ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নৌকাবিরোধী এমপি-মন্ত্রীদের আমলনামা প্রস্তুত হচ্ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৯
  • / ৩২০ বার পড়া হয়েছে

তালিকায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গার দুই সাংসদের নাম : নেয়া হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রীসহ পদধারী নেতাদের আমলনামা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকদের নেতৃত্বে ৮টি বিভাগের নৌকাবিরোধীদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন করা হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দপ্তরে জমা দিতে হবে। তথ্য মতে, বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে নমনীয় নীতি অনুসরণ করে আ.লীগ। এ সুযোগে অনেকটা আত্মঘাতী রূপে অবতীর্ণ হন দলটির অর্ধশতাধিকেরও বেশি সাংসদ। অন্তত দেড় শতাধিক উপজেলায় সাংসদের কড়াকড়ি নজরদারি ভেদ করেই সরাসরি কেন্দ্র থেকে আ.লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন অনেক তৃণমূল নেতা। যে কারণে ক্ষুব্ধ সাংসদ নৌকা প্রতীকের ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। একাধিক উপজেলায় নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছে স্থানীয় সাংসদের পরিবারের সদস্যরা। শুধু বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করানো নয়, নৌকার প্রার্থী ও তার পক্ষে থাকা নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে অনুষ্ঠিত ৪ ধাপের নির্বাচনের ফলাফলে ১৩৫টি উপজেলায় শোচনীয়ভাবে হারতে হয় নৌকার প্রার্থীকে।
আ.লীগ সূত্র মতে, মাত্র ৩ মাস আগে গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে এমপি বনে যাওয়াদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছে আ.লীগের হাইকমান্ড। নিজে নৌকা প্রতীকের এমপি হয়ে উপজেলা নির্বাচনে নৌকার পরাজয় নিশ্চিতে ভূমিকা রাখায় দেশব্যাপী বিতর্কের মুখে পড়েছে আ.লীগ তথা সরকার। গত ২৯ মার্চ দলের প্রেসিডিয়াম সভায় ওইসব সাংসদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যেসব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতির নির্দেশনায় নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রীসহ পদধারী নেতাদের তালিকা প্রস্তুত করে ৮ সাংগঠনিক সম্পাদক। সূত্র মতে, গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকদের করা ওই তালিকা উত্থাপন করা হয়। তালিকায় ৫৫ জন সংসদ সদস্যের নাম উঠে আসে। এর মধ্যে ২ জন মন্ত্রী ও ২ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। ওই তালিকা উত্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের যেহেতু নৌকার প্রার্থী পছন্দ নয়, তাদের আগামীতে আর নৌকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বৈঠকে নৌকার প্রার্থীদের বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রীদের শোকজ চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী প্রার্থী এবং নৌকাবিরোধী পদধারী নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, আরও যাচাই-বাছাই করলে নৌকার বিরোধিতাকারীদের সংখ্যা বাড়বে এবং সঠিক কারণ জানা যাবে। এ কারণে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী মন্ত্রী-এমপিসহ নেতাদের তালিকা আরও ভালোভাবে বিস্তারিত তুলে ধরার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ সাংগঠনিক সম্পাদককে বিভাগ অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে জমা দিতে বলা হয়। এরপর বিরোধিতাকারীদের শোকজ চিঠি এবং জবাব চাওয়া হবে।আ.লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারদের তালিকাসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব জমা দেওয়া হবে।
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটি বৈঠকে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের তালিকা উত্থাপন করা হয়। এরপর নেত্রী বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা এখন সে অনুযায়ী কাজ করছি।প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য মতে, প্রথম ধাপের নির্বাচনের নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায় নৌকার প্রার্থী ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর আ.লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। দলীয় প্রার্থী মনোপুত না হওয়ায় বিকল্প প্রার্থী হিসেবে জেলা আ.লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দেন স্থানীয় সাংসদ আবদুল কুদ্দুস। নির্বাচনের ফলাফল সহজ জয় পান সাংসদ আবদুল কুদ্দুসের পালিত পুত্র হিসেবে পরিচিত সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন।জেলাটির বাগাতিপাড়া উপজেলায় নৌকার প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান। সাংসদ ভাই শহীদুল ইসলামের দাপট দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন বিদ্রোহী প্রার্থী অহিদুল ইসলাম (গকুল)। লালপুরে উপজেলায়ও নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হন সাংসদ শহীদুল ইসলামের আপন ভগ্নিপতি ইসাহাক আলী। সিংড়া উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর আ.লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম। বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে নামেন নব্য আ.লীগ খ্যাত আদেশ আলী সরদার। তিনি উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। স্থানীয় সাংসদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ওই নির্বাচনে উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল হাবিব এবং পরিচিত সিংড়া পৌরসভার মেয়র ও পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে প্রচারণায় অংশ নেন।তৃতীয় ধাপে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় আ.লীগ মনোনিত নৌকা প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম।
