ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করায় মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৪১:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০১৭
  • / ৪৯৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: বগুড়ায় ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করায় ধর্ষিতা কিশোরী ও তার মাকে লাঠিপেটা করে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পুলিশ শ্রমিক লীগের চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পৌরসভার এক নারী কাউন্সিলরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে বগুড়া সদর থানা পুলিশ শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকার, তার সহযোগী আলী আজম দিপু, আতিকুর রহমান ও রুপম হোসেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া বাদুড়তলা এলাকায় বসবাসকারী চা বিক্রেতার কিশোরী কন্যা শহরের জুবলী ইনস্টিটিউশন থেকে এবার এসএসসি পাস করে। ওই কিশোরী কোথাও ভর্তি হতে না পারায় প্রতিবেশী আলী আজম দিপু তাকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়।  দিপু ওই কিশোরীকে মোবাইল ফোনে তুফান সরকারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। এরপর তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে ওই কিশোরীকে  চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠায়। কিন্তু ওই কিশোরী ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি দিপুর মাধ্যমে তুফান সরকারকে জানায়। গত ১৭ই জুলাই তুফান সরকারের স্ত্রী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীকে বাসায় ডেকে আনে। এরপর দিনভর তাকে আটকে রেখে তুফান সরকার কয়েক দফা ধর্ষণ করে। এতে ওই কিশোরী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনাটি ওই কিশোরীর মা জানতে পারে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তুফান সরকারের স্ত্রীর কানে যায়। এরপর শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর  মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই কিশোরীর বাড়িতে যায়। তারা ধর্ষণের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে ধর্ষিতা ও তার মাকে পৌর কাউন্সিলর রুমকির  অফিস চকসুত্রাপুরে নিয়ে আসে। সেখানে বিচারের নামে ধর্ষিতাকে পতিতা আখ্যায়িত করে এবং  মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর উল্টো অভিযোগ আনা হয়। এরপর তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী লাঠিপেটা করে মা ও মেয়েকে। এরপর তারা নাপিত ডেকে এনে মা-মেয়েকে প্রথমে মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে তুফান সরকারের স্ত্রীর নির্দেশে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রিকশায় তুলে দেয়া হয়। ওই অবস্থায় তারা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়।  রাত ১১টার দিকে সদর থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে গিয়ে মা ও মেয়ের বক্তব্য শুনে রাতেই অভিযান শুরু করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তুফান সরকারকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার আরো তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে তুফান সরকারকে গ্রেপ্তারের পর পরই তার স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন পৌর কাউন্সিলর রুমকি এবং তুফানের শাশুড়ি রুমী বেগম আত্মগোপন করে।  শনিবার এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা মুন্নী বেগম বাদী হয়ে তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত চারজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সনাতন চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং-এ উপরোক্ত তথ্য জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন মা ও মেয়েকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করায় মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া

আপলোড টাইম : ০৫:৪১:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: বগুড়ায় ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করায় ধর্ষিতা কিশোরী ও তার মাকে লাঠিপেটা করে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পুলিশ শ্রমিক লীগের চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পৌরসভার এক নারী কাউন্সিলরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে বগুড়া সদর থানা পুলিশ শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকার, তার সহযোগী আলী আজম দিপু, আতিকুর রহমান ও রুপম হোসেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া বাদুড়তলা এলাকায় বসবাসকারী চা বিক্রেতার কিশোরী কন্যা শহরের জুবলী ইনস্টিটিউশন থেকে এবার এসএসসি পাস করে। ওই কিশোরী কোথাও ভর্তি হতে না পারায় প্রতিবেশী আলী আজম দিপু তাকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়।  দিপু ওই কিশোরীকে মোবাইল ফোনে তুফান সরকারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। এরপর তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে ওই কিশোরীকে  চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠায়। কিন্তু ওই কিশোরী ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি দিপুর মাধ্যমে তুফান সরকারকে জানায়। গত ১৭ই জুলাই তুফান সরকারের স্ত্রী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীকে বাসায় ডেকে আনে। এরপর দিনভর তাকে আটকে রেখে তুফান সরকার কয়েক দফা ধর্ষণ করে। এতে ওই কিশোরী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনাটি ওই কিশোরীর মা জানতে পারে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তুফান সরকারের স্ত্রীর কানে যায়। এরপর শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর  মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই কিশোরীর বাড়িতে যায়। তারা ধর্ষণের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে ধর্ষিতা ও তার মাকে পৌর কাউন্সিলর রুমকির  অফিস চকসুত্রাপুরে নিয়ে আসে। সেখানে বিচারের নামে ধর্ষিতাকে পতিতা আখ্যায়িত করে এবং  মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর উল্টো অভিযোগ আনা হয়। এরপর তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী লাঠিপেটা করে মা ও মেয়েকে। এরপর তারা নাপিত ডেকে এনে মা-মেয়েকে প্রথমে মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে তুফান সরকারের স্ত্রীর নির্দেশে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রিকশায় তুলে দেয়া হয়। ওই অবস্থায় তারা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়।  রাত ১১টার দিকে সদর থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে গিয়ে মা ও মেয়ের বক্তব্য শুনে রাতেই অভিযান শুরু করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তুফান সরকারকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার আরো তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে তুফান সরকারকে গ্রেপ্তারের পর পরই তার স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন পৌর কাউন্সিলর রুমকি এবং তুফানের শাশুড়ি রুমী বেগম আত্মগোপন করে।  শনিবার এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা মুন্নী বেগম বাদী হয়ে তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত চারজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সনাতন চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং-এ উপরোক্ত তথ্য জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন মা ও মেয়েকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।