ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দোড়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মেম্বারদের মারধরের অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫০:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০
  • / ১৬১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
‘ত্রাণ চাইলে পেটায়। কাজ চাইলে পেটায়। প্রতিবাদ করলে পেটায়। ভাতা চাইলে পেটায়।’ পেটানোই তাঁর অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। হরহামেশা মেম্বারদের গায়ে হাত তোলা এ চেয়ারম্যানের নাম কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের দোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস এক সময় চরমপন্থি দলের অস্ত্রধারী ক্যাডার ছিলেন। ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগার সেজে হয়েছেন চেয়ারম্যান। এখনো তাঁর দেহরক্ষী হিসেবে বহাল রয়েছেন পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি ছয়খাদা গ্রামের হাশেম আলী। দুর্ধর্ষ এই হাশেম আলীর দিয়ে পরিষদের সব অপকর্ম করে যাচ্ছেন চেয়ারম্যানের কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস। দোড়া ইউনিয়নের তিনজন মহিলা মেম্বারের লিখিত অভিযোগ থেকে কাবিল চেয়ারম্যানের অপকর্মের চিত্র ফাঁস হয়েছে। এই তিন মহিলা মেম্বার হলেন সাহিদা খাতুন, আয়েশা ও কাললী। তিন মহিলা মেম্বারই চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্চিত ও গালিগালাজের শিকার হয়েছেন। তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক, কোটচাঁদপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে। কিন্তু কোনো ফলাফল পাননি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কাবিল উদ্দীন চেয়ারম্যানের হাতে প্রথম মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে যান ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রেজাউল ইসলাম। এরপর থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে মহিদুল মেম্বার, কাকলী মেম্বার, আয়েশা মেম্বার ও সাহিদা মেম্বারকে মারধর করেন। এর মধ্যে গত ১৩ মার্চ সাহিদা মেম্বারকে জুতাপেটা করেন চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন। ১৬ এপ্রিল কাকলী ও আয়েশা মেম্বারকে চেয়ার তুলে মারা হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার দয়ারামপুর গ্রামের হতদরিদ্র শিল্টু মিয়া ত্রাণ নিতে গিয়ে লাঞ্চিত হন চেয়ারম্যানের হাতে। সাহিদা মেম্বার অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস বেশিরভাগ মেম্বারদের কাজ দেন না। শতভাগ হোল্ডিং ট্যাক্স তুলে খেয়ে ফেলেন। অথচ মেম্বারদের ভাতা দেন না। সরকারি নির্দেশনা মতে হোল্ডিং ট্যাক্স তুলে ব্যাংকে জমা করতে হবে। সেখান থেকে মেম্বারদের ভাতা দিতে হবে। কিন্তু মেম্বাররা ভাতা পাচ্ছেন না। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, মাতৃত্ব ও বিধবা ভাতা নিতে বিশেষ কায়দায় টাকা নেওয়া হয়। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শাহাজুলকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান তাঁর দেহরক্ষী হাশেমকে দিয়ে যাবতীয় কাজ করান। দেহরক্ষীর নামে দিয়েছেন ৫-৬টি ভিজিডি ও হতদরিদ্রদের কার্ড। নামে-বেনামে চাল তুলে বিক্রি করেন হাশেম আলী। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, চেয়ারম্যান এই হাশেম আলীকে দিয়ে বিচারের নামে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের কাছ থেকে বাণিজ্য করেন। ফলে মানুষ ন্যায়বিচার পান না।
এসব বিষয়ে চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস জানান, ‘মেম্বারদের কাজ না দেওয়া, হোল্ডিং ট্যাক্স তুলে খেয়ে ফেলা, মেম্বারদের ভাতা না দেওয়া, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, মাতৃত্ব-বিধবা ভাতা নিয়ে বাণিজ্য ও পরিষদে বিচারের নামে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের কাছ থেকে বাণিজ্য করার বিষয়গুলো সবই মিথ্যা ও অসত্য। প্রকৃত তথ্য হলো- মহিলা মেম্বার সাহিদার সঙ্গে শ্রীরামপুরের আকতারের পরকীয়া ছিল। এ নিয়ে আমি সালিশ করে দিই। এতে মহিলা মেম্বার ক্ষিপ্ত হন। আকতারের নামে আদালতে মামলা করে মহিলা মেম্বার এক লাখ টাকা আদায় করেছেন।’ চেয়ারম্যান আরও জানান, ‘এটা সত্য যে তিন মাস আগে সিঙ্গাড়া ফেলে দেওয়ার কারণে আমি সাহিদা মেম্বারের গালে চড় মারি।’ কাবিল উদ্দীন বলেন, ‘ত্রাণ চুরির প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু বণ্টনের স্বার্থে আমি নিজেই সঠিক তালিকা করে প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রকৃত দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ দিচ্ছি। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তাই আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দোড়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মেম্বারদের মারধরের অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৯:৫০:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০

