ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দেশে ফের করোনার ঊর্ধ্বগতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০২০
  • / ১১৩ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত
দেশে করোনা শনাক্তের আট মাস পেরোলেও এখনো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ভাইরাসটি সংক্রমণের দিক থেকে এশিয়ায় শীর্ষ পাঁচে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে তিন সপ্তাহ ধরে রোগী শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ১০ সপ্তাহের মধ্যে গত সোমবার সর্বাধিক দুই হাজার ১৩৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় এ হার ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। তিন সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি। নতুন করে করোনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানায় শৈথিল্যই মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি পর্যায় থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নতুন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ কথা বলা যায়, খুব শিগগিরই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবেÑ এমন সম্ভাবনাও কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পরপর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের কম থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে বলে বিবেচনা করা যায়। করোনার কার্যকর কোনো টিকা না আসা পর্যন্ত এ মহামারী শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই শীতে বাংলাদেশে ভাইরাসটি আবার মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভাইরোলজিস্টদের আশঙ্কা, আর্দ্রতা, সূর্যের তাপ, ভিটামিন ডি-এর অভাব এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ শীতের সময় অন্য ভাইরাস ও ফ্লু জাতীয় শ্বাসকষ্ট রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। ফলে এ সময় করোনায় ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশে নিয়ন্ত্রণহীন সংক্রমণ বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সে জন্য পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুনভাবে করোনা সংক্রমণের গতি আরো এক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকলে তখন বলা যাবে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এখনো শুরু হয়নি। এখনো প্রথম পর্যায়ের সংক্রমণই বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে চলতি শীতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। ইতোমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ওই সব দেশে আবার কড়া বিধিনিয়ম চালু করা হয়েছে। কিছু দেশে সংক্রমণ ইতোমধ্যে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কিন্তু আমরা পারিনি। এর অন্যতম কারণ, দেশে পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অথচ সবার জানা, মানুষের মধ্যে সর্বজনীনভাবে মাস্ক ব্যবহার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়ার অভ্যাস বাড়ানো এবং পরীক্ষা ও আইসোলেশনের মতো স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রয়োগের ওপর এ রোগের বিস্তার রোধ অনেকটা নির্ভর করে।
দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কই? স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির কথা রয়েছে। তাই করোনা সংক্রমণ কমাতে জনগণের বৃহত্তর কল্যাণে সরকারের উচিত, কঠোরতা অবলম্বন করা। বাইরে বের হলেই মাস্ক পরতে বাধ্য করা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে বাধ্য করা জরুরি। বাস্তবতা হলো, এখনো বহু রোগী ভাইরাসটি নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন। তারা রোগ ছড়াচ্ছেন। শুরু থেকেই শনাক্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আমরা খুঁজে বের করতে পারিনি। করোনা মোকাবেলায় দেশে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প না থাকায় সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে জনসাধারণের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করা যেতে পারে। কারণ মাস্ক পরলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যায়। বর্তমানে যে প্রস্তুতি আছে, তাতে দিনে ৩০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষার হারও বাড়াতে হবে। তবেই সম্ভব হতে পারে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দেশে ফের করোনার ঊর্ধ্বগতি

আপলোড টাইম : ১০:১৮:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০২০

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত
দেশে করোনা শনাক্তের আট মাস পেরোলেও এখনো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ভাইরাসটি সংক্রমণের দিক থেকে এশিয়ায় শীর্ষ পাঁচে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে তিন সপ্তাহ ধরে রোগী শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ১০ সপ্তাহের মধ্যে গত সোমবার সর্বাধিক দুই হাজার ১৩৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় এ হার ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। তিন সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি। নতুন করে করোনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানায় শৈথিল্যই মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি পর্যায় থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নতুন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ কথা বলা যায়, খুব শিগগিরই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবেÑ এমন সম্ভাবনাও কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পরপর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের কম থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে বলে বিবেচনা করা যায়। করোনার কার্যকর কোনো টিকা না আসা পর্যন্ত এ মহামারী শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই শীতে বাংলাদেশে ভাইরাসটি আবার মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভাইরোলজিস্টদের আশঙ্কা, আর্দ্রতা, সূর্যের তাপ, ভিটামিন ডি-এর অভাব এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ শীতের সময় অন্য ভাইরাস ও ফ্লু জাতীয় শ্বাসকষ্ট রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। ফলে এ সময় করোনায় ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশে নিয়ন্ত্রণহীন সংক্রমণ বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সে জন্য পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুনভাবে করোনা সংক্রমণের গতি আরো এক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকলে তখন বলা যাবে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এখনো শুরু হয়নি। এখনো প্রথম পর্যায়ের সংক্রমণই বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে চলতি শীতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। ইতোমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ওই সব দেশে আবার কড়া বিধিনিয়ম চালু করা হয়েছে। কিছু দেশে সংক্রমণ ইতোমধ্যে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কিন্তু আমরা পারিনি। এর অন্যতম কারণ, দেশে পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অথচ সবার জানা, মানুষের মধ্যে সর্বজনীনভাবে মাস্ক ব্যবহার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়ার অভ্যাস বাড়ানো এবং পরীক্ষা ও আইসোলেশনের মতো স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রয়োগের ওপর এ রোগের বিস্তার রোধ অনেকটা নির্ভর করে।
দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কই? স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির কথা রয়েছে। তাই করোনা সংক্রমণ কমাতে জনগণের বৃহত্তর কল্যাণে সরকারের উচিত, কঠোরতা অবলম্বন করা। বাইরে বের হলেই মাস্ক পরতে বাধ্য করা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে বাধ্য করা জরুরি। বাস্তবতা হলো, এখনো বহু রোগী ভাইরাসটি নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন। তারা রোগ ছড়াচ্ছেন। শুরু থেকেই শনাক্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আমরা খুঁজে বের করতে পারিনি। করোনা মোকাবেলায় দেশে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প না থাকায় সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে জনসাধারণের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করা যেতে পারে। কারণ মাস্ক পরলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যায়। বর্তমানে যে প্রস্তুতি আছে, তাতে দিনে ৩০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষার হারও বাড়াতে হবে। তবেই সম্ভব হতে পারে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনা।