৌরসভার পোস্ট অফিসাপাড়ায় অবৈধভাবে কারখানা দুটি স্থাপন করা হয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দুটি পানি শোধনাগারের কাগজপত্র না থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। যার ফলে তাঁরা প্রকাশ্যে বাজারজাত করছে বিএসটিআই-এর অনুমোদনহীন অশোধিত পানি। আর এসব পানি পান করে সাধারণ মানুষের শারীরিক সমস্যা হবে কিনা তা বলা মুশকিল। শোধন কারখানার দুটির পানি জীবননগর শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্কুল এমনকি বাড়িতেও নিরাপদ পানি হিসেবে নিয়মিত পান করা হচ্ছে। তবে কতটুকু বিশুদ্ধপানি পান করছে সাধারণ মানুষ, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়?
স্থানীয় কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, ‘টেকনো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি পিউর ড্রিংকিং ওয়াটার কোম্পানির পানি পান করতে সমস্যা হয়। পানিতে বিলিসিং পাউডারের গন্ধ পাওয়া যায়, পানিও অনেক তিতা লাগে। এছাড়া পানি রেখে দিলে কয়েকদিন পর জারের মধ্যে সাদা ধরণের ময়লা জমতে দেখা যায়। আমরা একাধিকবার বলা সত্বেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি।’ প্রতিবারই তাঁদের পানিতে সমস্যা থেকে যায়।’
এবিষয়ে টেকনো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি অর্ন্তগত পিউর ড্রিংকিং ওয়াটারের মালিক সাদিকুর রহমান বললে, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের বিএসটিআই-এর অনুমোদন নেই। আর এই ছোট ছোট প্লান্টের জন্য বিএসটিআই অনুমোদন দেয় না। আমি শুধু পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পানির ব্যবসা করছি। তাছাড়া আমার কোম্পানী থেকে যথাযথ নিয়মে পানি বিশুদ্ধ করা হয়।’
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু বলেন, ‘যদি বিশুদ্ধপানি পান না করা হয় তাহলে ডায়রিয়া, লিভারের সমস্যাসহ নানা ধরণের রোগ হতে পারে। তাছাড়া বাজারে এখন দুই ধরণের পানি বাজারজাত হচ্ছে একটি ড্রিংকিং ওয়াটার এবং মিনারেল ওয়াটার। তবে ড্রিংকিং ওয়াটার দায়সারাভাবে এখন বাজারজাত করছে। তাই এই পানি পান করতে হলে অবশ্যই পরীক্ষা করে পান করতে হবে।’
জীবননগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী রাজিব হোসেন রাজু বলেন, ‘জীবননগর শহরে পানি বিশুদ্ধকরণ কারখানার বিষয়ে আমার জানা ছিল না। এছাড়া দুটি কারখানার কেউই আমাদের নিকট পানি পরীক্ষার জন্য আসেনি। তবে তাঁরা যদি পানি পরীক্ষা করার জন্য আমাদের অফিসে আসে, তবে তাঁদের সাবিক সহযোগিতা করা হবে।’
জীবননগর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জীবননগর শহরে যে দুটি পানির কারখানা আছে, এটা আমি শুনেছি। ব্যবসা পরিচালনার জন্য পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সবাই নিতে পারে, তবে পানির বিশুদ্ধকরণ কারখানা পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পানিতে থাকছে ময়লা-জীবাণু, চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি!

