ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটির ওপর আস্থা রাখছে আ’লীগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ও বর্জনের মধ্যে দিয়ে চলমান রয়েছে। যেসব দল বর্জন করেছে তাদের দাবি, অতীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি উপযুক্ত নয়। এর জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকা দরকার। আগে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করতে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে গঠিত সার্চ কমিটিই ঠিক আছে। আইন প্রণয়ন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। রাজনৈতিক দলগুলোর এই ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আগামী ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অবশ্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে উঠে আসা সার্চ কমিটির ওপরই আস্থা রাখছে সরকারি দলের নীতিনির্ধারণী মহল। সরকারি দল মনে করছে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে গঠিত সার্চ কমিটিই যথোপযুক্ত। যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য দেশে কোনো আইন তৈরি হয়নি। তাই সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এবার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইনের বিষয়টি প্রস্তাব করা যেতে পারে মাত্র। সংবিধানের ৪৮(ত) অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংবিধানের এই ধারার এক চুলও বাইরে যেতে রাজি নয় ক্ষমতাসীনরা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, অতীতে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ২-৩টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে আসা নাম থেকে ৮-১০টি নাম সিলেকশন করা হয়। এরমধ্যে থেকে ৫ জনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। ফলে আমি মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি যথোপযুক্ত। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সংলাপের আয়োজন করেছেন তার ওপর আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা সংস্কৃতি চালু আছে তাহলো- হেরে গেলে বলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আর জিতে গেলে বলে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এই ধারা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার।

এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, যারা আইন প্রণয়নের কথা বলছেন, আমরা তাদের বিপক্ষে নই। আমরাও আইন প্রণয়নের পক্ষে। তবে এবারতো আর সম্ভব নয়। এর জন্য কিছুটা সময় লাগবে। এবার না হয়, আগামীতে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, যারা সংলাপ বর্জন করছেন তাদের উদ্দেশে বলব, আপনারাতো অতীতে আইন তৈরি করেননি। তাহলে এখন কেন হঠাৎ করে আইন তৈরির কথা বলছেন? তারা এই কথাগুলো, তাদের দাবি দাওয়াগুলো রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবেও বলতে পারেন। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের রাষ্ট্রপতির এই সংলাপ বর্জন করা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার বলেন, পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলসমূহের সংলাপ চলমান রয়েছে। স্টেকহোল্ডার হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগামী ১৭ জানুয়ারি সংলাপে অংশ নেবে। একটি অর্থবহ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শক্তিশালী কমিশন গঠনে আওয়ামী লীগের মতামত ও প্রস্তাবনা সংলাপে উপস্থাপন করা হবে। আমরা মনে করি, পারস্পরিক আলোচনা যে কোনো জটিল সমস্যার সমাধানের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। তিনি আরো বলেন, সঙ্ঘাত, সহিংসতা, জনমতবিরোধী তৎপরতা গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে আলাপ-আলোচনা, সংলাপ, পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্র বিকাশের পথকে কুসুমিত করে। যারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করে না তারা রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ ও প্রচলিত গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিতে শ্রদ্ধাশীল নয়; তারা সংলাপে আস্থা রাখে না। বরং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করতে চায়। সম্প্রতি ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপে না এলেও নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কারো জন্য থেমে থাকবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। ওই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটির ওপর আস্থা রাখছে আ’লীগ

আপলোড টাইম : ১১:১৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ও বর্জনের মধ্যে দিয়ে চলমান রয়েছে। যেসব দল বর্জন করেছে তাদের দাবি, অতীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি উপযুক্ত নয়। এর জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকা দরকার। আগে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করতে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে গঠিত সার্চ কমিটিই ঠিক আছে। আইন প্রণয়ন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। রাজনৈতিক দলগুলোর এই ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আগামী ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অবশ্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে উঠে আসা সার্চ কমিটির ওপরই আস্থা রাখছে সরকারি দলের নীতিনির্ধারণী মহল। সরকারি দল মনে করছে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে গঠিত সার্চ কমিটিই যথোপযুক্ত। যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য দেশে কোনো আইন তৈরি হয়নি। তাই সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এবার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইনের বিষয়টি প্রস্তাব করা যেতে পারে মাত্র। সংবিধানের ৪৮(ত) অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংবিধানের এই ধারার এক চুলও বাইরে যেতে রাজি নয় ক্ষমতাসীনরা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, অতীতে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ২-৩টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে আসা নাম থেকে ৮-১০টি নাম সিলেকশন করা হয়। এরমধ্যে থেকে ৫ জনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। ফলে আমি মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি যথোপযুক্ত। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সংলাপের আয়োজন করেছেন তার ওপর আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা সংস্কৃতি চালু আছে তাহলো- হেরে গেলে বলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আর জিতে গেলে বলে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এই ধারা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার।

এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, যারা আইন প্রণয়নের কথা বলছেন, আমরা তাদের বিপক্ষে নই। আমরাও আইন প্রণয়নের পক্ষে। তবে এবারতো আর সম্ভব নয়। এর জন্য কিছুটা সময় লাগবে। এবার না হয়, আগামীতে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, যারা সংলাপ বর্জন করছেন তাদের উদ্দেশে বলব, আপনারাতো অতীতে আইন তৈরি করেননি। তাহলে এখন কেন হঠাৎ করে আইন তৈরির কথা বলছেন? তারা এই কথাগুলো, তাদের দাবি দাওয়াগুলো রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবেও বলতে পারেন। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের রাষ্ট্রপতির এই সংলাপ বর্জন করা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার বলেন, পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলসমূহের সংলাপ চলমান রয়েছে। স্টেকহোল্ডার হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগামী ১৭ জানুয়ারি সংলাপে অংশ নেবে। একটি অর্থবহ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শক্তিশালী কমিশন গঠনে আওয়ামী লীগের মতামত ও প্রস্তাবনা সংলাপে উপস্থাপন করা হবে। আমরা মনে করি, পারস্পরিক আলোচনা যে কোনো জটিল সমস্যার সমাধানের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। তিনি আরো বলেন, সঙ্ঘাত, সহিংসতা, জনমতবিরোধী তৎপরতা গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে আলাপ-আলোচনা, সংলাপ, পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্র বিকাশের পথকে কুসুমিত করে। যারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করে না তারা রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ ও প্রচলিত গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিতে শ্রদ্ধাশীল নয়; তারা সংলাপে আস্থা রাখে না। বরং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করতে চায়। সম্প্রতি ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপে না এলেও নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কারো জন্য থেমে থাকবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। ওই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।