ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পবিত্র আশুরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অগাস্ট ২০২১
  • / ৩৮ বার পড়া হয়েছে

সত্যর আলোয় অন্তর আলোকিত হোক
আজ পবিত্র আশুরা। আশুরা ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইসলামের পরিভাষায় আশুরা বলতে মহররম মাসের ১০ তারিখকে বোঝায়। মহররম ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। এই দিনে অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালায় মর্মান্তিকভাবে শাহাদত বরণ করেন। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি একদিকে যেমন শোকের, তেমনি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেতনায় উজ্জ্বল। আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের মিছিল ও শোকানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, কিন্তু এবার পবিত্র আশুরা এসেছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত। দেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও সংক্রমণে মৃত্যু থেমে নেই। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আশুরায় তাজিয়া মিছিল, শোভাযাত্রা বন্ধ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শোভাযাত্রা ও মিছিল ইত্যাদি বন্ধ থাকবে। তবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণপূর্বক আবশ্যক সব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রতিপালিত হবে। ফলে যথাযথ নির্দেশনা মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হবে এমনটি কাম্য।
উল্লেখ্য, ইসলামের ইতিহাসে কারবালার এই শোকাবহ ঘটনার পাশাপাশি এ দিনে নানা রকম তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছে। ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথীসহ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত বরণের এ মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও, জানা যায় এই দিনে আদি মানব হজরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং এই দিনই তার তওবা কবুল হয়। এই ১০ মহররম তারিখে হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকা মহাপস্নাবন থেকে রক্ষা পায়। এর বাইরেও এই মহিমাময় দিনে আরও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার উলেস্নখ রয়েছে ইসলামের ইতিহাসে। তবে ইসলামের ইতিহাসে ১০ মহররম তারিখটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও এর তাৎপর্য থাকলেও কারবালায় ঘটে যাওয়া সর্বশেষ হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণেই বর্তমান দুনিয়ার মুসলমানরা দিনটি পালন করে থাকেন। অনেক মুসলমান এই দিনে রোজা পালন করেন। এছাড়া ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এজন্য ষড়যন্ত্র ও শক্তি ব্যবহারের পথ বেছে নেন। ফলে চক্রান্তের অংশ হিসেবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। জানা যায়, একই চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন ও ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদত বরণ করেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। আর তাদের হত্যার ক্ষেত্রে যে নিষ্ঠুর পথ বেছে নেওয়া হয়েছিল তা ইতিহাসে বিরল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল চেতনা হচ্ছে ক্ষমতার লোভ, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। অন্যায়, অসত্য ও শোষণের বিরুদ্ধে কারবালার প্রান্তরে এই বিয়োগান্ত ঘটনাকে মুসলিম বিশ্ব প্রতিবছর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করে। নিজেদের ইমানী শক্তিকে স্রষ্টার পরম সান্নিধ্য লাভের জন্য উজ্জীবিত করে তোলে। বর্তমান বিশ্বের জন্যও আশুরার শিক্ষা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ত্যাগের যে শিক্ষা কারবালার ঘটনা মানব জাতিকে দিয়েছে, তা আজকের দুনিয়ার সব অন্যায় দূর করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পবিত্র আশুরার শিক্ষাকে সামনে রেখে শোক পরিণত হোক শক্তিতে এবং এই দিনটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন ও সত্য প্রতিষ্ঠার যে শিক্ষা দেয়, তা মনকে শুদ্ধ করুক। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে, পবিত্র আশুরা পালন করার ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতিতে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হোক। কারবালার ত্যাগের মহিমায় সবার অন্তর আলোকিত ও শুদ্ধ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পবিত্র আশুরা

আপলোড টাইম : ০৯:২৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অগাস্ট ২০২১

সত্যর আলোয় অন্তর আলোকিত হোক
আজ পবিত্র আশুরা। আশুরা ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইসলামের পরিভাষায় আশুরা বলতে মহররম মাসের ১০ তারিখকে বোঝায়। মহররম ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। এই দিনে অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালায় মর্মান্তিকভাবে শাহাদত বরণ করেন। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি একদিকে যেমন শোকের, তেমনি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেতনায় উজ্জ্বল। আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের মিছিল ও শোকানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, কিন্তু এবার পবিত্র আশুরা এসেছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত। দেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও সংক্রমণে মৃত্যু থেমে নেই। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আশুরায় তাজিয়া মিছিল, শোভাযাত্রা বন্ধ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শোভাযাত্রা ও মিছিল ইত্যাদি বন্ধ থাকবে। তবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণপূর্বক আবশ্যক সব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রতিপালিত হবে। ফলে যথাযথ নির্দেশনা মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হবে এমনটি কাম্য।
উল্লেখ্য, ইসলামের ইতিহাসে কারবালার এই শোকাবহ ঘটনার পাশাপাশি এ দিনে নানা রকম তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছে। ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথীসহ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত বরণের এ মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও, জানা যায় এই দিনে আদি মানব হজরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং এই দিনই তার তওবা কবুল হয়। এই ১০ মহররম তারিখে হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকা মহাপস্নাবন থেকে রক্ষা পায়। এর বাইরেও এই মহিমাময় দিনে আরও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার উলেস্নখ রয়েছে ইসলামের ইতিহাসে। তবে ইসলামের ইতিহাসে ১০ মহররম তারিখটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও এর তাৎপর্য থাকলেও কারবালায় ঘটে যাওয়া সর্বশেষ হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণেই বর্তমান দুনিয়ার মুসলমানরা দিনটি পালন করে থাকেন। অনেক মুসলমান এই দিনে রোজা পালন করেন। এছাড়া ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এজন্য ষড়যন্ত্র ও শক্তি ব্যবহারের পথ বেছে নেন। ফলে চক্রান্তের অংশ হিসেবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। জানা যায়, একই চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন ও ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদত বরণ করেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। আর তাদের হত্যার ক্ষেত্রে যে নিষ্ঠুর পথ বেছে নেওয়া হয়েছিল তা ইতিহাসে বিরল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল চেতনা হচ্ছে ক্ষমতার লোভ, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। অন্যায়, অসত্য ও শোষণের বিরুদ্ধে কারবালার প্রান্তরে এই বিয়োগান্ত ঘটনাকে মুসলিম বিশ্ব প্রতিবছর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করে। নিজেদের ইমানী শক্তিকে স্রষ্টার পরম সান্নিধ্য লাভের জন্য উজ্জীবিত করে তোলে। বর্তমান বিশ্বের জন্যও আশুরার শিক্ষা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ত্যাগের যে শিক্ষা কারবালার ঘটনা মানব জাতিকে দিয়েছে, তা আজকের দুনিয়ার সব অন্যায় দূর করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পবিত্র আশুরার শিক্ষাকে সামনে রেখে শোক পরিণত হোক শক্তিতে এবং এই দিনটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন ও সত্য প্রতিষ্ঠার যে শিক্ষা দেয়, তা মনকে শুদ্ধ করুক। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে, পবিত্র আশুরা পালন করার ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতিতে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হোক। কারবালার ত্যাগের মহিমায় সবার অন্তর আলোকিত ও শুদ্ধ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।