বিদ্রোহী প্রার্থী হন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাংসদ আলী আজগার টগরের আপন ছোট ভাই দর্শনা পৌর আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক আলী মনসুর বাবু। তিনি সাংসদ ভাইয়ের দাপটে গোটা নির্বাচনি এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ নেন। সাংসদ আলী আজগার টগরও নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন বলে জানান সিরাজুল আলম। এ কারণে জয় পান আলী মনসুর বাবু। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় স্থানীয় সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের সমর্থনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আপন ছোট ভাই রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার। চতুর্থ ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন জহির উদ্দিন সিদ্দিক টিটু। কিন্তু ওই প্রার্থী সাংসদের মনোপুত না হওয়ায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে নিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে নামেন সাংসদ এবাদুল করিম বুলবুল ও তার অনুসারীরা। ভোটের ফলাফলে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় হয়। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন সিকদারকে সমর্থন দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। মন্ত্রীর ওই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রীপুর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পান উপজেলা আ.লীগের সভাপতি শামসুল আলম। তাকে স্থানীয় সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজ সমর্থন দেন বলে জানা গেছে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থী শোয়েব আহমেদ। তিনি স্থানীয় সাংসদ বন, পরিবেশ ও জলবায়ুমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ভাগনে। সংসদ সদস্যের অসহযোগিতার কারণে বরগুনার ৩ উপজেলায় নৌকা প্রার্থী পরাজিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগ মাগুরার ৩টি উপজেলায়। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মাহমুদের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালান সাংসদ আনোয়ারুল আবেদিন খান। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হন সাংসদ দবিরুল ইসলামের ভাই। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় উপজেলায় নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হন সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হন আসনটির সাংসদ ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার ভাগনে জাহাঙ্গীর কবির।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নৌকাবিরোধী এমপি-মন্ত্রীদের আমলনামা প্রস্তুত হচ্ছে

আপলোড টাইম : ০৯:২২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৯

তালিকায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গার দুই সাংসদের নাম : নেয়া হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রীসহ পদধারী নেতাদের আমলনামা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকদের নেতৃত্বে ৮টি বিভাগের নৌকাবিরোধীদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন করা হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দপ্তরে জমা দিতে হবে। তথ্য মতে, বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে নমনীয় নীতি অনুসরণ করে আ.লীগ। এ সুযোগে অনেকটা আত্মঘাতী রূপে অবতীর্ণ হন দলটির অর্ধশতাধিকেরও বেশি সাংসদ। অন্তত দেড় শতাধিক উপজেলায় সাংসদের কড়াকড়ি নজরদারি ভেদ করেই সরাসরি কেন্দ্র থেকে আ.লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন অনেক তৃণমূল নেতা। যে কারণে ক্ষুব্ধ সাংসদ নৌকা প্রতীকের ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। একাধিক উপজেলায় নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছে স্থানীয় সাংসদের পরিবারের সদস্যরা। শুধু বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করানো নয়, নৌকার প্রার্থী ও তার পক্ষে থাকা নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে অনুষ্ঠিত ৪ ধাপের নির্বাচনের ফলাফলে ১৩৫টি উপজেলায় শোচনীয়ভাবে হারতে হয় নৌকার প্রার্থীকে।
আ.লীগ সূত্র মতে, মাত্র ৩ মাস আগে গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে এমপি বনে যাওয়াদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছে আ.লীগের হাইকমান্ড। নিজে নৌকা প্রতীকের এমপি হয়ে উপজেলা নির্বাচনে নৌকার পরাজয় নিশ্চিতে ভূমিকা রাখায় দেশব্যাপী বিতর্কের মুখে পড়েছে আ.লীগ তথা সরকার। গত ২৯ মার্চ দলের প্রেসিডিয়াম সভায় ওইসব সাংসদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যেসব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতির নির্দেশনায় নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রীসহ পদধারী নেতাদের তালিকা প্রস্তুত করে ৮ সাংগঠনিক সম্পাদক। সূত্র মতে, গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকদের করা ওই তালিকা উত্থাপন করা হয়। তালিকায় ৫৫ জন সংসদ সদস্যের নাম উঠে আসে। এর মধ্যে ২ জন মন্ত্রী ও ২ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। ওই তালিকা উত্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের যেহেতু নৌকার প্রার্থী পছন্দ নয়, তাদের আগামীতে আর নৌকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বৈঠকে নৌকার প্রার্থীদের বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রীদের শোকজ চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী প্রার্থী এবং নৌকাবিরোধী পদধারী নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, আরও যাচাই-বাছাই করলে নৌকার বিরোধিতাকারীদের সংখ্যা বাড়বে এবং সঠিক কারণ জানা যাবে। এ কারণে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী মন্ত্রী-এমপিসহ নেতাদের তালিকা আরও ভালোভাবে বিস্তারিত তুলে ধরার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ সাংগঠনিক সম্পাদককে বিভাগ অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে জমা দিতে বলা হয়। এরপর বিরোধিতাকারীদের শোকজ চিঠি এবং জবাব চাওয়া হবে।