ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দেশ স্তব্ধ করে দেওয়া সাত খুনের রায় আজ বিচারকের বাসভবন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা : দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৩১২ বার পড়া হয়েছে

1484502717

সমীকরণ ডেস্ক: প্রায় ৩৩ মাস আগে নারায়ণগঞ্জে এলিট ফোর্স র‌্যাবের কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে সাত খুনের ঘটনায় স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। দেশ-বিদেশে আলোচিত সেই সাত খুনের মামলার রায় ঘোষিত হবে আজ সোমবার। নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন রায় ঘোষণা করবেন। প্রকৃত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি উঠেছে। খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একই দাবি জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী পিপি ওয়াজেদ আলী খান বলেছেন, ‘আদালতে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি অভিযুক্তরা অপহরণ করে ঠা-া মাথায় সাত খুন করেছেন। আমরা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চাই।’ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়া ও বিচারকের বাসভবন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। পুরো শহরেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আসামিদের ডা-াবেরি পরিয়ে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়জনের এবং পরদিন প্রায় একই স্থান থেকে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায়।
নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। পরে র্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও আর্থিক  লেনদেনের সত্যতা মেলে। হত্যাকা-ের প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। দু’টি মামলায় ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিলেও সে সময় অধরা ছিল নূর হোসেনসহ ১৩ আসামি।
খুন নিয়ে আসামিদের রোমহর্ষক জবানবন্দি: দুই মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ আসামির ২১ জন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে উঠে আসে হত্যাকা-ের রোমহর্ষক বিবরণ। জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকে অপহরণের দিনক্ষণ আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা একটি চাঁদাবাজির মামলায় স্থায়ী জামিন নিতে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নজরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসবেন এ ব্যাপারে মেজর আরিফ হোসেন (খুনের ঘটনার পরে অবসরপ্রাপ্ত) নিশ্চিত হন। পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ (অপহরণ করে হত্যা) করতে তিনিই সেদিন সকালে তার অনুগত অপরাধী চক্রের সদস্যদের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেন। সাদা পোশাকে একটি টিম নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। তারা সার্বক্ষণিকভাবে মেজর আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। নজরুল ইসলাম সেদিন তার নিজের গাড়ি না এনে সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপনের সাদা রঙের গাড়িতে (টয়োটা এক্স করোলা) আদালতে আসেন। অন্তর্র্বতীকালীন জামিন নিয়ে বেলা সাড়ে বারটার দিকে একটি সাদা গাড়িতে নজরুল আদালত চত্বর ত্যাগ করার পরপরই মেজর আরিফের কাছে এ খবর পৌঁছে দেয় তার দুষ্কর্মের সহযোগীরা। নজরুলের সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, সিরাজুল ইসলাম লিটন ও তাজুল ইসলাম। আর গাড়িটি চালাচ্ছিলেন স্বপনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোড হয়ে উত্তর দিকে যাওয়ার পথে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের কাছে (ময়লা ফেলার স্থান) পৌঁছার পর মেজর আরিফের নেতৃত্বে সেই গাড়ির গতি রোধ করা হয়। নজরুলদের বহনকারী গাড়ির পেছনে ছিল আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়ি। নজরুলসহ ৫ জনকে যখন সাদা পোশাকের র্যাব সদস্যরা অপহরণ করছিলেন তখন পেছনের গাড়িতে বসে মোবাইল ফোনে এই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন চন্দন সরকার। বিষয়টি টের পেয়ে মেজর আরিফের নেতৃত্বাধীন বাহিনী চন্দন সরকারের গাড়িও আটক করে। পরে দুই গাড়ি থেকে নজরুল, চন্দনসহ সাত জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে র্যাবের দু’টি গাড়িতে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপর অপহূতদের প্রত্যেকের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে তাদের অচেতন করে দেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা তাদের গাড়িতেই রাখা হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীর দিকে। