ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নতুন মাদক নতুন যুদ্ধ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৩:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ৪২০ বার পড়া হয়েছে

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখার ফলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যহত অভিযানের কারণে মাদক বিক্রয় আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে বটে, তবে মাদক ব্যবসায়ীরাও অ্যামিবার মতো রূপ বদল করছে। তারা কৌশল পাল্টিয়ে মাদক কেনাবেচা করছে হোম ডেলিভারি, কুরিয়ারে ডেলিভারির মাধ্যমে। কখনো বাসে বিশেষভাবে তৈরি চেম্বারে, কখনো ডাবে, কখনো ফলের গাড়িতে, কখনো বা ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর আড়ালে বাহক কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইয়াবার লেনদেন হচ্ছে। ইয়াবার এই ছদ্মবেশের পাশাপাশি সম্প্রতি নতুন একটি মাদক বিশেষভাবে আলোচনায় আসছে। মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রিনটি’র নামে ডাকবিভাগের মাধ্যমে আমদানি করছে এনপিএস তথা ‘খাথ’ নামের নতুন মাদক। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ইউনিটের ফরেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দেশে আসছে নতুন এই মাদক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সম্প্রতি পৃথক পাঁচটি ঘটনায় মোট দুই হাজার ৭৩৮ কেজি ‘খাথ’ জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, প্রায় দুই বছর ধরিয়া রাজধানীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন সিসা বারে সিসার সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে এই মাদক। একইসঙ্গে হারবালসহ বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিতেও ‘খাথ’ ব্যবহৃত হচ্ছে এমন তথ্যও আসছে গোয়েন্দাদের কাছে।
এক ইয়াবায় রক্ষা হচ্ছে না, তার উপর নতুন মাদক নতুন করে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। খাথ মাদকটি ভেষজ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ভেষজ উদ্ভিদটি অন্যান্য প্রাণঘাতী মাদকের মতোই ভয়ঙ্কর। এটি মানব শরীরে ভয়ানক ক্ষতিসাধন করেই ক্ষান্ত হয় না, নিয়মিত সেবনকারীকে মানসিকভাবেও পঙ্গু করে দেয়। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ ইউনিটের প্রতিবেদন হতে জানা যায়, খাথ বা মিরা নামের এ উদ্ভিদটি ‘নিউ সাইকোট্রফিক সাবস্টেনসেস’ বা এনপিএস নামে পরিচিত। অনেকে একে আরবের চা বলেন। গত বছরের মধ্যে বিশ্বের ১১০টি দেশ খাথকে মাদক হিসাবে চিহ্নিত করে স্ব স্ব দেশে আমদানি নিষিদ্ধ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ ও প্রযুক্তি বিভাগের এক অধ্যাপকের মতে, ইয়াবার চেয়েও খাথ অধিক ভয়ঙ্কর ড্রাগ। কারণ এর মধ্যে বিদ্যমান ‘ক্যাথিন’ উপাদানটি নিয়মিত সেবনকারীকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। মাদকটি প্রথমাবস্থায় শরীরকে উত্তেজিত করলেও একপর্যায়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো অকেজো হতে শুরু করে। ক্রমশ খাথ সেবনকারী নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। অসংলগ্ন, অর্থহীন কথা বলে, বিষণœ ও বিভ্রান্ত হতে থাকে দিন দিন। নিঃসঙ্গতায় ডুবে থাকে, অনিদ্রা জাঁকিয়ে বসে। প্রথম দিকে উত্তেজক হিসাবে কাজ করলেও খাথ একপর্যায়ে যৌনক্ষমতাশূন্য করে দেয়।
মাদক একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বের অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রও হিমশিম খাচ্ছে মাদক নির্মূলে। মাদক এমন একটি অন্ধকার জগতের অবৈধ ব্যবসা, যার হাত ধরে বিপুল অবৈধ অর্থ ও অস্ত্রের ঝনঝনানি লাগামছাড়া হতে থাকে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার জন্য এটাা ক্রমশ ভয়ঙ্কর হুমকি হয়ে দেখা দেয়। সুতরাং যেকোনো ধরনের মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স দেখার ব্যাপারে নূন্যতম শিথিলতার সুযোগ নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নতুন মাদক নতুন যুদ্ধ

