ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার প্রতিশ্রুতিতেই প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ইমরান খান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪০:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুলাই ২০১৮
  • / ৪৩৭ বার পড়া হয়েছে

পাকিস্তানের ভোটে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে ভারত!
ডেস্ক রিপোর্ট: পাকিস্তানের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফল এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে জানা যায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব ছাপিয়ে পাকিস্তানের নির্বাচনের ম্যান অব দ্য ম্যাচ ইমরান খানই। ক্রিকেটের মহাতারকা এখন ক্ষমতার মসনদে। পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)। সর্বশেষ খবর অনুসারে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তার দল ১২০টি আসনে জয়লাভ করেছে। পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী বা অন্য ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে তার সরকার গঠন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এছাড়া, গতকাল বিকালে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নিজের দলের বিজয় ঘোষণা করেছেন ইমরান খান। তিনি বলেন, জনগণ পিটিআইকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ইমরান খানই হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। ক্রিকেটে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেয়া ইমরান খান এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতেও তার সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করলেন। ২২ বছর ধরে সংগ্রামের পর নিজের দলকে বসালেন ক্ষমতার মসনদে।
অবশ্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) অন্য প্রধান দলগুলোও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনেছে। এর প্রতিবাদে তারা শিগগিরই সর্বদলীয় বৈঠকের চিন্তা করছে। সব মিলিয়ে ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তানের’ স্বপ্নকে পার্লামেন্টের ভেতরে-বাইরে লড়াই করতে হবে।
গত বুধবার দেশটির ১১তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ২৪ ঘণ্টা পরও ফল প্রকাশ করতে পারেনি বিতর্কের মুখে থাকা পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির গণমাধ্যম ডন জানায়, সর্বশেষ ৪৯ শতাংশ ভোটকেন্দ্রের গণনা শেষে পাকিস্তান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ২৭২টি আসনের মধ্যে ১৯৪টি আসনের বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়। এতে ‘সেনা আনুকূল্য পাওয়া’ ইমরান খানের পিটিআই ৯৮টি আসনে জয়লাভ এবং ২২টি আসনে এগিয়ে ছিল। জয়লাভসহ মোট ১২০টি আসনে অগ্রগামী ছিল পিটিআই। পিএমএল-এন ৪৯টি আসনে জয়লাভসহ মোট ৬১টি আসনে অগ্রগামী ছিল। পিপিপি ২৩ আসনে জয়লাভসহ এগিয়ে থাকে মোট ৪০টি আসনে। ধর্মভিত্তিক দল মুত্তাহিদা মজলিস-ই-আমল তিনটি আসনে জয়লাভসহ মোট আটটি আসনে এবং মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট আটটি আসনে এগিয়ে থাকে। ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়লাভসহ মোট ১৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি একটি, বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) দুটি, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়দে দুটি আসনে জয়লাভ করে।
এদিকে, ইমরান জিতলে লাভ না ক্ষতি সে হিসাব কষছে প্রতিবেশী ভারত। বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল দফায় দফায় রিপোর্ট নিচ্ছেন ‘র’ এবং আইবির কাছ থেকে। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের লাভ না লোকসান, শুরু হয়ে গেছে সেই মূল্যায়ন। র-এর সাবেক কর্মকর্তা রানা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, ইমরান গদিতে বসলে তিনি হবেন পাকসেনার ‘রোবট’। সেটি একদিক থেকে ভারতের জন্য শাপেবর হতে পারে।
গোয়েন্দাদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, ইমরানের সরকার কার্যত সেনা নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার হবে। গণতন্ত্র থাকবে শুধু নামেই। সে ক্ষেত্রে মূলত নওয়াজ শরিফের পুরনো ভোটব্যাংক পাক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ও সার্বিকভাবে দেশের আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থেও অস্থিরতা চাইবে না পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। বরং সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রাখার দায় থাকবে সেনার ওপরেই। নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ। তার পরে একাধিক বৈঠক হয় দুই নেতার। নওয়াজের মেয়ের বিয়েতেও প্রটোকল ভেঙে গিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু ভারতের কোনো কথাই রাখেনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। গোয়েন্দাদের অনেকের মতে, ইমরান ক্ষমতায় এলে সেনার সঙ্গেই সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করতে পারে দিল্লি।
কূটনীতিকদের একটি বড় অংশ যদিও বলছেন, সেনাবাহিনীর শাসন যদি এত ভালোই হয়, তা হলে নির্বাচনের প্রহসন কেন? আদালত থেকে আইএসআই, সবই তো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
২০১৩ সালে যখন সন্ত্রাসবাদ চরমে, তখন পাক ভোটে নামানো হয়েছিল ৭০ হাজার সেনা। আর বুধবারের ভোটে তিন লাখ ৭০ হাজার সেনা!