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাড়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বালু-পাথরের ব্যবসাস্থল জনশূন্য করতে নূর হোসেনকে ফোন দেন মেজর আরিফ। সে অনুযায়ী আয়োজন সম্পন্ন করে সবুজ সংকেত  দিলে র্যাবের গাড়ি ওই স্থানে পৌঁছায়। গাড়ির ভেতরই অচেতন প্রত্যেকের মাথা ও মুখ পলিথিনে মোড়ানো হয়। পরে গলা চেপে ধরলে শ্বাস বন্ধ হয়ে একে একে মারা যায় সাত অপহূত। নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নম্বর ঘাট থেকে র্যাবের নির্দিষ্ট নৌকা নিয়ে যাওয়া হয় কাঁচপুর সেতুর নিচে। সেখান থেকে লাশগুলো নৌকায় উঠিয়ে অগ্রসর হওয়ার পথে আদমজীর সোনা মিয়া বাজার থেকে লাশ গুমের উপকরণ রশি ও বস্তা সংগ্রহ করা হয়। ইট নেওয়া হয় আদমজী ইপিজেডের ভেতরের নির্মাণাধীন এক ভবনের সামনে থেকে। নৌকার মধ্যেই প্রত্যেকটি লাশের সঙ্গে ইট বাঁধা হয়। প্রত্যেকের নাভির নিচে একটি করে ফুটো করে দেয়া হয় যাতে গ্যাস বের হয়ে যায় এবং লাশ ভেসে না ওঠে। পরে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশগুলো ফেলে দেয়া হয়। কিলিং মিশনে র্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ২৫ জন অংশ নেন। এ ছাড়া কাঁচপুর এলাকায় পাহারায় ছিলেন নূর হোসেন ও তার ৯ সহযোগী। লাশ ফেলে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন ঘাট দিয়ে উঠে শহরের ভেতর দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার পথে শহরের হাজীগঞ্জে পুলিশ চেকপোস্টে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ পুলিশের মুখোমুখি হন। এ সময় তারেক সাঈদ দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, “আমরা আপনাদের মতো ‘ওদের’ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছি।” তখন পুলিশ আর কিছু বলেনি। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডে ফতুল্লা মডেল থানার এক কর্মকর্তার মুখোমুখি হন মেজর আরিফ হোসেন। অবশ্য মেজর আরিফকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কিছু বলেননি। ৩০ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
অভিযুক্ত ৩৫ জন : সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় র্যাব-১১ এর (চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) তিন কর্মকর্তাসহ ২৫ জন এবং নূর হোসেন ও তার ৯ সহযোগীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে র্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পলাতক দেখানো হয় নূর হোসেনসহ ১৩ জনকে। যাদের মধ্যে ৮ জন র্যাব সদস্য। যাদের ওই সময় গ্রেফতার দেখানো হয় তারা হলেন র্যাব-১১ এর সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল (খুনের ঘটনার পর চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) তারেক সাইদ মোহাম্মদ, মেজর (চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) এম এম রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, রেডিও অপারেটর গেইন (আরওজি) আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ুব, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, সাবেক এসআই পূর্ণেন্দু বালা, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সিপাহি নুরুজ্জামান, কনেস্টবল বাবুল হাসান, সিপাহি আসাদুজ্জামান নূর, নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড মর্তুজা জামান চার্চিল, প্রধান ক্যাশিয়ার আলী মোহাম্মদ, নূর হোসেনের সহযোগী আবুল বাশার, রহম আলী ও মিজানুর রহমান দিপু। মামলায় যে ১২ আসামি এখনও গ্রেফতার হননি তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার কুড়িপাড়ার জামাল উদ্দিন ঠিকাদারের ছেলে ও নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম (৫২), সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে ও নূর হোসেনের সহযোগী (ক্যাশিয়ার) ছানাউল্ল্যাহ ছানা (৩৭), একই থানার মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ও নূর হোসেনের ম্যানেজার শাহজাহান (৪৫), মিজমিজি বাতানপাড়ার সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ও নূর হোসেনের সহযোগী জামাল উদ্দিন (৪৬), নওগাঁর মান্দা উপজেলার নাপিতপাড়া এলাকার আনিছুর রহমানের ছেলে কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান (৩২), নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মহজপুর গ্রামের আব্দুল জলিল শাহর ছেলে সৈনিক আব্দুল আলিম (২৮), ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর সতর এলাকার সফিউল্লাহ মুন্সীর ছেলে সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী (২৫), বরিশালের জেলার বাকেরগঞ্জ থানার কাজলাকাঠা গ্রামের আলেক শরিফের ছেলে সৈনিক আল আমিন শরিফ (২৪), ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মিশ্রিপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সৈনিক তাজুল ইসলাম, মাগুরার শালিখা উপজেলার কাতলী গ্রামের ইমারত হোসেনের ছেলে সার্জেন্ট এনামুল করিব (৩৭), নাটোরের লালপুর থানার চকবাদ কুলপাড়ার মৃত চয়ন উদ্দিনের ছেলে এএসআই কামাল হোসেন (৪০) এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর এলাকার আহাদ তালুকদারের ছেলে কনস্টেবল হাবিবুর রহমান।