ঝিনাইদহ অফিস:
‘ত্রাণ চাইলে পেটায়। কাজ চাইলে পেটায়। প্রতিবাদ করলে পেটায়। ভাতা চাইলে পেটায়।’ পেটানোই তাঁর অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। হরহামেশা মেম্বারদের গায়ে হাত তোলা এ চেয়ারম্যানের নাম কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের দোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস এক সময় চরমপন্থি দলের অস্ত্রধারী ক্যাডার ছিলেন। ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগার সেজে হয়েছেন চেয়ারম্যান। এখনো তাঁর দেহরক্ষী হিসেবে বহাল রয়েছেন পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি ছয়খাদা গ্রামের হাশেম আলী। দুর্ধর্ষ এই হাশেম আলীর দিয়ে পরিষদের সব অপকর্ম করে যাচ্ছেন চেয়ারম্যানের কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস। দোড়া ইউনিয়নের তিনজন মহিলা মেম্বারের লিখিত অভিযোগ থেকে কাবিল চেয়ারম্যানের অপকর্মের চিত্র ফাঁস হয়েছে। এই তিন মহিলা মেম্বার হলেন সাহিদা খাতুন, আয়েশা ও কাললী। তিন মহিলা মেম্বারই চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্চিত ও গালিগালাজের শিকার হয়েছেন। তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক, কোটচাঁদপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে। কিন্তু কোনো ফলাফল পাননি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কাবিল উদ্দীন চেয়ারম্যানের হাতে প্রথম মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে যান ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রেজাউল ইসলাম। এরপর থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে মহিদুল মেম্বার, কাকলী মেম্বার, আয়েশা মেম্বার ও সাহিদা মেম্বারকে মারধর করেন। এর মধ্যে গত ১৩ মার্চ সাহিদা মেম্বারকে জুতাপেটা করেন চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন। ১৬ এপ্রিল কাকলী ও আয়েশা মেম্বারকে চেয়ার তুলে মারা হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার দয়ারামপুর গ্রামের হতদরিদ্র শিল্টু মিয়া ত্রাণ নিতে গিয়ে লাঞ্চিত হন চেয়ারম্যানের হাতে। সাহিদা মেম্বার অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস বেশিরভাগ মেম্বারদের কাজ দেন না। শতভাগ হোল্ডিং ট্যাক্স তুলে খেয়ে ফেলেন। অথচ মেম্বারদের ভাতা দেন না। সরকারি নির্দেশনা মতে হোল্ডিং ট্যাক্স তুলে ব্যাংকে জমা করতে হবে। সেখান থেকে মেম্বারদের ভাতা দিতে হবে। কিন্তু মেম্বাররা ভাতা পাচ্ছেন না। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, মাতৃত্ব ও বিধবা ভাতা নিতে বিশেষ কায়দায় টাকা নেওয়া হয়। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শাহাজুলকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান তাঁর দেহরক্ষী হাশেমকে দিয়ে যাবতীয় কাজ করান। দেহরক্ষীর নামে দিয়েছেন ৫-৬টি ভিজিডি ও হতদরিদ্রদের কার্ড। নামে-বেনামে চাল তুলে বিক্রি করেন হাশেম আলী। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, চেয়ারম্যান এই হাশেম আলীকে দিয়ে বিচারের নামে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের কাছ থেকে বাণিজ্য করেন। ফলে মানুষ ন্যায়বিচার পান না।
এসব বিষয়ে চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস জানান, ‘মেম্বারদের কাজ না দেওয়া, হোল্ডিং ট্যাক্স তুলে খেয়ে ফেলা, মেম্বারদের ভাতা না দেওয়া, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, মাতৃত্ব-বিধবা ভাতা নিয়ে বাণিজ্য ও পরিষদে বিচারের নামে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের কাছ থেকে বাণিজ্য করার বিষয়গুলো সবই মিথ্যা ও অসত্য। প্রকৃত তথ্য হলো- মহিলা মেম্বার সাহিদার সঙ্গে শ্রীরামপুরের আকতারের পরকীয়া ছিল। এ নিয়ে আমি সালিশ করে দিই। এতে মহিলা মেম্বার ক্ষিপ্ত হন। আকতারের নামে আদালতে মামলা করে মহিলা মেম্বার এক লাখ টাকা আদায় করেছেন।’ চেয়ারম্যান আরও জানান, ‘এটা সত্য যে তিন মাস আগে সিঙ্গাড়া ফেলে দেওয়ার কারণে আমি সাহিদা মেম্বারের গালে চড় মারি।’ কাবিল উদ্দীন বলেন, ‘ত্রাণ চুরির প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু বণ্টনের স্বার্থে আমি নিজেই সঠিক তালিকা করে প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রকৃত দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ দিচ্ছি। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তাই আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন।’