নির্বাচন কমিশন সেনা অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। ফলে বুথে ঢুকে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ছাড়পত্র ছিল তাদের। ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিবার এক মাসেরও বেশি আগে পাকিস্তানে পৌঁছায়। এবার তাদের সেই অনুমতিই দেয়া হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। গোয়েন্দারা বলছেন, ইমরান একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে তাকে পিপিপির সঙ্গে সমঝোতা করতে বলতে পারে সামরিক বাহিনী।
ভোট প্রচারে পিপিপি নেতা আসিফ আলি জারদারির দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রচার করেছেন ইমরান। সরকার গড়তে জারদারির সঙ্গে হাত মেলানোটা তাই অস্বস্তিকর।
তবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান হয়তো তাও মেনে নেবেন বাধ্য হয়ে। নওয়াজের দলকে রুখতে মরিয়া সেনা প্রথমে অবশ্য চাইবে, তেহরিক-এ-ইনসাফের সঙ্গে ছোট ছোট মুসলিম দল আর স্বতন্ত্রদের মিলিয়ে সরকার গঠন করে নিতে! তাতে যদি না হয়, শেষ বিকল্প পিপিপি।
গোয়েন্দারা তাই বলছেন, পুরোপুরি সেনাবাহিনীর শাসন বরং ভালো। কারণ বর্তমান অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করা ভারতের কূটনীতিকদের জন্য জটিলই বটে।
ভারতে কর্মরত পাক হাইকমিশনার সোহেল মেহমুদ বলেছেন, পাক নির্বাচনে ভারত কোনো বিষয় নয়। এবার ভারতও দেখল, এই ভোটে কোনোভাবেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসেনি। গোটা বিষয়টিকে ইতিবাচক বলেই মনে করছে ভারত।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, পাকিস্তানের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া তেহরিকে ইনসাফ পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খান। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র স্বপ্নের পাকিস্তান গড়ার প্রত্যায় জানান তিনি। সিএনএন, ডন। ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। এত বেশি ঋণ কখনও পাকিস্তানের ছিল না। দুর্নীতির কারণে প্রবাসীরা দেশের মাটিতে বিনিয়োগ করছে না। ফলে চাকরি পাচ্ছে তরুণরা। এর সমাধান করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার ঘোষণা দেন ইমরান খান। ‘আমি পুরো পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখবো। রাজনৈতিক কারণে কেউ প্রতিহিংসার শিকার হবে না। আইন ধনী-গরীব সবার জন্য সমানভাবে কাজ করবে।’ বলেন পাকিস্তানের হবু প্রধানমন্ত্রী।
জিন্নাহ’র স্বপ্নের পাকিস্তন গড়ার অঙ্গীকার ইমরানের : পিটিআই প্রধান ইমরান খান এমন পাকিস্তান গড়তে চান, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশটির স্থপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। সরকার গঠনের পর তার দল এই ভিশন নিয়েই দেশ পরিচালনা করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এমনটিই বলেছেন হবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, দুই দশক আগে তিনি যে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন, দীর্ঘ ২২ বছরের সংগ্রামের পর অবশেষে বাস্তবায়ন করার সুযোগ পেয়েছেন। তার ভাষায়, ‘কেন আমি রাজনীতিতে এসেছি তা পরিষ্কার করতে চাই। রাজনীতি আমাকে কিছু নাও দিতে পারতো। কিন্তু আমি সবসময় পাকিস্তানকে এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছি, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমার মহান নেতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আমি বিশেষ করে বেলুচিস্তানের মানুষদের সাধুবাদ জানাতে চাই। ভয়াবহ সহিংসতা ও মর্মান্তিক ভোগান্তির শিকার হওয়ার পরেও তারা ভোট দিয়েছেন, গোটা দেশের পক্ষ থেকে আমি তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই। এই নির্বাচনের জন্য অনেক মানুষ ত্যাগ স্বীকার করেছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীকেও আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। বর্তমানে আমাদের দেশ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। কৃষকরা তাদের শ্রমের মূল্য পান না, ২ কোটি ৫০ লাখ শিশু শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত, পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবার অভাবে আমাদের প্রসূতি মায়েরা অব্যাহতভাবে মারা যাচ্ছেন। আমি মদীনা রাষ্ট্রের মতো করে পাকিস্তান গঠনের স্বপ্ন দেখি। যেখানে বিধবা ও দরিদ্ররা অবহেলিত হবে না। আমাদের সকল নীতি হবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সহযোগিতা করার জন্য।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার প্রতিশ্রুতিতেই প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ইমরান খান

আপলোড টাইম : ১১:৪০:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুলাই ২০১৮

পাকিস্তানের ভোটে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে ভারত!
