ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দেবীর ঘোটকে আগমন, ঘোটকেই গমন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০১৯
  • / ২০২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার ১১৭টি মন্ডপে বোধনের মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

প্রতি পূজাম-পে আনসার ও পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন -এসপি জাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদক:
বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা, শারদীয় দুর্গোৎসব। ষষ্ঠীতে দেবী বোধনের পর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার অধিষ্ঠান হবে ম-পগুলোতে। আজ শুক্রবার সকাল ৮টা ৫৩ মিনিটে ষষ্ঠ্যাদিকল্পারম্ভ এবং আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠীপূজা সম্পন্ন হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
তিন দিন ম-পে পূজার পর দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের সার্বজনীন এ উৎসব। প্রতিটি পূজাম-পে শেষ হয়েছে প্রস্তুতি। বছর ঘুরে প্রতিক্ষার অবসান হতে চলেছে। শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। ষষ্ঠীতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
পৌরাণিক শাস্ত্র মতে, দেবকুলে মাঘ থেকে আষাঢ়, এ ছয় মাস উত্তরায়ণ, যা দিন। আর শ্রাবণ থেকে পৌষ, এ ছয় মাস দক্ষিণায়ন, যা রাত। রাবণ বধের জন্য আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজা করেছিলেন রামচন্দ্র। অকালে বোধন তাই শারদীয় দুর্গাপূজা। বাঙালির জীবনে এ পূজা সার্বজনীন উৎসবে রূপ নেয়।
এবার ঘোড়ায় চড়ে আসছেন দেবী দুর্গা। আবার ফিরবেনও ঘোড়ায়। দেবীর আসা-যাওয়ার এ বাহনের বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে। ষষ্ঠী তিথীতে, বোধনের পর দেবী দূর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। পরদিন সপ্তমীতে নবপত্রিকায় প্রবেশের মধ্য দিয়ে ম-পে মূল পূজা শুরু। অষ্টমীতে হবে কুমারী পূজা। আর অষ্টমী ও নবমী তিথীর-সংযোগ ক্ষণে হবে সন্ধি পূজা ও আরতি। নবমীতে বলিদান ও যজ্ঞ। আর দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
গত বছর জেলার ১১৩টি পূজাম-পসহ এবার বেড়েছে আরও ৪টি। সব মিলিয়ে এ বছর জেলার ১১৭টি পূজাম-পে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩৩টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৬টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২২টি ও জীবননগর উপজেলায় ২৬টি পূজাম-পে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। দেবী দুর্গার আগমনী আনন্দে মেতে উঠেছে ভক্তরা। মন্দির-ম-প থেকে রাস্তা-ঘাট, চারদিকে শোভা পাচ্ছে রঙিন আলোর ঝলকানি। আলোকসজ্জায় উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিটি পূজাম-পের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ম-পে থাকবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্বাপেক্ষা বড় ধর্মীয় এ উৎসব নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্নের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে বহুমুখি সিদ্ধান্ত। মন্দির ও ম-পগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছে জেলা পূজা উদ্যাপন প্রস্তুতি কমিটি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত থাকবে জানিয়ে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম সময়ের সমীকরণকে জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব যেন আরও সুন্দর ও আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি পূজাম-পে ৭ জন আনসার ও ৪-৫ জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। তবে সাধারণ, গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজাম-পগুলোতে ক্ষেত্র বিশেষ প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এ দেশে মসজিদের আজানের ধ্বনির সঙ্গে মন্দিরের উলুধ্বনি শোনা যায়, কিন্তু কখনো কোনো সম্প্রীতির ঘাটতি হয় না। এরপরও কোনো কুচক্রী মহল যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা মাঠে থাকবেন। আয়োজনের সূচি অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপনে প্রশাসনের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। বিসর্জনের জন্য পৌর শহরের অন্তর্গত ঘাটগুলো আরও আধুনিকায়ন ও আলোকসজ্জা করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দেবীর ঘোটকে আগমন, ঘোটকেই গমন

আপলোড টাইম : ১০:৩০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০১৯

চুয়াডাঙ্গার ১১৭টি মন্ডপে বোধনের মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

প্রতি পূজাম-পে আনসার ও পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন -এসপি জাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদক:
বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা, শারদীয় দুর্গোৎসব। ষষ্ঠীতে দেবী বোধনের পর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার অধিষ্ঠান হবে ম-পগুলোতে। আজ শুক্রবার সকাল ৮টা ৫৩ মিনিটে ষষ্ঠ্যাদিকল্পারম্ভ এবং আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠীপূজা সম্পন্ন হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
তিন দিন ম-পে পূজার পর দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের সার্বজনীন এ উৎসব। প্রতিটি পূজাম-পে শেষ হয়েছে প্রস্তুতি। বছর ঘুরে প্রতিক্ষার অবসান হতে চলেছে। শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। ষষ্ঠীতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
পৌরাণিক শাস্ত্র মতে, দেবকুলে মাঘ থেকে আষাঢ়, এ ছয় মাস উত্তরায়ণ, যা দিন। আর শ্রাবণ থেকে পৌষ, এ ছয় মাস দক্ষিণায়ন, যা রাত। রাবণ বধের জন্য আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজা করেছিলেন রামচন্দ্র। অকালে বোধন তাই শারদীয় দুর্গাপূজা। বাঙালির জীবনে এ পূজা সার্বজনীন উৎসবে রূপ নেয়।
এবার ঘোড়ায় চড়ে আসছেন দেবী দুর্গা। আবার ফিরবেনও ঘোড়ায়। দেবীর আসা-যাওয়ার এ বাহনের বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে। ষষ্ঠী তিথীতে, বোধনের পর দেবী দূর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। পরদিন সপ্তমীতে নবপত্রিকায় প্রবেশের মধ্য দিয়ে ম-পে মূল পূজা শুরু। অষ্টমীতে হবে কুমারী পূজা। আর অষ্টমী ও নবমী তিথীর-সংযোগ ক্ষণে হবে সন্ধি পূজা ও আরতি। নবমীতে বলিদান ও যজ্ঞ। আর দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
গত বছর জেলার ১১৩টি পূজাম-পসহ এবার বেড়েছে আরও ৪টি। সব মিলিয়ে এ বছর জেলার ১১৭টি পূজাম-পে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩৩টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৬টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২২টি ও জীবননগর উপজেলায় ২৬টি পূজাম-পে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। দেবী দুর্গার আগমনী আনন্দে মেতে উঠেছে ভক্তরা। মন্দির-ম-প থেকে রাস্তা-ঘাট, চারদিকে শোভা পাচ্ছে রঙিন আলোর ঝলকানি। আলোকসজ্জায় উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিটি পূজাম-পের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ম-পে থাকবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্বাপেক্ষা বড় ধর্মীয় এ উৎসব নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্নের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে বহুমুখি সিদ্ধান্ত। মন্দির ও ম-পগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছে জেলা পূজা উদ্যাপন প্রস্তুতি কমিটি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত থাকবে জানিয়ে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম সময়ের সমীকরণকে জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব যেন আরও সুন্দর ও আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি পূজাম-পে ৭ জন আনসার ও ৪-৫ জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। তবে সাধারণ, গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজাম-পগুলোতে ক্ষেত্র বিশেষ প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এ দেশে মসজিদের আজানের ধ্বনির সঙ্গে মন্দিরের উলুধ্বনি শোনা যায়, কিন্তু কখনো কোনো সম্প্রীতির ঘাটতি হয় না। এরপরও কোনো কুচক্রী মহল যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা মাঠে থাকবেন। আয়োজনের সূচি অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপনে প্রশাসনের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। বিসর্জনের জন্য পৌর শহরের অন্তর্গত ঘাটগুলো আরও আধুনিকায়ন ও আলোকসজ্জা করা হবে।