ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পথে পথে হামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮
  • / ৪৯৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর প্রথম দিনেই ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ওপর পথে পথে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং নেতাকর্মীদের মারপিট করা হয়। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের গাড়ীবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সারাদেশে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে ব্যাপক প্রচারণা চালালেও ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নড়াইল, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালীতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলার ঘটনা ঘটে। কোথাও পথসভা পন্ড করে দেয়া হয়, কোথাও ভাঙচুর-লুটপাট-গাড়ী বহরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা পক্ষপাতিত্বমূলক ছিল বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কোথাও হামলাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, কোথাও ‘ঘটনা হালকা’ করার প্রয়াস চালিয়েছেন, কোথাও ‘দেখছি’ এখনো ‘অভিযোগ পাইনি’ ইত্যাদি দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে।এর আগে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেমের গাড়ীবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি গাড়ী ভাঙচুর করা হয়। তিনি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। ঢাকা-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীও নির্বাচন কমিশনে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন।
গতকালও ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার সিইসি কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেন। মিলার নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে সব দল যাতে প্রচারণায় সমান সুযোগ পান সে ব্যাপারে ইসির ভূমিকা জানতে চান। সহিসংতা গণতন্ত্রের পথে বাধা হিসেবে দাঁড়ায় উল্লেখ করে তিনি নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং সহিংসতা পরিহারের পরামর্শ দেন। ইসি থেকে জানানো হয়, সব দল যাতে সমান সুযোগে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহর ঠাকুরগাঁও জেলার দানারহাট বাজারে গেলে হামলার কবলে পড়ে। এ সময় বিএনপি মহাসচিব গাড়িতে ছিলেন। মির্জা ফখরুলের ব্যক্তিগত সচিব ইউনুস আলী জানান, দলের মহাসচিব দানারহাট বাজার যাচ্ছিলেন। সে সময় সেখানে পুলিশের একটি গাড়ি ছিল। তার দাবি পুলিশের ছত্রছায়ায় এই হামলা হয়েছে। তবে ঠাকুরগাঁও থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনী নিয়ম ভেঙে মির্জা ফখরুল বেগুনবাড়ি ইউনিয়নে গেলে এ ঘটনা ঘটে। তিনি সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেননি। নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নায়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় জনসভা করতে গেলে হামলার ঘটনা ঘটে। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ হামলার জন্য ছাত্রলীগ যুবলীগকে দায়ী করে বলেন, কবিরহাটে এসেছিলাম জনসংযোগ করতে। এখানে আমার দলের নেতা-কর্মীদের উপর উপর্যুপরি হামলার মুখে পড়ি। সরকারের লোকজন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এই হামলা করেছে। কবিরহাট থানার ওসি জানান, মওদুদ আহমদের অভিযোগ সঠিক নয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয়ায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির সমর্থকরা সিরাজগঞ্জে মিছিল বের করলে এলাকায় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর, গরুর খামারে আগুন দেওয়া হয়। কামারখন্দ থানার বিএনপির কার্যালয় ভেঙ্গে ফেলা হয়। এছাড়াও বগুড়ার ধনুটে ধানের শীষ প্রার্থীর পক্ষ্যে শোভাযাত্রায় হামলায়, বগুড়া-৫ আসনে ধানের শীষ প্রার্থীর পক্ষ্যে কাজ করায় যুবদল নেতার বাসায় হামলা-লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষিরায় ধানের শীষের পোষ্টারে আগুন দেয়া হয়, ফরিদপুরে ছাত্রদল নেতাকে কোপানো হয়, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিএনপির মিছিলে পুলিশী হামলায় ২০ জন আহত হয়। সেখান থেকে ২জনকে গ্রেফতার করা হয়। নরসিংদীতে ড. আবদুল মঈন খানের ওপর হামলা হয়।নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট বাজার জিরো পয়েন্টে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের পূর্ব ঘোষিত পথসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হামলা চালায়। এসময় সংঘর্ষে উভয় দলের ৪০ জন আহত হয়েছে। আহতের মধ্যে বিএনপির ৩০ জন এবং আওয়ামী লীগের ১০ জন রয়েছে বলে উভয় পক্ষ দাবি করেছে। হামলায় কমপক্ষে ২৫টি দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও বিএনপি অফিস ভাঙ্গচুর হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর জানান, সকাল ১১টার দিকে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের পথসভা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারের সভাস্থলে সমবেত হতে থাকে। এসময় বিএনপি সমর্থকরা জিরো পয়েন্ট থেকে একটি মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মিছিলে হামলা চালায়। এরপর শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। হামলায় কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক কামরুল হুদা লিটনসহ ২০জন নেতাকর্মী আহত হয়।