ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পাক-ভারত যুদ্ধ : অনাকাক্সিক্ষত পরিণতির শঙ্কা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০১৯
  • / ২৮০ বার পড়া হয়েছে

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা কোথায় পর্যন্ত গিয়ে থামে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। বিমান হামলা-পাল্টা হামলার পর্ব শেষ হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হবে। কিন্তু এরপর ভারতীয় সাবমেরিনের পাকিস্তানি পানিসীমায় অনুপ্রবেশ এবং ভারতীয় নৌপ্রধানের পানিপথে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে বলে সতর্কবাণীতে মনে হয় বড় ধরনের কোনো আঘাত বা পাল্টা আঘাতের শঙ্কা রয়েই গেছে। সেটি স্থল, নৌ অথবা বিমান যেকোনো মাধ্যমেই হতে পারে।
দুই দেশের এ বাগ্যুদ্ধ এবং সঙ্ঘাতে এ পর্যন্ত যে বাস্তব অ্যাকশন হয়েছে তাতে কোনো পক্ষ চূড়ান্তভাবে জয়ী এ কথা বলার অবকাশ নেই। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ব্যাপারে ভারতীয় যুদ্ধ বিশারদদের ধারণা সঠিক ছিল না বলে মনে হয়। আর এ দু’দেশের যুদ্ধক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা সামর্থ্যরে মধ্যে ইতোমধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য এসেছে বলেই মনে হচ্ছে। এই ভারসাম্যই দু’পক্ষের মধ্যে একে অন্যকে আক্রমণ থেকে নিবৃত্ত করতে পারে।
আশঙ্কার বিষয় হলো- যুদ্ধ সব সময় পরিকল্পনা অনুসারেই সংঘটিত হয় না। অনেক সময় পার্শ্ব-অভিনেতাদের ভূমিকাও রণহুঙ্কার বাজিয়ে দেয়। পাক-ভারত যুদ্ধের ব্যাপারে বড় শঙ্কাটি এখানেই। ব্রিটিশ পত্রিকা ইনডিপেন্ডেন্ট-এর মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি রবার্ট ফিস্ক, পাক-ভারত উত্তেজনার ব্যাপারে একটি তাৎপর্যপূর্ণ নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলার পুরো ঘটনার সাথে ইসরাইলি অপারেশনের অদ্ভুত মিল প্রত্যক্ষ করেছেন। ইসরাইলের সাথে গত দেড় দশকে ভারতের সম্পর্ক অনেক দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দু’দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী প্রতিপক্ষ দেশ সফর করেছেন। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কয়েক দিনব্যাপী ইসরাইল আর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ভারত সফর করেছেন। দু’দেশের মধ্যে সরকারপ্রধান পর্যায়ের এটি সম্ভবত প্রথম সফর।
এই সফরে কৃষি ও প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়তার পাশাপাশি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরক্ষা খাতে তাৎপর্যপূর্ণ সহায়তা চুক্তি হয়েছে। মোদি তার বক্তব্যে ভারতের কাশ্মির ও ইসরাইলের ফিলিস্তিন সঙ্কটের প্রতি ইঙ্গিত করে দুটোকে একই ধরনের সন্ত্রাসী সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। দুই নেতার পুরো সফরকালীন অনুষ্ঠান ও চুক্তিগুলোকে পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, উভয় দেশের নেতারা সভ্যতার দ্বন্দ্বে দুই দেশকে একই পক্ষের মিত্রশক্তি হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক যুদ্ধ উত্তেজনাকে দু’দেশের বিরোধ নিষ্পত্তি থেকে উৎসারিত কোনো ঘটনা হিসেবে দেখলে এর গভীরতা হয় একরকম। কিন্তু এটাকে সভ্যতার দ্বন্দ্ব হিসেবে মূল্যায়ন করে কৌশল ঠিক করা হলে বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা নেয়। সাধারণভাবে যেটি মনে করা হয় তা হলো- নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি ও তার দল ভারতীয় জনতা পাার্টির আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব জাগিয়ে তোলা দরকার। সে জন্য এই যুদ্ধোন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাকিস্তানের বক্তব্যে একাধিকবার এই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও মমতা ব্যানার্জির মতো শীর্ষ বিরোধী নেতারা রাজনৈতিক স্বার্থে নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পাক-ভারত যুদ্ধ : অনাকাক্সিক্ষত পরিণতির শঙ্কা