আ.লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারদের তালিকাসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব জমা দেওয়া হবে।
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটি বৈঠকে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের তালিকা উত্থাপন করা হয়। এরপর নেত্রী বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা এখন সে অনুযায়ী কাজ করছি।প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য মতে, প্রথম ধাপের নির্বাচনের নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায় নৌকার প্রার্থী ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর আ.লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। দলীয় প্রার্থী মনোপুত না হওয়ায় বিকল্প প্রার্থী হিসেবে জেলা আ.লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দেন স্থানীয় সাংসদ আবদুল কুদ্দুস। নির্বাচনের ফলাফল সহজ জয় পান সাংসদ আবদুল কুদ্দুসের পালিত পুত্র হিসেবে পরিচিত সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন।জেলাটির বাগাতিপাড়া উপজেলায় নৌকার প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান। সাংসদ ভাই শহীদুল ইসলামের দাপট দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন বিদ্রোহী প্রার্থী অহিদুল ইসলাম (গকুল)। লালপুরে উপজেলায়ও নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হন সাংসদ শহীদুল ইসলামের আপন ভগ্নিপতি ইসাহাক আলী। সিংড়া উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর আ.লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম। বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে নামেন নব্য আ.লীগ খ্যাত আদেশ আলী সরদার। তিনি উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। স্থানীয় সাংসদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ওই নির্বাচনে উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল হাবিব এবং পরিচিত সিংড়া পৌরসভার মেয়র ও পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে প্রচারণায় অংশ নেন।তৃতীয় ধাপে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় আ.লীগ মনোনিত নৌকা প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম।
বিদ্রোহী প্রার্থী হন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাংসদ আলী আজগার টগরের আপন ছোট ভাই দর্শনা পৌর আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক আলী মনসুর বাবু। তিনি সাংসদ ভাইয়ের দাপটে গোটা নির্বাচনি এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ নেন। সাংসদ আলী আজগার টগরও নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন বলে জানান সিরাজুল আলম। এ কারণে জয় পান আলী মনসুর বাবু। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় স্থানীয় সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের সমর্থনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আপন ছোট ভাই রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার। চতুর্থ ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন জহির উদ্দিন সিদ্দিক টিটু। কিন্তু ওই প্রার্থী সাংসদের মনোপুত না হওয়ায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে নিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে নামেন সাংসদ এবাদুল করিম বুলবুল ও তার অনুসারীরা। ভোটের ফলাফলে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় হয়। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন সিকদারকে সমর্থন দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। মন্ত্রীর ওই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রীপুর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পান উপজেলা আ.লীগের সভাপতি শামসুল আলম। তাকে স্থানীয় সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজ সমর্থন দেন বলে জানা গেছে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থী শোয়েব আহমেদ। তিনি স্থানীয় সাংসদ বন, পরিবেশ ও জলবায়ুমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ভাগনে। সংসদ সদস্যের অসহযোগিতার কারণে বরগুনার ৩ উপজেলায় নৌকা প্রার্থী পরাজিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগ মাগুরার ৩টি উপজেলায়। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মাহমুদের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালান সাংসদ আনোয়ারুল আবেদিন খান। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হন সাংসদ দবিরুল ইসলামের ভাই। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় উপজেলায় নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হন সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হন আসনটির সাংসদ ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার ভাগনে জাহাঙ্গীর কবির।