ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পরীক্ষা নিয়ে তালগোল, সেশনজটের শঙ্কা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৭:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৭৫ বার পড়া হয়েছে

সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে চরম ভোগান্তি, রাজপথে শিক্ষার্থীরা
সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ, তিন দিনের আলটিমেটাম
সমীকরণ প্রতিবেদন:
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়হীনতা ও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত ভোগাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে আবার তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আবার একদিকে আন্দোলন করার পর রাজধানীর সাত কলেজের পরীক্ষাসূচি সচল ঘোষণা করছে মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে একই দাবিতে মাঠে নামা অন্য শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও আটক করছে পুলিশ। এমন সিদ্ধান্তহীনতায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা অবিলম্বে পরীক্ষাসূচি সচল চান। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলন চলবে, সমাধানও আসবে। কিন্তু মধ্যখানে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। যেটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। শিক্ষাবিদরাও মনে করেন, পরীক্ষা স্থগিতের উদ্যোগের আগে সময় নেয়া দরকার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত পরীক্ষা সচল থাকা উচিত। অন্যথায় সেশনজট ও চাকরি বাজারে পিছিয়ে পড়ার যে ধারাবাহিকতা তা আরো দীর্ঘ হবে। হতাশা ও বিষণ্নতা চেপে ধরবে শিক্ষার্থীদের। যেটি কোনোভাবেই ভালো খবর না। এমন পরিস্থিতিতে সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত সংশ্লিষ্টদের।
একদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থগিত হওয়া সব পর্যায়ের পরীক্ষার নতুন সূচি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চলমান পরীক্ষাগুলোর নতুন রুটিনের দাবিতে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন। আগামী রোববারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এদিকে, পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদ এবং দ্রম্নত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে সড়ক-মহাসড়কে অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আরফিন শরিয়ত বলেন, সরকার যে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে তা শিক্ষার্থীদের সামনে প্রকাশ্যে উন্মোচিত হচ্ছে। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করছে, শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি গ্রহণের পর অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে তা স্থগিত। এ ধরনের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি যেমন বাড়ছে একই সঙ্গে তাদের বিক্ষুব্ধ করে তুলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন- পরীক্ষা শুরু করে হুট করে তা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। পরীক্ষা নেয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাধ্যবাধকতা। তিনি বলেন, একবার পরীক্ষা শুরু করে বন্ধ করা হলে ছাত্রদের মন ভেঙে যায়। পরীক্ষার দাবিতে ছাত্ররা যে আন্দোলন করছে এর যৌক্তিকতা রয়েছে। সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, যখন পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তখন তো ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তারা মেসে থেকে, যে যেখান থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছে। এখন হুট করে পরীক্ষা কেন বন্ধ করলো সেটা আমি বুঝলাম না। আমি মনে করি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরু করা উচিত।
এদিকে সাত কলেজের পরীক্ষার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ বলেন, পরীক্ষাসূচি প্রকাশ করে একবার স্থগিত করা আবার আন্দোলনের মুখে সেটি ফের সচল করা সেটি সরকার না বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতা। তিনি এই বিষয়ে আর কিছু বলতে অপারগতা জানান। গত ১৭ই জানুয়ারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের (ভিসি) সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল সভা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব একাডেমিক কাউন্সিলে সভা করে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেয় ইউজিসি। যদিও এর আগেই কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করে। পরীক্ষা নিতে ইউজিসি’র সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষাসূচি প্রকাশ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। হল খোলারও সিদ্ধান্ত নেয় স্বায়ত্তশাসিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ২২শে ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে এসে ঘোষণা দেন, ২৪শে মে থেকে চালু হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস- পরীক্ষা। তার এক সপ্তাহ আগে খুলবে আবাসিক হলগুলো। এরপরই ঘোষিত পরীক্ষাসূচি স্থগিত করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যেখানে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও রয়েছে। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বিক্ষুব্ধ করে তোলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কারণ পরীক্ষাসূচি প্রকাশের পর অনেক শিক্ষার্থীই শহরে এসে মেস ভাড়া নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আবার যারা পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে প্রবেশের আবেদনের যোগ্যতা পূরণের আশা করেছিল তারাও আবার হতাশায় পড়েন। কারণ চাকরির বিষয়টি আমলে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনার্স ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় বড় ধরনের আর্থিক সমস্যায়ও পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের পরীক্ষাসূচি স্থগিত করার পর নিউমার্কেট মোড় অবরোধ করে ওইদিনই বিক্ষোভ দেখায় কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। পরদিন রাস্তায় নেমে ফের বিক্ষোভ দেখালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মন্ত্রণালয় জানায় সাত কলেজের পরীক্ষা চলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নতুন করে সাত কলেজের পরীক্ষাসূচি প্রকাশ করে। কিন্তু মন্ত্রণালয় অন্যান্য কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তারা অনতিবিলম্বে পরীক্ষাসূচি সচল করার দাবি করেন।
