ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পাঁচ দিনে ২২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৯:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০১৯
  • / ৩০৬ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে
মেহেরপুর অফিস:
মেহেরপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ৫ দিনে ২২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আযান গ্রামের রিপন আলীর মেয়ে রিমপা খাতুন (১০) স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। গত শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ জ্বর অনুভব করে রিমপা, সঙ্গে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ লালচে হয়। বাবা-মা মনে করেছিলেন, জ্বরের সঙ্গে এলার্জি হয়েছে। তাই গ্রামের ওষুধের দোকান থেকে জ্বর ও এলার্জির ওষুধ নিয়ে মেয়েকে খাওয়ান। কিন্তু গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত জ্বর ও শরীরের বিভিন্ন অংশে লালচে হওয়া না কমায় এ দিন সকালে মেহেরপুর শহরের সনো ল্যাবে রক্ত পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু পজিটিভ শনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে বেলা একটার দিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রিমপাকে।
নুসরাত জেরিন সোমা নামের এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করার সুবাদে ঢাকায় থাকতেন। ঈদের ছুটি পেয়ে গত শুক্রবার নিজ বাড়ি মেহেরপুরের হিজুলি গ্রামে আসেন। বিকেল থেকে শুরু হয় জ্বর। পরদিন শনিবার সকালে মেহেরপুরের তাহের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করার পর জানতে পারেন, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর পরপরই ভর্তি হয়েছেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে। আঁখি তারা, মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামে বাড়ি। তিনিও গত শনিবার বেলা একটার দিকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই সকালে মেহেরপুরের গাংনীতে আম্বিয়া খাতুন নামের এক গৃহবধূ প্রথম ডেঙ্গু রোগী হিসেবে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তারপর থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সরকারি ও বেসরকারি হিসেবে গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত ২২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে মেহেরপুর জেলায়। তাঁদের মধ্যে ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন অনেকে। স্থানীয়ভাবেও চারজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের আইসোলেশন বিভাগের দুটি কক্ষ ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারণ করে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওই ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ নার্স মালতি দাস জানান, গত ৩১ জুলাই থেকে গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত ১০ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তর করেছেন চিকিৎসক। বর্তমানে ছয়জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, মেহেরপুর সনো ল্যাবের স্বত্বাধিকারী ডা. জে পি আগরওয়ালা জানান, গত ৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত আটজনের ডেঙ্গু পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি দুজনও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায়। তিনি জানান, মেহেরপুরের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান স্বপনও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। গত শনিবার রাতে তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ পাওয়া গেছে।
গাংনী হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সজিব উদ্দিন স্বাধীন জানান, গাংনীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত আটজন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, চারজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এস এম এহসানুল কবীর জানান, ‘মেহেরপুরে আক্রান্তদের মধ্যে এখনো কারও ডেঙ্গু শক্ড সিনড্রোম দেখা যায়নি। তারপরও আমরা প্রত্যেক ডেঙ্গু রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তাঁরা যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায় সে দিকে খেয়াল রাখছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পাঁচ দিনে ২২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

আপলোড টাইম : ০৯:৩৯:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০১৯

মেহেরপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে
মেহেরপুর অফিস:
মেহেরপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ৫ দিনে ২২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আযান গ্রামের রিপন আলীর মেয়ে রিমপা খাতুন (১০) স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। গত শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ জ্বর অনুভব করে রিমপা, সঙ্গে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ লালচে হয়। বাবা-মা মনে করেছিলেন, জ্বরের সঙ্গে এলার্জি হয়েছে। তাই গ্রামের ওষুধের দোকান থেকে জ্বর ও এলার্জির ওষুধ নিয়ে মেয়েকে খাওয়ান। কিন্তু গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত জ্বর ও শরীরের বিভিন্ন অংশে লালচে হওয়া না কমায় এ দিন সকালে মেহেরপুর শহরের সনো ল্যাবে রক্ত পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু পজিটিভ শনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে বেলা একটার দিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রিমপাকে।
নুসরাত জেরিন সোমা নামের এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করার সুবাদে ঢাকায় থাকতেন। ঈদের ছুটি পেয়ে গত শুক্রবার নিজ বাড়ি মেহেরপুরের হিজুলি গ্রামে আসেন। বিকেল থেকে শুরু হয় জ্বর। পরদিন শনিবার সকালে মেহেরপুরের তাহের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করার পর জানতে পারেন, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর পরপরই ভর্তি হয়েছেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে। আঁখি তারা, মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামে বাড়ি। তিনিও গত শনিবার বেলা একটার দিকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই সকালে মেহেরপুরের গাংনীতে আম্বিয়া খাতুন নামের এক গৃহবধূ প্রথম ডেঙ্গু রোগী হিসেবে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তারপর থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সরকারি ও বেসরকারি হিসেবে গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত ২২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে মেহেরপুর জেলায়। তাঁদের মধ্যে ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন অনেকে। স্থানীয়ভাবেও চারজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের আইসোলেশন বিভাগের দুটি কক্ষ ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারণ করে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওই ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ নার্স মালতি দাস জানান, গত ৩১ জুলাই থেকে গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত ১০ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তর করেছেন চিকিৎসক। বর্তমানে ছয়জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, মেহেরপুর সনো ল্যাবের স্বত্বাধিকারী ডা. জে পি আগরওয়ালা জানান, গত ৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত আটজনের ডেঙ্গু পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি দুজনও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায়। তিনি জানান, মেহেরপুরের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান স্বপনও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। গত শনিবার রাতে তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ পাওয়া গেছে।
গাংনী হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সজিব উদ্দিন স্বাধীন জানান, গাংনীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত আটজন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, চারজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এস এম এহসানুল কবীর জানান, ‘মেহেরপুরে আক্রান্তদের মধ্যে এখনো কারও ডেঙ্গু শক্ড সিনড্রোম দেখা যায়নি। তারপরও আমরা প্রত্যেক ডেঙ্গু রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তাঁরা যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায় সে দিকে খেয়াল রাখছি।’