ডেস্ক রিপোর্ট: পাকিস্তানের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফল এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে জানা যায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব ছাপিয়ে পাকিস্তানের নির্বাচনের ম্যান অব দ্য ম্যাচ ইমরান খানই। ক্রিকেটের মহাতারকা এখন ক্ষমতার মসনদে। পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)। সর্বশেষ খবর অনুসারে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তার দল ১২০টি আসনে জয়লাভ করেছে। পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী বা অন্য ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে তার সরকার গঠন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এছাড়া, গতকাল বিকালে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নিজের দলের বিজয় ঘোষণা করেছেন ইমরান খান। তিনি বলেন, জনগণ পিটিআইকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ইমরান খানই হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। ক্রিকেটে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেয়া ইমরান খান এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতেও তার সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করলেন। ২২ বছর ধরে সংগ্রামের পর নিজের দলকে বসালেন ক্ষমতার মসনদে।
অবশ্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) অন্য প্রধান দলগুলোও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনেছে। এর প্রতিবাদে তারা শিগগিরই সর্বদলীয় বৈঠকের চিন্তা করছে। সব মিলিয়ে ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তানের’ স্বপ্নকে পার্লামেন্টের ভেতরে-বাইরে লড়াই করতে হবে।
গত বুধবার দেশটির ১১তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ২৪ ঘণ্টা পরও ফল প্রকাশ করতে পারেনি বিতর্কের মুখে থাকা পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির গণমাধ্যম ডন জানায়, সর্বশেষ ৪৯ শতাংশ ভোটকেন্দ্রের গণনা শেষে পাকিস্তান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ২৭২টি আসনের মধ্যে ১৯৪টি আসনের বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়। এতে ‘সেনা আনুকূল্য পাওয়া’ ইমরান খানের পিটিআই ৯৮টি আসনে জয়লাভ এবং ২২টি আসনে এগিয়ে ছিল। জয়লাভসহ মোট ১২০টি আসনে অগ্রগামী ছিল পিটিআই। পিএমএল-এন ৪৯টি আসনে জয়লাভসহ মোট ৬১টি আসনে অগ্রগামী ছিল। পিপিপি ২৩ আসনে জয়লাভসহ এগিয়ে থাকে মোট ৪০টি আসনে। ধর্মভিত্তিক দল মুত্তাহিদা মজলিস-ই-আমল তিনটি আসনে জয়লাভসহ মোট আটটি আসনে এবং মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট আটটি আসনে এগিয়ে থাকে। ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়লাভসহ মোট ১৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি একটি, বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) দুটি, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়দে দুটি আসনে জয়লাভ করে।
এদিকে, ইমরান জিতলে লাভ না ক্ষতি সে হিসাব কষছে প্রতিবেশী ভারত। বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল দফায় দফায় রিপোর্ট নিচ্ছেন ‘র’ এবং আইবির কাছ থেকে। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের লাভ না লোকসান, শুরু হয়ে গেছে সেই মূল্যায়ন। র-এর সাবেক কর্মকর্তা রানা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, ইমরান গদিতে বসলে তিনি হবেন পাকসেনার ‘রোবট’। সেটি একদিক থেকে ভারতের জন্য শাপেবর হতে পারে।
গোয়েন্দাদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, ইমরানের সরকার কার্যত সেনা নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার হবে। গণতন্ত্র থাকবে শুধু নামেই। সে ক্ষেত্রে মূলত নওয়াজ শরিফের পুরনো ভোটব্যাংক পাক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ও সার্বিকভাবে দেশের আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থেও অস্থিরতা চাইবে না পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। বরং সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রাখার দায় থাকবে সেনার ওপরেই। নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ। তার পরে একাধিক বৈঠক হয় দুই নেতার। নওয়াজের মেয়ের বিয়েতেও প্রটোকল ভেঙে গিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু ভারতের কোনো কথাই রাখেনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। গোয়েন্দাদের অনেকের মতে, ইমরান ক্ষমতায় এলে সেনার সঙ্গেই সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করতে পারে দিল্লি।
কূটনীতিকদের একটি বড় অংশ যদিও বলছেন, সেনাবাহিনীর শাসন যদি এত ভালোই হয়, তা হলে নির্বাচনের প্রহসন কেন? আদালত থেকে আইএসআই, সবই তো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
২০১৩ সালে যখন সন্ত্রাসবাদ চরমে, তখন পাক ভোটে নামানো হয়েছিল ৭০ হাজার সেনা। আর বুধবারের ভোটে তিন লাখ ৭০ হাজার সেনা!
