পাটে বাম্পার ফলন হলেও দুশ্চিন্তায় চাষি!
- আপলোড টাইম : ১০:২০:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০
- / ১৭৭ বার পড়া হয়েছে
দামুড়হুদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৭০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটচাষ
আওয়াল হোসেন:
দামুড়হুদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৭০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে। অন্য বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ফলনও বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষকেরা। কিন্তু সম্প্রতি পাটকলগুলো বন্ধের ঘোষণায় চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। নায্যমূল্য পাওয়া তো দূরের কথা, পাট বিক্রি করে বিনিয়োগের টাকা পকেটে তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তাঁরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর পানির অভাবে কাক্সিক্ষত স্থানে পাট পচানোতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তারপরেও বিগত কয়েক বছর পাটের ফলন ও দাম ভালো পেয়েছেন কৃষকেরা। তাই লাভের মুখ দেখতে এ বছর দামুড়হুদা উপজেলায় আবাদের পরিমাণও বেড়েছে। এছাড়াও চলতি মৌসুমে আশানুরূপ বৃষ্টি হওয়ায় পাট কাটা, জাগ দেওয়াতে এখন পর্যন্ত সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কোনো খবর মেলেনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে পাট বিক্রি শুরু হবে। তবে এবার নায্য দাম পাওয়া নিয়ে কৃষকেরা রয়েছেন সংশয়ে।
উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের মদনা গ্রামে নুর বক্সের ছেলে কাউছার আলী, আবুল হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান, হাজি আব্দুল ওহাবের ছেলে আরিফুল ইসলাম ও পারকৃষ্ণপুর গ্রামের মকছেদ আলীর ছেলে জামাত আলী জানান, পাটচাষে ব্যাপক খরচ। এক বিঘা পাটচাষ করতে প্রথমে ৪টা চাষ দিতে হয়। এতে খরচ হয় ১ হাজার ২ শ টাকা, পাটের বীজ ক্রয় ২ শ টাকা, ২টা সেচ দিতে ১ হাজার টাকা, ৩ বার সার দিতে খরচ হয় ১ হাজার ৮ শ টাকা, বিঘা প্রতি নিড়ানী দিতে ১০টা দিনমজুর লাগে। তার খরচ ২৫০ টাকা দরে ২ হাজার ৫ শ টাকা, পাট কাটা শ্রমিক লাগে বিঘা প্রতি ৪টা, যার মূল্যে ১ হাজার টাকা, পাটগুলো আটি বাধঁতে ২টা শ্রমিকের ৫ শ টাকা, পাটের আটি বহন করতে শ্রমিক লাগে ৩টা, যার মূল্যে ৭৫০ টাকা, বহন খরচ ১ হাজার টাকা, পাট জাগ দিতে ৪টা শ্রমিকের মূল্যে ১ হাজার টাকা পাট, কাঁচা লেবার ৬টা, যার মূল্যে ১ হাজার ৫ শ টাকা ও পাট শুকাতে ৪টা শ্রমিক লাগে, যার মূল্যে ১ হাজার টাকা এবং পাট শুকানোর পর আড়ৎ এ নেওয়া খরচ ১ শ টাকা। এক বিঘা পাট চাষে পর্যায়ক্রমে সর্বমোট খরচ হয় প্রায় ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা। এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয় ৮-৯ মণ।
দর্শনা পুরাতন বাজারের বড় আড়ৎদার আব্দুর রহমানের নিকট পাটের বর্তমান মূল্যে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাজার মূল্যে ১৫-১৬ শত টাকা মণ চলছে। তবে যেভাবে পাটকলগুলো বন্ধ হচ্ছে, তাতে করে আমারও পাট ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে চিন্তায় আছি। বর্তমান মূল্যে অনুযায়ী বিঘা প্রতি গড় উৎপাদন ৯ মণ এবং ১ হাজার ৬ শ টাকা হরে মূল্যে ধরা হলে এক বিঘা পাটের মূল্যে হয় ১৪ হজার ৪ শ টাকা। একজন কৃষক মাথার ঘাম পায়ে বিঘাপ্রতি পাটচাষে খরচ-খরচা বাদ দিয়ে লাভ হচ্ছে ৮৫০ টাকা। যদি পাটের মূল্যে বা উৎপাদন কম হয় তাহলে তো লোকসানের খাতায়। এরপরও এ দেশের কৃষকেরা তাদের মাঠে অর্থকারী ফসলের চাষ করে মনের সান্তনা নিয়ে বেঁেচ আছেন। তবে পাটকাঠিগুলো জ্বালানি হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। এটাই হয়ত লাভ এমনটি বলেলন এলাকার কৃষকরা।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সেখানে চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৯৫৫ হেক্টর। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬৭০ হেক্টর জমিতে বেশি পাটচাষ হয়েছে। এদিকে পাটের চাষে খরচ অনুযায়ী সঠিক মূল্যে পাওয়া নিয়ে এ অঞ্চলের কৃষকেরা দুঃচিন্তায় পড়েছেন।