কবিরহাট পৌর বিএনপি সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু জানান, তার বাড়ীসহ বিভিন্ন ব্যবস্যা প্রতিষ্টান ও বিএনপি অফিস ভাঙ্গচুর করা হয়। কবিরহাট উপজেলা জাসাসের সভাপতি আবদুস সাত্তারের বাড়ীতে গিয়ে তাকে মারধর করে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এছাড়া নরোত্তমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক আবদুর রশিদ, কবিরহাট পৌর যুবদল সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন ও কবিরহাট বিএনপি প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোমিত ফয়সল গুলিবিদ্ধ হয়। অপরদিকে পথসভায় আসার পথে ভূঁইয়ারহাট, শাহজীর হাট, কাচারি হাট, কালামুন্সী, ব্যাপারী হাটে বিএনপির মিছিলে হামলা হয় বলে বিএনপি অভিযোগ করেন। ১০ জন আহত হয়।অপরদিকে কবিরহাট উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, বিএনপির হামলায় তিনিসহ আওয়ামী লীগের ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ কবিরহাট পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও বিএনপি নেতা একরাম উদ্দিনকে আটক করে। এ রিপোর্ট লিখা পর্য্যন্ত বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ভাঙ্গচুর হচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ তার নির্ধারিত পথসভাস্থলে আসেন নি। যোগাযোগ করলে কবিরহাট থানার ওসি জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিত শান্ত রয়েছে।এদিকে, সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নে মো. হানিফ নামের এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। ঘটনায় নুরুল ইসলাম নামের আরো এক কর্মী আহত হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কাজীপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত মো. হানিফ দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের মফিজ উল্যার ছেলে। সে এওজবালিয়া ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম জানান, বিকেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা হানিফসহ এজবালিয়া ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে হানিফকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।
নোয়াখালী-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, এবিষয়ে আমি তাৎক্ষনিকভাবে নোয়াখালী জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করি। তবে যুবলীগ নেতা হানিফ কিভাবে নিহত হয়েছে তিনি জানেন না বলে জানান। সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, বিএনপির বৈঠক থেকে হানিফকে লক্ষ্য করে গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মহসিন রাজু বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী জি এম সিরাজের নির্বাচনী মোটর শোভাযাত্রায় ভয়াবহ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা একটি মাইক্রো ও জিপগাড়ীসহ ২০টি মোটর সাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় জি এম সিরাজ ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি জিপ, মাইক্রোসহ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে ধুনট বাজারে প্রবেশ করেন। শোভাযাত্রাটি বাজারের রাহাদ হোটেলের সামনে পৌঁছলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হামলায় শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা দৌড়ে আত্মরক্ষা করেন। হামলাকারীরা জিএম সিরাজের ব্যবহৃত একটি জিপগাড়ী ও একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের সময় এমপি প্রার্থী সিরাজ তার ছেলে আসিফ রব্বানী ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৌহিদুল আলম মামুন গাড়ীতে থাকলেও তারা আহত হননি।
পুলিশের সহায়তায় গাড়ীটি নিয়ে তারা ধুনট বাজার এলাকা ত্যাগ করেন। হামলার সময় অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও দুটিতে অগ্নিসংযোগ করেছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া তাদের মারপিটে মিনহাজ উদ্দিন মিঠু, জুলহাস মেম্বার, শাহাদৎ, মাসুদ, ওসমান গনি, দুলাল, সাইদুর, আলামীন, রফিক, রাশেদসহ ২০জন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে শাহাদৎ হোসেন ও মাসুদ রানাকে শেরপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে হামলা শিকার নেতাকর্মীরা হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন। এদিকে বাজারে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নৌকার সমর্থনে মিছিল করে।
ঘটনার পরপরই তাৎক্ষণিক সাংবাদিক সম্মেলনে জিএম সিরাজ অভিযোগ করেন, পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে কয়েকশত মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে ধুনট বাজারে যাই। বাজারে প্রবেশের পরপরই আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী আমার নির্বাচনীয় শোভাযাত্রায় হামলা চালায়। তারা দা, কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে আমার ব্যক্তিগত একটি মাইক্রো ও একটি জিপ গাড়ীসহ অন্তত ৫০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ২০জন নেতাকর্মীকে আহত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি ঘটনার বিচার দাবী করেছেন। খবর পেয়ে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার গাজীউর রহমান এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া সুলতানা হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উপস্থিত হয়ে আহতদের সাথে কথা বলেছেন ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন।এদিকে, ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউপির রাঙামাটি গ্রামের ধানের শীষের সক্রিয় কর্মী মুরাদ হোসেনকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ নাকরার জন্য মৌখিকভাবে হুমকি দেয়া হলেও সে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে থাকলে গত সোমবার মাঝরাতে তার বাড়িতে নারকীয় হামলা ভাংচুর ও লুটতরাজ করা হয় । প্রাণ বাঁচাতে মুরাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেলে তার বসতবাড়ির দুটি ঘরের সবকিছু তছনছ ও লুটপাট করে আগুন লাগিয়ে দিয়ে হামলাকারীরা বীরদর্পে চলে যায়। যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা সবাইকে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে হয় নৌকার হয়ে কাজ করার নয় এলাকা ছাড়ার পরামর্শ দেয়।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহে ৩টি আসনের বিএনপির নির্বাচনী গণসংযোগ-মিছিল ও কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থীরা। এ সময় নির্বাচনী কার্যালয়-প্রার্থীর গাড়ী ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। মঙ্গলবার পৃথক পৃথক এসব হামলায় আহত হয়েছে প্রার্থী জাকির হোসেন বাবলুসহ কমপক্ষে ৩৫ জন নেতা-কর্মী। মুক্তাগাছা আসনের ধানের শীষের প্রার্থী জাকির হোসেন বাবলু জানান, বিকেলে গনসংযোগকালে উপজেলার ৪নং কুমারগাতা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা অতর্কিত হামলা চালালিয়ে আমার গাড়ী সহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এতে আমি ও ড্রাইভার আব্দুল্লাহ সহ প্রায় ১০ নেতা-কর্মী। তবে বিষয়টি অবগত নন বলে জানান মুক্তাগাছা থানার ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লা। অপরদিকে ভালুকা উপজেলার বাটাজোড় বাজার এলাকায় বিএনপির প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা করে ভাংচুর করেছে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা। ৯ নং কাচিনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মনসুরের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে দাবি করেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এ সময় নির্বাচনী কার্যালয়ের চেয়ার টেবিল-টিভি ও আলমারী ভাংচুর করা হয়। এতে ৫ নেতা-কর্মী আহত হয় বলে জানান ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা আসনে বিএনপির প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুর সমর্থকরা।
ঘটনরার সত্যতা স্বীকার করে ভালুকা থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, পোস্টার ছেঁড়ে ফেলা এবং পাল্টাপাল্টি মিছিলকে কেন্দ্র করে একটু গন্ডগোল হয়েছে। তবে এটা বড় কিছু না। এছাড়াও জেলার ফুলপুর উপজেলার বাসষ্ট্যান্ড এলাকা গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ধানের শীষ ও নৌকা সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের বেশ কিছু স্থানে আওয়ামীলীগ-বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে উভয় দলের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ২টি ককটেল বিস্ফোরণ ও বাড়ীঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার সন্ধ্যার আগে সদর উপজেলার চক শিয়ালকোল, সারটিয়া ও ধুকুরিয়া এলাকায় এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাইকোর্টের রায়ে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণার খবরে দিয়ার বৈদ্যনাথ এলজিইডি মোড়ে মিছিল করছিল বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা করলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চার্লি, বিএনপি কর্মী শফিকুল ইসলাম, রেজাউল কামরুল পান্নাসহ ৯ জন আহত হয়। পরে ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক জিবরাইল হোসেনের বাড়ীঘর ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অপরদিকে ধুকুরিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল করার সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানুকে মারপিট করে আহত করেছে বলে অভিযোগ করেছে আ.লীগের নেতাকর্মীরা। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ জানান, সংঘর্ষের খবর আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ আমাদের অবহিত করে নাই
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করার অপরাধে ফরিদপুরে ফিরোজ সরদার (২৫) নামে এক ছাত্রদল নেতাকে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে যেয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাজবাড়ি রাস্তার মোড়ে অবস্থিত মুখ ও বধির স্কুল ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। ২৫ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী একযোগে এ হামলা চালায়। এ ঘটনায় একটি ছাত্র সংগঠনের প্রভাবশালী এক ছাত্রনেতার জড়িত বলে জানা গেছে। আহত ফিরোজ কোতয়ালী থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কৈজুরী ইউনিয়নের তুলাগ্রামের জনৈক সেলিম সরদারের ছেলে। সে ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটিতে এলএলবিতে অধ্যয়নরত। তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে রাতেই নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এ ঘটনার তিব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে তিনজনের উপর একইভাবে হামলা করা হলো। প্রশাসন যদি সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে না পারে তবে আমাদের নেতাকর্মীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না? আমরা মাঠে নামলে ফরিদপুর কুরুক্ষেত্রে পরিণত হবে। তিনি এব্যাপারে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফরিদপুরের জেলা উম্মে সালমা তানজিয়া এবং পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খানের নিকট মোবাইলে এসব হামলার অভিযোগ জানান।
ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। ৫টি গাড়ি ভাংচুর করেছে দূর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মির্জা ফখরুলে সফরে থাকা বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে দানারহাট নামক এলাকায় এঘটনা ঘটে।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, ঢাকা থেকে বিমান যোগে সকাল পনে এগারটায় নীলফামারী বিমান বন্দরে অবতর করেন মির্জা ফখরুল। এসময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তার সফর সঙ্গী হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্যোশে রওনা হন। পরে দুপুরে সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট বাজার এলাকায় গাড়ি বহরটি পৌছালে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় দূর্বৃত্তরা। উপায় না পেয়ে পাশেই অবস্থান নেয় মির্জা ফখরুলসহ দলের নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। দীর্ঘক্ষন পর প্রশাসনের স্কটে মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়ি বহরটি শহর পর্যন্ত পৌছে দেন।
এসময় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আমরা শান্তিপুর্নভাবে নির্বাচন করতে চাই। কিন্তু আওয়ামীলীগের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালিয়ে। তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তারা মনে করছেন আমরা নির্বাচন থেকে সড়ে যাবো। আমরা কোন মতেই নির্বাচন থেকে সরে যাবো না। নির্বাচন আমরা করবোই। সেই সাথে দোষী ব্যাক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আর আইনশৃংখলা বাহিনীকে আরো সজাগ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী জনসভা উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার বেশকয়েকটি স্থানে পথসভা ও জনসভায় যোগ দেয়াসহ দুদিনের সফরে ঠাকুরগাঁওয়ে আসেন মির্জা ফখরুল। সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরার-২ (সদর) আসনের বৈকারি ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকের বিপুল সংখ্যক পোস্টার পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এসময় কয়েকটি বাড়িতে হামলা, দোকান ভাংচুর ও বিএনপি সমর্থক কয়েক ব্যক্তিকে মারপিটও করা হয়েছে। সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম সরোয়ার সাংবাদিকদের জানান সোমবার সন্ধ্যায় তাদের কর্মী সমর্থকরা বৈকারি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগানোর চেষ্টা করছিলো। এ সময় একদল যুবক কাথন্ডা বাজার ও নাপিতঘাটা এলাকায় ধানের শীষের পোস্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময়ে তারা নূরুল মুন্সি, সাবেক ইউপি সদস্য জালাল ও খালেক হাজরার বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারপিট করে। পরে সন্ত্রাসীরা নাপিতঘাটায় একটি সারের দোকান তছনছ করে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে ও যুবলীগ নেতা ইনজামামুল ইসলাম ইঞ্জার নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে ইনজামামুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্থ জালাল মেম্বরসহ তিনজনকে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লোহাগড়া (নড়াইল) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল -২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এর লোহাগড়াস্থ নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর ও কর্মীসভা পন্ড হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বিকালে লোহাগড়া বাজারের শীতলা মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের ধানের শীষ প্রতীকের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর ও উক্ত সময়ে তার পূর্বনির্ধারিত কর্মীসভা পন্ড হয়েছে বলে তিনি তার বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান। ফরিদুজ্জামামান আরো জানান- ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক রাশেদুলের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন যুবক লাঠি-সোটা নিয়ে অতর্কিতে আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালায়’। এসময় তারা সন্ত্রাসী কায়দায় অফিসের চেয়ার., টেবিল,ফ্যান ও টেলিভিশন ভাংচুর করে এবং অফিসে টানানো ব্যানার ছিড়ে ফেলে। তিনি এ বিষয়টি জেলা রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার এবং লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন বলেও জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জি এম নজরুল ইসলাম, আকরামুজ্জামান মিলু, বিএনপি নেতা টিপু সুলতান , কাজি সুলতানুজ্জামান সেলিম ,যুবদল নেতা মাহমুদ প্রমুখ। এব্যাপারে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এখনও কেউ লিখিত কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পথে পথে হামলা

আপলোড টাইম : ১০:৪৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

সমীকরণ ডেস্ক: প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর প্রথম দিনেই ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ওপর পথে পথে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং নেতাকর্মীদের মারপিট করা হয়। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের গাড়ীবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সারাদেশে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে ব্যাপক প্রচারণা চালালেও ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নড়াইল, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালীতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলার ঘটনা ঘটে। কোথাও পথসভা পন্ড করে দেয়া হয়, কোথাও ভাঙচুর-লুটপাট-গাড়ী বহরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা পক্ষপাতিত্বমূলক ছিল বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কোথাও হামলাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, কোথাও ‘ঘটনা হালকা’ করার প্রয়াস চালিয়েছেন, কোথাও ‘দেখছি’ এখনো ‘অভিযোগ পাইনি’ ইত্যাদি দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে।এর আগে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেমের গাড়ীবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি গাড়ী ভাঙচুর করা হয়। তিনি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। ঢাকা-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীও নির্বাচন কমিশনে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন।
গতকালও ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার সিইসি কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেন। মিলার নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে সব দল যাতে প্রচারণায় সমান সুযোগ পান সে ব্যাপারে ইসির ভূমিকা জানতে চান। সহিসংতা গণতন্ত্রের পথে বাধা হিসেবে দাঁড়ায় উল্লেখ করে তিনি নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং সহিংসতা পরিহারের পরামর্শ দেন। ইসি থেকে জানানো হয়, সব দল যাতে সমান সুযোগে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহর ঠাকুরগাঁও জেলার দানারহাট বাজারে গেলে হামলার কবলে পড়ে। এ সময় বিএনপি মহাসচিব গাড়িতে ছিলেন। মির্জা ফখরুলের ব্যক্তিগত সচিব ইউনুস আলী জানান, দলের মহাসচিব দানারহাট বাজার যাচ্ছিলেন। সে সময় সেখানে পুলিশের একটি গাড়ি ছিল। তার দাবি পুলিশের ছত্রছায়ায় এই হামলা হয়েছে। তবে ঠাকুরগাঁও থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনী নিয়ম ভেঙে মির্জা ফখরুল বেগুনবাড়ি ইউনিয়নে গেলে এ ঘটনা ঘটে। তিনি সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেননি। নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নায়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় জনসভা করতে গেলে হামলার ঘটনা ঘটে। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ হামলার জন্য ছাত্রলীগ যুবলীগকে দায়ী করে বলেন, কবিরহাটে এসেছিলাম জনসংযোগ করতে। এখানে আমার দলের নেতা-কর্মীদের উপর উপর্যুপরি হামলার মুখে পড়ি। সরকারের লোকজন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এই হামলা করেছে। কবিরহাট থানার ওসি জানান, মওদুদ আহমদের অভিযোগ সঠিক নয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয়ায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির সমর্থকরা সিরাজগঞ্জে মিছিল বের করলে এলাকায় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর, গরুর খামারে আগুন দেওয়া হয়। কামারখন্দ থানার বিএনপির কার্যালয় ভেঙ্গে ফেলা হয়। এছাড়াও বগুড়ার ধনুটে ধানের শীষ প্রার্থীর পক্ষ্যে শোভাযাত্রায় হামলায়, বগুড়া-৫ আসনে ধানের শীষ প্রার্থীর পক্ষ্যে কাজ করায় যুবদল নেতার বাসায় হামলা-লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষিরায় ধানের শীষের পোষ্টারে আগুন দেয়া হয়, ফরিদপুরে ছাত্রদল নেতাকে কোপানো হয়, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিএনপির মিছিলে পুলিশী হামলায় ২০ জন আহত হয়। সেখান থেকে ২জনকে গ্রেফতার করা হয়। নরসিংদীতে ড. আবদুল মঈন খানের ওপর হামলা হয়।নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট বাজার জিরো পয়েন্টে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের পূর্ব ঘোষিত পথসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হামলা চালায়। এসময় সংঘর্ষে উভয় দলের ৪০ জন আহত হয়েছে। আহতের মধ্যে বিএনপির ৩০ জন এবং আওয়ামী লীগের ১০ জন রয়েছে বলে উভয় পক্ষ দাবি করেছে। হামলায় কমপক্ষে ২৫টি দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও বিএনপি অফিস ভাঙ্গচুর হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর জানান, সকাল ১১টার দিকে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের পথসভা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারের সভাস্থলে সমবেত হতে থাকে। এসময় বিএনপি সমর্থকরা জিরো পয়েন্ট থেকে একটি মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মিছিলে হামলা চালায়। এরপর শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। হামলায় কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক কামরুল হুদা লিটনসহ ২০জন নেতাকর্মী আহত হয়।কবিরহাট পৌর বিএনপি সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু জানান, তার বাড়ীসহ বিভিন্ন ব্যবস্যা প্রতিষ্টান ও বিএনপি অফিস ভাঙ্গচুর করা হয়। কবিরহাট উপজেলা জাসাসের সভাপতি আবদুস সাত্তারের বাড়ীতে গিয়ে তাকে মারধর করে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এছাড়া নরোত্তমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক আবদুর রশিদ, কবিরহাট পৌর যুবদল সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন ও কবিরহাট বিএনপি প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোমিত ফয়সল গুলিবিদ্ধ হয়। অপরদিকে পথসভায় আসার পথে ভূঁইয়ারহাট, শাহজীর হাট, কাচারি হাট, কালামুন্সী, ব্যাপারী হাটে বিএনপির মিছিলে হামলা হয় বলে বিএনপি অভিযোগ করেন। ১০ জন আহত হয়।অপরদিকে কবিরহাট উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, বিএনপির হামলায় তিনিসহ আওয়ামী লীগের ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ কবিরহাট পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও বিএনপি নেতা একরাম উদ্দিনকে আটক করে। এ রিপোর্ট লিখা পর্য্যন্ত বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ভাঙ্গচুর হচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ তার নির্ধারিত পথসভাস্থলে আসেন নি। যোগাযোগ করলে কবিরহাট থানার ওসি জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিত শান্ত রয়েছে।এদিকে, সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নে মো. হানিফ নামের এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। ঘটনায় নুরুল ইসলাম নামের আরো এক কর্মী আহত হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কাজীপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত মো. হানিফ দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের মফিজ উল্যার ছেলে। সে এওজবালিয়া ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম জানান, বিকেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা হানিফসহ এজবালিয়া ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে হানিফকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।
নোয়াখালী-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, এবিষয়ে আমি তাৎক্ষনিকভাবে নোয়াখালী জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করি। তবে যুবলীগ নেতা হানিফ কিভাবে নিহত হয়েছে তিনি জানেন না বলে জানান। সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, বিএনপির বৈঠক থেকে হানিফকে লক্ষ্য করে গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মহসিন রাজু বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী জি এম সিরাজের নির্বাচনী মোটর শোভাযাত্রায় ভয়াবহ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা একটি মাইক্রো ও জিপগাড়ীসহ ২০টি মোটর সাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় জি এম সিরাজ ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি জিপ, মাইক্রোসহ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে ধুনট বাজারে প্রবেশ করেন। শোভাযাত্রাটি বাজারের রাহাদ হোটেলের সামনে পৌঁছলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হামলায় শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা দৌড়ে আত্মরক্ষা করেন। হামলাকারীরা জিএম সিরাজের ব্যবহৃত একটি জিপগাড়ী ও একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের সময় এমপি প্রার্থী সিরাজ তার ছেলে আসিফ রব্বানী ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৌহিদুল আলম মামুন গাড়ীতে থাকলেও তারা আহত হননি।
পুলিশের সহায়তায় গাড়ীটি নিয়ে তারা ধুনট বাজার এলাকা ত্যাগ করেন। হামলার সময় অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও দুটিতে অগ্নিসংযোগ করেছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া তাদের মারপিটে মিনহাজ উদ্দিন মিঠু, জুলহাস মেম্বার, শাহাদৎ, মাসুদ, ওসমান গনি, দুলাল, সাইদুর, আলামীন, রফিক, রাশেদসহ ২০জন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে শাহাদৎ হোসেন ও মাসুদ রানাকে শেরপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে হামলা শিকার নেতাকর্মীরা হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন। এদিকে বাজারে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নৌকার সমর্থনে মিছিল করে।
ঘটনার পরপরই তাৎক্ষণিক সাংবাদিক সম্মেলনে জিএম সিরাজ অভিযোগ করেন, পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে কয়েকশত মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে ধুনট বাজারে যাই। বাজারে প্রবেশের পরপরই আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী আমার নির্বাচনীয় শোভাযাত্রায় হামলা চালায়। তারা দা, কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে আমার ব্যক্তিগত একটি মাইক্রো ও একটি জিপ গাড়ীসহ অন্তত ৫০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ২০জন নেতাকর্মীকে আহত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি ঘটনার বিচার দাবী করেছেন। খবর পেয়ে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার গাজীউর রহমান এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া সুলতানা হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উপস্থিত হয়ে আহতদের সাথে কথা বলেছেন ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন।এদিকে, ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউপির রাঙামাটি গ্রামের ধানের শীষের সক্রিয় কর্মী মুরাদ হোসেনকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ নাকরার জন্য মৌখিকভাবে হুমকি দেয়া হলেও সে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে থাকলে গত সোমবার মাঝরাতে তার বাড়িতে নারকীয় হামলা ভাংচুর ও লুটতরাজ করা হয় । প্রাণ বাঁচাতে মুরাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেলে তার বসতবাড়ির দুটি ঘরের সবকিছু তছনছ ও লুটপাট করে আগুন লাগিয়ে দিয়ে হামলাকারীরা বীরদর্পে চলে যায়। যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা সবাইকে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে হয় নৌকার হয়ে কাজ করার নয় এলাকা ছাড়ার পরামর্শ দেয়।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহে ৩টি আসনের বিএনপির নির্বাচনী গণসংযোগ-মিছিল ও কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থীরা। এ সময় নির্বাচনী কার্যালয়-প্রার্থীর গাড়ী ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। মঙ্গলবার পৃথক পৃথক এসব হামলায় আহত হয়েছে প্রার্থী জাকির হোসেন বাবলুসহ কমপক্ষে ৩৫ জন নেতা-কর্মী। মুক্তাগাছা আসনের ধানের শীষের প্রার্থী জাকির হোসেন বাবলু জানান, বিকেলে গনসংযোগকালে উপজেলার ৪নং কুমারগাতা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা অতর্কিত হামলা চালালিয়ে আমার গাড়ী সহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এতে আমি ও ড্রাইভার আব্দুল্লাহ সহ প্রায় ১০ নেতা-কর্মী। তবে বিষয়টি অবগত নন বলে জানান মুক্তাগাছা থানার ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লা। অপরদিকে ভালুকা উপজেলার বাটাজোড় বাজার এলাকায় বিএনপির প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা করে ভাংচুর করেছে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা। ৯ নং কাচিনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মনসুরের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে দাবি করেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এ সময় নির্বাচনী কার্যালয়ের চেয়ার টেবিল-টিভি ও আলমারী ভাংচুর করা হয়। এতে ৫ নেতা-কর্মী আহত হয় বলে জানান ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা আসনে বিএনপির প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুর সমর্থকরা।
ঘটনরার সত্যতা স্বীকার করে ভালুকা থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, পোস্টার ছেঁড়ে ফেলা এবং পাল্টাপাল্টি মিছিলকে কেন্দ্র করে একটু গন্ডগোল হয়েছে। তবে এটা বড় কিছু না। এছাড়াও জেলার ফুলপুর উপজেলার বাসষ্ট্যান্ড এলাকা গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ধানের শীষ ও নৌকা সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের বেশ কিছু স্থানে আওয়ামীলীগ-বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে উভয় দলের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ২টি ককটেল বিস্ফোরণ ও বাড়ীঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার সন্ধ্যার আগে সদর উপজেলার চক শিয়ালকোল, সারটিয়া ও ধুকুরিয়া এলাকায় এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাইকোর্টের রায়ে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণার খবরে দিয়ার বৈদ্যনাথ এলজিইডি মোড়ে মিছিল করছিল বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা করলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চার্লি, বিএনপি কর্মী শফিকুল ইসলাম, রেজাউল কামরুল পান্নাসহ ৯ জন আহত হয়। পরে ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক জিবরাইল হোসেনের বাড়ীঘর ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অপরদিকে ধুকুরিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল করার সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানুকে মারপিট করে আহত করেছে বলে অভিযোগ করেছে আ.লীগের নেতাকর্মীরা। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ জানান, সংঘর্ষের খবর আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ আমাদের অবহিত করে নাই
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করার অপরাধে ফরিদপুরে ফিরোজ সরদার (২৫) নামে এক ছাত্রদল নেতাকে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে যেয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাজবাড়ি রাস্তার মোড়ে অবস্থিত মুখ ও বধির স্কুল ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। ২৫ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী একযোগে এ হামলা চালায়। এ ঘটনায় একটি ছাত্র সংগঠনের প্রভাবশালী এক ছাত্রনেতার জড়িত বলে জানা গেছে। আহত ফিরোজ কোতয়ালী থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কৈজুরী ইউনিয়নের তুলাগ্রামের জনৈক সেলিম সরদারের ছেলে। সে ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটিতে এলএলবিতে অধ্যয়নরত। তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে রাতেই নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এ ঘটনার তিব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে তিনজনের উপর একইভাবে হামলা করা হলো। প্রশাসন যদি সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে না পারে তবে আমাদের নেতাকর্মীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না? আমরা মাঠে নামলে ফরিদপুর কুরুক্ষেত্রে পরিণত হবে। তিনি এব্যাপারে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফরিদপুরের জেলা উম্মে সালমা তানজিয়া এবং পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খানের নিকট মোবাইলে এসব হামলার অভিযোগ জানান।
ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। ৫টি গাড়ি ভাংচুর করেছে দূর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মির্জা ফখরুলে সফরে থাকা বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে দানারহাট নামক এলাকায় এঘটনা ঘটে।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, ঢাকা থেকে বিমান যোগে সকাল পনে এগারটায় নীলফামারী বিমান বন্দরে অবতর করেন মির্জা ফখরুল। এসময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তার সফর সঙ্গী হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্যোশে রওনা হন। পরে দুপুরে সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট বাজার এলাকায় গাড়ি বহরটি পৌছালে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় দূর্বৃত্তরা। উপায় না পেয়ে পাশেই অবস্থান নেয় মির্জা ফখরুলসহ দলের নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। দীর্ঘক্ষন পর প্রশাসনের স্কটে মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়ি বহরটি শহর পর্যন্ত পৌছে দেন।
এসময় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আমরা শান্তিপুর্নভাবে নির্বাচন করতে চাই। কিন্তু আওয়ামীলীগের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালিয়ে। তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তারা মনে করছেন আমরা নির্বাচন থেকে সড়ে যাবো। আমরা কোন মতেই নির্বাচন থেকে সরে যাবো না। নির্বাচন আমরা করবোই। সেই সাথে দোষী ব্যাক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আর আইনশৃংখলা বাহিনীকে আরো সজাগ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী জনসভা উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার বেশকয়েকটি স্থানে পথসভা ও জনসভায় যোগ দেয়াসহ দুদিনের সফরে ঠাকুরগাঁওয়ে আসেন মির্জা ফখরুল। সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরার-২ (সদর) আসনের বৈকারি ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকের বিপুল সংখ্যক পোস্টার পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এসময় কয়েকটি বাড়িতে হামলা, দোকান ভাংচুর ও বিএনপি সমর্থক কয়েক ব্যক্তিকে মারপিটও করা হয়েছে। সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম সরোয়ার সাংবাদিকদের জানান সোমবার সন্ধ্যায় তাদের কর্মী সমর্থকরা বৈকারি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগানোর চেষ্টা করছিলো। এ সময় একদল যুবক কাথন্ডা বাজার ও নাপিতঘাটা এলাকায় ধানের শীষের পোস্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময়ে তারা নূরুল মুন্সি, সাবেক ইউপি সদস্য জালাল ও খালেক হাজরার বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারপিট করে। পরে সন্ত্রাসীরা নাপিতঘাটায় একটি সারের দোকান তছনছ করে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে ও যুবলীগ নেতা ইনজামামুল ইসলাম ইঞ্জার নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে ইনজামামুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্থ জালাল মেম্বরসহ তিনজনকে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লোহাগড়া (নড়াইল) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল -২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এর লোহাগড়াস্থ নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর ও কর্মীসভা পন্ড হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বিকালে লোহাগড়া বাজারের শীতলা মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের ধানের শীষ প্রতীকের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর ও উক্ত সময়ে তার পূর্বনির্ধারিত কর্মীসভা পন্ড হয়েছে বলে তিনি তার বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান। ফরিদুজ্জামামান আরো জানান- ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক রাশেদুলের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন যুবক লাঠি-সোটা নিয়ে অতর্কিতে আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালায়’। এসময় তারা সন্ত্রাসী কায়দায় অফিসের চেয়ার., টেবিল,ফ্যান ও টেলিভিশন ভাংচুর করে এবং অফিসে টানানো ব্যানার ছিড়ে ফেলে। তিনি এ বিষয়টি জেলা রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার এবং লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন বলেও জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জি এম নজরুল ইসলাম, আকরামুজ্জামান মিলু, বিএনপি নেতা টিপু সুলতান , কাজি সুলতানুজ্জামান সেলিম ,যুবদল নেতা মাহমুদ প্রমুখ। এব্যাপারে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এখনও কেউ লিখিত কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।