নির্বাচন কমিশন সেনা অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। ফলে বুথে ঢুকে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ছাড়পত্র ছিল তাদের। ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিবার এক মাসেরও বেশি আগে পাকিস্তানে পৌঁছায়। এবার তাদের সেই অনুমতিই দেয়া হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। গোয়েন্দারা বলছেন, ইমরান একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে তাকে পিপিপির সঙ্গে সমঝোতা করতে বলতে পারে সামরিক বাহিনী।
ভোট প্রচারে পিপিপি নেতা আসিফ আলি জারদারির দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রচার করেছেন ইমরান। সরকার গড়তে জারদারির সঙ্গে হাত মেলানোটা তাই অস্বস্তিকর।
তবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান হয়তো তাও মেনে নেবেন বাধ্য হয়ে। নওয়াজের দলকে রুখতে মরিয়া সেনা প্রথমে অবশ্য চাইবে, তেহরিক-এ-ইনসাফের সঙ্গে ছোট ছোট মুসলিম দল আর স্বতন্ত্রদের মিলিয়ে সরকার গঠন করে নিতে! তাতে যদি না হয়, শেষ বিকল্প পিপিপি।
গোয়েন্দারা তাই বলছেন, পুরোপুরি সেনাবাহিনীর শাসন বরং ভালো। কারণ বর্তমান অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করা ভারতের কূটনীতিকদের জন্য জটিলই বটে।
ভারতে কর্মরত পাক হাইকমিশনার সোহেল মেহমুদ বলেছেন, পাক নির্বাচনে ভারত কোনো বিষয় নয়। এবার ভারতও দেখল, এই ভোটে কোনোভাবেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসেনি। গোটা বিষয়টিকে ইতিবাচক বলেই মনে করছে ভারত।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, পাকিস্তানের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া তেহরিকে ইনসাফ পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খান। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র স্বপ্নের পাকিস্তান গড়ার প্রত্যায় জানান তিনি। সিএনএন, ডন। ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। এত বেশি ঋণ কখনও পাকিস্তানের ছিল না। দুর্নীতির কারণে প্রবাসীরা দেশের মাটিতে বিনিয়োগ করছে না। ফলে চাকরি পাচ্ছে তরুণরা। এর সমাধান করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার ঘোষণা দেন ইমরান খান। ‘আমি পুরো পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখবো। রাজনৈতিক কারণে কেউ প্রতিহিংসার শিকার হবে না। আইন ধনী-গরীব সবার জন্য সমানভাবে কাজ করবে।’ বলেন পাকিস্তানের হবু প্রধানমন্ত্রী।
জিন্নাহ’র স্বপ্নের পাকিস্তন গড়ার অঙ্গীকার ইমরানের : পিটিআই প্রধান ইমরান খান এমন পাকিস্তান গড়তে চান, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশটির স্থপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। সরকার গঠনের পর তার দল এই ভিশন নিয়েই দেশ পরিচালনা করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এমনটিই বলেছেন হবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, দুই দশক আগে তিনি যে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন, দীর্ঘ ২২ বছরের সংগ্রামের পর অবশেষে বাস্তবায়ন করার সুযোগ পেয়েছেন। তার ভাষায়, ‘কেন আমি রাজনীতিতে এসেছি তা পরিষ্কার করতে চাই। রাজনীতি আমাকে কিছু নাও দিতে পারতো। কিন্তু আমি সবসময় পাকিস্তানকে এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছি, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমার মহান নেতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আমি বিশেষ করে বেলুচিস্তানের মানুষদের সাধুবাদ জানাতে চাই। ভয়াবহ সহিংসতা ও মর্মান্তিক ভোগান্তির শিকার হওয়ার পরেও তারা ভোট দিয়েছেন, গোটা দেশের পক্ষ থেকে আমি তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই। এই নির্বাচনের জন্য অনেক মানুষ ত্যাগ স্বীকার করেছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীকেও আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। বর্তমানে আমাদের দেশ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। কৃষকরা তাদের শ্রমের মূল্য পান না, ২ কোটি ৫০ লাখ শিশু শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত, পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবার অভাবে আমাদের প্রসূতি মায়েরা অব্যাহতভাবে মারা যাচ্ছেন। আমি মদীনা রাষ্ট্রের মতো করে পাকিস্তান গঠনের স্বপ্ন দেখি। যেখানে বিধবা ও দরিদ্ররা অবহেলিত হবে না। আমাদের সকল নীতি হবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সহযোগিতা করার জন্য।’