ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ‘চোখ ওঠা’ রোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: রাজধানীসহ সারাদেশে হঠাৎ ‘চোখ ওঠা’ বা কনজাংটিভাইটিস রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই একাধিক ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগটি এক প্রকার মহামারী আকার ধারণ করেছে বলেও মনে করছেন অনেকে। ফলে দেখা দিয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধের স্বল্পতা। পরিস্থিতি বিবেচনায় কারও যদি চোখ ওঠে বা কনজাংটিভাইটিস হয় তাকে সাত দিনের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোখের কনজাংটিভাইটিস রোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায় তা সবার মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে ৭ থেকে ১০ দিন পর তা এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। তাই কারও কনজাংটিভাইটিস হলে আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সাধারণত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা এ রোগে দ্রুত আক্রান্ত হন। রোগটি একই সময় বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন বয়সীদের মধ্যে বছরের যে কোনো সময়ই হতে পারে। তবে শীত ও গরমের মাঝামাঝি সময়ে এটি বেশি হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে ওএসবিআই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদা রহমান বলেন, কনজাংটিভাইটিস বর্তমানে মহামারী আকার ধারণ করেছে। এটি এত দ্রুত এবং বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে যে প্রয়োজনীয় ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। অনেকেই একিউট কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ ভাইরাল কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর আবার ব্যাক্টেরিয়াল কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে চোখে ময়লা জমা, চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের রোগীদের সেরে উঠতে প্রায় ২১ দিন সময় লেগে যায়। এবারের সংক্রমণকারী ভাইরাস বেশ শক্তিশালী। ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সিং করলে কোন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট সেটি নিশ্চিত হওয়া যেত। এদিকে রাজধানীর তেজগাঁও, গুলশান ও মহাখালী এলাকার বিভিন্ন ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ কনজাংটিভাইটিস রোগের ওষুধ নিতে আসেন। এতে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু দোকানি দাম বাড়িয়ে সংকট ঘনীভূত করছেন।

রোগের লক্ষণ:
চোখের নিচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া। চোখে ব্যথা, খচখচ করা ও অস্বস্তি অনুভূত হয়। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, পরে অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে। চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে। চোখ ফুলে লাল হয়ে যায় এবং চুলকায়। এমনকি চোখে আলো পড়লে অস্বস্তি লাগে।

প্রতিরোধের উপায় :
অসুস্থ ব্যক্তিকে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। শিশুর বা কনজাংটিভাইটিস হলে স্কুলে না পাঠানো, কর্মজীবী হলে কর্মস্থলে যাওয়া যাবে না। এতে দ্রুত পরিত্রাণ মিলবে। এড়িয়ে চলতে হবে জনবহুল স্থান। ডা. মাহমুদা বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। হাতের স্পর্শে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তাই বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত হলে দ্রুত নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ

বিমানবন্দরের জরুরি নির্দেশনা :
বিদেশগামী যাত্রীদের কেউ যদি বা কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হন তবে তাকে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার এক অফিস আদেশে যাত্রীদের এই অনুরোধ জানানো হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর যদি ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা থাকে অথবা বিদেশ যাওয়া জরুরি হয় সে ক্ষেত্রে ‘চোখ ওঠা’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বিএমডিসি রেজিস্টার্ড একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অথবা এমবিবিএস ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন এবং উপযুক্ত প্রেসক্রিপশন, প্রয়োজনীয় ওষুধ নেবেন। এছাড়াও তাদের সানগ্লাস পরে বিমানবন্দরে উপস্থিত হতে হবে। বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং উল্লেখিত ডকুমেন্টস যাচাই করে যাত্রীকে ভ্রমণের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেবেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ‘চোখ ওঠা’ রোগ

আপলোড টাইম : ০৯:০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন: রাজধানীসহ সারাদেশে হঠাৎ ‘চোখ ওঠা’ বা কনজাংটিভাইটিস রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই একাধিক ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগটি এক প্রকার মহামারী আকার ধারণ করেছে বলেও মনে করছেন অনেকে। ফলে দেখা দিয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধের স্বল্পতা। পরিস্থিতি বিবেচনায় কারও যদি চোখ ওঠে বা কনজাংটিভাইটিস হয় তাকে সাত দিনের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোখের কনজাংটিভাইটিস রোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায় তা সবার মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে ৭ থেকে ১০ দিন পর তা এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। তাই কারও কনজাংটিভাইটিস হলে আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সাধারণত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা এ রোগে দ্রুত আক্রান্ত হন। রোগটি একই সময় বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন বয়সীদের মধ্যে বছরের যে কোনো সময়ই হতে পারে। তবে শীত ও গরমের মাঝামাঝি সময়ে এটি বেশি হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে ওএসবিআই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদা রহমান বলেন, কনজাংটিভাইটিস বর্তমানে মহামারী আকার ধারণ করেছে। এটি এত দ্রুত এবং বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে যে প্রয়োজনীয় ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। অনেকেই একিউট কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ ভাইরাল কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর আবার ব্যাক্টেরিয়াল কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে চোখে ময়লা জমা, চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের রোগীদের সেরে উঠতে প্রায় ২১ দিন সময় লেগে যায়। এবারের সংক্রমণকারী ভাইরাস বেশ শক্তিশালী। ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সিং করলে কোন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট সেটি নিশ্চিত হওয়া যেত। এদিকে রাজধানীর তেজগাঁও, গুলশান ও মহাখালী এলাকার বিভিন্ন ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ কনজাংটিভাইটিস রোগের ওষুধ নিতে আসেন। এতে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু দোকানি দাম বাড়িয়ে সংকট ঘনীভূত করছেন।

রোগের লক্ষণ:
চোখের নিচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া। চোখে ব্যথা, খচখচ করা ও অস্বস্তি অনুভূত হয়। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, পরে অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে। চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে। চোখ ফুলে লাল হয়ে যায় এবং চুলকায়। এমনকি চোখে আলো পড়লে অস্বস্তি লাগে।

প্রতিরোধের উপায় :
অসুস্থ ব্যক্তিকে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। শিশুর বা কনজাংটিভাইটিস হলে স্কুলে না পাঠানো, কর্মজীবী হলে কর্মস্থলে যাওয়া যাবে না। এতে দ্রুত পরিত্রাণ মিলবে। এড়িয়ে চলতে হবে জনবহুল স্থান। ডা. মাহমুদা বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। হাতের স্পর্শে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তাই বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত হলে দ্রুত নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ

বিমানবন্দরের জরুরি নির্দেশনা :
বিদেশগামী যাত্রীদের কেউ যদি বা কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হন তবে তাকে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার এক অফিস আদেশে যাত্রীদের এই অনুরোধ জানানো হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর যদি ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা থাকে অথবা বিদেশ যাওয়া জরুরি হয় সে ক্ষেত্রে ‘চোখ ওঠা’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বিএমডিসি রেজিস্টার্ড একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অথবা এমবিবিএস ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন এবং উপযুক্ত প্রেসক্রিপশন, প্রয়োজনীয় ওষুধ নেবেন। এছাড়াও তাদের সানগ্লাস পরে বিমানবন্দরে উপস্থিত হতে হবে। বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং উল্লেখিত ডকুমেন্টস যাচাই করে যাত্রীকে ভ্রমণের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেবেন।