ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পর্দা নামল অনির্বাণ তিন যুগপূর্তি উৎসবের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ৪৯০ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা অফিস:
দুই বাংলার নাট্যকর্মীদের পদভারে শেষ হলো ‘গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/যেখানে মিশেছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম ক্রিশ্চান শীর্ষক’ অনির্বাণ-এর তিন যুগপূর্তি উৎসব। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টায় অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন আনোয়ার হোসেন তাঁর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্ববৃহৎ এই বর্ণিল কর্মযজ্ঞের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তার আগে ঢাকার সময় সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পরিবেশন করে তাদের সাড়াজাগানো ‘ভাগের মানুষ’। এ ছাড়াও এ দিন বিকেলে দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যায় নীল সেতারের পরিবেশনায় আধুনিক গানের অনুষ্ঠান।
পরে অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হকের সভাপতিত্বে সমাপনী আসরে প্রধান অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন দর্শনা পৌর প্রবীণ কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন ও দর্শনা গণউন্নয়ন গ্রন্থাগারের পরিচালক আবু সুফিয়ান। স্বাগত বক্তব্য দেন অনির্বাণের সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন আনোয়ার হোসেন। সমাপনী পর্বের শেষভাগে অনির্বাণের কার্যনির্বাহী পরিষদে সহসভাপতি আলী মুনসুর বাবু দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় সংগঠনের পক্ষে তাঁকে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানানো হয় উৎসব মঞ্চে। এ সময় অনিবার্ণের সভাপতি ফজলুল হক প্রধান অতিথির হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন দলের সহসাধারণ সম্পাদক হাসমত কবির ও মাহাবুবুর রহমান মুকুল। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। সমাপনী আসরের সবশেষে প্রতিযোগিতামূলক শিশুদের বর্ণ লিখন, বাক্য লিখন ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এরপর শুরু হয় ১৯৭৪ সালের দেশভাগের কাহিনী নির্ভর সময়ের নাটক ‘ভাগের মানুষ’। ভাগের মানুষ নাটকটি রচনা করেছেন মান্নান হীরা, নির্দেশনা দিয়েছেন দেশবরণ্য নাট্যজন আলী যাকের। উপমহাদেশের মানচিত্রে এক ঐতিহাসিক ঘটনা হলো ভারতবর্ষের বিভাজন। এ কেবলই মানচিত্রের বিভাজন নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে লক্ষ কোটি মানুষের ভাগ্য ভালবাসা সম্পদ সঞ্চয় ও প্রণয়ের নানা ঘটনা। উপমহাদেশ থেকে ইংরেজ যখন তার তাবু গুটিয়ে নিতে বাধ্য হলো, তখনই তাদের মধ্যে এক বড় সংশয় ছিল যে, এ মানুষেরা যদি আগামীতে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মিলিতভাবে বেড়ে ওঠে, তাহলে পৃথিবীর নানা সাম্রাজ্যের শক্তি হুমকির সম্মুখীন হবে। এ সংশয় থেকে শীর্ষস্থানীয় হিন্দু মুসলিম নেতাদের নিয়ে ভারত বিভাজনের চক্রান্ত করে ইংরেজ। সফল হয় তাঁরা। সাম্প্রদায়িক শক্তির ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর যেকোনো জনগোষ্ঠীর এই প্রথম ও একমাত্র বিভাজন। দেশ ভাগের পর দুই দেশের মধ্যে সংগঠিভাবেই শাসকগোষ্ঠী নির্মাণ করে এক কঠোর বৈরিভাব। দীর্ঘদিনের অসাম্প্রদায়িক ভাবনা নিয়ে লালিত জনগণ তখন খাঁচায় বন্দী পাখির মতো কেবল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে এমন সময় ভারতবর্ষের নানা পাগলা গারদে খবর পৌঁছে যে সেখানকার হিন্দু পাগল ও মুসলমান পাগলদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অথচ হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান নামের দেশ দু’টি পাগলদের কাছে অপরিচিত। ওই নামের দেশ অতীত ইতিহাসে বা ভূগোলে কোথাও চিহ্নিত নেই। লাহোর পাগলা গারদের পাগলরা সবাই একজোট হয়ে দুই সরকারের এহেন সিদ্ধান্তকে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ পাগলের প্রতিবাদে কি যায় আসে? তারা কি বোঝে রাজনীতির? বর্ণভেদের মহত্ব (!) কি করে স্পর্শ করবে পাগলদের? না-রাজনীতিবিদরা সব মহত্ব, মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতাকে হত্যা করে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ জাতি ধর্ম ভালবাসা ভাগের খেলায় মেতেই ওঠে। লাহোর পাগলা গারদে একদিন প্রত্যুষে শুরু হয় পাগল বিনিময়। দুই দেশের সৈন্যরা স্ব স্ব পতাকা হাতে দাঁড়ায় রাষ্ট্রের কানুন রক্ষা করতে। এরই মধ্যে ঘটে এক রক্তক্ষয়ী ঘটনা-পাগলদের মধ্য থেকে উচ্চারিত হয় এক লোমহর্ষক অসাম্প্রদায়িক কণ্ঠস্বর। রচিত হয় এক নিরব ইতিহাস যা লেখা হয় না কাগজে কারণ ঐ যুদ্ধের মানুষেরা ছিল পাগল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পর্দা নামল অনির্বাণ তিন যুগপূর্তি উৎসবের