আপলোড টাইম : ০২:১৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১

জীবননগরে লাইসেন্স ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে পানি শোধনাগার

মিঠুন মাহমুদ/এ আর ডাবলু:
পানির অপর নাম জীবন, সেই জীবন বাঁচানো পানি নিয়েই জীবননগরে শুরু হয়েছে প্রতারণা। পানি শোধন করে খাবার পানি বলে বিক্রয়ের জন্য বিএসটিআই-এর অনুমোদন বা পরীক্ষা কেন্দ্র ছাড়াই প্রকাশ্য জীবননগর শহরে স্থাপন করা হয়েছে পানি শোধনাগার। ২০১৮ সালে লাইসেন্স ছাড়াই জারের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়ে, তা বিক্রি করে যাচ্ছে টেকনো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি পিউর ড্রিংকিং ওয়াটার এবং মিম ওয়াটার নামের দুটি কারখানা। লোক দেখানো ছোট আকারের পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট বসিয়ে জীবননগর পৌরসভা থেকে শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি জারে ভরে পানি বাজারজাত করছে।
জীবননগর পৌর শহরের নারায়ণপুর মোড় টেকনো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি পিউর ড্রিংকিং ওয়াটার এবং জীবননগর পৌরসভার পোস্ট অফিসাপাড়ায় অবৈধভাবে কারখানা দুটি স্থাপন করা হয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দুটি পানি শোধনাগারের কাগজপত্র না থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। যার ফলে তাঁরা প্রকাশ্যে বাজারজাত করছে বিএসটিআই-এর অনুমোদনহীন অশোধিত পানি। আর এসব পানি পান করে সাধারণ মানুষের শারীরিক সমস্যা হবে কিনা তা বলা মুশকিল। শোধন কারখানার দুটির পানি জীবননগর শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্কুল এমনকি বাড়িতেও নিরাপদ পানি হিসেবে নিয়মিত পান করা হচ্ছে। তবে কতটুকু বিশুদ্ধপানি পান করছে সাধারণ মানুষ, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়?
স্থানীয় কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, ‘টেকনো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি পিউর ড্রিংকিং ওয়াটার কোম্পানির পানি পান করতে সমস্যা হয়। পানিতে বিলিসিং পাউডারের গন্ধ পাওয়া যায়, পানিও অনেক তিতা লাগে। এছাড়া পানি রেখে দিলে কয়েকদিন পর জারের মধ্যে সাদা ধরণের ময়লা জমতে দেখা যায়। আমরা একাধিকবার বলা সত্বেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি।’ প্রতিবারই তাঁদের পানিতে সমস্যা থেকে যায়।’
এবিষয়ে টেকনো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি অর্ন্তগত পিউর ড্রিংকিং ওয়াটারের মালিক সাদিকুর রহমান বললে, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের বিএসটিআই-এর অনুমোদন নেই। আর এই ছোট ছোট প্লান্টের জন্য বিএসটিআই অনুমোদন দেয় না। আমি শুধু পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পানির ব্যবসা করছি। তাছাড়া আমার কোম্পানী থেকে যথাযথ নিয়মে পানি বিশুদ্ধ করা হয়।’
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু বলেন, ‘যদি বিশুদ্ধপানি পান না করা হয় তাহলে ডায়রিয়া, লিভারের সমস্যাসহ নানা ধরণের রোগ হতে পারে। তাছাড়া বাজারে এখন দুই ধরণের পানি বাজারজাত হচ্ছে একটি ড্রিংকিং ওয়াটার এবং মিনারেল ওয়াটার। তবে ড্রিংকিং ওয়াটার দায়সারাভাবে এখন বাজারজাত করছে। তাই এই পানি পান করতে হলে অবশ্যই পরীক্ষা করে পান করতে হবে।’
জীবননগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী রাজিব হোসেন রাজু বলেন, ‘জীবননগর শহরে পানি বিশুদ্ধকরণ কারখানার বিষয়ে আমার জানা ছিল না। এছাড়া দুটি কারখানার কেউই আমাদের নিকট পানি পরীক্ষার জন্য আসেনি। তবে তাঁরা যদি পানি পরীক্ষা করার জন্য আমাদের অফিসে আসে, তবে তাঁদের সাবিক সহযোগিতা করা হবে।’
জীবননগর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জীবননগর শহরে যে দুটি পানির কারখানা আছে, এটা আমি শুনেছি। ব্যবসা পরিচালনার জন্য পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সবাই নিতে পারে, তবে পানির বিশুদ্ধকরণ কারখানা পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’