রাজধানীতে বিক্ষোভ চলাকালে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। শাহবাগ থেকে আটক করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসূচি সচল করার দাবিতে আন্দোলনরত ১৩ শিক্ষার্থীকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তহীনতায় প্রশ্ন উঠছে- সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ববোধ নিয়ে। আন্দোলনেই কি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করতে হবে কিনা- এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা বলছেন, যদি আন্দোলনের মাধ্যমে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নেয়ার দাবি আদায়ে সক্ষম হয়, তাহলে সকলেই এই পথে হাঁটবে। যেটি ভালো নজির নয়। শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে স্থগিত পরীক্ষা সচলের দাবি করেন। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তেজগাঁও কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আহাদউজ্জামান বলেন, আমরা কোনো সরকার পতনের আন্দোলন করছি না, আমরা আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন করছি। আমাদের চলমান যে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে সে পরীক্ষা যেন দ্রুত নেয়া হয়। সাত কলেজের যদি পরীক্ষা নিতে পারে আমাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এটি এক প্রকার তামাশা। সরকারের এরকম সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সবাই উৎসাহ পাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের অধিকার বুঝে নেয়ার। সাত কলেজের আন্দোলনের মাধ্যমে এটি আবারো পরিষ্কার হলো আন্দোলনের উপরে জাতীয় সিদ্ধান্ত বলতে কিছু নেই। সবকিছুই ধরাশায়ী হতে বাধ্য। এটি ভালো কিছুর ইঙ্গিত বহন করে না বলেও মনে করেন এই শিক্ষার্থী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মামুন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমনিতেই এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। যেটা শিক্ষার্থীর মানসে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। অনলাইনে ক্লাস চালু রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফাইনাল পরীক্ষাগুলো নিতে শুরু করায় শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে আশাবাদী হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আমাদের হতাশ করেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পরীক্ষা নিয়ে তালগোল, সেশনজটের শঙ্কা!

আপলোড টাইম : ১০:৫৭:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে চরম ভোগান্তি, রাজপথে শিক্ষার্থীরা
সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ, তিন দিনের আলটিমেটাম
সমীকরণ প্রতিবেদন:
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়হীনতা ও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত ভোগাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে আবার তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আবার একদিকে আন্দোলন করার পর রাজধানীর সাত কলেজের পরীক্ষাসূচি সচল ঘোষণা করছে মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে একই দাবিতে মাঠে নামা অন্য শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও আটক করছে পুলিশ। এমন সিদ্ধান্তহীনতায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা অবিলম্বে পরীক্ষাসূচি সচল চান। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলন চলবে, সমাধানও আসবে। কিন্তু মধ্যখানে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। যেটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। শিক্ষাবিদরাও মনে করেন, পরীক্ষা স্থগিতের উদ্যোগের আগে সময় নেয়া দরকার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত পরীক্ষা সচল থাকা উচিত। অন্যথায় সেশনজট ও চাকরি বাজারে পিছিয়ে পড়ার যে ধারাবাহিকতা তা আরো দীর্ঘ হবে। হতাশা ও বিষণ্নতা চেপে ধরবে শিক্ষার্থীদের। যেটি কোনোভাবেই ভালো খবর না। এমন পরিস্থিতিতে সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত সংশ্লিষ্টদের।
একদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থগিত হওয়া সব পর্যায়ের পরীক্ষার নতুন সূচি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চলমান পরীক্ষাগুলোর নতুন রুটিনের দাবিতে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন। আগামী রোববারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এদিকে, পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদ এবং দ্রম্নত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে সড়ক-মহাসড়কে অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আরফিন শরিয়ত বলেন, সরকার যে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে তা শিক্ষার্থীদের সামনে প্রকাশ্যে উন্মোচিত হচ্ছে। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করছে, শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি গ্রহণের পর অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে তা স্থগিত। এ ধরনের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি যেমন বাড়ছে একই সঙ্গে তাদের বিক্ষুব্ধ করে তুলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন- পরীক্ষা শুরু করে হুট করে তা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। পরীক্ষা নেয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাধ্যবাধকতা। তিনি বলেন, একবার পরীক্ষা শুরু করে বন্ধ করা হলে ছাত্রদের মন ভেঙে যায়। পরীক্ষার দাবিতে ছাত্ররা যে আন্দোলন করছে এর যৌক্তিকতা রয়েছে। সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, যখন পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তখন তো ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তারা মেসে থেকে, যে যেখান থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছে। এখন হুট করে পরীক্ষা কেন বন্ধ করলো সেটা আমি বুঝলাম না। আমি মনে করি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরু করা উচিত।
এদিকে সাত কলেজের পরীক্ষার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ বলেন, পরীক্ষাসূচি প্রকাশ করে একবার স্থগিত করা আবার আন্দোলনের মুখে সেটি ফের সচল করা সেটি সরকার না বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতা। তিনি এই বিষয়ে আর কিছু বলতে অপারগতা জানান। গত ১৭ই জানুয়ারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের (ভিসি) সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল সভা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব একাডেমিক কাউন্সিলে সভা করে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেয় ইউজিসি। যদিও এর আগেই কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করে। পরীক্ষা নিতে ইউজিসি’র সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষাসূচি প্রকাশ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। হল খোলারও সিদ্ধান্ত নেয় স্বায়ত্তশাসিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ২২শে ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে এসে ঘোষণা দেন, ২৪শে মে থেকে চালু হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস- পরীক্ষা। তার এক সপ্তাহ আগে খুলবে আবাসিক হলগুলো। এরপরই ঘোষিত পরীক্ষাসূচি স্থগিত করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যেখানে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও রয়েছে। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বিক্ষুব্ধ করে তোলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কারণ পরীক্ষাসূচি প্রকাশের পর অনেক শিক্ষার্থীই শহরে এসে মেস ভাড়া নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আবার যারা পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে প্রবেশের আবেদনের যোগ্যতা পূরণের আশা করেছিল তারাও আবার হতাশায় পড়েন। কারণ চাকরির বিষয়টি আমলে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনার্স ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় বড় ধরনের আর্থিক সমস্যায়ও পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের পরীক্ষাসূচি স্থগিত করার পর নিউমার্কেট মোড় অবরোধ করে ওইদিনই বিক্ষোভ দেখায় কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। পরদিন রাস্তায় নেমে ফের বিক্ষোভ দেখালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মন্ত্রণালয় জানায় সাত কলেজের পরীক্ষা চলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নতুন করে সাত কলেজের পরীক্ষাসূচি প্রকাশ করে। কিন্তু মন্ত্রণালয় অন্যান্য কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তারা অনতিবিলম্বে পরীক্ষাসূচি সচল করার দাবি করেন।
রাজধানীতে বিক্ষোভ চলাকালে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। শাহবাগ থেকে আটক করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসূচি সচল করার দাবিতে আন্দোলনরত ১৩ শিক্ষার্থীকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তহীনতায় প্রশ্ন উঠছে- সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ববোধ নিয়ে। আন্দোলনেই কি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করতে হবে কিনা- এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা বলছেন, যদি আন্দোলনের মাধ্যমে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নেয়ার দাবি আদায়ে সক্ষম হয়, তাহলে সকলেই এই পথে হাঁটবে। যেটি ভালো নজির নয়। শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে স্থগিত পরীক্ষা সচলের দাবি করেন। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তেজগাঁও কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আহাদউজ্জামান বলেন, আমরা কোনো সরকার পতনের আন্দোলন করছি না, আমরা আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন করছি। আমাদের চলমান যে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে সে পরীক্ষা যেন দ্রুত নেয়া হয়। সাত কলেজের যদি পরীক্ষা নিতে পারে আমাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এটি এক প্রকার তামাশা। সরকারের এরকম সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সবাই উৎসাহ পাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের অধিকার বুঝে নেয়ার। সাত কলেজের আন্দোলনের মাধ্যমে এটি আবারো পরিষ্কার হলো আন্দোলনের উপরে জাতীয় সিদ্ধান্ত বলতে কিছু নেই। সবকিছুই ধরাশায়ী হতে বাধ্য। এটি ভালো কিছুর ইঙ্গিত বহন করে না বলেও মনে করেন এই শিক্ষার্থী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মামুন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমনিতেই এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। যেটা শিক্ষার্থীর মানসে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। অনলাইনে ক্লাস চালু রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফাইনাল পরীক্ষাগুলো নিতে শুরু করায় শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে আশাবাদী হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আমাদের হতাশ করেছে।