আপলোড টাইম : ০৯:২৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০

দর্শনা অফিস:
দুই বাংলার নাট্যকর্মীদের পদভারে শেষ হলো ‘গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/যেখানে মিশেছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম ক্রিশ্চান শীর্ষক’ অনির্বাণ-এর তিন যুগপূর্তি উৎসব। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টায় অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন আনোয়ার হোসেন তাঁর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্ববৃহৎ এই বর্ণিল কর্মযজ্ঞের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তার আগে ঢাকার সময় সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পরিবেশন করে তাদের সাড়াজাগানো ‘ভাগের মানুষ’। এ ছাড়াও এ দিন বিকেলে দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যায় নীল সেতারের পরিবেশনায় আধুনিক গানের অনুষ্ঠান।
পরে অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হকের সভাপতিত্বে সমাপনী আসরে প্রধান অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন দর্শনা পৌর প্রবীণ কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন ও দর্শনা গণউন্নয়ন গ্রন্থাগারের পরিচালক আবু সুফিয়ান। স্বাগত বক্তব্য দেন অনির্বাণের সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন আনোয়ার হোসেন। সমাপনী পর্বের শেষভাগে অনির্বাণের কার্যনির্বাহী পরিষদে সহসভাপতি আলী মুনসুর বাবু দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় সংগঠনের পক্ষে তাঁকে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানানো হয় উৎসব মঞ্চে। এ সময় অনিবার্ণের সভাপতি ফজলুল হক প্রধান অতিথির হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন দলের সহসাধারণ সম্পাদক হাসমত কবির ও মাহাবুবুর রহমান মুকুল। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। সমাপনী আসরের সবশেষে প্রতিযোগিতামূলক শিশুদের বর্ণ লিখন, বাক্য লিখন ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এরপর শুরু হয় ১৯৭৪ সালের দেশভাগের কাহিনী নির্ভর সময়ের নাটক ‘ভাগের মানুষ’। ভাগের মানুষ নাটকটি রচনা করেছেন মান্নান হীরা, নির্দেশনা দিয়েছেন দেশবরণ্য নাট্যজন আলী যাকের। উপমহাদেশের মানচিত্রে এক ঐতিহাসিক ঘটনা হলো ভারতবর্ষের বিভাজন। এ কেবলই মানচিত্রের বিভাজন নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে লক্ষ কোটি মানুষের ভাগ্য ভালবাসা সম্পদ সঞ্চয় ও প্রণয়ের নানা ঘটনা। উপমহাদেশ থেকে ইংরেজ যখন তার তাবু গুটিয়ে নিতে বাধ্য হলো, তখনই তাদের মধ্যে এক বড় সংশয় ছিল যে, এ মানুষেরা যদি আগামীতে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মিলিতভাবে বেড়ে ওঠে, তাহলে পৃথিবীর নানা সাম্রাজ্যের শক্তি হুমকির সম্মুখীন হবে। এ সংশয় থেকে শীর্ষস্থানীয় হিন্দু মুসলিম নেতাদের নিয়ে ভারত বিভাজনের চক্রান্ত করে ইংরেজ। সফল হয় তাঁরা। সাম্প্রদায়িক শক্তির ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর যেকোনো জনগোষ্ঠীর এই প্রথম ও একমাত্র বিভাজন। দেশ ভাগের পর দুই দেশের মধ্যে সংগঠিভাবেই শাসকগোষ্ঠী নির্মাণ করে এক কঠোর বৈরিভাব। দীর্ঘদিনের অসাম্প্রদায়িক ভাবনা নিয়ে লালিত জনগণ তখন খাঁচায় বন্দী পাখির মতো কেবল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে এমন সময় ভারতবর্ষের নানা পাগলা গারদে খবর পৌঁছে যে সেখানকার হিন্দু পাগল ও মুসলমান পাগলদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অথচ হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান নামের দেশ দু’টি পাগলদের কাছে অপরিচিত। ওই নামের দেশ অতীত ইতিহাসে বা ভূগোলে কোথাও চিহ্নিত নেই। লাহোর পাগলা গারদের পাগলরা সবাই একজোট হয়ে দুই সরকারের এহেন সিদ্ধান্তকে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ পাগলের প্রতিবাদে কি যায় আসে? তারা কি বোঝে রাজনীতির? বর্ণভেদের মহত্ব (!) কি করে স্পর্শ করবে পাগলদের? না-রাজনীতিবিদরা সব মহত্ব, মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতাকে হত্যা করে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ জাতি ধর্ম ভালবাসা ভাগের খেলায় মেতেই ওঠে। লাহোর পাগলা গারদে একদিন প্রত্যুষে শুরু হয় পাগল বিনিময়। দুই দেশের সৈন্যরা স্ব স্ব পতাকা হাতে দাঁড়ায় রাষ্ট্রের কানুন রক্ষা করতে। এরই মধ্যে ঘটে এক রক্তক্ষয়ী ঘটনা-পাগলদের মধ্য থেকে উচ্চারিত হয় এক লোমহর্ষক অসাম্প্রদায়িক কণ্ঠস্বর। রচিত হয় এক নিরব ইতিহাস যা লেখা হয় না কাগজে কারণ ঐ যুদ্ধের মানুষেরা ছিল পাগল।