ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনে বড় ঋণখেলাপিরা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৬:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮
  • / ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের অংশগ্রহণ রোধে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছিল বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব ঋণখেলাপির নাম এসেছে, তাদের ঋণের অঙ্ক খুব বড় নয়। বরং বড় খেলাপিরা তাদের ক্ষমতা, প্রভাব ও অন্যান্য সংযোগ ব্যবহার করে আগেই ঋণ নিয়মিত করে নিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি ঋণ নিয়ে অন্য ঋণ পরিশোধ করেছেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ঋণখেলাপি হিসেবে কারও কারও নাম আসার বিষয়টি শুধুই লোক দেখানো কি না এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বোঝাই যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর বা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। প্রকৃতপক্ষে এ জন্য যে রাজনৈতিক উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন, তা ছিল অনুপস্থিত। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন করে ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যাংকের পাশাপাশি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণখেলাপিদেরও নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। অধ্যাদেশটির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দায়িত্ব মূলত ইসির। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ার একটি কারণ যে রাজনৈতিক, ইতঃপূর্বে খোদ অর্থমন্ত্রীও তা স্বীকার করেছেন। কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদে ১০০ ঋণখেলাপির যে তালিকা উত্থাপন করেন তিনি, তাতে শীর্ষ খেলাপিদের নাম ছিল না। এমনকি অনেক ব্যবসায়ী গ্রুপ ৪-৫ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি হলেও তালিকায় আনা হয় একটি বা দুটি কোম্পানির নাম। এ বাস্তবতায় বড় ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত ছিল। দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঋণখেলাপিদের সামাজিকভাবে বর্জন করা এখন সময়ের দাবি। অনেক দেশেই এর উদাহরণ রয়েছে। কোনো কোনো দেশে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়, যাতে তারা অন্য দেশে পালিয়ে যেতে না পারে। ঋণখেলাপিদের উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রেনে চড়তে দেয়া হয় না। চীনের সর্বোচ্চ আদালত সে দেশের সাড়ে ৬১ লাখ ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে বিমান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কর্পোরেট চাকরি বা নির্বাহী পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে ৭১ হাজার ঋণখেলাপিকে। এসব উদাহরণ আমাদের জন্য করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে। বস্তুত ঋণ নিয়ে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ফেরত দেয় না, তাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ঘৃণা করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, যাতে তারা নতুন করে ঋণ গ্রহণ, জমি ক্রয়, সম্পদ অধিগ্রহণ করে সমাজে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে এবং ভোগবিলাস করে বেড়াতে না পারে, সে জন্য তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা দরকার। মূলত খেলাপি ঋণের কারণেই দেশের ব্যাংকিং খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের শিল্প খাতে। অর্থাৎ ঋণখেলাপিদের কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে মনে করি আমরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নির্বাচনে বড় ঋণখেলাপিরা!

আপলোড টাইম : ১০:২৬:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের অংশগ্রহণ রোধে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছিল বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব ঋণখেলাপির নাম এসেছে, তাদের ঋণের অঙ্ক খুব বড় নয়। বরং বড় খেলাপিরা তাদের ক্ষমতা, প্রভাব ও অন্যান্য সংযোগ ব্যবহার করে আগেই ঋণ নিয়মিত করে নিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি ঋণ নিয়ে অন্য ঋণ পরিশোধ করেছেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ঋণখেলাপি হিসেবে কারও কারও নাম আসার বিষয়টি শুধুই লোক দেখানো কি না এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বোঝাই যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর বা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। প্রকৃতপক্ষে এ জন্য যে রাজনৈতিক উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন, তা ছিল অনুপস্থিত। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন করে ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যাংকের পাশাপাশি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণখেলাপিদেরও নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। অধ্যাদেশটির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দায়িত্ব মূলত ইসির। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ার একটি কারণ যে রাজনৈতিক, ইতঃপূর্বে খোদ অর্থমন্ত্রীও তা স্বীকার করেছেন। কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদে ১০০ ঋণখেলাপির যে তালিকা উত্থাপন করেন তিনি, তাতে শীর্ষ খেলাপিদের নাম ছিল না। এমনকি অনেক ব্যবসায়ী গ্রুপ ৪-৫ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি হলেও তালিকায় আনা হয় একটি বা দুটি কোম্পানির নাম। এ বাস্তবতায় বড় ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত ছিল। দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঋণখেলাপিদের সামাজিকভাবে বর্জন করা এখন সময়ের দাবি। অনেক দেশেই এর উদাহরণ রয়েছে। কোনো কোনো দেশে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়, যাতে তারা অন্য দেশে পালিয়ে যেতে না পারে। ঋণখেলাপিদের উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রেনে চড়তে দেয়া হয় না। চীনের সর্বোচ্চ আদালত সে দেশের সাড়ে ৬১ লাখ ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে বিমান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কর্পোরেট চাকরি বা নির্বাহী পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে ৭১ হাজার ঋণখেলাপিকে। এসব উদাহরণ আমাদের জন্য করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে। বস্তুত ঋণ নিয়ে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ফেরত দেয় না, তাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ঘৃণা করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, যাতে তারা নতুন করে ঋণ গ্রহণ, জমি ক্রয়, সম্পদ অধিগ্রহণ করে সমাজে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে এবং ভোগবিলাস করে বেড়াতে না পারে, সে জন্য তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা দরকার। মূলত খেলাপি ঋণের কারণেই দেশের ব্যাংকিং খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের শিল্প খাতে। অর্থাৎ ঋণখেলাপিদের কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে মনে করি আমরা।