নূরের সহযোগীরা: চার্জশিটে নূর হোসেনের বহু অপকর্মের সহযোগী ৯ জনের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে গ্রেফতার হয় প্রধান ক্যাশিয়ার আলী মোহাম্মদ, প্রধান দেহরক্ষী গোলাম মোর্তুজা চার্চিল, ক্যাশিয়ার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক আবুল বাশার, মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাকারী রহম আলী ও নৌ-পথের চাঁদাবাজ মিজানুর রহমান। তবে তখন পলাতক ছিল সেলিম (ভারতে নূর হোসেনের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত), টোকাই শাহজাহান, সানাউল্লাহ সানা, জামালউদ্দিন।
পালিয়ে যায় নূর হোসেন: হত্যাকা-ের পর নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়। গত বছর ১৮ অগাস্ট নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগী ওহাদুজ্জামান শামীম এবং খান সুমনের বিরুদ্ধে চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতে অভিযোগপত্র দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ। নূরের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের করা মামলা তুলে নিতে করা আবেদন মঞ্জুর করে উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম সন্দীপ চক্রবর্তী ২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পথ তৈরি করে দেন। একই বছর ১২ নভেম্বর বেনাপোল দিয়ে তাকে বাংলাদেশে আনা হয় এবং ১৩ নভেম্বর আদালতে হাজির করা হয়।
কে এই নূর হোসেন :ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে জীবন শুরু করা নূর হোসেন ১৯৯২ সালে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। নির্বাচিত হন সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগে যোগ দেন নূর। সভাপতি হন বাংলাদেশ ট্রাকচালক-শ্রমিক ইউনিয়ন কাঁচপুর শাখার। তার বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন নূর হোসেন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বালু-পাথরের ব্যবসা, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে বারবার আলোচনায় আসেন তিনি। তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলাসহ ২২টি মামলা রয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দেশ স্তব্ধ করে দেওয়া সাত খুনের রায় আজ বিচারকের বাসভবন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা : দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি

আপলোড টাইম : ১১:৫৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৭

1484502717

সমীকরণ ডেস্ক: প্রায় ৩৩ মাস আগে নারায়ণগঞ্জে এলিট ফোর্স র‌্যাবের কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে সাত খুনের ঘটনায় স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। দেশ-বিদেশে আলোচিত সেই সাত খুনের মামলার রায় ঘোষিত হবে আজ সোমবার। নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন রায় ঘোষণা করবেন। প্রকৃত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি উঠেছে। খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একই দাবি জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী পিপি ওয়াজেদ আলী খান বলেছেন, ‘আদালতে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি অভিযুক্তরা অপহরণ করে ঠা-া মাথায় সাত খুন করেছেন। আমরা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চাই।’ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়া ও বিচারকের বাসভবন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। পুরো শহরেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আসামিদের ডা-াবেরি পরিয়ে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়জনের এবং পরদিন প্রায় একই স্থান থেকে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায়।
নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। পরে র্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও আর্থিক  লেনদেনের সত্যতা মেলে। হত্যাকা-ের প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। দু’টি মামলায় ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিলেও সে সময় অধরা ছিল নূর হোসেনসহ ১৩ আসামি।
খুন নিয়ে আসামিদের রোমহর্ষক জবানবন্দি: দুই মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ আসামির ২১ জন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে উঠে আসে হত্যাকা-ের রোমহর্ষক বিবরণ। জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকে অপহরণের দিনক্ষণ আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা একটি চাঁদাবাজির মামলায় স্থায়ী জামিন নিতে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নজরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসবেন এ ব্যাপারে মেজর আরিফ হোসেন (খুনের ঘটনার পরে অবসরপ্রাপ্ত) নিশ্চিত হন। পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ (অপহরণ করে হত্যা) করতে তিনিই সেদিন সকালে তার অনুগত অপরাধী চক্রের সদস্যদের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেন। সাদা পোশাকে একটি টিম নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। তারা সার্বক্ষণিকভাবে মেজর আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। নজরুল ইসলাম সেদিন তার নিজের গাড়ি না এনে সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপনের সাদা রঙের গাড়িতে (টয়োটা এক্স করোলা) আদালতে আসেন। অন্তর্র্বতীকালীন জামিন নিয়ে বেলা সাড়ে বারটার দিকে একটি সাদা গাড়িতে নজরুল আদালত চত্বর ত্যাগ করার পরপরই মেজর আরিফের কাছে এ খবর পৌঁছে দেয় তার দুষ্কর্মের সহযোগীরা। নজরুলের সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, সিরাজুল ইসলাম লিটন ও তাজুল ইসলাম। আর গাড়িটি চালাচ্ছিলেন স্বপনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোড হয়ে উত্তর দিকে যাওয়ার পথে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের কাছে (ময়লা ফেলার স্থান) পৌঁছার পর মেজর আরিফের নেতৃত্বে সেই গাড়ির গতি রোধ করা হয়। নজরুলদের বহনকারী গাড়ির পেছনে ছিল আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়ি। নজরুলসহ ৫ জনকে যখন সাদা পোশাকের র্যাব সদস্যরা অপহরণ করছিলেন তখন পেছনের গাড়িতে বসে মোবাইল ফোনে এই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন চন্দন সরকার। বিষয়টি টের পেয়ে মেজর আরিফের নেতৃত্বাধীন বাহিনী চন্দন সরকারের গাড়িও আটক করে। পরে দুই গাড়ি থেকে নজরুল, চন্দনসহ সাত জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে র্যাবের দু’টি গাড়িতে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপর অপহূতদের প্রত্যেকের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে তাদের অচেতন করে দেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা তাদের গাড়িতেই রাখা হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীর দিকে। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাড়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বালু-পাথরের ব্যবসাস্থল জনশূন্য করতে নূর হোসেনকে ফোন দেন মেজর আরিফ। সে অনুযায়ী আয়োজন সম্পন্ন করে সবুজ সংকেত  দিলে র্যাবের গাড়ি ওই স্থানে পৌঁছায়। গাড়ির ভেতরই অচেতন প্রত্যেকের মাথা ও মুখ পলিথিনে মোড়ানো হয়। পরে গলা চেপে ধরলে শ্বাস বন্ধ হয়ে একে একে মারা যায় সাত অপহূত। নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নম্বর ঘাট থেকে র্যাবের নির্দিষ্ট নৌকা নিয়ে যাওয়া হয় কাঁচপুর সেতুর নিচে। সেখান থেকে লাশগুলো নৌকায় উঠিয়ে অগ্রসর হওয়ার পথে আদমজীর সোনা মিয়া বাজার থেকে লাশ গুমের উপকরণ রশি ও বস্তা সংগ্রহ করা হয়। ইট নেওয়া হয় আদমজী ইপিজেডের ভেতরের নির্মাণাধীন এক ভবনের সামনে থেকে। নৌকার মধ্যেই প্রত্যেকটি লাশের সঙ্গে ইট বাঁধা হয়। প্রত্যেকের নাভির নিচে একটি করে ফুটো করে দেয়া হয় যাতে গ্যাস বের হয়ে যায় এবং লাশ ভেসে না ওঠে। পরে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশগুলো ফেলে দেয়া হয়। কিলিং মিশনে র্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ২৫ জন অংশ নেন। এ ছাড়া কাঁচপুর এলাকায় পাহারায় ছিলেন নূর হোসেন ও তার ৯ সহযোগী। লাশ ফেলে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন ঘাট দিয়ে উঠে শহরের ভেতর দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার পথে শহরের হাজীগঞ্জে পুলিশ চেকপোস্টে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ পুলিশের মুখোমুখি হন। এ সময় তারেক সাঈদ দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, “আমরা আপনাদের মতো ‘ওদের’ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছি।” তখন পুলিশ আর কিছু বলেনি। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডে ফতুল্লা মডেল থানার এক কর্মকর্তার মুখোমুখি হন মেজর আরিফ হোসেন। অবশ্য মেজর আরিফকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কিছু বলেননি। ৩০ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
অভিযুক্ত ৩৫ জন : সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় র্যাব-১১ এর (চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) তিন কর্মকর্তাসহ ২৫ জন এবং নূর হোসেন ও তার ৯ সহযোগীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে র্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পলাতক দেখানো হয় নূর হোসেনসহ ১৩ জনকে। যাদের মধ্যে ৮ জন র্যাব সদস্য। যাদের ওই সময় গ্রেফতার দেখানো হয় তারা হলেন র্যাব-১১ এর সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল (খুনের ঘটনার পর চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) তারেক সাইদ মোহাম্মদ, মেজর (চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) এম এম রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, রেডিও অপারেটর গেইন (আরওজি) আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ুব, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, সাবেক এসআই পূর্ণেন্দু বালা, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সিপাহি নুরুজ্জামান, কনেস্টবল বাবুল হাসান, সিপাহি আসাদুজ্জামান নূর, নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড মর্তুজা জামান চার্চিল, প্রধান ক্যাশিয়ার আলী মোহাম্মদ, নূর হোসেনের সহযোগী আবুল বাশার, রহম আলী ও মিজানুর রহমান দিপু। মামলায় যে ১২ আসামি এখনও গ্রেফতার হননি তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার কুড়িপাড়ার জামাল উদ্দিন ঠিকাদারের ছেলে ও নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম (৫২), সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে ও নূর হোসেনের সহযোগী (ক্যাশিয়ার) ছানাউল্ল্যাহ ছানা (৩৭), একই থানার মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ও নূর হোসেনের ম্যানেজার শাহজাহান (৪৫), মিজমিজি বাতানপাড়ার সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ও নূর হোসেনের সহযোগী জামাল উদ্দিন (৪৬), নওগাঁর মান্দা উপজেলার নাপিতপাড়া এলাকার আনিছুর রহমানের ছেলে কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান (৩২), নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মহজপুর গ্রামের আব্দুল জলিল শাহর ছেলে সৈনিক আব্দুল আলিম (২৮), ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর সতর এলাকার সফিউল্লাহ মুন্সীর ছেলে সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী (২৫), বরিশালের জেলার বাকেরগঞ্জ থানার কাজলাকাঠা গ্রামের আলেক শরিফের ছেলে সৈনিক আল আমিন শরিফ (২৪), ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মিশ্রিপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সৈনিক তাজুল ইসলাম, মাগুরার শালিখা উপজেলার কাতলী গ্রামের ইমারত হোসেনের ছেলে সার্জেন্ট এনামুল করিব (৩৭), নাটোরের লালপুর থানার চকবাদ কুলপাড়ার মৃত চয়ন উদ্দিনের ছেলে এএসআই কামাল হোসেন (৪০) এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর এলাকার আহাদ তালুকদারের ছেলে কনস্টেবল হাবিবুর রহমান।
নূরের সহযোগীরা: চার্জশিটে নূর হোসেনের বহু অপকর্মের সহযোগী ৯ জনের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে গ্রেফতার হয় প্রধান ক্যাশিয়ার আলী মোহাম্মদ, প্রধান দেহরক্ষী গোলাম মোর্তুজা চার্চিল, ক্যাশিয়ার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক আবুল বাশার, মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাকারী রহম আলী ও নৌ-পথের চাঁদাবাজ মিজানুর রহমান। তবে তখন পলাতক ছিল সেলিম (ভারতে নূর হোসেনের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত), টোকাই শাহজাহান, সানাউল্লাহ সানা, জামালউদ্দিন।
পালিয়ে যায় নূর হোসেন: হত্যাকা-ের পর নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়। গত বছর ১৮ অগাস্ট নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগী ওহাদুজ্জামান শামীম এবং খান সুমনের বিরুদ্ধে চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতে অভিযোগপত্র দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ। নূরের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের করা মামলা তুলে নিতে করা আবেদন মঞ্জুর করে উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম সন্দীপ চক্রবর্তী ২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পথ তৈরি করে দেন। একই বছর ১২ নভেম্বর বেনাপোল দিয়ে তাকে বাংলাদেশে আনা হয় এবং ১৩ নভেম্বর আদালতে হাজির করা হয়।
কে এই নূর হোসেন :ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে জীবন শুরু করা নূর হোসেন ১৯৯২ সালে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। নির্বাচিত হন সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগে যোগ দেন নূর। সভাপতি হন বাংলাদেশ ট্রাকচালক-শ্রমিক ইউনিয়ন কাঁচপুর শাখার। তার বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন নূর হোসেন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বালু-পাথরের ব্যবসা, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে বারবার আলোচনায় আসেন তিনি। তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলাসহ ২২টি মামলা রয়েছে।