আপলোড টাইম : ০৯:২৩:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখার ফলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যহত অভিযানের কারণে মাদক বিক্রয় আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে বটে, তবে মাদক ব্যবসায়ীরাও অ্যামিবার মতো রূপ বদল করছে। তারা কৌশল পাল্টিয়ে মাদক কেনাবেচা করছে হোম ডেলিভারি, কুরিয়ারে ডেলিভারির মাধ্যমে। কখনো বাসে বিশেষভাবে তৈরি চেম্বারে, কখনো ডাবে, কখনো ফলের গাড়িতে, কখনো বা ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর আড়ালে বাহক কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইয়াবার লেনদেন হচ্ছে। ইয়াবার এই ছদ্মবেশের পাশাপাশি সম্প্রতি নতুন একটি মাদক বিশেষভাবে আলোচনায় আসছে। মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রিনটি’র নামে ডাকবিভাগের মাধ্যমে আমদানি করছে এনপিএস তথা ‘খাথ’ নামের নতুন মাদক। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ইউনিটের ফরেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দেশে আসছে নতুন এই মাদক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সম্প্রতি পৃথক পাঁচটি ঘটনায় মোট দুই হাজার ৭৩৮ কেজি ‘খাথ’ জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, প্রায় দুই বছর ধরিয়া রাজধানীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন সিসা বারে সিসার সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে এই মাদক। একইসঙ্গে হারবালসহ বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিতেও ‘খাথ’ ব্যবহৃত হচ্ছে এমন তথ্যও আসছে গোয়েন্দাদের কাছে।
এক ইয়াবায় রক্ষা হচ্ছে না, তার উপর নতুন মাদক নতুন করে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। খাথ মাদকটি ভেষজ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ভেষজ উদ্ভিদটি অন্যান্য প্রাণঘাতী মাদকের মতোই ভয়ঙ্কর। এটি মানব শরীরে ভয়ানক ক্ষতিসাধন করেই ক্ষান্ত হয় না, নিয়মিত সেবনকারীকে মানসিকভাবেও পঙ্গু করে দেয়। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ ইউনিটের প্রতিবেদন হতে জানা যায়, খাথ বা মিরা নামের এ উদ্ভিদটি ‘নিউ সাইকোট্রফিক সাবস্টেনসেস’ বা এনপিএস নামে পরিচিত। অনেকে একে আরবের চা বলেন। গত বছরের মধ্যে বিশ্বের ১১০টি দেশ খাথকে মাদক হিসাবে চিহ্নিত করে স্ব স্ব দেশে আমদানি নিষিদ্ধ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ ও প্রযুক্তি বিভাগের এক অধ্যাপকের মতে, ইয়াবার চেয়েও খাথ অধিক ভয়ঙ্কর ড্রাগ। কারণ এর মধ্যে বিদ্যমান ‘ক্যাথিন’ উপাদানটি নিয়মিত সেবনকারীকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। মাদকটি প্রথমাবস্থায় শরীরকে উত্তেজিত করলেও একপর্যায়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো অকেজো হতে শুরু করে। ক্রমশ খাথ সেবনকারী নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। অসংলগ্ন, অর্থহীন কথা বলে, বিষণœ ও বিভ্রান্ত হতে থাকে দিন দিন। নিঃসঙ্গতায় ডুবে থাকে, অনিদ্রা জাঁকিয়ে বসে। প্রথম দিকে উত্তেজক হিসাবে কাজ করলেও খাথ একপর্যায়ে যৌনক্ষমতাশূন্য করে দেয়।
মাদক একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বের অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রও হিমশিম খাচ্ছে মাদক নির্মূলে। মাদক এমন একটি অন্ধকার জগতের অবৈধ ব্যবসা, যার হাত ধরে বিপুল অবৈধ অর্থ ও অস্ত্রের ঝনঝনানি লাগামছাড়া হতে থাকে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার জন্য এটাা ক্রমশ ভয়ঙ্কর হুমকি হয়ে দেখা দেয়। সুতরাং যেকোনো ধরনের মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স দেখার ব্যাপারে নূন্যতম শিথিলতার সুযোগ নেই।