আপলোড টাইম : ১১:৪৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০১৯

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা কোথায় পর্যন্ত গিয়ে থামে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। বিমান হামলা-পাল্টা হামলার পর্ব শেষ হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হবে। কিন্তু এরপর ভারতীয় সাবমেরিনের পাকিস্তানি পানিসীমায় অনুপ্রবেশ এবং ভারতীয় নৌপ্রধানের পানিপথে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে বলে সতর্কবাণীতে মনে হয় বড় ধরনের কোনো আঘাত বা পাল্টা আঘাতের শঙ্কা রয়েই গেছে। সেটি স্থল, নৌ অথবা বিমান যেকোনো মাধ্যমেই হতে পারে।
দুই দেশের এ বাগ্যুদ্ধ এবং সঙ্ঘাতে এ পর্যন্ত যে বাস্তব অ্যাকশন হয়েছে তাতে কোনো পক্ষ চূড়ান্তভাবে জয়ী এ কথা বলার অবকাশ নেই। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ব্যাপারে ভারতীয় যুদ্ধ বিশারদদের ধারণা সঠিক ছিল না বলে মনে হয়। আর এ দু’দেশের যুদ্ধক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা সামর্থ্যরে মধ্যে ইতোমধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য এসেছে বলেই মনে হচ্ছে। এই ভারসাম্যই দু’পক্ষের মধ্যে একে অন্যকে আক্রমণ থেকে নিবৃত্ত করতে পারে।
আশঙ্কার বিষয় হলো- যুদ্ধ সব সময় পরিকল্পনা অনুসারেই সংঘটিত হয় না। অনেক সময় পার্শ্ব-অভিনেতাদের ভূমিকাও রণহুঙ্কার বাজিয়ে দেয়। পাক-ভারত যুদ্ধের ব্যাপারে বড় শঙ্কাটি এখানেই। ব্রিটিশ পত্রিকা ইনডিপেন্ডেন্ট-এর মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি রবার্ট ফিস্ক, পাক-ভারত উত্তেজনার ব্যাপারে একটি তাৎপর্যপূর্ণ নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলার পুরো ঘটনার সাথে ইসরাইলি অপারেশনের অদ্ভুত মিল প্রত্যক্ষ করেছেন। ইসরাইলের সাথে গত দেড় দশকে ভারতের সম্পর্ক অনেক দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দু’দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী প্রতিপক্ষ দেশ সফর করেছেন। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কয়েক দিনব্যাপী ইসরাইল আর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ভারত সফর করেছেন। দু’দেশের মধ্যে সরকারপ্রধান পর্যায়ের এটি সম্ভবত প্রথম সফর।
এই সফরে কৃষি ও প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়তার পাশাপাশি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরক্ষা খাতে তাৎপর্যপূর্ণ সহায়তা চুক্তি হয়েছে। মোদি তার বক্তব্যে ভারতের কাশ্মির ও ইসরাইলের ফিলিস্তিন সঙ্কটের প্রতি ইঙ্গিত করে দুটোকে একই ধরনের সন্ত্রাসী সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। দুই নেতার পুরো সফরকালীন অনুষ্ঠান ও চুক্তিগুলোকে পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, উভয় দেশের নেতারা সভ্যতার দ্বন্দ্বে দুই দেশকে একই পক্ষের মিত্রশক্তি হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক যুদ্ধ উত্তেজনাকে দু’দেশের বিরোধ নিষ্পত্তি থেকে উৎসারিত কোনো ঘটনা হিসেবে দেখলে এর গভীরতা হয় একরকম। কিন্তু এটাকে সভ্যতার দ্বন্দ্ব হিসেবে মূল্যায়ন করে কৌশল ঠিক করা হলে বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা নেয়। সাধারণভাবে যেটি মনে করা হয় তা হলো- নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি ও তার দল ভারতীয় জনতা পাার্টির আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব জাগিয়ে তোলা দরকার। সে জন্য এই যুদ্ধোন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাকিস্তানের বক্তব্যে একাধিকবার এই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও মমতা ব্যানার্জির মতো শীর্ষ বিরোধী নেতারা রাজনৈতিক স্বার্থে নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন।