ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পণ্য বাজারে নৈরাজ্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০১:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৬৪ বার পড়া হয়েছে

এক বছরে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ১০-১৪ টাকা তেল নাগালের বাইরে, বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
পণ্য বাজারে চলছে নৈরাজ্য। এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে ১০ থেকে ১৪ টাকা দাম বেড়েছে। ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চালে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দাম বেড়েছে। চালের এই অস্বাভাবিক দামের জবাব নেই খোদ বিক্রেতাদের কাছেও। বিক্রেতারা বলেছেন, যা-ই হোক এত টাকা দাম বাড়তে পারে না। এর পেছনে কোনো কারসাজি আছে। চাল আমদানি করেও চালের বাজারের লাগামহীন ঘোড়ার রশি টানা যাচ্ছে না। এ দিকে চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যে ক্রেতারা দিশেহারা। কয়েক টাকা কম মূল্যে চাল কেনার জন্য যে কারণে ওএমএসের দোকানগুলোতে ভিড় জমছে ক্রেতাদের। এক বছর আগে চালের দাম কত ছিল এবং বর্তমানে কত দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি তুলনামূলক চিত্র গতকাল পাওয়া যায় পাইকারি চাল বিক্রেতাদের কাছ থেকে। ২০২০ সালের এই দিনে মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২৫০ থেকে দুই হাজার ৩৫০ টাকা।
গতকাল শুক্রবার সেই চাল বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৯০০ থেকে তিন হাজার ২০ টাকায়। আটাশ চাল ২০২০ সালে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৬৫০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায়। গতকাল সেই চালের বস্তা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪৫০ টাকায়। ২০২০ সালে আতব মোটা চাল বিক্রি হয়েছে বস্তা এক হাজার ৩০০ টাকা। গতকাল সেই চাল বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৯৫০ থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা। ২০২০ সালে স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা বস্তা, গুঁটি এক হাজার ৩৫০, হাস্কি এক হাজার ৬০০, নাজিরশাইল দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪০০, চিনিগুঁড়া চার হাজার ৫০০ আর বাশমতি বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৬০০ টাকায়। গতকাল স্বর্ণা চালের বস্তা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২২০ টাকা, গুঁটি দুই হাজার ১০০ টাকা, হাস্কি দুই হাজার ৪০০ টাকা, নাজিরশাইল তিন হাজার ১০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা, বাশমতি তিন হাজার ২৫০ টাকা, আর চিনিগুঁড়া বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৮০০ থেকে চার হাজার ৭০০ টাকায় ৫০ কেজির বস্তা। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে বস্তা প্রতি আরো ২০০-৩০০ টাকা বেশি। আর অলিগলির দোকানে আরো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে গতকাল দেখা গেছে, পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি। ওই সব দোকানে যে যেভাবে পারছেন দাম রাখছেন। ছিদ্দিকুর রহমান নামের এক ক্রেতা গতকাল বলেন, দোকানিরা যেন পাল্লা দিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। কে কত রাখছে, কে বেশি রাখছে; আর কে কম রাখছেন ক্রেতারা সেই হিসাবও রাখতে পারছেন না। টঙ্গীবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শাহ আলম গতকাল বলেন, চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যের কারণ তাদের কাছেও অজানা। অতীতে এমন কোনো দিন হয়নি। সরকার চেষ্টা করেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। চাল আমদানি হচ্ছে। কিন্তু তার পরও দাম কমছে না। তিনি বলেন, ভারত থেকে যে চাল এসেছে সেসব চালের বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম আছে দেশী চালের চেয়ে। শাহ আলম বলেন, ভারত থেকে যে দিন চাল এ দেশে এসেছে ঠিক সেই দিনই মিল মালিকরা কেজিতে দেশী চাল ৩ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিকে কারসাজি মনে করছেন চাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতা শাহ আলম। তিনি বলেন, মিল মালিকরা বলছেন ধানের দাম বেশি, তাই চালের দামও বেশি। ধানের দাম বেশি হলেও চালের দাম অত বেশি হওয়ার কথা নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মিল মালিক মহিদুল ইসলাম খান বলেন, চালের মূল্য বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে ধানের দাম বেড়েছে। গত বছর এই দিনে চিকন ধানের মণ ছিল ১১ শ’ টাকা। অথচ এবার সেই ধান কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৫২০ টাকায়। মোটা ধান ছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সেই ধান কিনতে হচ্ছে এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। তিনি বলেন, বাড়তি দাম দিয়েও ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এক গাড়ি ধানের জন্য দু-তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়। মহিদুল ইসলাম বলেন, ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। না হলে তো মূল্য বৃদ্ধির অন্য কোনো কারণ নেই।
এ দিকে চালের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষ। সেকান্দার শিকদার নামের এক ক্রেতা গতকাল জানান, করোনার কারণে তার বেতন কমেছে শতকরা ৩০ ভাগ। এ সামান্য বেতনে এমনিতেই সংসার চালাতে দিশেহারা। এত দিন ভাবনা ছিল সবজি আর পেঁয়াজ, আলু নিয়ে। এখন চাল নিয়ে। ওএমএস শপে গিয়ে লাইন দেবেন তাও পারছেন না। খাওয়া কমাবেন তাও পারছেন না। এ দিকে ওএমএস দোকানগুলোতে ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার মানিকনগরের একটি ওএমএস দোকানে দেখা যায় দোকান খোলার আগেই কম হলেও এক শ’ নারী লাইন দিয়ে আছেন। ওই দোকানে দিনভর লাইন লক্ষ করা যায়।
বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ গতকাল বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি চাল উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তা হলে তো দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।’ পলাশ বলেন, কৃষকের উৎপাদন ব্যয় তেমন বাড়েনি। সরবরাহ খরচা তেমন বাড়েনি। কাজেই চালের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, সরকারের যে অথরিটি বাজার দেখার জন্য রয়েছে হয়তো তারা গুদামজাতকারীদের কাছে জিম্মি না হলে বিক্রি হয়ে গেছে; যে কারণে বাজারের এ অবস্থা। তারা যদি ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করেন, তবে পরিস্থিতি এত খারাপ হওয়ার কথা নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পণ্য বাজারে নৈরাজ্য

আপলোড টাইম : ১১:০১:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

এক বছরে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ১০-১৪ টাকা তেল নাগালের বাইরে, বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
পণ্য বাজারে চলছে নৈরাজ্য। এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে ১০ থেকে ১৪ টাকা দাম বেড়েছে। ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চালে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দাম বেড়েছে। চালের এই অস্বাভাবিক দামের জবাব নেই খোদ বিক্রেতাদের কাছেও। বিক্রেতারা বলেছেন, যা-ই হোক এত টাকা দাম বাড়তে পারে না। এর পেছনে কোনো কারসাজি আছে। চাল আমদানি করেও চালের বাজারের লাগামহীন ঘোড়ার রশি টানা যাচ্ছে না। এ দিকে চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যে ক্রেতারা দিশেহারা। কয়েক টাকা কম মূল্যে চাল কেনার জন্য যে কারণে ওএমএসের দোকানগুলোতে ভিড় জমছে ক্রেতাদের। এক বছর আগে চালের দাম কত ছিল এবং বর্তমানে কত দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি তুলনামূলক চিত্র গতকাল পাওয়া যায় পাইকারি চাল বিক্রেতাদের কাছ থেকে। ২০২০ সালের এই দিনে মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২৫০ থেকে দুই হাজার ৩৫০ টাকা।
গতকাল শুক্রবার সেই চাল বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৯০০ থেকে তিন হাজার ২০ টাকায়। আটাশ চাল ২০২০ সালে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৬৫০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায়। গতকাল সেই চালের বস্তা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪৫০ টাকায়। ২০২০ সালে আতব মোটা চাল বিক্রি হয়েছে বস্তা এক হাজার ৩০০ টাকা। গতকাল সেই চাল বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৯৫০ থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা। ২০২০ সালে স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা বস্তা, গুঁটি এক হাজার ৩৫০, হাস্কি এক হাজার ৬০০, নাজিরশাইল দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪০০, চিনিগুঁড়া চার হাজার ৫০০ আর বাশমতি বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৬০০ টাকায়। গতকাল স্বর্ণা চালের বস্তা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২২০ টাকা, গুঁটি দুই হাজার ১০০ টাকা, হাস্কি দুই হাজার ৪০০ টাকা, নাজিরশাইল তিন হাজার ১০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা, বাশমতি তিন হাজার ২৫০ টাকা, আর চিনিগুঁড়া বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৮০০ থেকে চার হাজার ৭০০ টাকায় ৫০ কেজির বস্তা। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে বস্তা প্রতি আরো ২০০-৩০০ টাকা বেশি। আর অলিগলির দোকানে আরো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে গতকাল দেখা গেছে, পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি। ওই সব দোকানে যে যেভাবে পারছেন দাম রাখছেন। ছিদ্দিকুর রহমান নামের এক ক্রেতা গতকাল বলেন, দোকানিরা যেন পাল্লা দিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। কে কত রাখছে, কে বেশি রাখছে; আর কে কম রাখছেন ক্রেতারা সেই হিসাবও রাখতে পারছেন না। টঙ্গীবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শাহ আলম গতকাল বলেন, চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যের কারণ তাদের কাছেও অজানা। অতীতে এমন কোনো দিন হয়নি। সরকার চেষ্টা করেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। চাল আমদানি হচ্ছে। কিন্তু তার পরও দাম কমছে না। তিনি বলেন, ভারত থেকে যে চাল এসেছে সেসব চালের বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম আছে দেশী চালের চেয়ে। শাহ আলম বলেন, ভারত থেকে যে দিন চাল এ দেশে এসেছে ঠিক সেই দিনই মিল মালিকরা কেজিতে দেশী চাল ৩ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিকে কারসাজি মনে করছেন চাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতা শাহ আলম। তিনি বলেন, মিল মালিকরা বলছেন ধানের দাম বেশি, তাই চালের দামও বেশি। ধানের দাম বেশি হলেও চালের দাম অত বেশি হওয়ার কথা নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মিল মালিক মহিদুল ইসলাম খান বলেন, চালের মূল্য বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে ধানের দাম বেড়েছে। গত বছর এই দিনে চিকন ধানের মণ ছিল ১১ শ’ টাকা। অথচ এবার সেই ধান কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৫২০ টাকায়। মোটা ধান ছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সেই ধান কিনতে হচ্ছে এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। তিনি বলেন, বাড়তি দাম দিয়েও ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এক গাড়ি ধানের জন্য দু-তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়। মহিদুল ইসলাম বলেন, ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। না হলে তো মূল্য বৃদ্ধির অন্য কোনো কারণ নেই।
এ দিকে চালের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষ। সেকান্দার শিকদার নামের এক ক্রেতা গতকাল জানান, করোনার কারণে তার বেতন কমেছে শতকরা ৩০ ভাগ। এ সামান্য বেতনে এমনিতেই সংসার চালাতে দিশেহারা। এত দিন ভাবনা ছিল সবজি আর পেঁয়াজ, আলু নিয়ে। এখন চাল নিয়ে। ওএমএস শপে গিয়ে লাইন দেবেন তাও পারছেন না। খাওয়া কমাবেন তাও পারছেন না। এ দিকে ওএমএস দোকানগুলোতে ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার মানিকনগরের একটি ওএমএস দোকানে দেখা যায় দোকান খোলার আগেই কম হলেও এক শ’ নারী লাইন দিয়ে আছেন। ওই দোকানে দিনভর লাইন লক্ষ করা যায়।
বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ গতকাল বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি চাল উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তা হলে তো দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।’ পলাশ বলেন, কৃষকের উৎপাদন ব্যয় তেমন বাড়েনি। সরবরাহ খরচা তেমন বাড়েনি। কাজেই চালের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, সরকারের যে অথরিটি বাজার দেখার জন্য রয়েছে হয়তো তারা গুদামজাতকারীদের কাছে জিম্মি না হলে বিক্রি হয়ে গেছে; যে কারণে বাজারের এ অবস্থা। তারা যদি ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করেন, তবে পরিস্থিতি এত খারাপ হওয়ার কথা নয়।